পরিবেশ ও বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী দেশ
আলী ফোরকান
পরিবেশ বিপর্যয় এমন এক ধরনের বিপর্যয়। যেখানে মানুষের হাত অনেকাংশেই সীমিত। বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্পের মতো বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে আমরা কেন, অনেক উন্নত দেশও অসহায়। অথচ কিছু ক্ষেত্রে এ ধরনের পরিবেশ বিপর্যয়ের জন্য মানবসমাজও কম দায়ী নয়। ক্রমাগতভাবে বিশ্বের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে অপেক্ষাকৃত অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো এর দ্বারা দারুণভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। অনেকেই ধারণা করছেন, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশ পানিতে তলিয়ে যাবে। এজন্য দায়ী হবে ওইসব উন্নত দেশ। যারা এমনকি পরিবেশ বিপর্যয়ের শিকার দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ক্ষেত্রেও রীতিমতো অনীহা প্রকাশ করছে। মানবসৃষ্ট পরিবেশ বিপর্যয়ের দায় আমাদের। আমরা ইচ্ছা করে এ ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনছি। আমাদের ইচ্ছাই যথেষ্ট এ ধরনের বিপদ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে। ক্রমেই জনসংখ্যা বৃদ্ধি আমাদের ভয়াবহ এক পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। যা পরিবেশ বিপর্যয়ের একটি অন্যতম কারণ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির বর্তমান হার অব্যাহত থাকার অর্থ হলো, চরম দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, স্বাস্থ্যহীনতার মতো নানা সমস্যা বেড়ে যাওয়া। কোনো দেশই শিল্পায়নকে অবজ্ঞা করতে পারে না। কৃষিভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা থেকে শিল্পভিত্তিক সমাজব্যবস্থার উত্তরণ একটি দেশকে উন্নতির স্বর্ণ শিখরে নিয়ে যেতে সহায়তা করে। আমাদের অবশ্যই শিল্পায়নের প্রতি নজর দিতে হবে; কিন্তু মনে রাখতে হবে এর দ্বারা যেন পরিবেশের বিপর্যয় না ঘটে। কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ নির্গমনসহ পরিবেশের যাবতীয় বিষয় লক্ষ্য রেখে শিল্প-কলকারখানা স্থাপনে উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে হবে। পরিবেশ বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত বিষয় ভারত সরকার কর্তৃক টিপাইমুখ বাঁধ। ফারাক্কায় বাঁধের মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলের মরুময়তা কারো অজানা নয়। ফারাক্কা বাঁধ আর্ন্তজাতিক নদী শাসন আইনের পরিপন্থী বলে বিবেচনা করা হয়। আমরা আরেকটি সামনে মরুময়তার দিকে যাচ্ছি। ভারত সরকার ইতিমধ্যে টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণের কাজ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের জনগণ, এমনকি ভারতের টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ সংলগ্ন আশপাশ এলাকা ও রাজ্যগুলো এ বাঁধ নির্মাণের বিপক্ষে আন্দোলন জোরদার করছে। কিন্তু ভারত সরকার শুধু বাংলাদেশের জনগণই নয়, নিজ দেশের জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে বাঁধ নির্মাণের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সাধারণের ধারণা, এ বাঁধ নির্মাণের ফলে শুধু সিলেট বিভাগই নয়, বৃহত্তর ময়মনসিংহ, ঢাকা, নরসিংদী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাও মরুময়তার শিকার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আশার কথা হলো, বর্তমান সরকার ভারতের সংশ্লিষ্ট এলাকায় একটি সংসদীয় প্রতিনিধি দল প্রেরণ করেছে। তাদের কাজ ছিল বিষয়টির বিভিন্ন দিক সূক্ষ্মভাবে অনুধাবন করা এবং পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা। আশা করব, সরকার এ ক্ষেত্রে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে। প্রশ্ন হলো, ভারত সরকার সত্যিই যদি বাঁধ নির্মাণ করে এবং বাংলাদেশের পরিবেশের ওপর যদি এর বিরূপ প্রভাব পড়ে তাহলে আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াব। আমরা আর কত মানবসৃষ্ট পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হব। আমাদের খুব বেশি কষ্ট হওয়ার কথা নয়, যখন প্রকৃতি আমাদের ওপর বিরূপ আচরণ করে; কিন্তু এমন আচরণ যখন মানুষ কর্তৃক আমরা পাই তখন সত্যিই কষ্ট অনুভব করি। নিজেদের ভেতর ক্রোধ জন্মে; কিন্তু এর বহিঃপ্রকাশ নেতিবাচকভাবে ঘটাতে পারি না। আমরা শপথ নেই, মানবসৃষ্ট পরিবেশ বিপর্যয়ের প্রতি আমরা সোচ্চার হব। পরিবেশ উন্নয়ন ও সংরক্ষণে ভূমিকা রাখব। দেশকে পরিবেশ বিপর্যয় থেকে রক্ষা করব।
0 comments:
Post a Comment