Friday, April 22, 2016

প্রাথমিক শিক্ষা ও একটি পরিসংখ্যান

প্রাথমিক শিক্ষা ও একটি পরিসংখ্যান 
আলী ফোরকান 
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৩ সালে ৩৬,০১৫টি প্রাইমারি স্কুল প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনার সার্বিক দায়িত্ব গ্রহণ করে । ১৯৯০ সালে প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হয়। যাতে সব শিশু প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ গ্রহণ করতে পারে। প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য শিশুর দৈহিক, মানসিক, সামাজিক, আধ্যাত্মিক, নৈতিক, মানবিক, নান্দনিক বিকাশ সাধন এবং তাদের উন্নত জীবন দর্শনে উদ্বুদ্ধ করা।  সার্বিকভাবে জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতি নির্ভর করে মানসম্মত শিক্ষার ওপর। মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ রচনায় শিক্ষকের ভূমিকাই মুখ্য। বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষায় অনেক সাফল্য অর্জন করেছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে ঘাটতিও রয়েছে। প্রাইমারি স্কুল পর্যায়ে শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক না থাকা। বাংলাদেশে সরকারি প্রাইমারি স্কুলের ৪৯.০৫%, বেসরকারি প্রাইমারি স্কুলে ২৫.০৭% মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পরিবারের শিশুরা পড়া লেখা করে থাকে। বর্তমানে প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষর্াার্থী অনুপাতে শিক্ষক না থাকায় মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থী। দ্বিতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন পরিকল্পনা অনুসারে শিক্ষক বণ্টন ব্যবস্থা বাস্তবায়িত না হওয়ায় ইউনেস্কো প্রণীত ২০০৬ সালের ইএফএ (ঊঋঅ- ঊফঁপধঃরড়হ ঋড়ৎ অষষ বা সবার জন্য শিক্ষা) গ্লোবাল মনিটরিং রিপোর্টের তথ্য অনুসারে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত হলো : ভুটান ৩৮:১, মালদ্বীপ ২০:১, নেপাল ২০:১, পাকিস্তান ৪০:১, শ্রীলংকা ২৩:১। ২০০৬ সালে বাংলাদেশে জাতীয়ভাবে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত ৫৬:১ উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু কোথাও এ অনুপাত আরো করুণ। ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের ২০০৬ সালের তথ্য অনুসারে উপজেলার ৭১টি সরকারি প্রাইমারি স্কুলে ২৩,৮৩১ জন শিক্ষার্থীর জন্য ২৮৭ জন শিক্ষক রয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ শিক্ষক ২৩৮ জন, মহিলা ৪৯ জন। অর্থাৎ শিক্ষার্থী শিক্ষক অনুপাত ৮৩:১। ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, জাতীয় পর্যায়ে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত সামঞ্জস্য রাখতে হলে ৩২% শিক্ষক কম  রয়েছে। আর দ্বিতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন পরিকল্পনা অনুসারে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত ৪০:১ বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে অতিরিক্ত আরো ৫২% শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।  ২০০৬ সালের চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুসারে উপজেলায় ৭২টি সরকারি প্রাইমারি স্কুলে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২১,০৩৪ জন এবং শিক্ষক ৩২৮ জন। ৭২টি সরকরি প্রাইমারি স্কুলে ৩০টি পদই শূন্য । ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত ৬৪:১। জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন পরিকল্পনা অনুসারে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত ৪০:১ করতে হলে ৭২টি সরকারি প্রাইমারি স্কুলে ৩০টি শূন্য পদে নিয়োগ দেয়ার পরও ১৬৮ জন অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। সাতক্ষীরার তালা উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের জুলাই ২০০৭ সালের তথ্য অনুসারে উপজেলার ১০৯ সরকারি প্রাইমারি স্কুলে ২৯,৬৯৯ জন শিক্ষার্থীর জন্য ৩৭০ শিক্ষক রয়েছে। এর মধ্যে দুজন প্রধান শিক্ষক ও ১১ জন সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাত ৮০:১। গত ২৯ জুলাই দৈনিক ইত্তেফাকে সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার প্রাইমারি শিক্ষায় নানা সমস্যা শীর্ষক রিপোর্টের তথ্য অনুসারে উপজেলার ৯৬টি সরকারি, ৬০টি বেসরকারি ও ৩ কমিউনিটি স্কুলের সংখ্যা অনুপাতে শিক্ষকের পদ কম। প্রতি বছর পিটিআইতে ট্রেইনিংয়ে যাওয়ায় উপজেলায় শিক্ষক স্বল্পতা প্রাথমিক শিক্ষাকে ব্যাহত করছে। উপজেলায় প্রধান শিক্ষকের ৬টি, সহকারী শিক্ষকের ৩০টি পদ শূন্য রয়েছে। ৪৮ জন শিক্ষক পিটিআইতে ট্রেইনিংয়ে আছেন। উপজেলায় ২৮ হাজার  প্রাইমারি স্কুল শিক্ষার্থীর জন্য বর্তমানে রয়েছে ৩৭৬টি শিক্ষকের পদ। ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত ৭৪:১। শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক না থাকার কারণে দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন স্কুলে থেকে শিখতে পারে না। ক্লাসের পড়া না পারার কারণে শিশুরা হীনমন্যতায় ভোগে। ক্লাসে অমনোযোগী হয়ে পড়ে। স্কুলে অনুপস্থিত থাকার প্রবণতা বৃদ্ধি পায় এবং এক সময় স্কুল থেকে ঝরে পড়ে। দ্বিতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন পরিকল্পনা (পিইডিপি-২) সবার জন্য শিক্ষা, মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের জন্য দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্রের আলোকে ১৮ লাখ ডলার ব্যয়ে প্রাথমিক শিক্ষার এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর ফলে প্রাইমারি স্কুলে ভর্তির হার বেড়েছে, কমেছে ঝরে পড়ার হার। এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে বেশি ভাগ শিক্ষার্থীই প্রান্তিক ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর। বাংলাদেশের মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা ব্যাহত হওয়ার অন্যতম কারণ শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক না থাকা। প্রাইমারি স্কুলের চিত্র (সংবাদপত্রের পাতা থেকে) গত ১৫ জুলাই সংবাদে প্রকাশিত নীলফামারী জেলায় প্রাথমিক শিক্ষার বেহাল দশা, ৪০ ভাগই ঝরে পড়ছে শীর্ষক সংবাদে বলা হয়েছে দক্ষ শিক্ষক, শিক্ষা উপকরণের অভাব, মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ না থাকা, দুর্বল মনিটরিং ব্যবস্থার কারণে নীলফামারী জেলার সরকারি ও বেসরকারি প্রাইমারি স্কুলে শিশুদের স্কুলমুখী করতে পারছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের পরিসংখ্যানে বর্তমান ঝরে পড়ার হার ৩৫ শতাংশ দেখানো হলেও এর প্রকৃত হার ৪০ শতাংশ বলে স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো দাবি করছে। একই পত্রিকায় ১৬ জুলাই লেখা হয় শিক্ষক স্বল্পতা : ব্যাহত হচ্ছে উলিপুরে প্রাথমিক শিক্ষা শীর্ষক রিপোর্টে বলা হয়েছে, কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুরে ১২৪টি রেজিস্টার্ড প্রাইমারি স্কুলে সমস্যা বিরাজ করছে। উপজেলার প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকরা নিজের ইচ্ছামতো স্কুলে আসা-যাওয়া করে থাকেন। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার অভিমত শুধু বেসরকারি শিক্ষক নয়, সরকারি স্কুলের শিক্ষকরাও স্কুলে পাঠদানে ফাকি দিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসে অযথা ঘোরাফেরা করে থাকেন। ১১ জুলাই যায়যায়দিনে প্রকাশিত মামা-ভাগিনার স্কুল শীর্ষক রিপোর্টে বলা হয়েছে, মাদারীপুর জেলার শিবচর মডেল সরকারি প্রাইমারি স্কুলের অভিভাবকদের ঘুম হারাম প্রধান শিক্ষকের স্বজনপ্রীতির কারণে। ভাগিনা সহকারী শিক্ষক স্কুলে এসে খাতায় সই করে স্কুল থেকে চলে যান। অনেক সময় স্কুলে না এসেও পরের দিন খাতায় স্বাক্ষর করে থাকেন। ১৬ জুলাই প্রথম আলোয় প্রকাশিত মৌলভীবাজার জেলার জুড়ীর দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের চালা নেই, দেয়াল ফাটল শীর্ষক সংবাদে বলা হয়েছে আকাশে মেঘ হলেই বই নিয়ে দৌড় দেয় ভুইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বৃষ্টি পানিতে ভেজা থেকে রক্ষা পেতে আশ্রয় নেয় আশপাশের বাড়ির বারান্দায়। এহিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঝুকিপূর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান কার্যক্রম। ফলে শিক্ষার্থী শিক্ষক ও অভিভাবক আতঙ্কিত। সংবাদ ২৬ জুলাই : পিরোজপুর জেলার ৩০ ভাগ শিশু বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। রিপোর্টে বলা হয়েছে, হতদরিদ্র ভূমিহীন পরিবার মানুষদের আশ্রয় মেলে আবাসন প্রকল্পে। জেলার সব আবাসন প্রকল্পগুলো থেকে প্রাথমিক স্কুল দূরে এবং প্রকল্পের আশ্রয় মেলে আবাসন প্রকল্পে। জেলার সব আবাসন প্রকল্প থেকে প্রাথমিক স্কুল দূরে এবং প্রকল্পের ভেতরে কোনো এনজিও স্কুল নেই। এসব আবাসন প্রকল্পে স্কুল গমনোপযোগী শিশুরা স্কুলে না গিয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শিশুশ্রমের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ে। প্রথম আলো ৪ আগস্ট : ঝুকিপূর্ণ বিদ্যালয় ভবন সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হোক শীর্ষক সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, টাঙ্গাইলের সখীপুর কাকার্থা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি তিন বছর আগেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে, অথচ সেখানে ক্লাস চলছে নিয়মিত। ফলে শিশু শিক্ষার্থীা রয়েছে ঝ্ুঁকির মুখে। শিক্ষকরাও থাকেন সার্বক্ষণিক আতঙ্কের মধ্যে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থার বিদ্যমান এসব অরাজকতা অনেক শিক্ষার্থীকে স্কুল বিমুখ করে তুলেছে। মানসম্মত শিক্ষকের এখন আর অভাব নেই।  মানসম্মত শিক্ষক তাকে বলা যায় যিনি হবেন ধৈর্যশীল, বিনয়ী, বুদ্ধিমান, হাসিখুশি, সদালাপী, বন্ধুসুলভ, পরোপকারী, যার মধ্যে মমত্ববোধ আছে, শিশুদের প্রতি আগ্রহী, জ্ঞানী ও  ট্রেইনিংপ্রাপ্ত। বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষকদের যুগউপযোগী করা হয়েছে।  শিশুরা এমন শিক্ষক চায়, যে শিক্ষক শিশুদের গায়ে হাত তোলেন না, শিক্ষাার্থীর মাথায় হাত রেখে বাড়ির খোজখবর রাখেন। ক্লাসরুমে পাঠদানে আন্তরিক, শিশুরা যার কাছে প্রাণ খুলে কথা বলতে পারে, ভয় পায় না, যার মধ্যে মমত্ববোধ আছে, সময়মতো স্কুলে আসেন, ক্লাসের পড়া সহজভাবে উপস্থাপন করতে পারেন। এসব শিক্ষকদের পেয়ে শিশুরা এখন আগের চেয়ে বেশি স্কুলমুখী হচ্ছে। শিশুরা এমন শিক্ষক চায় না যারা নির্মম, নির্দয়, যার মধ্যে মমত্ববোধ নেই, স্কুলে নিয়মিত আসেন না ও সময় জ্ঞানহীন। শিক্ষকতা একটি মহান এবং সম্মানজনক পেশা বিবেচনা করে যারা শিক্ষকতায় এসেছেন তাদের প্রতি সমাজের সব মানুষের শ্রদ্ধাবোধ আছে। তাদের মধ্যে শিক্ষকতার মহান পেশার আদর্শ ও গুণাবলী লক্ষ্য করা যায় । তারা পেশাগত দায়িত্ব-কর্তব পালনে অবহেলা করে না।  সময়মতো স্কুলে আসে , ক্লাসরুমে পাঠদানে আন্তরিক । স্কুল ফাকি দেয়ার প্রবণতা ইদানিং আর দেখা যায় না। এছাড়াও  স্কুল ফাকি দেওয়া শিক্ষকের হার কমেগেছে। ফলে সবার জন্য মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা মহৎ উদ্দেশ্য এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে মানসম্মত শিক্ষা পণ্য হিসেবে পরিণত হচ্ছে। যেসব পরিবারের বিত্ত ও সামর্থ্য আছে সেসব পরিবারের সন্তানদের কাছে মানসম্মত শিক্ষা কুক্ষিগত হচ্ছে আর দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা মানসম্মত শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তারা বলতে পারে না তাদের ভাগ্য কোথায় যাচ্ছে।  মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষাই দারিদ্র্য বিমোচনের সহায়ক। মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিফলিত হয় ন্যায়বোধ, কর্তব্যবোধ, শৃঙ্খলাবোধ, শিষ্টাচারসহ সবার সঙ্গে মিলেমিশে বাস করার মানসিকতা। সেইসঙ্গে দেশপ্রেম, জাতীয়তাবোধ, দেশ গঠন কাজে অংশগ্রহণ, সবার প্রতি সহযোগিতাপূর্ণ বন্ধুত্বসূলভ আচরণ, বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববোধ, বিশ্ব শান্তির চেতনায় আগ্রহী, স্রষ্টার সব সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসা। মানসম্মত শিক্ষা জাতিকে দেয় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তি যা জাতির আশা আকাক্সক্ষা পূরণ করে দেশের কল্যাণ বয়ে নিয়ে আসে। দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গঠনে মানসম্মত শিক্ষা গুরুতপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। দারিদ্র্য বিমোচন এবং হতদরিদ্র পরিবার ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিশুদের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য সব শিশুর জন্য মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার পরিবেশ অনেকের কাছে ভাবনার বিষয় হলেও প্রাথমিক শিক্ষার সেকেলের গন্ডি পেরিয়ে  এখন বিশ্বের দরবারে মাথা উচুঁ করে দাড়িয়েছে । দরিদ্র ও বৈষম্য হ্রাস এবং সচেতন ও উন্নয়নমুখী জনসমাজ গঠনের লক্ষ্যে বর্তমান শিক্ষকেরা কাজ করে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে ইতিমধ্যে সফলতা ও এসেছে অনেক। শিশুর জন্য মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সচেতন নাগরিক সমাজকে মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে এগিয়ে আসতে হবে। যাতে সব শিশু জ্ঞান অšে¦ষণ ও মানসিক বিকাশের সুযোগ পায়। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষার জন্য করণীয় মানসম্মত শিক্ষার পূর্বশর্ত মানসম্মত শিক্ষকÑ এ বিষয় বিবেচনা করে শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। শিক্ষকতা পেশায় যারা নিজেদের নিয়োজিত করতে চান তাদের চাকরির আগেই ট্রেইনিংয়ের ব্যবস্থা করা দরকার। প্রাইমারি স্কুল পর্যায়ের শিক্ষকদের বর্তমান বেতন কাঠামো পরিবর্তন করতে হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি হয়ার সাথে সাথে প্রত্যেক শিক্ষককে সি-ই,এন-এড, বিএড,এমএডসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। একারণে বর্তমান শিক্ষকদের শ্রেণী পাঠদান পদ্ধতি মাফিক হওয়ায় শিশুরা উন্নত শিক্ষা পাচ্ছে। যে কারণে দিন-দিন ঝরে পড়া হ্রাস ও সমাপনী এবং বৃত্তি পরীক্ষায় পাশের হার বাড়ছে। তবে শিক্ষকদের শিক্ষকতার পাশাপাশি শিশুদের টিকা, ভোটার তালিকা প্রস্তুত, আদমশুমারি, জন্মনিবন্ধনসহ এ ধরনের অতিরিক্ত কাজে জড়িত না করাই ভালো। সর্বোপরি দ্বিতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন পরিকল্পনা অনুসারে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত ৪০:১ পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করা একান্ত পয়োজন। আমরা আশাকরি সরকার এনজিওকরণের পরিবর্তে প্রাথমিকক বিদ্যালয়ের সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও ৪০:১ পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন।  
লেখক: গবেষক ও সাবেক অধ্যক্ষ 
      মোবাইল:০১৭১১৫৭৯২৬৭                                                                                                                                        


0 comments:

Post a Comment