Sunday, May 15, 2016

মহান দেশপ্রেমিক বিজ্ঞানী :আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়

মহান দেশপ্রেমিক বিজ্ঞানী :আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়
আলী ফোরকান
আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়। এক মহান দেশপ্রেমিক বিজ্ঞানী। ১৮৬১ সালের ২ আগস্ট খুলনা জেলার পাইকগাছার বাড়লি গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা হরিশ চন্দ্র রায় ও মাতা শ্রীমতি ভুবনমোহিনী রায়ের ৭ ছেলেমেয়ের মধ্যে প্রফুল্ল চন্দ্র রায় তৃতীয়। বিদ্যানুরাগী পিতা হরিশ চন্দ্র রায় যেমন অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন তেমনি গড়ে তোলেন বিশাল পারিবারিক লাইব্রেরি। পিতার প্রতিষ্ঠিত গ্রামের স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। ১৮৭০ খ্রীস্টাব্দে তাঁর পিতা সপরিবারে কলকাতা চলে যান। প্রফুল্ল রায় এ সময় কলকাতার বিখ্যাত হেয়ার স্কুলে ভর্তি হন। এরপর এলবার্ট স্কুরে পড়াশোনা করেন এবং এই স্কুল থেকেই ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি এফএ পাস করে বি.এ ক্লাসে বি কোর্সে ভর্তি হন। এখানে উল্লেখ্য বি কোর্স সেকালে বিজ্ঞানের ছাত্রদের জন্য নির্ধারিত ছিল। ১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দে গিল ক্রাইস্ট স্কলারশিপ নিয়ে বাঙালিদের মধ্যে সর্বপ্রথম তিনি বিলেতের এডিনরবা বিশ্ববিদ্যালয় পড়তে যান। এ সময় তাঁর বয়স মাত্র ২১। ১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দে এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে বিএসসি পাস করেন এবং ১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দে অজৈব রসায়নে ডিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি দেশে প্রত্যাবর্তন করে কলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজ রসায়ন শাস্ত্রের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসুও এ সময় প্রেসিডেন্সী কলেজ অধ্যাপনা করতেন। অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি পুরোদমে গবেষণার কাজও চালিয়ে যেতে থাকেন। পারদ ও নাইট্রিক এসিড নিয়ে তিনি গবেষণা করতে করতে ১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দে মারকিউরাস নাইট্রাইট আবিষ্কার করেন। এর ফলে সারাবিশ্বে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর সাফল্য এখানেই থেমে থাকেনি, তা আরও নানা মাত্রিকতা লাভ করে। তিনি বহু প্রাচীন সংস্কৃত গ্রন্থ ও পুঁথি ঘেটে 'ঐরংঃড়ৎু ড়ভ ঐরহফঁ ঈযবসরংঃৎু' নামে একটি মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেন। দেশকে জ্ঞানবিজ্ঞানে সমৃদ্ধশালী করে গড়ে তোলা ছিল তাঁর জীবনপণ ব্রত। তিনি ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পে শিক্ষা লাভ করার জন্য বাঙালি যুবকদের উদ্বুদ্ধ করতেন। তিনি বাঙালির উন্নতির চিন্তা করতে থাকেন এবং কী উপায়ে তা সম্ভব তা ভাবতে থাকেন। তাঁর ভাবনায় এলো ভেষজদ্রব্য ব্যবহার করে শিল্প গড়ে তোলার। কারণ এর মধ্য দিয়ে একদিকে সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের অন্যদিকে দেশীয় গাছ-গাছড়া কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহৃত হবে। ফলে দেশ ওষুধ ও রাসায়নিক সামগ্রীতে হয়ে উঠবে স্বয়ংসম্পূর্ণ। যেমন ভাবা তেমন কাজ। মাত্র ৮০০ টাকা মূলধন নিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘বেঙ্গল কেমিক্যাল এন্ড ফার্মা সিউটিক্যাল ওয়ার্কস’। পরবর্তীকালে এটাও বিশাল শিল্প কারখানায় রূপান্তরিত হয়। দেশ ও জাতিকে নিয়ে তাঁর ছিল সার্বক্ষণিক চিন্তা। তিনি যুবকদের উদ্দেশ্যে বলতেন,’ তোমরা প্রতিজ্ঞা করো জাতিকে বড় করে তুলবে। তোমাদের সাধনা দিয়ে জাতিকে সমৃদ্ধ করবে’ এভাবে দেশ ও জাতিকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে নিজের সম্পর্কে ছিলেন একেবারেই উদাসীন। ফলে সংসার করা হয়নি তিনি থেকে যান চিরকুমার। বাঙালির গৌরব, মহান বিজ্ঞানী কর্মবীর আচার্য প্রফুল্ল কুমার রায় ১৯৪৪ সালের ১৬ জুন পরলোকগমন করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। এই সুদীর্ঘ জীবনে তিনি যে আদর্শ স্থাপন করে গেছেন তা এ জাতি চিরদিন শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করবে। তাই তার কর্ম ও আদর্শ চির অমর, চির অম্লান। 
তথ্যসুত্র: ওয়েব সাইট

0 comments:

Post a Comment