Thursday, June 30, 2016

পরিবেশ:দূষণমুক্ত বাসযোগ্য দেশ গড়ার সহজ উপায়

পরিবেশ:দূষণমুক্ত বাসযোগ্য দেশ গড়ার সহজ উপায়
আলী ফোরকান
বাংলাদেশের অন্যতম পরিবেশগত সমস্যা সুষ্ঠু পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা। এ সমস্যা বিশেষভাবে চিহ্নিত। ক্ষুদ্র আয়তনের বাংলাদেশে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ক্রমশ জটিল থেকে জটিলতর রূপ ধারণ করছে। অপরিকল্পিত নগরায়ন প্রক্রিয়ায় বিক্ষিপ্তভাবে গড়ে উঠেছে ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শিল্প-কারখানা। এসব অবকাঠামোর জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পয়ঃনিষ্কাশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা নেই। ফলে অসংখ্য মানুষের বাসগৃহ থেকে প্রচুর পরিমাণ গৃহস্থালি বর্জ্য প্রতিদিন এখানে-সেখানে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে। এছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য কেন্দ্র , শিল্প-কারখানা, কৃষিক্ষেত্র, শোধনাগার, কসাইখানা এবং উন্মুক্ত স্থান থেকে সংগৃহীত তরল বজ্র্য পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনাকে আরো জটিল করে তুলছে। রান্নাঘরের পরিত্যক্ত তরল পদার্থ, কারখানার তেল, কসাইখানার রক্ত, ছাপাখানার রং, এমনকি হাসপাতালের বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থের নিরাপদ অপসারণ না হওয়ায় পয়ঃনিষ্কাশন হয়ে পড়ছে ঝুঁকিপূর্ণ । কোনো একটি এলাকার কঠিন , আধা কঠিন ও তরল বর্জ্য আবর্জনাকে সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নিরাপদ অপসারণ নিশ্চিত করা হচ্ছে পরিবেশ সুরক্ষার অন্যতম প্রধান উপায়। বিভিন্ন উৎস থেকে উৎপন্ন আবর্জনা সংগ্রহ, স্থানান্তর, প্রক্রিয়াকরণ এবং চূড়ান্ত অপসারণ কার্যক্রম সুচারুরূপে সম্পাদন করার মাধ্যমে বর্জ্য অপসারণ ব্যবস্থাকে সুনিশ্চিত করা সম্ভব। একটি এলাকার জনস্বাস্থ্য, কারিগরি ব্যবস্থাপনা এবং অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সফল কার্যকারিতা নির্ভর করে । আঞ্চলিক পরিবেশ এবং এলাকার জনগণের প্রাত্যহিক জীবনযাপন পদ্ধতিও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। এসব স্থানে কঠিন বর্জ্য অপসারণ অথবা তরল বর্জ্য নিষ্কাশনের কোনো সুযোগ নেই। ফলে তা যেখানে সেখানে পচে-গলে পরিবেশকে মারাত্মকভাবে দূষিত করে। এসব ছিন্নমূল মানুষকে পুনর্বাসন করা ছাড়া সেখানকার পয়ঃনিষ্কাশন সুনিশ্চিত করা সম্ভব নয়। পরিবেশ সুরক্ষার লক্ষ্যে দেশের সর্বত্র পয়ঃনিষ্কাশনকে আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত করে তুলতে জরুরিভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে ঃ
০০ তরল বর্জ্যের নিরাপদ অপসারণ নিশ্চিত করতে সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের কোনো বিকল্প নেই। ০০ শহরে-বন্দরে সর্বত্র পর্যাপ্তসংখ্যক সঠিক মাপের উন্মুক্ত ড্রেন ও ভূ-গর্ভস্থ সিউয়ার নির্মাণ করতে হবে। ০০ ঘর-বাড়িতে সেফটিক ট্যাংক ও ড্রেন নির্মাণ বাধ্যতামূলক করতে হবে। এসব ড্রেনকে সঠিকভাবে মেইন সিউয়ারের সাথে সংযোগ দিতে হবে। ০০ নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য জনবল বাড়াতে হবে। ০০ বৃষ্টির অতিরিক্ত পানি সহজে নিষ্কাশিত হওয়ার জন্য রাখতে হবে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। ০০ কেন্দ্রীয়ভাবে পয়ঃশোধনাগার নির্মাণ করে পরিশোধিত তরল বর্জ্য চূড়ান্ত অপসারণস্থলে নিয়ে যেতে হবে। ০০ দখল হয়ে যাওয়া নদী, খাল উদ্ধার করে তা পুনর্খননের ব্যবস্থা নিতে হবে। নদ-নদীকে ফিরিয়ে দিতে হবে তার আসল রূপ। ০০ নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশন নিশ্চিত করতে শহরের দূরবর্তী কোন স্থান বেছে নিতে হবে । ০০ কঠিন বর্জ্যকে রিসাইক্লিং করার জন্য আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত প্রকল্প হাতে নিতে হবে। এসবের নিয়মিত মেরামত ও সংরক্ষণের পদক্ষেপ নিতে হবে। ০০ সুষ্ঠু পয়ঃনিষ্কাশন নিশ্চিত করতে সরকারী উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারী সংস্থার সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে। ০০ পরিবেশ সুরক্ষার জন্য পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার সাথে সংশ্লিষ্ট শ্রমশক্তিকে প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে। ০০ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাকে সক্রিয় রাখতে দেশের আপামর জনগণকে সচেতন করে তোলার কোনো বিকল্প নেই। ০০ এ ক্ষেত্রে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে ব্যবহার করা যেতে পারে। পরিবেশ সুরক্ষায় পয়ঃনিষ্কাশন এবং তাতে জনগণের করণীয় সম্পর্কিত লিফলেট বিতরণ এবং মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করলে তা ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশকে সুরক্ষার জন্য পয়ঃনিষ্কাশন সংশ্লিষ্ট আইন প্রণয়ন করে তার সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করা বিশেষ জরুরি। আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্থি প্রদানের ব্যবস্থা রাখা দরকার। সুন্দর পরিবেশ সুস্থ জীবনের জন্য একান্ত অপরিহার্য। তাই পরিবেশ সুরক্ষায় দেশের আপামর জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। গড়ে তুলতে হবে দূষণমুক্ত বাসযোগ্য বাংলাদেশ।


0 comments:

Post a Comment