পরিবেশ: শিক্ষার্থীদের সবুজ বনানীর স্বপ্ন
আলী ফোরকান
আমরা কর্পোরেট এনভায়রনমেন্ট রেসপনসিবিলিটির ওপর একটি সেমিনার আয়োজন করি। যেখানে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানরা দূষণবিরোধী শপথলিপিতে স্বাক্ষর করে।’ জানালেন ইউনাইটেড ন্যাশনস ইয়ুথ অ্যান্ড স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের জেনারেল সেক্রেটারি আফরিন সুলতানা। তরুণ শিক্ষার্থীরা পরিবেশ সম্পর্কে কতটা সচেতন জানতে চাইলে তিনি এভাবেই জানালেন তার সংগঠনের কর্মসূচির কথা। ইউনিস্যাবেরর মতো স্বেচ্ছাসেবী দল ছাড়াও এখন প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে উঠেছে পরিবেশ ক্লাব। ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ক্লাব নিয়মিত গাছের চারা বিতরণের কাজ করে। নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটি আর্থ ক্লাব মূলত স্কুল-কলেজ পর্যায়ে সচেতনতা গড়ে তোলার কাজ করে। ক্লাবটির প্রেসিডেন্ট আরিফ এলাহী মজুমদার ক্লাবের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিষয়ে জানান, তারা ছাত্র, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ এবং কর্পোরেট হাউস। এদের সবার মাঝে একটি মৈত্রী সেতু তৈরি করে সামষ্টিক পরিবেশ আন্দোলনে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন। বৃক্ষরোপণ অভিযান ও ক্যাম্পাস ক্লিনআপসহ বছর ঘুরে পরিবেশ বিষয়ক কার্যক্রম নিয়ে থাকে আরও কটি ক্লাব। তবে ব্যক্তিগতভাবেও তরুণরা পরিবেশ রক্ষায় সমান উদ্দীপ্ত। ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের ফার্মেসির ছাত্রী নুজহাতুল কাওয়ানাইন বলেন, ‘আমি কখনও কোক বা চিপস খেয়ে বোতল বা প্যাকেটটা রাস্তায় ছুড়ে ফেলি না। হয় ডাস্টবিন খুঁজি, নয়তো ব্যাগে করে বাসায় নিয়ে এসে পরে ময়লার ঝুড়িতে ফেলি। প্রথমদিকে এ নিয়ে বন্ধুরা হাসাহাসি করলেও এখন ওরাও আমাকে অনুসরণ করছে।’ বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র জিয়াউদ্দিন আহমেদ ‘গ্রিন কার’ যা দূষণমুক্ত ও পরিবেশ সহায়ক, বানানোর স্বপ্ন দেখেন বলে জানান। বুয়েটরই ইইই বিভাগের ছাত্র সৌমিক মহিয়ান জানালেন, ‘প্লি¬জ, তরুণ সমাজকে একটা অনুরোধ। আপনারা মোবাইলের ব্যাটারি নষ্ট হয়ে গেলে যেখানে সেখানে ফেলবেন না। এটি পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। দয়া করে ব্যবহƒত ব্যাটারি নিকটস্থ আপনার মোবাইল কোম্পানির কাছে ফেরত দিন।’ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মাহমুদ হাসান মেয়াদোত্তীর্ণ বাস, ট্রাক যেগুলো সীসার মতো বিষাক্ত পদার্থ বাতাসে ছড়াচ্ছে। সেগুলো সরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান সংশ্লি¬ষ্ট প্রশাসনকে। ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের মাস মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশনের ছাত্রী প্রেমা ধরের উদ্যোগটা একটু আলাদা। বন্ধুমহলে গান গাওয়ার জন্য বিখ্যাত প্রেমা জানালেন গানের আসরে তার দুয়েকটা গান থাকে প্রকৃতিনির্ভর। এভাবেই সবাইকে পরিবেশ সচেতন করেন তিনি। তিনি জানালেন, ‘স্বপ্ন দেখি এক সবুজ বনানীর, যার বুক চিড়ে চলে গেছে মেঠোপথ, আমি অবারিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে গুনগুন করছিÑআমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ। তার সবুজ বনানীর স্বপ্ন দেখা টা অমূলক নয়। কারন,শত শত বছর আগে পৃথিবীর সামগ্রিক পরিবেশ নিয়ে ভাবতে হয়নি পৃথিবীর মানুষকে। কিন্তু নানা কারণে বিশ্বের পরিবেশ ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, আগামী কয়েকশ’ বছরের মধ্যেই আমাদের এ পৃথিবী মানুষ বসবাসের অনুপযোগী হবে। কারণ পৃথিবীতে অক্সিজেন কমে গিয়ে মানুষ, অন্যান্য প্রাণী, গাছপালা প্রভৃতির জন্য ক্ষতিকর এমন গ্যাসের পরিমাণ বাড়ছে। এদিকে মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। জনসংখ্যা আরো বাড়বে। এমতাবস্থায় বিশ্বের পরিবেশ যদি মানুষ বসবাসের অযোগ্য বা অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে তবে শত শত কোটি মানুষের অস্তিত্ব হুমকির মধ্যে পড়বে। যা আমরা কিছুতেই আশা করতে পারি না। কারণ এ সুন্দর বাসযোগ্য পৃথিবীর পরিবেশ ভালো বা স্বাভাবিক রাখার দায়িত্ব বিশ্বের সব মানুষের। পরিবেশবাদীরা বলেছেন, মানুষের অসতকর্তা বা অসচেতনতাই পৃথিবীর পরিবেশ খারাপ হওয়ার জন্য বেশি দায়ী। মানুষ বিজ্ঞানের নিত্যনতুন উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। উন্নত দেশে যানবাহন, কলকারখানা প্রভৃতির সংখ্যা বেশি। এগুলো থেকেও প্রচুর কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হচ্ছে। বর্তমানে অনুন্নত দেশও এসব ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। ফলে বাড়ছে বিশ্বের তাপমাত্রা। গলছে বরফ, বাড়ছে সাগরের পানির উচ্চতা। ফলে ভয়াবহ সমস্যায় পড়ে যাচ্ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের কাছাকাছি বসবাসরত নিচু অঞ্চলের মানুষ।বর্তমানে বাংলাদেশও চরম পরিবেশ বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে চলছে। গাছপালা কমে যাচ্ছে, ভুগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে চলে যাচ্ছে। তবে আগে থেকে মানুষ যদি এ ব্যাপারে সতর্ক হতো তবে হয়তো আমাদের দেশের পরিবেশও বর্তমানের মতো এত খারাপ হতো না। বর্তমানে বাংলাদেশে শুরু হয়েছে তিন মাসব্যাপী বৃক্ষরোপণ আন্দোলন। সরকারের এ পদক্ষেপ পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে আশা করা যায়। এখন থেকে যদি প্রতিটি দেশই পরিবেশ রক্ষার প্রতি মনোযোগী হয় তবে হয়তো এ সংক্রান্ত ভালো ফল পাওয়া যাবে।
0 comments:
Post a Comment