মাদকসেবীর সংখ্যা বাড়ছে
আলী ফোরকান
দেশে মাদকসেবীর সংখ্যা দিন দিনই বাড়ছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, মাদকদ্রব্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে অন্তত ৭০ লাখ মানুষ সরাসরি মাদকাসক্ত। এদের মধ্যে ৮৭ ভাগ পুরুষ ও ১৩ ভাগ নারী। মাদকসেবীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার খবর সত্যিই উদ্বেগজনক। বিশেষ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের দেয়া সংখ্যার অধিকাংশ মাদকসেবীই বয়সে তরুণ। এ তথ্য আমাদের মনে শঙ্কার সৃষ্টি করেছে। আজকের তরুণ সমাজই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়বে, সোনার বাংলার সোনার ছেলেমেয়েরা মাদকের মরণনেশায় আক্রান্ত। নেশায় আক্রান্তের সংখ্যা হ্রাসের নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও কোনোভাবেই কমছে না নেশাখোরদের সংখ্যা। ফ্যামিলি হেলথ ইন্টারন্যাশনালের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশে সুই-সিরিঞ্জের মাধ্যমে মাদকসেবীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৩৬ হাজার, বর্তমানে ২০১০ সালে ১ লাখ ৮০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আরো দুঃখজনক, রগে বা রক্তে নেশা গ্রহণকারীদের অধিকাংশই এইচআইভি আক্রান্ত। দৈনিক ডেসটিনির সংবাদে আরো বলা হয়েছে, প্রতিবছর সীমান্তবর্তী দেশ ভারত থেকে প্রায় ৩৪৭ কোটি টাকার মাদক আসছে। এর মধ্যে প্রায় ২২০ কোটি টাকার আসে ফেনসিডিল। মাদকাসক্তদের শতকরা ৪৫ ভাগই কোনো না কোনো অপরাধে জড়িত এবং এদের প্রায় ৯১ ভাগই বয়সে কিশোর ও তরুণ। জরিপে দেখা যায়, শতকরা ৪৫ ভাগ বেকার এবং ৬৪ আন্ডারগ্রাজুয়েট, ইউনাইটেড নেশনস ড্রাগ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে মাদকের ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে তরুণ সমাজে। মাদকাসক্তদের ৪৫ ভাগ গুরুতর অপরাধে জড়িত। উচ্চ শিক্ষারত এমন মাদকাসক্তের সংখ্যা ১৫ ভাগ, ব্যবসায়ী ২২ দশমিক ৬২ ভাগ। চাকরিজীবী ১০ দশমিক ৬৭ ভাগ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তরুণ প্রজন্মের মাদকসেবীরা নতুন নতুন নেশাদ্রব্যের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। আরো খবর পাওয়া গেছে, ফেনসিডিল ও হেরোইন ভেজাল হওয়ায় এখন নিম্নমানের ইয়াবার প্রতি তরুণরা ঝুঁকছে। বর্তমানে রাজধানীতে ৮ প্রকারের ইয়াবা পাওয়া যায়। সবচেয়ে নিম্নমানের ইয়াবার নাম চম্পাÑ যার মূল্য প্রতি পিস ২০০ টাকা। বেশি দামের হলো থাইল্যান্ডের ডব্লিউওয়াইÑ যার মূল্য প্রতি পিচ ২৫০০ টাকা। নেশাদ্রব্যে ভেজাল বৃদ্ধি পাওয়ায় মাদকসেবী নেশাদ্রব্য পরিবর্তন করছে। দেশ বর্তমানে মাদকদ্রব্যে যে সয়লাব এবং মাদকসেবী সংখ্যা যে হারে বাড়ছে তাতে আগামী দিনের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হবে। আজকের যুব-তরুণ-কিশোররা যে হারে নেশাগ্রস্ত তাতে পড়াশুনায় ব্যাঘাত, অপরাধ বৃদ্ধিসহ স্বাভাবিক সমাজব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে।
মাদকদ্রব্য ব্যবসায় যারা জড়িত, যারা নেপথ্যে থেকে সহযোগিতা করে এদের মূলোৎপাটন করতে হবে। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে। সচেতনতা বৃদ্ধির নানা কর্মসূচি করতে হবে। মাদকদ্রব্যের কুফল পাঠ্যপুস্তকেও অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। সর্বোপরি যে কোনমূল্যে মাদকসেবীর সংখ্যা কমাতে হবে, কোনোভাবেই মাদকের ব্যবহার যেন আর না বাড়ে। নেশা জাতীয় সকল দ্রব্য ব্যবসায় যারা জড়িত তাদের দৃষ্টানমূলক শাস্তি দিতে হবে। এর সঙ্গে মাদক নিরাময় কেন্দ্রগুলোও যেন কার্যকর ভূমিকা রাখে সেদিকেও সরকারের নজরদারি বাড়াতে হবে।
0 comments:
Post a Comment