Saturday, June 18, 2016

পারিবারিক কলহে খুন: সামাজিক অবক্ষয়

পারিবারিক কলহে খুন: সামাজিক অবক্ষয়
আলী ফোরকান
স্বার্থের দ্বন্দে পারিবারিক কলহ একটি পুরনো বিষয়। রাজধানীসহ সারা দেশে এ কলহের ঘটনা বাড়ছে। কিন্তু সম্প্রতি পারিবারিক কলহের জের ধরে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা নাড়া দিয়েছে সব মানুষকে। সম্পত্তির সংঘাত কিংবা পারিবারিক কলহের জের ধরে নৃশংস হত্যাকান্ড ভাবিয়ে তুলেছে তাদের। এসব নৃশংস ঘটনার মধ্যে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে এক যুবকের হাতে একই পরিবারের চাচা-চাচি ও দাদিকে নৃশংসভাবে খুন হয়। সবুজবাগে আপন ভাইয়ের হাতে ভাই-ভাবীকে কুপিয়ে হত্যা করে। কাফরুলে আপন ভাইয়ের হাতে ভাই খুন এবং সর্বশেষ খিলগাঁওয়ে পারিবারিক কলহের জের ধরে নিজের শরীরে পেট্রোল ঢেলে একই পরিবারের মা-ছেলের মৃত্যু ও বনশ্রীতে গৃহবধূ সোমার মৃত্যু ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এসব হত্যাকান্ড যতই নৃশংস হোক, তা আগে ভাগে আইন-শৃ´খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে আগাম প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবে এ ধরনের অপরাধ ঘটে যাওয়ার পর অপরাধীর উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে ভয়ে অনেক ক্ষেত্রেই পারিবারিক অপরাধ কমে আসে। ঘটনা ঘটার আগে সমাজের মানুষকে নৈতিকভাবে সচেতন হতে হবে। সামাজিক অবক্ষয় রোধ করতে পারলে এ ধরনের নৃশংস অপরাধ থেকে আগাম রক্ষা পাওয়া সম্ভব বলেও তারা মনে করেন। স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্র জানায়, যাত্রাবাড়ীর শহীদ ফারুক সড়কের বাসিন্দা ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান মিল্টনের অপর দুই ভাই লিপটন ও লিঙ্কনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে সম্পত্তির ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে ঠান্ডা লড়াই চলে আসছিল। নিজ বাসায় ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান, তার স্ত্রী বীথি রহমান এবং মিজানের মা সুফিয়া খাতুনকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকান্ডের পর গোয়েন্দা পুলিশ নিহত মিজানের ভাতিজা তৌফিকুর রহমান সুমনকে গ্রেফতার করে। বর্তমানে সুমন জেলহাজতে রয়েছে। সবুজবাগের কুসুমবাগে নিজ বাসায় বেকার ছোট ভাই শাহিনকে কাজকর্ম করতে বলেন বড় ভাই মোস্তাফিজ। এতে দুই ভাইয়ের মধ্যে বাকবিতন্ডার একপর্যায়ে তা হাতাহাতিতে রূপ নেয়। এ সময় মোস্তাফিজের স্ত্রী রাবেয়া বেগমকেও আক্রমণ করেন শাহিন। মোস্তাফিজ স্ত্রীকে রক্ষা করতে গেলে তাকেও বঁটির আঘাত করা হয়। বঁটির কোপে ঘটনাস্থলেই মারা যান রাবেয়া বেগম। এর এক দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মোস্তাফিজও। পারিবারিক হিংস্রতায় এতিম হয় মোস্তাফিজ-রাবেয়া দম্পত্তির নিস্পাপ দুই শিশু সন্তান সিয়াম (৩) এবং মৃদুলা (১)। রাজধানীর পুরনো কচুক্ষেতের ১৪৩/১ নম্বর ৬ তলা বাড়িটি হাজি ইসমাইল হোসেনের। তিনি মারা যাওয়ার পর তার স্ত্রী মঞ্জু বেগম দুই ছেলে ইলিয়াস কাঞ্চন ও ইমরান হোসেন মিঠুকে নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। কিন্তু বাড়ি ভাড়ার টাকা ও বাড়িটির মালিকানা নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে দ্বন্দ¡ শুরু হয়। এ নিয়ে খুনের ঘটনা ঘটে। বড় ভাই ইলিয়াস কাঞ্চন ওই বাসাতেই বঁটি দিয়ে কুপিয়ে আহত করে ছোট ভাই মিঠুকে। ওই দিনই হাসপাতালে মিঠু মারা গেলে তার স্ত্রী কাফরুল থানায় একটি মামলা করেন।
একই রাতে খিলগাঁওয়ের গোড়ানে নিজ বাসায় অগ্নিদগ্ধ হন একই পরিবারের চারজন। তাদের মধ্যে পরের দিন ওই পরিবারের ছেলে মোহাম্মদ আলী জুয়েল ও তার মা আলেয়া বেগম চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলে বেরিয়ে আসে তাদের সংসারের কলহের বিষয়টিও। প্রবাসী বোনের গাড়ি ভাড়ার টাকা আত্মসাতের অজুহাতে বেকার ছেলে জুয়েলকে অপবাদ দেয় বাবা আবদুল হাই ও বোন সুমী আক্তার। রাতে ক্ষোভে-অপমানে বাসার মধ্যেই নিজ শরীরে পেট্রোল ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায় জুয়েল। তাকে বাঁচাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হন মা আলেয়া বেগম, বাবা আবদুল হাই এবং স্ত্রী খুকুমনি। অপবাদের জ্বালা থেকে জুয়েল তাকে সঙ্গে নিয়ে মৃত্যুবরণ করলেও স্ত্রী খুকুমনি এখনও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিয়ে বেচেঁ আছেন। বাবা চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেছেন। রাজধানীর দক্ষিণ বনশ্রীতে ঘটে যায় আরও একটি মর্মান্তিক ঘটনায়। বাসায় ঢুকে প্রতিবন্ধী ছেলের সামনেই ওই বাসার গৃহকর্ত্রী সোমা আক্তার সুমীকে শ্বাসরোধ করে দুর্বৃত্তরা। গৃহবধূ সুমী হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে তার স্বামী মাহফুজকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। পারিবারিক কলহে নৃশংস হত্যাকান্ড বেড়ে যাওয়ার কারণ ও এর প্রতিকার সম্পর্কে জানতে চাইলে হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী মানবাধিকার নেত্রী এলিনা খান বলেন, পারিবারিক এবং সামাজিক অবক্ষয়ের কারণেই পরিবারের ভেতর এ ধরনের নৃশংস ঘটনা ঘটছে।



0 comments:

Post a Comment