Saturday, July 16, 2016

মাদকমুক্ত করার বিকল্প নেই

মাদকমুক্ত করার বিকল্প নেই
আলী ফোরকান
মাদকের আগ্রাসন দুনিয়াজুড়েই বড় সমস্যা হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে মাদক গ্রহণের প্রবণতা ধারে কাছের দেশগুলোর চেয়ে কম হলেও এ ক্ষেত্রে ঝুঁকি প্রতিদিনই বাড়ছে। বাইরের দেশ থেকে আসা ফেনসিডিল এবং ইয়াবা ট্যাবলেট বাংলাদেশের মাদকরাজ্যে আধিপত্য বিস্তার করে আছে। দেশের যুবসমাজকে ঘোর অন্ধকারের পথে ঠেলে দিচ্ছে এই আগ্রাসন।
বাংলাদেশে মাদকের বিস্তার তরুণ সমাজকে বিপথে নিয়ে যাচ্ছে। একশ্রেণীর ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার আশায় সর্বনাশা মাদকের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। মাদক ব্যবসায়ীদের একটি বিশাল চক্র সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এই চক্রের খপ্পরে পড়ে অনেক সম্ভাবনাময় তরুণের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তরুণ সমাজ বিপথগামী হয়ে পড়ছে। মাদক গ্রহণের ক্ষেত্রে ইদানীং মেয়েরাও কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। বাবা-মার অঢেল বিত্তবৈভবের সঙ্গে পারিবারিক উদাসীনতার কারণে অনেক ছেলেমেয়েই নেশার পথে পা বাড়াচ্ছে। অন্যদিকে নেশার টাকা যোগাতে অনেকেই ছিনতাই, চাদাবাজি, খুন, রাহাজানির মতো সমাজবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে। দেশে প্রকৃত মাদকসেবীর সংখ্যা কত তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। এদের মধ্যে বড় অংশ তরুণ সমাজ। এদের শতকরা ৮০ ভাগের বয়স ১৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। মহল্লার অন্ধকার গলি থেকে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে মাদক। দেশে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা লক্ষাধিক। এদের মধ্যে দশ শতাংশ নারী। মহিলা ও শিশুদের মাদক ব্যবসার নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মাদকের এই ছোবল থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে সামাজিক বিশৃঙ্খলা দিন দিন বেড়েই যাবে। বিদেশ থেকে এদেশে মাদক আসা এবং সেসব এদেশ থেকে অন্যদেশ পাচার করা অর্থাৎ বাংলাদেশকে মাদক পাচারের এক ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে অনেক দিন ধরে। এসব নিয়ন্ত্রণের জন্য দেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর থাকলেও এর কার্যক্রম চোখে পড়ার মতো নয়। ১৯৯০ সালে যাত্রা শুরু করার পর থেকে যুগোপযোগী পরিকল্পনা ও জনবলের অভাবে এটি যেন অনেকটা অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। অবৈধ মাদক আমদানির জন্য প্রতিবছর দেশ থেকে কোটি কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। দেশে আমদানিকৃত বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্যের খুব সামান্যই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানাগেছে, বর্তমানে বাংলাদেশে নেশার উপকরণ হিসেবে ৩২ ধরনের মাদকদ্রব্য ব্যবহার হচ্ছে। প্রতিনিয়ত মাদকদ্রব্যের তালিকায় সংযোজিত হচ্ছে নতুন নতুন নাম। দেশে মাদক অপরাধের মামলার সংখ্যা কয়েক হাজার। এসব মামলা বছরের পর বছর ধরে ঝুলে আছে। উপযুক্ত সাক্ষী, তদন্ত কাজে কর্মকর্তার গাফিলতিসহ নানা কারণে তদন্ত বিলম্বিত হচ্ছে। অনেক আসামি খালাস পেয়ে যাচ্ছে। আবার কেউ কেউ জামিনে বের হয়ে আসছে। মাদকের প্রভাবে দেশের ভবিষ্যৎ চরম হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। এই মাদক ব্যবসায়ীদের প্রতিরোধ করতে হবে সামাজিক ও আইনগতভাবে। এদের মুনাফার দিকে তাকিয়ে দেশের ভবিষ্যৎ নষ্ট হতে দেওয়া যায় না। তাদের ব্যক্তিগত মুনাফা দেশের সমৃদ্ধি আনবে না। তাই মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। দেশ ও ভবিষ্যতের নাগরিকদের কথা ভেবে এদের জন্য আরো কঠোর শাস্তির বিধান করতে হবে। দৃষ্টান্তমূলক ও সর্বোচ্চ শাস্তি কিছুটা হলেও সমাজে স্বস্তি আনতে পারে। মাদকের সঙ্গে জড়িতরা যত ক্ষমতাশালীই হোক না কেন, তাদের সবাইকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়ার মানসিকতা পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীদের পরিহার করতে হবে। পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীদের কাজ, আইন ও বিচারসম্পন্ন হওয়ার পাশাপাশি পারিবারিক ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলা। সমাজের সকল স্তরে মাদকের কুফল ও সর্বনাশ সম্পর্কে জোর প্রচারণা চালানো। মাদককে রুখে দাঁড়াতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করা।
দেশে মাদকাসক্তের তুলনায় নিরাময় কেন্দ্রের সংখ্যা খুবই নগণ্য। সমাজকে মাদকমুক্ত করতে হলে জনসচেতনার কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য পারিবারিক শিক্ষা ও মূল্যবোধের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসতে হবে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতসহ সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা আরো জোরদার করতে হবে।
দেশে মাদকের বিস্তার রোধ করতে হলে উৎসমূলেই একে ঠেকাতে হবে। তবে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর ওপর দায়িত্ব ছেড়ে দিলেই চলবে না; মাদকের ভয়ঙ্কর নেশা থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে সামাজিকভাবে মাদককে নিরুৎসাহিত করতে হবে। আর এ জন্য মাদকবিরোধী শক্তিশালী প্রচার দরকার। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। মাদকদ্রব্য ব্যবসার সঙ্গে যারা জড়িত এবং যারা মাদকসেবন করে উভয়কেই আইনের হাতে সোপর্দ করতে হবে। এরা যাতে কোনোভাবে আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যেতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। অনেক সময়ই দেখা যায়, এ ক্ষেত্রের চুনোপুঁটিরা বিভিন্ন অভিযানে ধরা পড়লেও গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। অভিযান পরিচালিত হতে হবে গডফাদারদের বিরুদ্ধেও। ইয়াবার মূলোৎপাটনই এখন জরুরি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গণমাধ্যমসহ সবার সহযোগিতায় দেশ মাদকের মারণনেশা থেকে মুক্তি পাক এমনটিই আমার প্রত্যাশা। 

0 comments:

Post a Comment