মাদক:দেশ হারাতে চলছে সুস্থ প্রজন্ম
আলী ফোরকান
ভারতীয় সাবালকত্ব আইন ১৮৭৫ অনুযায়ী ১৮ বছর পূর্ণ হয়নি এমন সব নারী-পুরুষ নাবালক বা শিশু। শিশু অধিকার সনদ ১৯৮৯ অনুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়স্ক সব নারী বা পুরুষ শিশুর অন্তর্ভুক্ত। ১৫ বছর বা ১৭ বছর বয়সী ছেলে বা মেয়েকে শিশু আখ্যায়িত করা হলেও বাস্তব প্রেক্ষাপট অনুযায়ী তা ভিন্ন। আজিজ মালেনির গবেষণা অনুযায়ী ০ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত শিশু, ৬ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত বাল্যকাল, ১১ থেকে ১২ বছর পর্যন্ত কৈশোরের প্রারম্ভ, ১৩ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত কৈশর এবং ১৬ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত সব নারী-পুরুষ নব যৌবনপ্রাপ্ত হয়। এরাই মূলত তরুণ। এটা বয়ঃসন্ধিকাল বলে বিবেচিত। এ বয়সে এসে মন, চিন্তা, চেতনা ও কর্মে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়। বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকে অনেক পরিবর্তন চোখে পড়ে। কেউ চঞ্চল, কেউ ধীরস্থির অথবা কারো মেজাজ অত্যন্ত খিটখিটে হয়। অনেকেই সঙ্গ চায়। সঙ্গদোষে বন্ধুত্বের খাতিরে না বলতে পারায় মাদকাসক্ত বন্ধুর সাহচর্যে নেশায় আসক্ত হয়। প্রথম প্রথম এটি নিছক শখের বশে হলেও পরে সেটি আর শখ থাকে না। নেশায় পরিণত হয়। নেশাজাত দ্রব্য অত্যন্ত সহজলভ্য হওয়ায় নেশায় রঙিন হতে তাদের তেমন বেগ পেতে হয় না। একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী প্রশাসনের ছত্রছায়ায় বিভিন্ন নেশাজাত দ্রব্যের পসরা সাজিয়ে খদ্দেরের অপেক্ষায় বসে থাকেন। এসব খদ্দের বেশিরভাগ উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণী। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়–য়া এ শিক্ষার্থীরা নেশার টাকা সংগ্রহ করতে অনেক সময় অনিচ্ছাকৃত অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ে। চুরি, ছিনতাই, রাহাজানি, কিডন্যাপিং তাদের কাছে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। নেশার টাকা জোগাড় করতে গিয়ে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী অকালে প্রাণ হারায়। নানাবিধ কারণে দেখা দিচ্ছে সামাজিক অবক্ষয়। সীমান্ত ঘেঁষা উপজেলাগুলো এসব নেশাজাত দ্রব্য পাচারের নিরাপদ রুট। চোরাকারবারিরা ভারত সীমান্ত গলিয়ে আনা এসব দ্রব্য ওইসব উপজেলা থেকে ছড়িয়ে দেয় সারা বাংলাদেশে। সেগুলো কিনে নিয়ে নেশাগ্রস্ত তরুণ-তরুণীরা নিজেকে তিলে তিলে ধ্বংস করে দেয়। মূলত সঙ্গদোষে শুরু, পারিপার্শ্বিকতায় পূর্ণ বিকাশ, অতঃপর ধ্বংস। সম্প্রতি এটি দেশে যেভাবে ক্রমবিকাশ লাভ করছে অদূর ভবিষ্যতে এ দেশ হারাতে চলছে একটি প্রজন্ম।
0 comments:
Post a Comment