Wednesday, July 27, 2016

মাদকের থাবায় ঢাকা

মাদকের থাবায় ঢাকা
আলী ফোরকান
মেয়েটির চিৎকার-চেঁচামেচিতে মুহূর্তেই জটলা পেকে গেলো। উৎসুক জনতার ভীড় ঠেলে সামনে এগোনো অতটা সহজ ছিল না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের দক্ষিণ-পূর্ব পাশ থেকে বদরুন্নেছা কলেজে যাওয়ার পথ। এ পথে হাতের ডানে বামে প্রায় শ’দুয়েক রিক্সা অলস পড়ে থাকে। প্রকাশিত সংবাদ মতে, এগুলো ভাড়ায় খাটে না। প্রত্যেকটি রিক্সার ডালার নিচে মাদকদ্রব্য। এরা মূলত ইয়াবা,গাঁজার পুরিয়া ও ফেনসিডিল  বিক্রি করে। এটি এ এলাকার অঘোষিত মাদক স্পট। ১০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০ ও ১’শ, হাজার টাকার পোটলা পাওয়া যায় এ অলস বসে থাকা রিক্সা চালকদের কাছে। তাদের বেশিরভাগ ক্রেতাই স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। মেয়েটিকে ততক্ষণে শাহবাগ থানার টহল পুলিশ গাড়িতে তুলে নিয়েছেন। সাংবাদিক পরিচয়ে মেয়েটির সঙ্গে কথা হয়। বেরিয়ে আসে অন্ধকার জগতে জড়িয়ে পড়ার ভয়ানক গল্প। ইফ্ফাত আরা ডাক নাম দিশা। রাজধানীর গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের গৃহব্যবস্থাপনা বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্রী। উত্তরবঙ্গ থেকে ২০০৮ সালে ঢাকায় আসার বছরখানেক পরেই গল্পের শুরু। কপালের ফেরে অসৎ সঙ্গের সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে দিশার। উজ্জ্বল শ্যামলা গড়নের মেয়েটির সহজ-সরলতার সুযোগ নিয়ে অনেকেই স্বপ্ন দেখিয়েছে। কিন্তু না; কেউ কথা রাখেনি; স্বার্থ উদ্ধার করে সবাই তাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। তাই মাদকের করাল গ্রাসে নিজেকে সপে দিতে দ্বিধা নেই তার। বাবা-মা কারো কাছেই এ মুখ দেখাতে চায় না সে। শুধু দিশা নয় দিশার মতো এমন হাজারো মেয়ে আজ মাদকের নীল দংশনে জর্জরিত। অনেকেই আবার এটিতে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পরে শেষমেশ পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন।তিতুমীর সরকারি কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ম্যানিলা চৌধুরী। ইয়াবাসহ মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। দীর্ঘদিন ছিল পুলিশ হেফাজতে। বাবার হাত ধরেই তার এই জগতে পদার্পণ।ডিবি কার্যালয়ে তার সঙ্গে কথা হচ্ছিল; আমি মূলত ইয়াবার ডিস্ট্রিবিউর, মাসে ১২ থেকে ১৫ হাজার ইয়াবা সাপ্লাই দেই। বিশেষ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমার ক্রেতা। মাদকের ভয়াবহতা এখন অনেকটাই সংক্রামক আকার ধারণ করেছে। চলচ্চিত্র মিডিয়া থেকে শুরু করে এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে মাদকের দংশন নেই।
মূল প্রসঙ্গ:বাংলাদেশের মাদক পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে প্রায় ৬৮ লাখ মানুষ মাদকাসক্ত। এদের মধ্যে ৮৪ ভাগ পুরুষ, ১৬ ভাগ নারী। সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তি থেকে শুরু করে নারী ও শিশু-কিশোররাও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশজুড়ে প্রায় দেড় লাখ মানুষ নানাভাবে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী দেশে মাকাসক্তের সংখ্যা ৪৭ লাখ। অধিদপ্তর আসক্তদের শতকরা ৯০ ভাগকে কিশোর-তরুণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তাদের শতকরা ৪৫ ভাগ বেকার এবং ৬৫ ভাগ আন্ডার গ্রাজুয়েট। আর উচ্চ শিক্ষিতের সংখ্যা ১৫ শতাংশ। বিভিন্ন সংস্থার তথ্য মতে, অবৈধ মাদকদ্রব্য আমদানির জন্য প্রতিবছর ১০ হাজার কোটিরও বেশি টাকার মুদ্রা বিদেশে পাচার হচ্ছে। ফ্যামিলি হেলথ ইন্টারন্যাশনালের তথ্য বলছে, শুধু ভারত থেকেই আসে সাড়ে তিনশ কোটি টাকার মাদকদ্রব্য। এরমধ্যে সব থেকে বেশি আসে ফেনসিডিল। শতকরা ৬০ ভাগ মাদকাসক্ত মাদকের টাকা জোগাড় করতে গিয়ে জড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন অপরাধ মূলক কর্মকান্ডে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জনান, প্রতি বছর যে পরিমাণ অবৈধ মাদকদ্রব্য দেশে ঢুকছে তার মাত্র ১০-১৫ ভাগ উদ্ধার করা সম্ভব হয়। পাশের দেশ ভারত ও মিয়ানমার থেকেই আসছে সব থেকে বেশি মাদকদ্রব্য। বিজিবির তথ্য মতে, সীমান্তের প্রায় ৪৯৮টি পয়েন্টকে মাদক আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করে পাচারকারীরা। সব পয়েন্টে বিজিবির বিশেষ নজরদারি থাকার পরও ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইন, আফিম, প্যাথেড্রিন ও গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য দিনে রাতে সবসমই আসে এসব রুট দিয়ে।
মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত এমন কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, সম্প্রতি মিয়ানমান (বার্মা)  থেকে টেকনাফ রুটে সব থেকে বেশি মাদক আসছে বাংলাদেশে। এই রুটে কড়াকড়ি আরোপ করলে কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে মনে করেন মাদক ব্যবসায়ীরা। কক্সবাজারের টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, আমার থানায় মাসে প্রায় লাখ খানেক ইয়াবা ধরা পড়ে। তবে, মাদক ব্যবসায়ীরা ইদানিং সমুদ্রপথে মাদক আনছেন বলেও জানান তিনি। টেকনাথ থানার বাহারচরা, দক্ষিণনীলা, ওহাইকং ও শাহপুরী দ্বীপসহ সব পয়েন্টে নজড়দারি বাড়ানো হয়েছে বলেও জানান ফরহাদ হোসেন। তবে থানার স্বল্প সংখ্যক জনবল দিয়ে চোরাচালান পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি। এদিকে মসীমান্তের মাদকে রাজধানীর আনাচে-কানাচে প্রায় সয়লাব হয়ে গেছে। দেশের বাজারে প্রায় ৩৩ ধরনের মাদক সেবন চলে। গোযেন্দা শাখায় এ পর্যন্ত ভিন্ন ভিন্ন নামের যেসব মাদক উদ্ধার হয়েছে সেগুলো হচ্ছে হেরোইন, গাঁজা, চোলাই মদ, দেশি মদ, বিদেশি মদ, বিয়ার, রেক্টিফায়েড স্পিরিট, কেডিন, ফেনসিডিল, তাড়ি, প্যাথেড্রিন, টিডি জেসিক, সিসা, ভাং, কোডিন ট্যাবলেট, ফার্মেন্টেড, ওয়াশ (জাওয়া),বনোজেসিক ইনজেকশন (বুপ্রেনরফিন), টেরাহাইড্রোবানাবিল, এক্সএলমুগের, মরফিন, ইয়াবা, আইএসপিল, ভায়াগ্রা, সানাগ্রা, টলুইন, পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট, মিথাইল, ইথানল ও কিটোন। এছাড়া ইনোকটিন, সিডাক্সিনসহ বিভিন্ন ঘুমের ট্যাবলেট, জামবাকসহ ব্যথানাশক ওষুধ কিংবা টিকটিকির লেজ পুড়িয়ে কেউ কেউ নেশা করে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। বাংলাদেশকে মাদক পাচারের ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করছে সীমান্তবর্তী মাদক উৎপাদনকারী দেশগুলো। 
নিরাপদ ট্রানজিট: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ) প্রকাশনা ‘ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্ট বুক’ এবং জাতিসংঘের আর্ন্তজাতিক মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (আইএনসিবি) এর বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর মাদক পাচারের ট্রানজিট দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ সরকারের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটেও বাংলাদেশকে হেরোইনের ট্রানজিট দেশ হিসেবে দেখানো হয়েছে। আইএনসিবি এর বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, পার্শ্ববর্তী দেশগুলো ইউরোপের বিভিন্ন দেশে হেরোইন,কোকেন পাচারের জন্য বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করে। এদিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে মাদক পাচারের জন্য বাংলাদেশকে পশ্চিমাঞ্চল, পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এবং উত্তর ও উত্তর-দক্ষিণাঞ্চল রুটে ভাগ করা হয়েছে। পশ্চিমাঞ্চল রুটের মধ্যে রয়েছে দর্শনা, চুয়াডাঙ্গার জীবননগর, দিনাজপুরের বাংলাহিলি ও বিরল; কুড়িগ্রামের মুঘলঘাট, আদিতমারি, দুর্গাপুর, ফুলবাড়ি ও নাগেশ্বরী; নবাবগঞ্জ, রাজশাহী, মেহেরপুর; সাতক্ষীরার শ্যামনগর, কলারোয়া, দেবহাটা ও কালীগঞ্জ, যশোরের বেনাপোল ও চৌগাছা, ঝিকরগাছা। 
পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল রুটের মধ্যে রয়েছে আখাউড়া, ঝাউতলা, সাদুল্লাহপুর, নওগাঁ, সিঙ্গাইর বিল, কোল বাজার, গঙ্গাসাগর, কসবা; ফেনীর বিবিরবাজার, ছাগলনাইয়া, মহারাজগঞ্জ, গুতুমা; রাঙ্গামাটির বরকল, বাঘাইছড়ি; চট্টগ্রাম, কক্সবাজারের টেকনাফ, খাগড়াছড়ির দীঘিনালা, পানছড়ি ও মাটিরাঙ্গা।
উত্তর ও উত্তর-দক্ষিণাঞ্চল রুটের মধ্যে রয়েছে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, তেলিখালী, কারাইতলি, সূর্যপুর, বান্দরকাটা, মুন্সিরহাট, মুন্সিপাড়া, নেত্রকোনার দুর্গাপুর, বিজয়পুর, ভবানী; বাংলাবান্ধা, ভুরুঙ্গাবাড়ী, জিনাইগাতী, সুনামগঞ্জ ও তামাবিল। 
রাজধানীতে মাদক : রাজধানীর সদর রাস্তা, ফুটপাথ, অলিগলি, হোটেল-রেস্তোরাঁ, বস্তি, অভিজাত ফ্ল্যাট- সর্বত্রই বিক্রি হচ্ছে মাদকদ্রব্য। হাত বাড়ালেই মিলছে নেশার নানা সরঞ্জাম। এক সমীক্ষায় দেখা যায়, রাজধানীর পাঁচ শতাধিক স্পটে চলছে প্রকাশ্যে মাদকব্যবসা। এই মাদকের কারণে বাড়ছে অপরাধ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলে আসছেন, মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হলে আইনশৃঙ্খলাও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না মাদক কেনা-বেচা। বরং মাদকের ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। প্রতি মাসে গড়ে আড়াই থেকে তিন হাজার মামলা হচ্ছে এই মাদককে কেন্দ্র করে। গ্রেফতারও হচ্ছে অনেকে। কিন্তু গডফাদাররা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। প্রকাশিত সংবাদের তথ্য অনুসারে, যাত্রাবাড়ী-শ্যামপুরেই রয়েছে মাদক কেনাবেচার প্রায় ২০০ স্পট। ৮৮ নম্বর ওয়াডের্র চেয়ারম্যান গলিতে চলছে ইয়াবা ও ফেনসিডিল ব্যবসা।  মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকায় মাদকব্যবসা জমজমাট, নূরজাহান রোডে ফেনসিডিলের পাইকারি ব্যবসায়ী রয়েছে। মোহাম্মাদিয়া হাউজিং এলাকার ও একই অবস্থা।  টিক্কাপাড়া, রায়েরবাজার, মোহাম্মদপুর ট্রাকস্ট্যান্ডে রয়েছে ফেনসিডিলের স্পট। আগারগাঁও বিএনপি বস্তিতে ও রয়েছে মাদকের পাইকারি বিক্রেতা। কেউ কেউ আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে আটক হলে তাদের অধীনস্তরা তখন স্পট চালায়। হাজারীবাগের বাড্ডানগর ১০ নম্বর গলিতে রয়েছে ফেনসিডিলের স্পট। গণকটুলী সুইপার কলোনি, গণকটুলী মোড়, গণকটুলী বড় বাড়ির মোড় খোলা জায়গায় মনেশ্বর রোড প্রেম গলিতে চলে ইয়বা হেরোইন ও ফেনসিডিল বেচা-কেনা। বিডিআর ১ নম্বর গেট এলাকায় ও মাদক বিক্রির হাট বসে।  সূত্রাপুর থানার কাপ্তানবাজার ও টিপু সুলতান রোডে রয়েছে বাংলামদের স্পট, লোহারপুল ঢালে রয়েছে ফেনসিডিল ও গাঁজার স্পট। এ থানার সবচেয়ে বড় স্পট ধূপখোলা মাঠ। জৈনক এক ব্যবসায়ীর নামে এ স্পটে প্যাথেড্রিন, গাঁজা ও ইয়াবা বিক্রি হয়। সন্ধ্যা নামতেই ভিক্টোরিয়া পার্কে বসে গাঁজার আসর। 
পল্লবী থানা এলাকার সাংবাদিক কলোনির পূর্ব পাশের গলিতে রয়েছে ফেনসিডিলের স্পট। এ ছাড়া ১১ নম্বর সেকশনের মিল্লাত ক্যাম্পে ৫ নম্বর এভিনিউ পানির ট্যাংকিতে, স্বর্ণপট্টিতে ফেনসিডিলের স্পট রয়েছে।
এলাকাবাসীর তথ্য মতে, সাংবাদিক প্লট এলাকায় মাদক ব্যবসা বন্ধ করতে সস্প্রতি পুলিশ ফাঁড়ি বসানো হলেও ব্যবসা বন্ধ হচ্ছে না। কামরাঙ্গীরচরের পাকাপুল এলাকা, আশরাফাবাদে চলে গাঁজার রমরমা ব্যবসা। এছাড়া  এসব ব্যবসা চলে রাজধানীর বারিধারা, নতুন বাজার, নীলক্ষেত, নিমতলী ও চানখার পুল এলাকায়।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহীনির ভূমিকা :
মাদকের এই থাবা থেকে তরুণ সমাজকে মুক্ত করতে মহানগর গোয়েন্দা কর্মকর্তারা কি করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে যগ্ম কমিশনার জানান, একদিনে সমাজকে মাদকমুক্ত করা সম্ভব নয়। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমাদের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এটি নিয়ে কাজ করছে। এবং গত কয়েকবছরে আমাদের অর্জন কম নয়। র‌্যাবের মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনায় বিশেষ ভূমিকা রাখা একাধিক কর্মকর্তা জানান, ইদানিং মাদকাসক্তদের কাছে ফেন্সিডিল ও ইয়াবা ট্যাবলেটের কদর সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা গেছে। এত আটক, এত গ্রেফতার-তবু যেন মাদকের প্রসার থামানো যাচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেন র‌্যাব কর্মকর্তারা।
রাজধানীতে পাইকারি ও খুচরা মিলিয়ে ৫ শতাধিক মাদক স্পট নিয়ন্ত্রণ করছে সহস্রাধিক চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। এছাড়া রয়েছে অসংখ্য ভাসমান বিক্রেতা। বিশাল এ সিন্ডিকেটকে নিয়ন্ত্রণ করতে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রো অঞ্চলের কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। 
কতটা নিরাময় হচ্ছে: কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের হিসেব মতে ২০১৫ সালে মোট মাত্র ৭৭৮ জন মাদকাসক্ত চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছে। কেন্দ্রের রেসিডেন্ট সাইকিয়াট্রিস্ট ডা. জানান, এখানে ভর্তি হতে আসা রোগিদের অনেকেই ভালো হয়ে ফিরে গেছে। আবার একই রোগী একাধিকবারও এসেছে। সব থেকে বড় বিষয় মানুষের মধ্যে সচেতনতার এখনও অনেক অভাব রয়েছে। অশিক্ষিতরাই সবথেকে বেশি মাদকাসক্ত বলে জানান চিকিৎসক। তবে বেসরকারি নিরাময় কেন্দ্রেগুলোর হিসাব অনুযায়ী বছরে প্রায় ১৪ হাজার মাদকসেবী চিকিৎসা নিতে আসে। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, সমাজের এই অবক্ষয় রোধে শিক্ষার্থীদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। একই সাথে গণমাধ্যমও এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে মনে করেন বরেণ্য এ শিক্ষাবিদ। একই সাথে মাদককে একবাক্যে না বলতে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করার কোন বিকল্প নেই বলেও মনে করেন এস এম এ ফায়েজ।

0 comments:

Post a Comment