Saturday, July 2, 2016

পরিবেশ:বন্যা মোকাবেলাও দক্ষ ব্যবস্থাপনা

পরিবেশ:বন্যা মোকাবেলাও দক্ষ ব্যবস্থাপনা 
আলী ফোরকান
আবহমানকাল ধরে গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র নদের প্রবাহিত পানির সঙ্গে আসা বালি ও পলিমাটিতেই এই বাংলাদেশের বেশিরভাগ অঞ্চল গড়ে ওঠে। কিন্তু হাজার হাজার বছর ধরে প্রবাহিত পানি এদেশে বিভিন্ন নদ-নদী দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। নদীর গতিপথ সামান্য পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু নদীতে তলানি জমে চর পড়েনি বা নদী একেবারে বন্ধ হয়ে যায়নি। তা হলে এখন কেন নদী বন্ধ হয়ে যায়? চাঁদপুর রেললাইনের পশ্চিম প্রান্তে দাঁড়িয়ে পশ্চিম দিকে তাকালে এখন দেখা যাবে গাছগাছড়া, বাড়িঘর। কিন্তু পাকিস্তান আমলেও ওখানে দাঁড়িয়ে পশ্চিম দিকে তাকালে দেখা যেতো মেঘনা-পদ্মায় পানি আর পানি। অন্তত ১০/১৫ মাইল দূরে নদীর ওপাড়ে গাছগাছড়ার রেখা। এই বিশাল পানির সমাহারের কারণ চাঁদপুরের কাছেই ভারতের গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি মিলিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়তো। এই বিশাল পানির বহর সারা বছরই প্রবাহিত হতো। এখানে নদীর গভীরতা ছিল ৩০/৪০ ফুট। এই গভীরতায় ইলিশ মাছ সাগর থেকে উঠে এসে মহাআনন্দে ঘুরে বেড়াতো আর খাওয়া-দাওয়া করতো। তেল ভর্তি এই ইলিশ খেতে কী যে স্বাদ। স্বাধীনতার পর সেই ইলিশও গেছে আর নদীও গেছে। বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে যেসব নদী প্রবাহিত হয় সেসব নদীর ভারতীয় অংশে বাঁধ দিয়ে পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করছে ভারত। ইচ্ছামতো ছাড়ছে এবং ইচ্ছামতো বন্ধ করে দিচ্ছে পানি। অথচ পানির গতি স্থির বা কাছাকাছি হলে পানি তার বয়ে আনা পলিমাটি ও বালি ধরে রাখতে পারে না। নদীর তলায় পড়ে যায়। এভাবে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের সকল নদীর নিচে তলানি জমে নদীর তলদেশ উঁচু হয়ে চর জেগে ওঠে এবং কোনো কোনো নদীতে চর পড়ে পড়ে অবস্থা। এই অবস্থায় বেশি পানি এলে তা যেহেতু নদী দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে না তাই মাঠঘাট বাড়িঘর ডুবিয়ে সাগরে গিয়ে পড়ে। এই অবস্থা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার ব্যবস্থা না করলে এদেশ আর বাসোপযোগী থাকবে না। কারণ হিমালয়ের গ্রীষ্মকালের বরফ গলা বিশাল মানস সরোবরে জমা পানি চীন ও ভারত হয়ে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়বেই। তার সঙ্গে যদি অতিবৃষ্টি হয় তবে তো আরও বিপদ। আর এ বিপদ বর্ষাকালেই হয়ে থাকে। যখন গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্রের সাধারণভাবে আসা পানির সঙ্গে অতিবৃষ্টির পানি মিশে ভয়ানক বন্যার সৃষ্টি করে। যা প্রতিবছরই গড়ছে। এর ফলে আমাদের ধান ফসলের ভয়ানক ক্ষতি করে। এ অবস্থা থেকে বাঁচার চেষ্টা আমাদেরকেই করতে হবে। এই সাধারণ এবং অতিরিক্ত পানি যাতে দেশের নদ-নদী হয়ে সহজেই সাগরে গিয়ে পড়তে পারে সেজন্য প্রকল্পের মধ্যে রাখতে হবে।।
১) সকল নদীর পানি প্রবাহের প্রসারতা বৃদ্ধি করার জন্য শত শত ড্রেজার কিনে ৩০/৪০ ফুট পাশে এবং ২০/৩০ ফুট গভীর করে পানি যাওয়ার পথ করে দিতে হবে। এ কাজটা এক নম্বর প্রায়রিটি হিসাবে গণ্য করতে হবে।
২) দুই নম্বরে আসবে দেশে যত বেড়িবাঁধ তৈরি করা হয়েছে সেসব ভেঙে দিতে হবে, যাতে যত পানিই আসুক তা সারা দেশের ওপর দিয়ে গড়াবে। তাতে বর্ষাকালীন পানির উচ্চতা অনেকাংশে কমে যাবে। বেড়িবাঁধগুলো ভেঙে দিলে আরও একটা সুবিধা হবে। বেড়িবাঁধ তৈরি করতে যে বিরাট জমির মাটি কেটে খাল করা হয়েছিল সে খালগুলো মাটি ভরাটের ফলে চাষাবাদের আওতায় চলে আসবে। এতে চাষাবাদের জমির আয়তন বেড়ে যাবে। আমরা আশাকরি সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ এদিকে নজর দিবে।

0 comments:

Post a Comment