পরিবেশে: মূল্যবোধকে জাগাতে হবে
আলী ফোরকান
প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন ও অসচেতনতার সুযোগে আমরা কিছু মানবিক বিপর্যয় নিজেরাই ডেকে আনছি। যেমন রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে রাস্তার উভয় পাশে তুলে রাখা স্যুয়ারেজ লাইনের আবর্জনায় নগরীর পরিবেশ দূষিত ও দুর্গন্ধময় হয়ে উঠছে। ভারী বর্ষা হলেই আবর্জনায় রাস্তা সয়লাব হয়ে যায়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগ পরিচালিত এক সমীক্ষায় জানা যায়, রাজধানীতে প্রতিদিন ২০০ মেট্রিক টন চিকিৎসাবর্জ্য জমে। এইডস, হেপাটাইটিস এ ও বি, মেনিনজাইটিস বিভিন্ন প্রাণঘাতী রোগের কারণ এসব বর্জ্য। সমীক্ষায় আরো বলা হয়, বর্জ্যরে ২০ শতাংশ সংক্রমণযোগ্য ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। বর্জ্য ধ্বংসে ইনসিনেটর মেশিন আছে গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠানে। হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে বর্জ্য ফেলা ছাড়াও ব্যবহার করা টেস্ট টিউব, কাচের াইড, চিকিৎসার যন্ত্রপাতি, কাচের সরঞ্জাম, বেসিনে ধোয়ার ফলে ড্রেনেজব্যবস্থার মাধ্যমে ক্ষতিকর রোগ-জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে। এসব জিনিস অটোক্লেডের সাহায্যে জীবাণুমুক্ত করা সম্ভব। ব্র্যাক ও এআরডিএস নগরীর চিকিৎসাবর্জ্যরে ওপর জরিপ চালিয়ে জানাচ্ছে, চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানের বর্জ্য ধ্বংসের কোনো ব্যবস্থা নেই। নিয়মানুয়ায়ী ইনসিনেটর চেম্বারে বর্জ্য পুড়িয়ে ভস্ম করে ফেলার কথা থাকলেও তা কার্যকর করা হচ্ছে না। এতে মৃত্যুকে সাদরে ডেকে আনছি আমরা। আমাদের পরিবেশ আন্দোলনে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা নদীগুলো আমরা রক্ষা করতে পারছি না। ভূমিদস্যুদের আগ্রাসী মনোভাব, নদীদখল, চরদখল, নদীর ভেতরে যত্রতত্র আবর্জনা ফেলে নদীগুলো ভরাট করে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করছি ও পরিবেশের সৌন্দর্যহানি ঘটাচ্ছি। চির সবুজ অরণ্য আজ বিলীন হয়ে যাচ্ছে লোভাতুর কিছু মানুষের কারণে। নিজেরাই ডেকে আনছি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বন্যা, খরা ও জলোচ্ছ্বাসকে।তাই পরিবেশ আন্দোলন শুধু আলোচনা আর সেমিনারে সীমাবদ্ধ না রেখে খাল-বিল, হাওর, নদী রক্ষা, ভূমিদস্যু ও বনখেকোদের প্রতিরোধ, হাসপাতালের বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলা ও স্যুয়ারেজ সংস্কারসহ পরিবেশ রক্ষায় আমাদের মানবিক মূল্যবোধ ও চেতনাকে জাগ্রত করতে হবে। আর যেখানেই পরিবেশ বিনষ্ট সেখানেই প্রতিবাদ, সেখানেই প্রতিরোধ। এই শ্লোগানে এগিয়ে যেতে হবে। অন্যের জন্য নয়, নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য।
0 comments:
Post a Comment