শিশুশ্রম ও শিশু অধিকার
আলী ফোরকান
শিশুশ্রম অবসানকল্পে দক্ষিণ এশিয়ায় শিশু বিষয়ক রাওয়াল পিন্ডি ঘোষণার অন্যতম সমর্থক ও স্বাক্ষরকারী দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। সেই সমর্থন আর স্বাক্ষর শুধু কাগজেই রয়েছে। বাস্তব চিত্র তার উল্টো। প্রতিদিনের খবরের কাগজে শিশু নির্যাতনের যে ভয়াবহ চিত্র আমরা দেখছি। যা একজন হৃদয়হীন মানুষকে ও ক্ষণিকের জন্য হলেও থমকে দেবে।চলন্ত পথিককে থামিয়ে দেবে। তবে সব খবর যে খবরের কাগজে আসে তা ও নয়। সম্প্রতি একটি দৈনিকে ছাপা হয়েছিলÑ আট বছরের একটা শিশু স্কুল বাদ দিয়ে রিকশা চালাচ্ছে, তার খবর। প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের কিছু অংশÑ “লেহাপড়া হরতে মন চায়। মাছ ধরতে ইচ্ছা হরে না। কিন্তু কী হরমু! মাছ না ধরলে না খাইয়া থাহা লাগে”। এমন হতাশার বাণী ১০ বছরের একটা শিশুর। এইসব শিশুর জš§ই মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকার না নিয়ে। এরা বড় হচ্ছে দারিদ্র্যের চার দেয়ালের মধ্যে। যেখানে জ্ঞানের আলো দূরে থাক, সূর্যের আলোই পৌঁছে না। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে শিশুশ্রমিকের আধিক্য থাকলেও উন্নত দেশে শিশুশ্রম দূর হয়েছে এমন ধারণা করা ঠিক না। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৪৬%-এর বয়স ১৫ বছরের নিচে। ১৮ বছর পর্যন্ত শিশু হলে আমরা ৫০%কেই শিশু হিসেবে ধরতে পারি। এই শিশুদের মধ্য থেকে সর্বাধিক সংখ্যকই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন কল-কারখানায় শ্রমিক হিসেবে নিয়োজিত। অথচ এই শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। শিশুদের গড়ে তোলার ওপরই নির্ভর করবে দেশের উন্নতি অবনতি। এই সংখ্যাগরিষ্ঠ শিশুর মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করার কাজটি কষ্টসাধ্য। কিন্তু কাজটি যতোই কঠিন হোক, ভবিষ্যৎ জাতি গঠনের কথা চিন্তা করেই শিশুদের অধিকার সংরক্ষণে সবার উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। শিশুশ্রম আইনত নিষিদ্ধ হলেও বেঁচে থাকার প্রয়োজনে অধিকাংশ শিশুকে বিভিন্ন কায়িক শ্রমের কাজে জড়িয়ে পড়তে হয়। এ কারণে কেবল শিশুর অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে তা নয়, কর্মক্ষেত্রে শিশুদের নানা রকম অত্যাচার নির্যাতন সহিংসতা ও প্রবঞ্চনার শিকার হতে হয়। গৃহকর্মে নিযুক্ত শিশুরা প্রায়ই গৃহকর্তা বা কর্ত্রীর দ্বারা লাঞ্ছিত ও নির্যাতিত হয়। অনেক সময় এ নির্যাতনের ফল হাসপাতাল পর্যন্ত গড়ায়। আবার কখনো মৃত্যুও ঘটে। অনেক ঘটনাই সংবাদপত্রে আসে না। যৌন কাজে এবং উটের জকি হিসেবে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে এদেশের শিশুদের যখন বিভিন্নভাবে পাচার করা হয়, তখন কিন্তু মানবাধিকারের ধারক ও বাহক বলে দাবিদার উন্নত বিশ্বকে নিশ্চুপ থাকতে দেখা যায়। শিশুর অধিকার রক্ষায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান এবং আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাসমূহ কর্তৃক সমন্বিত কার্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা অবশ্যক। বাসাবাড়ি, হোটেল, গ্যারেজ ও দোকানসহ বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত শিশুশ্রমিকদের নির্যাতনের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান ও প্রয়োগ থাকা উচিত। শিশুদের মৌলিকাধিকার রক্ষার পাশাপাশি তাদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা জরুরি।
0 comments:
Post a Comment