প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে প্রয়োজন সহকারি শিক্ষা অফিসারদের মূল্যায়ন
আলী ফোরকান
প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী না হলে উচ্চতর শিক্ষা ব্যবস্থা নড়বড়ে থেকে যাবে। এটা সর্বজন স্বীকৃত কথা। প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ের প্রধান দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হচ্ছেন সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার। সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা ২য় শ্রেণীর স্নাতক ডিগ্রীসহ ২য় শ্রেণী স্নাতকোত্তর ডিগ্রী। মাঠ পর্যায়ের এ গুরুত্বপূর্ণ পদটির কাজের পরিধি ব্যাপক ও বৈচিত্র্যপূর্ণ। ৩০-৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিয়ে গঠিত একটি ক্লাস্টারের দায়িত্বরত একজন সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার। এরা প্রশাসনিক, একাডেমিক ও দক্ষ শিক্ষক তৈরিতে প্রশিক্ষক হিসেবে গুরু দায়িত্ব পালন করেন। এ প্রেক্ষাপটে দীর্ঘদিন ধরে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারেরা তাদের পদটি প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত করার ও ৮০% পদোন্নতির দাবি জানিয়ে আসছেন। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নকল্পে সরকার অনেক পদক্ষেপ নিয়েছেন। দাতা সংস্থার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় নানা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মকর্তা/ কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি (ঝশরষষ উবাবষড়ঢ়সবহঃ), শিক্ষকদের পাঠদান দক্ষতা (ঞবধপযরহম ঝশরষষ) বৃদ্ধির জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। দেশে বিদেশে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হল, এসব প্রকল্পের সিংহভাগ অর্থ খরচ হয়েছে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দেশে বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য। অথচ মাঠ পর্যায়ে সরাসরি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদানকারী সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণের সুযোগ ছিল একেবারেই নগণ্য। বিশেষ করে দক্ষতা বৃদ্ধিকল্পে বিদেশে প্রশিক্ষণ গ্রহণের ক্ষেত্রে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের সুযোগ আরও করুণ। বিসিএস ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিয়োগের জন্য নির্ধারিত যোগ্যতার চেয়ে অধিকতর যোগ্যতাসম্পন্ন (২য় শ্রেণী স্নাতক ডিগ্রীসহ ২য় শ্রেণীর মাস্টার্স ডিগ্রী) হওয়া সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরে দুঃখজনকভাবে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারের পদটি ২য় শ্রেণীরই রয়ে গেছে। ইতোমধ্যে একই অধিদপ্তরাধীন পিটিআইএর ৩য় শ্রেণীর ইনস্ট্রাক্টর পদসহ অন্যান্য সরকারী দপ্তরের বেশ কিছু ২য় শ্রেণীর পদকে ১ম শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়েছে। যেমন- কাস্টমস এ্যান্ড এক্সাইজের ২য় শ্রেণীর সুপার পদ, সাব রেজিস্ট্রার এর ২য় শ্রেণীর পদ, উপজেলা সমাজ সেবা অফিসারের পদ ইত্যাদি। সংশ্লিষ্ট অনেকে মনে করে থাকেন, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদটি ১ম শ্রেণীতে উন্নীত করলে উপজেলার অন্যান্য ২য় শ্রেণীর পদকেও ১ম শ্রেণীতে উন্নীত করার প্রশ্ন আসতে পারে যা আদৌ ঠিক নয়। প্রকৃত ব্যাপার হল, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার এবং উপজেলা পর্যায়ের অন্যান্য ২য় শ্রেণীর কর্মকর্তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া ও শিক্ষাগত যোগ্যতা ডিপ্লোমা প্রকৌশলী (ঐ.ঝ.ঈ -র সমমান), থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা পদে সরাসরি নিয়োগ হয় না। ৩য় শ্রেণীর কর্মকর্তাদের মধ্য হতে পদোন্নতির মাধ্যমে এ পদগুলো পূরণ করা হয়। অথচ সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদধারীরা উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন ও সরাসরি নিয়োগকৃত। সঙ্গত কারণে একই পদে ২০/২৫ বছর চাকরি করে একটি পদোন্নতির মুখও দেখতে না পেয়ে অর্থাৎ একই পদে জন্ম এবং মৃত্যুর (নিয়োগ ও অবসর) প্রহর গুণতে গিয়ে তাদের অধিকাংশকেই চরম হতাশায় নিপতিত হতে হয়। প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ের প্রধান দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হচ্ছেন সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার। ৩০-৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিয়ে গঠিত একটা ক্লাস্টারের দায়িত্বরত একজন সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার প্রশাসনিক, একাডেমিক ও দক্ষ শিক্ষক তৈরিতে প্রশিক্ষক হিসেবে গুরুদায়িত্ব পালন করেন। এ প্রেক্ষাপটে দীর্ঘদিন ধরে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারগণ তাদের পদটি প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত করার ও ৮০% পদোন্নতির দাবি জানিয়ে আসছেন। বাস্তব অবস্থা ও যৌক্তিকতার নিরিখে ইতিমধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এবং সংস্থাপন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি পদটিকে প্রথম শ্রেণীতে উন্নীতকরণের জন্য সুপারিশ করেছে। প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে স্বাধীনতা-উত্তরকালে বহু পরিকল্পনা এবং প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষার যথেষ্ট অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নকল্পে সরকার অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। দাতা সংস্থার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় নানা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি (ঝশরষষ উবাবষড়ঢ়সবহঃ), শিক্ষকদের পাঠদান দক্ষতা (ঞবধপযরহম ঝশরষষ) বৃদ্ধির জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হল এসব প্রকল্পের সিংহভাগ অর্থ খরচ হয়েছে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য। অথচ মাঠ পর্যায়ে সরাসরি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদানকারী সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণের সুযোগ একেবারেই নগণ্য। বিসিএস ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিয়োগের জন্য নির্ধারিত যোগ্যতার চেয়ে অধিকতর যোগ্যতাসম্পন্ন (২য় শ্রেণীর স্নাতক ডিগ্রিসহ ২য় শ্রেণীর মাস্টার্স ডিগ্রি) হওয়া সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরে দুঃখজনকভাবে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারের পদটি ২য় শ্রেণীরই রয়ে গেছে। ইতিমধ্যে একই অধিদফতরাধীন পিটিআই-এর ৩য় শ্রেণীর ইনস্ট্রাক্টর পদসহ অন্যান্য সরকারি দফতরের বেশকিছু ২য় শ্রেণীর পদকে ১ম শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়েছে। যেমন কাস্টমস এন্ড এক্সাইজের ২য় শ্রেণীর সুপার পদ, সাব-রেজিস্ট্রারের ২য় শ্রেণীর পদ, উপজেলা সমাজ সেবা অফিসারের পদ ইত্যাদি। সংশ্লিষ্ট অনেকে মনে করে থাকেন সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদটি ১ম শ্রেণীতে উন্নীত করলে উপজেলার অন্যান্য ২য় শ্রেণীর পদকেও ১ম শ্রেণীতে উন্নীত করার প্রশ্ন আসতে পারে যা আদৌ ঠিক নয়। প্রকৃত ব্যাপার হল সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার এবং উপজেলা পর্যায়ের অন্যান্য ২য় শ্রেণীর কর্মকর্তার নিয়োগ প্রক্রিয়া ও শিক্ষাগত যোগ্যতা এক নয়। যেমন উপজেলা প্রকৌশলী ও জনস্বাস্থ্য পদ। তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ডিপ্লোমা প্রকৌশলী (ঐ.ঝ.ঈ-র সমমান), থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা পদে সরাসরি নিয়োগ হয় না। ৩য় শ্রেণীর কর্মকর্তাদের মধ্য হতে পদোন্নতির মাধ্যমে এ পদগুলো পূরণ করা হয়। অথচ সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদধারীরা উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন ও সরাসরি নিয়োগকৃত। সঙ্গত কারণে একই পদে ২০-২৫ বছর চাকরি করে একটি পদোন্নতির মুখও দেখতে না পেয়ে অর্থাৎ একই পদে জন্ম এবং মৃত্যুর (নিয়োগ ও অবসর) প্রহর গুণতে গিয়ে তাদের অধিকাংশকেই চরম হতাশায় নিপতিত হতে হয়। ৩০-৪০টি প্রাইমারি স্কুল নিয়ে গঠিত একটা ক্লাস্টারের দায়িত্ব পালন করেন একজন সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার। এক্ষেত্রে তিনি ১৩০-১৫০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার (সরকারি কর্মচারীর) নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা, পরিচালক, প্রশাসক এবং প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। প্রতি মাসে এসব শিক্ষকের মাসিক বেতন বিল প্রদানের জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করেন, স্কুলের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন যাচাই করে প্রতিবেদন প্রদান করেন। শিক্ষকদের যাবতীয় চাকরি সংক্রান্ত প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা বিষয়ক কার্যক্রম যেমন বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন, নৈমিত্তিক ছুটি, চিকিৎসা ছুটি, মাতৃত্ব ছুটি, কোয়ারেন্টাইম (সংগনিরোধ) ছুটি, টাইম স্কেলের আবেদন, দক্ষতা সীমা অতিক্রমের আবেদন ইত্যাদি যাচাই-বাছাই করে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের বরাবর অগ্রায়ন করে থাকেন। একজন সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার একাডেমিক সুপারভাইজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তিনি মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণে মাসে কমপক্ষে ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিবিড়ভাবে পরিদর্শন করেন। সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার একটি বিদ্যালয়ের সকল দিক ও বিভাগ নিবিড়ভাবে পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করে বিদ্যালয়কে একটা আদর্শ শিক্ষায়তনে পরিণত করতে প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষককে নিয়মিত দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্কুল ম্যানেজিং কমিটি গঠনে প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি নিয়মিত স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভায় উপস্থিত থেকে বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে সহযোগিতা দিয়ে থাকেন। তিনি বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত বিষয়ে এবং শিক্ষার্থীদের মান উন্নয়ন ও সুশৃংখল পরিবেশ তৈরিতে ম্যানেজিং কমিটিকে উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি অভিভাবক সমিতির সভায় উপস্থিত থেকে শিশুদের নিয়মিত উপস্থিত নিশ্চিত করতে ও পড়াশুনার মান বৃদ্ধিতে পরামর্শ দেন। এছাড়াও তিনি অভিভাবক ও স্থানীয় জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে নিয়মিত বিদ্যালয় আয়োজিত মা সমাবেশ, অভিভাবক সমাবেশ, উঠান বৈঠক, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, বিভিন্ন পরীক্ষার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠান, বার্ষিক বনভোজন, জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ পক্ষ উদযাপনের অনুষ্ঠানসহ নানা অনুষ্ঠানে, উপস্থিত থাকেন ও স্থানীয় জনগণকে নিরক্ষরমুক্ত সমাজ গঠনে উৎসাহ প্রদান করেন। বিদ্যালয়ের ভর্তি বহির্ভূত শিশুদের ভর্তি নিশ্চিত করতে এবং ছাত্র উপস্থিতি বৃদ্ধিকল্পে মাসে কমপক্ষে ৩টি শিক্ষার্থীর বাড়ি পরিদর্শন (ঐড়সব ঠরংরঃ) করেন সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার। তিনি প্রতি বছর বিদ্যালয় এলাকা (ঝপযড়ড়ষ ঈধঃপযসবহঃং অৎবধ) শিশু জরিপ কার্যক্রমের নেতৃত্ব দেন। এছাড়াও তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের উপবৃত্তি প্রদান কার্যক্রম তদারক করেন। বিভাগীয় কাজ ছাড়াও একজন সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার বিভাগ এবং বহির্ভূত সরকার অর্পিত অন্যান্য কাজ যেমন বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম, দুঃস্থদের মাঝে ভিজিডি কার্ডের খাদ্য বিতরণে ট্যাগ অফিসারের দায়িত্ব, ভোটার গণনার সহকারী রেজিস্ট্রেশন অফিসারের দায়িত্ব, বিভিন্ন জাতীয় নির্বাচনে ভোট গ্রহণে প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাছাড়া উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত বিভিন্ন জাতীয় দিবস উদযাপনসহ নানাবিধ দায়িত্ব পালন করেন। সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারগণ মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে তৃণমূল পর্যায়ে সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন। তারা গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর প্রাথমিক শিক্ষা বিষয়ক কর্মকান্ডে নেতৃত্ব প্রদান করে থাকেন। ফলে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কাছে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়। বাংলাদেশ সরকার সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে সাংবিধানিকভাবে প্রতিশশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫(ক) এবং ১৭ অনুচ্ছেদ এবং ১৯৯০ সালের বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা আইনেও এই অঙ্গীকার ব্যক্ত হয়েছে। জমতিয়েন সম্মেলন, ডাকার ফ্রেম ওয়ার্কসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সম্মেলন, ইএফএ (ঊফঁপধঃরড়হ ঋড়ৎ অষষ) এবং মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (গউএ) অর্জনে বাংলাদেশ সরকার স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তারে অঙ্গীকারবদ্ধ। সরকারের গৃহীত দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্রে (চজঝচ) এই অঙ্গীকারে প্রতিফলন রয়েছ। প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সর্ব বৃহৎ কর্মসূচি হিসেবে সরকার ২য় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (চঊউচ-২) গ্রহণ করেছেন। এ কর্মসূচির সফল বাস্তবায়ন অনেকাংশে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারের উপর নির্ভরশীল। তৃর্ণমূল পর্যায়ে সরকারের যে কোনো বিভাগের চেয়ে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের জনবল সর্বাপেক্ষা অধিক। ফলে সরকারের যে কোনো কর্মকান্ড এ বিভাগের মাধ্যমেই সবচেয় দ্রুত বিস্তৃতি লাভ করে। তাই এক্ষেত্রেও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারবৃন্দ জনস্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এ বিভাগে জনবল যেমন বেশি, তেমনি কাজের পরিধিও ব্যাপক হওয়ায় উপজেলা পর্যায়ের অন্যান্য বিভাগের ন্যায় উপজেলা শিক্ষা অফিসে একাধিক ১ম শ্রেণীর কর্মকর্তা থাকলে প্রাথমিক শিক্ষায় কাজের গতি আরো ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করা যায়। বর্তমানে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদধারীদের অনেকেই সিলেকশন গ্রেডের মাধ্যমে প্রথম শ্রেণীর আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন বিধায় সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের পদটিকে প্রথম শ্রেণীতে উন্নীতকরণে সরকারের আর্থিক সমস্যা না-ও হতে পারে। সর্বোপরি বাজেটে শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ থাকে। তন্মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ সরকারের ইতিবাচক কমিটমেন্ট প্রকাশ পায়। সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারেরা মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা ব্যবস্থাপনার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে তৃণমূল পর্যায়ে সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন। তারা গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর প্রাথমিক শিক্ষা বিষয়ক কর্মকান্ডে নেতৃত্ব প্রদান করে থাকেন। ফলে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কাছে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই এক্ষেত্রেও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারবৃন্দ জনস্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ বিভাগে জনবল যেমন বেশী, তেমনি কাজের পরিধিও ব্যাপক হওয়ায় উপজেলা পর্যায়ের অন্যান্য বিভাগের ন্যায় উপজেলা শিক্ষা অফিসে একাধিক কর্মকর্তা থাকলে প্রাথমিক শিক্ষায় কাজের গতি আরও বাড়বে বলে আশা করা যায়। মহান স্বাধীনতা অর্জনের ৩৭ বছর পরেও অনেকক্ষেত্রেই নানা প্রতিকূলতার কারণে নিরপেক্ষ ও যুগোপযোগী সংস্কার সম্পাদন সম্ভব হয়নি। বর্তমান দল নিরপেক্ষ সরকার সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অনেক সেক্টরে নিরপেক্ষ সংস্কারে মহতী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। মহান স্বাধীনতাকে প্রকৃত অর্থে অর্থবহ করতে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে প্রাথমিক শিক্ষায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। আমরা আশাকরি প্রাথমিক শিক্ষার বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে আগে প্রয়োজন উপজেলা সহকারি শিক্ষা অফিসারদের পদটি প্রথম শ্রেনীতে পদায়ন করলে তাদের কাজের পরিধি ও শিক্ষকদের শিক্ষাদানে আরো সহজতর হবে। আশাকরি বর্তমান সরকার এ সাহসী পদক্ষেপটি নিতে পারেন।
লেখক: গবেষক ও সাবেক অধ্যক্ষ
মোবাইল: ০১৭১১৫৭৯২৬৭
ধন্যবাদ
ReplyDelete