মুদ্রার দোষ নয়: মুদ্রাদোষ
আলী ফোরকান
এই এক দোষ মানুষের। মুদ্রাদোষ। মুদ্রার সঙ্গে মুদ্রাদোষের কোন যোগসাজশ নেই। মুদ্রা থাক বা না থাক কিছু এসে যায় না। মুদ্রাদোষ থাকবেই। আবার মুদ্রার প্রভাবে শুধু নয় ক্ষমতার প্রভাবেও অনেকের মুদ্রাদোষ দেখা দেয়। কথায় কথায় তখন ক্ষমতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়। মুদ্রাদোষ এমনই সাংঘাতিক ব্যাপার। হ্যাঁ, হাত নেই, পা নেই, নাক নেই, চোখ নেই, কান নেই এমন মানুষ হয়ত দেখতে পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু মুদ্রাদোষ নেই, এমন কাউকে খুঁজে বের করা খুব মুশকিল। ভাতের ভাতার না হয়ে কিলের গোঁসাই যারা, তাদেরও মুদ্রাদোষ আছে। সাংঘাতিকভাবেই আছে। অর্থাৎ বলা চলে মুদ্রা ছাড়া মানুষ কল্পনা করা যেতে পারে কিন্তু মুদ্রাদোষ ছাড়া মানুষ কল্পনা করা যাবে না। মুদ্রাদোষের কথাই যখন এসে গেল। তখন বিষয়টি নিয়ে একটু কথা বলা যাক। মানুষের যেমন রকমফের আছে, তেমনি মুদ্রাদোষেরও রকমফের অর্থাৎ ভ্যারাইটি আছে। অভিজ্ঞজনরা বলছেন, মুদ্রাদোষ মোটামুটিভাবে তিন রকম। আঙ্গিক, বাচনিক আর কাল্পনিক। হাত নাড়া, পা নাড়া, মাথা নাড়া, মুখভঙ্গী করা ইত্যাদি হচ্ছে আঙ্গিক মুদ্রাদোষ। বাচনিক মুদ্রাদোষ হচ্ছে কথার মাত্রার মধ্যে সীমাবদ্ধ। আর কাল্পনিক মুদ্রাদোষ হচ্ছে সবচেয়ে ভয়াবহ। একটা কল্পনা সবসময় মাথার মধ্যে ঘুরপাক খায়। মাথা থেকে বিষয়টা কোনভাবেই আর দূর করা যায় না। দৈনন্দিন আলাপচারিতায় সেটা বার বার এসে যায়। ব্যাপারটা অনেক সময় মনোবিকারের পর্যায়ে চলে যায়। এই মুদ্রাদোষ যাদের আছে, তাঁরা কথায় কথায় নিজের প্রতিভা জাহির করেন। কখন কোথায় কী বলছেন কোন খেয়াল থাকে না। আর কাল্পনিক মুদ্রাদোষের মতো বাচনিক মুদ্রাদোষও ভয়াবহ। কেউ কেউ আছেন হঠাৎ হঠাৎ ক্ষেপে যান, এটাও কী এক ধরণের মুদ্রাদোষ। কেউ কেউ সময় অসময় নেই অন্যের ত্রুটি খুঁজে বেড়াতে পছন্দ করেন এটাও কী মুদ্রাদোষ? আবার অনেকেই মামলার ভয় দেখিয়ে বেড়াতে বেশ পছন্দ করেন, এটাকেও কি মুদ্রাদোষের পর্যায়ে ফেলা যায়? মনোবিজ্ঞানীরা ভালো বলতে পারবেন। বিশ্লেষণে আরও দড় হবেন তাঁরা। তবে মোদ্দাকথা দাঁড়াচ্ছে এই যে, মুদ্রাদোষ জিনিসটা খুব মারাত্মক। এক ভদ্রলোকের মুুদ্রাদোষ ছিল। কথায় কথায় তিনি ‘তোমার’ শব্দটি যোগ করে দিতেন। গেছেন এ বন্ধুকে দাওয়াত করতে। খাবারের মেন্যু কী হবে সেটা বলছিলেন তিনি বন্ধুকে। কেমন করে বললেন, সেটা জানা যাক। বললেন, ’কাল আমার বাড়িতে তোমার দাওয়াত। আসবেই কিন্তু না এলে ভাই তোমার বিচার হবে। তোমার কব্জি ডুবিয়ে বন্ধুরা খাওয়া-দাওয়া করবো। ধরো তোমার খাসির মাংস ভুনা হবে। তোমার বেগুন ভাজা হবে। তোমার রুই মাছের দোপেঁয়াজি হবে। আর তোমার মাথা দিয়ে হবে মুড়োঘন্ট!’ মুদ্রা থাকলেই যে মুদ্রাদোষ হবে তার কোন নিশ্চিত করে সেটা বলো যাবে না। তবে মুদ্রার গুণে অনেকে অনেক কিছু করেন। কেউ কেউ ধরাকে সরা জ্ঞান করে ঘোরেন ফেরেন এবং দিব্বি পান চিবোতে চিবোতে আড্ডার মধ্যমনি হয়ে জমিয়ে দেন আসর। তাদের ওপর আর কিছুর আছর আছে এমনটি মনে করার কোন কারণ নেই। মুদ্রা ভর করলে সবারই যে অমন দশা হবে এমন কোন কথা নেই। মুদ্রা থাকলে অনেককে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মনে হয়। মুদ্রার এমনই গুণ। কেউ কেউ অবশ্য এটাকে মুদ্রার দোষ বলে অভিহিত করতে চান। মুদ্রা থাকলে কি মুদ্রা দোষ থাকবেই? আবার মুদ্রা না থাকলেও মুদ্রাদোষ থাকে।
0 comments:
Post a Comment