Thursday, June 30, 2016

পরিবেশ: গাছকে ভালোবাসতে হবে






পরিবেশ: গাছকে ভালোবাসতে হবে
আলী ফোরকান
প্রাচীনকালে মানুষ এবং প্রকৃতির মধ্যে একটা নিবিড় সম্পর্ক ছিল। সেকালে প্রকৃতি এবং মানুষের মাঝে কোনো সংঘাত ছিল না। কিন্তু সামপ্রতিককালে পরিবেশ এবং মানুষের মধ্যে সে সম্পর্কের অবসান ঘটেছে। মানুষ প্রকৃতির দাস। কিন্তু বর্তমান সময়ে এর উল্টোটাই দেখা যাচ্ছে। মানুষ প্রকৃতির প্রতি বিভিন্নভাবে অত্যাচার এবং ধ্বংসাত্মক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। পরিবেশমুলক সমস্যাগুলো ভয়ংকর রূপ ধারণ করে চলেছে। বিজ্ঞানীদের মতে, একটি সুস্থ প্রাকৃতিক পরিবেশ গড়ে তুলতে হলে মোট সে দেশের জমির তেত্রিশ শতাংশ বনাঞ্চল থাকা উচিত। তাহলেই প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব। দেশের নগর-মহানগরগুলোর বায়ু অতি বিপজ্জনকভাবে দুষিত হচ্ছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট প্রভৃতি নগরে বায়ু দুষণের মাত্রা অত্যধিক। কলকারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া এবং বিষাক্ত গ্যাস বায়ুকে বিষাক্ত করে তুলছে। দেশের প্রায় ৭০ শতাশ মানুষ নদী উপত্যকায় বসবাস করেন। এ অঞ্চলগুলোতে জনসংখ্যা বৃদ্দি এবং শিল্পায়নের ফলে নদীগুলো দুষিত হচ্ছে। ভূমি অবক্ষয় দেশের পরিবেশজনিত একটি গভীর সমস্যা। নদীগুলোতে তীর ভাঙনের ফলে মাটি ভরাট হয়ে নদীর গভীরতা কমে আসছে। ফলে নদীর পানি ধারণের ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। ফলে বন্যা এক ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করছে। দেশের মূল নদীগুলোর বুকে প্রতি বছর হাজার হাজার টন মাটি খসে পড়ে। এর ফলে নদীর গভীরতা কমে আসছে এবং বন্যা সমস্যাকে আরো জটিল করে তুলছে। পরিবেশ শিক্ষা তুলনামূলকভাবে একটি নতুন অধ্যয়নের ক্ষেত্র। মানব সভ্যতার বিকাশ প্রত্রিক্রয়ায় সমান্তরালভাবে উদ্ভীত পরিবেশজনিত সমস্যাগুলোর সঙ্গে মোকাবেলা করতে হলে পরিবেশ শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা আজ সবাই উপলব্ধি করছেন। পরিবেশ শিক্ষা পরিবর্তিত পৃথিবীর প্রতি দায়িত্বশীল এবং জীবনজোড়া শিক্ষা। পরিবেশকে সংরক্ষণ এবং উন্নয়নের ক্ষেত্রে মানুষের জ্ঞান-অভিজ্ঞতা বৃদ্দি করে একটি সুস্থ’ পৃথিবী গড়াটাই শিক্ষার মূল লক্ষ্য। পরিবেশ শিক্ষাই মানুষ এবং পরিবেশের মধ্যকার আন্ত:সম্পর্কের বিষয়ে সচেতনতা, জ্ঞান, কৌশল এবং উপযুক্ত মনোভাবসম্পর্ণ ব্যক্তি গড়ে তুলতে শিক্ষাই অভিজ্ঞতা প্রদান করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশু অবস্থা থেকেই যদি পরিবেশ এবং মানুষের মধ্যকার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া তথা পারস্পরিক নির্ভরশীলতার কথা বোধগম্য করে তুলে দেওয়া যায় তবে পরিবেশীয় সমস্যা সমাধানের পথ আপনাআপনিই বেরিয়ে আসবে। মানুষ পৃথিবীর বুকে থাকা সম্পদগুলোর ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ আনতে চাইছে। বন-জঙ্গল থেকে আমরা জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করি। গাছপালা প্রকৃতির শোভাবর্ধক এবং মানুষের প্রতি সৃষ্টিকর্তার আপন বৈচিত্র্যের লীলাস^রূপ। উদ্ভিদেরও যে পুরুষ ও স্ত্রী ভেদ আছে তা মাত্র পঁচিশ বছর আগেও বৈজ্ঞানিকদের জানা ছিল না। অথচ পবিত্র কোরআনে চৌদ্দ শ’ বছর আগেই অত্যন্ত পরিস্কার ভাষায় প্রকাশ করা হয়েছে, ‘যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে করেছেন বিছানা এবং তাতে করে দিয়েছেন তোমাদের চলার পথ, তিনি আকাশ থেকে বারি বর্ষণ করেন এবং তা ™^ারা উৎপন্ন করেন বিভিন্ন শ্রেণীর উদ্ভিদ জোড়া জোড়া হিসেবে।’ আমাদের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, কবরস’ান ও ঈদগাহের আশপাশে অনেক জায়গা আছে যেখানে অনেক গাছপালা লাগানো যায়। এটা আমাদের পরিবেশকে করবে আরো সুন্দর ও মনোরম। কিন্তু আমরা সেদিকে লক্ষ্য করি না। প্রত্যেককে ‘সবুজ বিপ্লব’-এর প্রতি অনুপ্রেরণা দেওয়া হচ্ছে কিন্তু যথেষ্ট সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। বনের গাছপালা থেকে শুধু কাঠ, রাবার, ওষুধ বা ফলমূলই সংগৃহীত হয় না, এগুলো থেকে বিভিন্ন ধরনের তেলও আহরণ করা হয়। গাছ কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে বাতাস নির্মল করে এবং অক্সিজেন  ছাড়ে, যা মানুষের বেঁচে থাকার নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। গাছ আমাদের জন্য বিশেষ উপকারী। ভূমিক্ষয় রোধ, জমির উর্বরতা বৃদ্দি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের প্রকোপ কমাতে গাছপালা সহায়তা করে। প্রাকৃতিক পরিবেশকে শীতল, সুন্দর, মনোরম ও সুস্বাস্থ্যকর রাখতে গাছ বিশেষ ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন ধরনের গাছগাছড়া, লতাপাতা ইত্যাদি ওষুধ হিসেবেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তাছাড়া বিভিন্ন গাছের ফুল থেকে মধু আহরণ করে মৌমাছি মানুষের ব্যবহারের জন্য একটি উৎকৃষ্ট এবং উন্নতমানের খাদ্য প্রস্তুত করে। স্কুল পাঠ্যক্রমে এসব বিষয় ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করলে ছোটবেলা থেকেই শিক্ষা গ্রহণ করে পরবর্তী পর্যায়ে সবাই ভূমিকা রাখতে পারবে। পরিবেশ রক্ষার দায় সর্বাগ্রে মানুষেরই। কতিপয় মানুষের অপরিণামদর্শী কর্মকা-ে পরিবেশের ওপর যে আঘাত আসছে এর ভবিষ্যৎ পরিণাম হতে পারে আরো ভয়াবহ। কাজেই সতর্ক হওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। গাছ আমাদের জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। তাই গাছকে আমাদের ভালোবাসতেই হবে। 



0 comments:

Post a Comment