Friday, June 10, 2016

জাকাত : নগদ অর্থ নাকি দ্রব্য

জাকাত : নগদ অর্থ নাকি দ্রব্য
আলী ফোরকান
জাকাত ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি। হাদিসে এসেছে, ॥’জাকাত তোমাদের ধনীদের কাছ থেকে গ্রহণ করা হবে এবং তোমাদের গরিবদের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হবে।॥’ কোরআনে বারবার জাকাত আদায় করতে বলা হয়েছে এভাবে, ॥’তোমরা নামাজ কায়েম কর ও জাকাত আদায় কর।॥’ জাকাত আদায় করার উদ্দেশ্য হলো, সমাজের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে আর্থিক আনুকূল্য প্রদান করা।
অনেকে জাকাত হিসেবে কাপড় দিয়ে থাকেন। বিষয়টি ভালো, কিন্তু জাকাত শুধু কাপড়ের মাধ্যমেই আদায় হয় তা কিন্তু নয়। টাকার মাধ্যমেও জাকাত আদায় করা যায়। অনেক জাকাতদাতা এমন কোয়ালিটির কাপড় কেনেন যা মানসম্মত নয়, যা দিয়ে গরিবের খুব একটা উপকার হয় না। আসলে জাকাত এমনভাবে আদায় করা উচিত যাতে গরিবরা লাভবান হয়। কেননা জাকাত হচ্ছে গরিবের হক; দারিদ্র্য থেকে মুক্তিলাভের মাধ্যম। তাই সঠিকভাবে জাকাত আদায়ে আমাদের সচেষ্ট হতে হবে।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ॥’হে মুমিনগণ! তোমরা যা উপার্জন কর এবং আমি যা ভূমি থেকে উৎপাদন করাই, তার মধ্যে যা উৎকৃষ্ট তা ব্যয় কর এবং এটার নিকৃষ্ট বস্তু ব্যয় করার সংকল্প কর না।॥’ বাকারা : ২৬৭
এই আয়াত থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, উৎকৃষ্ট বস্তু থেকে জাকাত দিতে হবে। অনেক দোকানে ব্যানার লেখা থাকে, ॥’এখানে জাকাতের শাড়ি, লুঙ্গি পাওয়া যায়।॥’ সেগুলো নিম্নমানের কাপড় ছাড়া আর কিছুই নয়। কোরআনে যেহেতু উৎকৃষ্ট বস্তু দান করতে বলা হয়েছে, তাই জাকাতের কাপড় হিসেবে নিম্নমানের শাড়ি, লুঙ্গি প্রদান আদৌ সমর্থনযোগ্য নয়। এটা মানবিক রীতিবিরুদ্ধ কাজ।
এই তো কয়েক বছর আগে ময়মনসিংহ আর পটুয়াখালীতে জাকাতের কাপড় সংগ্রহ করতে গিয়ে পায়ের তলায় পিষ্ট হয়ে নিহত হলেন নয়জন হতদরিদ্র মহিলা। এর আগেও দেশের বিভিন্ন স্থানে জাকাতের কাপড় সংগ্রহ করতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
যেহেতু প্রতি বছরই এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে, কাজেই কাপড় দানকারীর আগে থেকেই এমন ব্যবস্থা করা উচিত, যাতে এক বা একাধিক লাইনে থেকে একজন একজন করে কাপড় সংগ্রহ করতে পারে। তাহলে এমন নৃশংস ঘটনা আর ঘটবে না।
এ পর্যন্ত জাকাতের কাপড় সংগ্রহ করতে গিয়ে অসংখ্য নারী ও শিশু প্রাণ হারিয়েছে। এটাকে এক ধরনের হত্যাকান্ডই বলা যায়। আমার প্রশ্ন, বাংলাদেশে কি গরিবের সংখ্যা এতই কম যে, আগে থেকে মাইক দিয়ে ঘোষণা দিয়ে শাড়ি কাপড় বিতরণ করতে হবে? তাছাড়া যারা কাপড় আনতে যায়, তারা সবাই কি কাপড় পায়? আসলে জাকাতের কাপড় বিতরণের নামে মাইকিং করে লোক জড়ো করা আমাদের দেশে একটি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। সমাজে এককভাবে অনেকেই জাকাত দিয়ে থাকেন। যারা প্রচারণায় বিশ্বাসী এবং এভাবে জাকাত দিয়ে আত্মতুষ্টি লাভ করে পুলকিত হন, তাদের অনেকেই মাইকিং করে জাকাত দিয়ে থাকেন। তাদের মধ্যে ইসলাম বা ধর্মীয় অনুভূতি বলতে কিছুই নেই। এর ফলে জাকাতের উদ্দেশ্য মারাত্মক ভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে। কেননা হাদিসে বলা হয়েছে, ॥’এমনভাবে দান করতে হবে যাতে ডান হাত দিয়ে দান করলে বাম হাত না জানে।॥’
জাকাতের কাপড় বিতরণের মধ্যে ধর্মীয় অনুভূতির চেয়ে আত্মজাহির ও নাম জাহির উদ্দেশ্য থাকে। ইসলামকে অন্তরে গ্রহণ না করে ইসলামের লেবাস লাগিয়ে ভন্ডামির কোনো অর্থ হতে পারে না। সুতরাং সরকারের উচিত জাকাতের কাপড় বিতরণের নামে প্রাণনাশ বন্ধ করার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
আমরা জানি, বিপুল পরিমাণ লোকের মধ্যে জাকাতের কাপড় বিতরণে তাদের দারিদ্র্যাবস্থা ঘুচবে না কখনোই। তাদের জন্য কাপড় বিতরণের চেয়ে নগদ অর্থ বিতরণ করাই অধিকতর শ্রেয়; কারণ গরিবের কাছে শাড়ি-লুঙ্গির চেয়ে নগদ অর্থ বেশি প্রয়োজনীয় সম্পদ। সুতরাং বিষয়টি ভাবার জন্য অনুরোধ রইল।


0 comments:

Post a Comment