Friday, May 20, 2016

ক্ষমাপ্রার্থনার রাত-পবিত্র শবে বরাত

ক্ষমাপ্রার্থনার রাত-পবিত্র শবে বরাত
আলী ফোরকান 
আরবী ভাষায় ‘শব’ শব্দের অর্থ রাত্রি। ‘বরাত’ বা ‘বারআৎ’ শব্দের অর্থ নাজাত,মুক্তি,নিস্কৃতি। আল্লাহ পাক পরওয়ারদেগার উম্মতে মুহাম্মদ(সঃ)জন্য বিশেষ কিছু ‘রাত’  গোনাহ মাফের জন্য দান করেছেন। এই বিশেষ রাত্রি গুলোতে  কোন বান্দাহ একাত্ব মনে আল্লাহর এবাদত করিলে তাহার জীবনের সমুদয় গোনাহ আল্লাহ মাফ করিয়া দিবেন। আর শত সহস্র বছরের দীর্ঘায়ু প্রাপ্ত আবেদ ব্যক্তিগণের সমান নেকী হাসিল করিবেন। সেই সব রাত্রির একটি প্রতি বছর শা’বান মাসে আমাদের মাঝে হাজির হয়। শবে বরাত বা লইলাতুল বরাত সে রাত গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এই রাত্রিতে বান্দারা এবাদত বন্দেগী করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করিতে পারে বলিয়া এই রাত্রির নাম ‘শবে-বরাত’ বা ‘লাইলাতুল বরাত’।
এই রাত্রির ফযিলত সর্¤úকে আবু-দাউদ শরীফে বর্ণিত হয়েছে, হুযুরে আকরাম (সঃ) শা’বান মাস সর্ম্পকে বেশি খেয়াল রাখিতেন। একমাত্র রমজান মাস ছাড়া অন্য কোন মাস সম্পর্কে ততটা খেয়াল রাখতেন না।
নবী করিম (সঃ) এরশাদ করেন, যখন শা’বান মাসের ১৫ তারিখ দিবাগত রাত আসিবে, তোমরা রাত জেগে আল্লাহর এবাদত করিবে আর পরর্বতী দিন রোজা রাখিবে। ‘শবে বরাতের’ রাত্রিতে সুর্যাস্তের পরপরই আলাহ রহমান রহিম সর্বনিম্ন আসমানে নামিয়া আসেন। আর ডাকিয়া ডাকিয়া বলে“ক্ষমা প্রার্থনাকারী কেহ আছে কি, যাহাকে আমি ক্ষমা করিব”। রিযিক প্রার্থনাকারী কেহ আছ কি, যাহাকে আমি রিযিক দিব। বিপদগ্রস্থ কেহ আচ কি, আমি তাহার বিপদ উদ্ধার করিব”। এই ভাবে সারা রাত আল্লাহর রহমত নাজিল হইতে থাকে।
এই রাত্রিতে আল্লাহ তালা হযরত আযরাঈল (আঃ) কে মানুষের মৃত্যুর তালিকা দেন। এই তালিকায় পরবর্তী বছরে যাদের মৃত্যু হইবে তাহার্দে নাম লিখিত থাকে। 
উম্মুল মো’মেনিন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রঃ) বলেন, হযরত মুহাম্মদ(সঃ) কে রমজান মাস ব্যতিত কখন ও শা’বান মাসের চেয়ে বেশি নফল রোজা রাখিতে দেখি নাই। প্রায়ই পুরো মাসই তিনি রোজা রাখিতেন।
হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রঃ) আরো বলেন, একদা রাত্রিতে আমি হযরত (সঃ) কে দেখতে না পেয়ে তাহার খোঁজে বাহির হইলাম। তিনি তখন ‘জান্নাতুল বাকী’ নামক কবর স্থানে ছিলেন। হযরত (সঃ) আমাকে বললেন, আমার কাছে জিবরাঈল (আঃ) আসিয়া বললেন-আজ শা’বানের ১৫ তারিখের রাত্রি। এই রাত্রিতে আল্লাহ তালা তত গুলো গোনাহগার বান্দাকে মাফ করিয়া দিবেন। যত গুলো লোম বনিকলব গোত্রের ছাগল পালের গায়ে রহিয়াছে। ঐতিহাসিকগণের মতে ঐ গোত্রের পালের মধ্যে ২০ হাজারের বেশি ছাগল ছিল।
তবে যাহারা আল্লাহ সহিত অন্য কাউকে শরীক করে, যাহারা অন্যের প্রতি ঈর্ষা পোষণ করে, নিজেদের পিতা মাতার সহিত খারাপ আচরণ করে ও যাহারা পায়ের গিটের নীচে কাপড় পরিধান করে,এই বিশেষ রহমতের রাতে ও তাহারা আল্লাহর অশেষ রহমত থেকে বঞ্চিত হবে।
শবে বরাতে চারটি কাজ করা সবচেয়ে উত্তম। নফল নামাজ পড়া। কোরআন তেলাওয়াত করা । আল্লাহর কাছে তওবা করে ক্ষমা প্রার্থনা করা। কবরস্থানে গিয়ে মুরদাদের জন্য দোওয়া করা। হযরত নবী করিম (সঃ) আদর্শ অনুসরণ করে আল্লাহর বিধি নিষেধ মেনে চলাই একজন প্রকৃত মুসলমানের কাজ। প্রতিটি মুসলমানকে আল্লাহ পাক এই পবিত্র রাতে ঈবাদত বন্দেগী করার তাওফিক দিন। এই ক্ষমার রাতে বান্দা তার গোনা মাফ করাতে পারলেই শবে বরাত আমাদের জীবন, সমাজ তথা দেশের কল্যাণ বয়ে আনবে।


0 comments:

Post a Comment