Monday, April 25, 2016

অনৈসর্গিক: রবীন্দ্রনাথ

অনৈসর্গিক: রবীন্দ্রনাথ
আলী ফোরকান
রবীন্দ্রনাথের কবিতার বিষয় যেখানে প্রকৃতি, সেখানেই তাঁর কবিতার আবেদন সবচেয়ে দুর্মুল্য। এমনই মনে করেছিলেন বুদ্ধদেব বসু। ‘গল্পগুচ্ছ’ পড়তে পড়তে বুদ্ধদেবের এই নির্ণয় মনে পার পক্ষে সবচেয়ে স্বাভাবিক যুক্তিটি হতে পারে এইরকম গল্পেও রবীন্দ্রনাথ কখনো বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিত হিসেবে কখনো এমনই প্রকৃতির নানা ধরনকে নানাভাবে ব্যবহার করেছেন, এবং প্রায় সবসময়ই এই ব্যবহার এতটাই দ্যুতিময় যে, বুদ্ধদেবের কথাটিকে রবীন্দ্রনাথের গল্প সম্পর্কেও অব্যবহিত বলে মনে হতেই পারে।
আমরা রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন গল্পে এই ব্যবহারের নানা প্রকরণ নিয়ে ধারাবাহকিভাবে কথা বলব। আপাতত রবীন্দ্রনাথের যে-গল্পগুলি অবলম্বন, সেগুলির রচনাকাল ১২৯১ থেকে ১৩০০ বঙ্গাব্দ। অনেকগুলি গল্পই লেখা হয়েছে পৈত্রিক জমিদারি দেখাশোনর পর্বে, চারপাশের অকুন্ঠ প্রাকৃতিক সাহচর্যে অনবরত জলপর্যটনে। হয়তো সেই প্রতিমুহূর্তের অভিজ্ঞতার একটা স্বাভাবিক প্রভাব গল্পে ধরা পড়েছেÑ কখনো নিছক বর্ণনায়, কখনো কোনো চরিত্রের ভেতরের টানাপোড়েনের বিকল্প বিন্যাসে।
এই বিকল্প আয়তনটিই গল্প আর কবির প্রকৃতি বর্ণনার ধরনটিকে আলাদা করে দেয়। কবিতায়, সাধারণত এই বর্ণনায় একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ উত্তরণ থাকে, কিন্তু গল্পে তার পটভূমি তৈরি থাকে অন্যত্র। পরিবেশের সঙ্গে সম্পর্ক গঠনের এক ধারাবাহিক দাবি থেকেই প্রকৃতির আয়োজন ঘটে সেখানে।
‘পোস্টমাস্টার’ গল্পে রতনের হারানো ছোটো ভাইটির স্মৃতি এভাবে ধরা পড়ে ‘..... তাহার একটি ছোটভাই ছিল-বহু পূর্বেকার বর্ষার দিনে একদিন একটা ডোবার ধারে দুইজনে মিলিয়া গাছের ভাঙা ডালকে ছিপ করিয়া মিছামিছি মাছধরা খেলা করিয়াছিল- অনেক গুরুতর ঘটনার চেয়ে সেই কথাটাই তাহার মনে বেশি উদয় হইত।’ এই বর্ণনায় যে-ঈষৎ প্রকৃতি, তা অপরিহার্য নয়। ভাই-বোনের সম্পর্কের আন্তরিকতা টুকু বোঝানোর জন্য বর্ষা বা ডোবার ধারে বসে মাছ ধরার দৃশ্যটির কোণা বিশেষ তাৎপর্য নেই কিন্তু গল্পের শেষে পোস্টমাস্টার যখন চলে যাচ্ছেন রতনকে ফেলে, ‘যখন নৌকায় উঠিলেন এবং নৌকা ছাড়িয়া দিল, বর্ষা বিস্ফোরিত নদী ধরণীর উচ্ছলিত অশ্রুরাশির মতো চারিদিকে ছলছল করিতে লাগিল, তখন হৃদয়ের মধ্যে অত্যন্ত একটা বেদনা অনুভব করিতে লাগিলেন- একটি সামান্য গ্রাম্য বালিকার করুণ মুখচ্ছবি যেন এক বিশ্বব্যাপী বৃহৎ অব্যক্ত মর্মব্যথা প্রকাশ করিতে লাগিল।’ এই ব্যথার পরিপ্রেক্ষিত রচনার জন্যই বর্ষাবিস্ফোরিত নদী হয়ে ওঠে ধরণীর উচ্ছ্বলিত অশ্রুরাশির মতো। এই ছবিটি প্রসঙ্গের সঙ্গে সম্পর্কের জন্যই অবধারিত।
‘পোস্টামাস্টার’ গল্পেই প্রকৃতি-রচনার আর-একটি ধরন টের পাওয়া যাবে, যখন পোস্টমাস্টার রতনকে নির্বিকারভাবে জানালেন যে তাঁর ছুটির দরখাস্ত না-মঞ্জুর হওয়ায় তিনি কাজে জবাব দিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। তাঁর অগোচরেই প্রায় রতন তাঁকে অবলম্বন করে যে-জগৎ গড়ে তুলেছিল, তা মুহূর্তে ধ্বংস হয়ে যাবার পরিবেশে অনেকক্ষণ আর কেহ কোনো কথা কহিল না। মিট্ মিট্ করিয়া প্রদীপ জ্বলিতে লাগিল এবং এক স্থানে ঘরে জীর্ণ চাল ভেদ করিয়া একটি মাটির সরার উপর টপ্টপ্ করিয়া বৃষ্টির জল পড়িতে লাগিল।’ এই উদাসীন দৃশ্যটির নিঃসঙ্গতায় একটি বিধ্বস্ত সম্পর্ক পুরো অসহায়তা সহ ধরা পড়ল। এখানেও প্রসঙ্গের সঙ্গে সম্পর্ক পুরো অসহায়তা সহ ধরা পড়ল। এখানেও প্রসঙ্গের সঙ্গে সম্পর্কের জন্যই ছবিটির গুরুত্ব, কিন্তু তার বৈশিস্ট্য এক বিপরীত নৈর্ব্যক্তিকতা, যা অন্য দিক থেকে আঘাত করে মূল উদ্দেশ্যটিকে জাগ্রত করে তুলল।
মোটামুটি এই তিনরকম বিন্যাসেই রবীন্দ্রনাথের গল্পে প্রকৃতির ব্যবহার। নিহিত আরও দু-একটি ঘরানাও হয়তো উদ্ধার করা যেতেই পারে, তবে আপাতত আমাদের আলোচনায় এই তিনটি সূত্র ধরেই আমরা এগোব। যদিও,মনে রাখা জরুরি, তিনটি রকম যে একে অন্যের থেকে আলাদা পুরোপুরি তা কিন্তু নয়। এমন উদাহারণও যথেষ্ট, হয়তো বেশিটাই তাই, যেখানে এই তিনটি ধরনই মিশে আছে, সেখানে একটিমাত্র অভ্যাস আলাদা করে নেবার চেষ্টায় অকারণে ঘর্মাক্ত হতে হবে শুধু। যেমন, ‘খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’ গল্পে রাইচরণ যখন বুঝল যে প্রভুপুত্র স্রোতমুখর পদ্মায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, তার প্রাণপণ ডাকে যখন কেউ উত্তর দিল না, দুষ্টামি করিয়া কোনো শিশুর কণ্ঠ হাসিয়া উঠিল না,‘তখন ‘কেব পদ্মা পূর্ববঃ ছলছল্ খলখল্ করিয়া ছুটিয়া চলিতে লাগিল, যেন স্ েকিছুই জানে না, এবং পৃথিবীর এই সকল সামান্য ঘটনায় মনোযোগ দিতে তাহার যেন এক মুহূর্ত সময় নাই।’ যদি, শুধু পদ্মার নিরুদ্বিগ্ন ছবিটির বেশি আর কিছু বলা না হত এখানে, তাহরে এইটি আমাদের ভাগ-করা তৃতীয় গোত্রের নমুনা হতেই পারত। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই লেখক ব্যাখ্যা জানিয়ে দেওয়ায় বর্ণনার উদাসীনতা একটু টোল খেল, প্রসঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগটি নিরাবরণ হয়ে -ওঠায় একই সঙ্গে দ্বিতীয় গোত্রের বৈশিষ্ট্যও কিছুটা পেয়ে গেল বোধহয়।
আবার এই গল্পেই, একটু আগে, আরেক রকম ব্যাপার ঘটেছে। রাইচরণ শিশুটির অবদার মেনে ফুল তুলতে যাবার সময় তাকে সাবধান করে যায়, ‘খবরদার, জলের ধারে যেয়ো না।
‘কিন্তু ওই যে জলের ধারে যাইতে নিষেধ করিয়া গেল, তাহাতে শিশুর মন কদম্বফুল হইতে প্রত্যাবৃত্ত হইয়া সেই মুহূর্তেই জলের দিকে ধাবতি হইল। দেখিল, জল খল্খল্ ছল্ছল্ করিয়া ছুটিয়া চলিয়াছে, যেন দুষ্টামি করিয়া কোন-এক বৃহৎ রাইচরনের হাতে এড়াইয়া এক লক্ষ শিশু-প্রবাহ সহাস্য কলস্বরে নিষিদ্ধ স্থানাভিমুখে দ্রুত বেগে পলায়ন করিতেছে।
তাহাদের সেই অসাধু দৃষ্টান্তে মানবশিশুর চিত্ত চঞ্চল হইয়া উঠিল। গাড়ি হইতে আস্তে আস্তে নামিয়া জলের ধারে গেলÑ একটা দীর্ঘ দৃণ কুড়াইয়া লইয়া তাহাকে ছিপ কল্পনা করিয়া ঝুঁকিয়া মাছ ধরিতে লাগিল- দুরন্ত জলরাশি অস্ফুট কলভাষায় শিশুকে বার বার আপনাদের খেলাঘরে আহ্বান করিল।
‘একবার ঝপ্ করিয়া একটা শব্দ হইল, কিন্তু বর্ষার পদ্মাতীরে এমন শব্দ কত শোনা যায়। রাইচরন আঁচল ভরিয়া কদমফুল তুলল।’
এখানে তো স্রোতধারার ব্যবহার বর্ণনায় একটি ‘দৃষ্টান্ত’ রচিত হলই, যা ‘মানবশিশুর’ চিত্তচাঞ্চল্যের পরিপ্রেক্ষিত। কিন্তু বর্ণনায় যে নির্মম নিরাসক্তি, তা খেয়াল করতে হবে। এও একটি বিশেস ধরন। জলরাশির ‘শিশু-প্রবাহ’, অস্ফুট কলভাষায় শিশুকে বার বার আহ্বানের যে-নিরাসক্ত উদাহরণ, বিষয়ের মর্মান্তিকতা তা অসহ্য করে তুলেছে।
মিশ্র বিন্যাসের উদাহরণ পাওয়া যাবে ‘দালিয়া’ গল্পেও। বিপরীত প্রবণতার দুষিট বোন, জুলিখা আর আমিনার কথাশুরুর পরিচ্ছেদের সূচনাই হয় এভাবে: ‘ছোটো নদীটি বহিয়া যাইতেছিল, এবং প্রথম গ্রীষ্মের শীতল প্রভাববায়ুতে কৈলু গাছের রক্তবর্ণ পুষ্পমঞ্জুরী হইতে ফুল ঝরিয়া পড়িতেছিল।
এই রক্তিম ও উষ্ণ দৃশ্যটির কোনো স্পষ্ট অবলম্বন অন্তত এই পরিচ্ছেদে পাওয়া যাবে না, ফলে মনে হতেই পারে নিছক বর্ণনার সৌন্দর্য রচনা ছাড়া এর আর কোনো গন্তব্য নেই। কিন্তু পরের পরিচ্ছেদেই ধরা পড়বে দালিয়র সঙ্গে আমিনার সম্পর্কের লাবণ্যভঙ্গিমা। জুলিখার চাপা প্রতিহিংসা-প্রবণতার পাশাপাশি আমিনার সচ্ছলতা, পৃথিবীটা তার ‘একরকম বেশ’ লাগছে- এমন স্বীকারোক্তি, সব কিছুরই অনুষঙ্গ হয়েই তখন চেনা যাবে পরিচ্ছিদের সুচনাকথাটিকে। আরও একটি পরিচ্ছেদ পরের এই বর্ণনাটিও তখন অর্থময় হয়ে উঠবে অবধারিত : ‘এখানে কেবল ঋতুপর্যায়ে তরুমুঞ্জরিত হইতেছে এবং সম্মখে নীলা নদী বর্ষায় স্ফীত, শরতে স্বচ্ছ এবং গ্রীষ্মে ক্ষনি হইতেছে, পাখির উচ্ছ্বলিত কণ্ঠস্বরে সমালোচনার লেশমাত্র নাই, এবং দক্ষিণবয়ু মাঝে মাঝে পরপারের গ্রাম হইতে মানবচক্রের গুঞ্জনধ্বনি বহিয়া আনে, কিন্তু কানাকানি আনে না।’
‘দালিয়া’ গল্পেই, আমিনা যখন ধীবরের কুটির ছেড়ে রাজবধূ হতে  চলেছে, তখন ‘শিবিকয় উঠিবর পূর্বে অনিমা তহার বাল্রকালের আশ্রয়টি অশ্রুজলের ভিতর হইতে একবা রদেখিল- তাহর সেই ঘরের গাছ, তহার সেই ঘরের নদী।’ এখানে, বল যায় যে, এই বিশেষ াছ বা বিশেষ নদীটির কোনো নির্দিষ্ট তাৎপর্য নেই। এতদিনের সম্পর্ক যে-পরিবেশের সঙ্গে, তা চিরদিনের জন্য ছেড়ে যাবার মুহূর্তের যন্ত্রণা আশ্রয় করেছে ঘর বা নদীটিকে। একটু পরও যেমন ‘আমিনার কুটির, নদীতীর, কৈলুতরুদল অন্ধকার নিস্তব্ধ জনশূন্য হইয়া গেল।’ আদালাদাভাবে এই অঞ্চলগুলি, কুটির বা নদীতিীর বা কৈলুতরুদল এখানে সর্বস্ব নয়, তবে বিচ্ছিন্নতার একটি আবহ এখানে ঘনিয়ে উঠেছে, সবটা মিলিয়ে তাই এক ইছারা টের পাওয়া যায়।
অনুচ্চারিত তাৎপর্যে কোনো দৃশ্যকে উল্টোদিক থেকে বাক্সময় করে তোলার একটি উদাহরণ পাওয়া যাবে বলে ‘কঙ্কাল’ গল্পে। নিরূপায় মৃত্যুবরণের ঠিক আগের পরিবেশের বর্ণনা দেওয়া হচ্ছে কত ছদ্ম সুষমায় :‘বড়ো সুন্দর রাত্রি। ফুটফুটে জ্যোৎস্না। সুপ্ত জগতের ক্লান্তি হরণ করিয়া দক্ষিণে বাতাস বহিতেছে। জুঁই আর বেলফুলের গন্ধে সমস্ত বাগান আমোদ করিয়াছে।’ আগেই জানা হয়েছে একটি সম্পর্ক কী নিদারুণভাবে বিধ্বস্ত হতে পারে। তারপরেই এই স্নিগ্ধ উচ্চারণে এক অশুভ উৎকণ্ঠা জাগেই, যা পরিণতি পায় চুড়ান্ত মৃত্যুতে।
‘মুক্তির উপায়’ গল্পে প্রকৃতি সরাসরি উপমা হয়ে ধরা পড়েছে একবার, সহজতম ধরনে। ফকিরচাঁদের অল্পবয়সী স্ত্রী হৈমবতী সম্পর্কে বলা হচ্ছে : ‘বিকচোম্মুখ পুষ্প যেমন বায়ুর আন্দোলন এবং প্রভাতের আলোকের জন্য ব্যাকুল রয়, সেও তেমনি এই নবযৌবনের সময় স্বামীর নিকট হইতে আদর এবং হাস্যমোদ যথাপরিমাণে প্রত্যাশা করিয়া থাকে।’ আমাদের রচিত দ্বিতীয় পর্যায়েরই অর্ন্তগত এই ধরন, নিঃসন্দেহে।
ঠিক এই রকমই আরেকটি উচ্চারণ পাব ‘ত্যাগ’ গল্পে। এমনই উপমার গঠনে, সরাসরি। স্ত্রীকে হেমন্তর আদর করার বিন্যাসটি তুলনীয় করা হল এভাবে : ‘সন্ধ্যাবেলাকার নিস্তব্ধ ফুলের গাছটিকে সচেতন করিয়া তুলিবার জন্য বাতাস যেমন একবার এপাশ হইতে একবার ওপাশ হইতে একটু-আধটু নাড়াচাড়া করিতে থাকে, হেমন্তের কতকটা সেই ভাব।’ এই গল্পেই আর একবার, একটি বিমূঢ় পরিবেশের বর্ণনা দেন লেখক এইভাবে : ‘সময় যেন স্তম্ভিত সমুদ্রের মতোস্থির হইয়া আছে।’
প্রকৃতিকে পটভূমি করে পরিবেশ রচনার একটি উদাসী উদাহরণ পাওয়া যাবে একরাত্রি গল্পেও। গল্পটি বলবা রমতো কোনো রচনা নয় রবীন্দ্রনাথের। সময়ের ওঠা-পড়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়নি বলে বিশ্বাসযোগ্যও হতে পারেনি গল্পের ননা বাঁক। গল্পের শেষে শৈশবসঙ্গিনী সুরবালার সঙ্গে অতর্কিত দেখা-হওয়ার সাড়ম্বর বণৃনা তাই খুব অনুযোগ তোলে না পাঠকের মনে।
বরং স্বর্ণমৃগ গল্পে কাহিনী বর্ণনার ধরন বেশ অনায়াস, পুরোটাই আপ্লুত গল্প, তবে অনেকটাই আন্তরিক। সংসার রক্ষায় ব্যর্থ, বিপন্ন বৈদ্যনাথের মনে শারদ আন্দোলনের প্রতিক্রিয়াটি বর্ণনা করা হয়েছে এভাবে : ‘মেঘমুক্ত আকাশে শরতের সূর্যকিরণ উৎসবের হাস্যের মতো ব্যপ্ত হইয়া পড়িয়াছে, পক্ক প্রায় ধান্যক্ষেত্র র্থর্থ করিয়া কাঁপিতেছে, বর্ষাধৌত সতেজ তরূপ্লব নব শীতবায়ুতে র্সি র্সি করিয়া উঠিতেছে- এবং তসরের চায়নাকোট পরিয়া, কাঁধে-একটি পাকানো চাঁদর ঝুলাইয়া, ছাতি মাথায়, প্রত্যাগত পথিকেরা মাঠের পথ দিয়া ঘরের মুখে চলিয়াছে।
‘বৈদ্যনাথ বসিয়া তাই দেখেন এবং তাহার হৃদয় হইতে দীর্ঘনিশ্বাস উচ্ছ্বসিত হইয়া উঠে।’
‘সুভা’ গল্পে বাক্যহরা মেয়েটির মনে প্রকৃতির সঞ্চার ঘটে স্বাধীনভাবে। এখানে আলাদাভাবে প্রকৃতি প্রসঙ্গ ও পটভূমি নয়, কিন্তু সুভার মনের সমান্তরালে প্রকৃতি এখানে তাৎক্ষনিক ভূমিকা পেয়েছে, গল্পের আসল বিষয়কে ছুঁয়ে আছে নিছক একটি ব্তিার হয়েও : ‘নদীর কলধ্বনি, লোকের কোলাহল, মাঝির গান, পাখির ডাক, তরুর মর্মরÑ সমস্ত মিশিয়া চারিদিকের চলাফেরা-আন্দোলন-কম্পনের সহিত এক হইয়া সমুদ্রের তরঙ্গরাশির ন্যায় বালিকরা চিরনিস্তব্ধ হৃদয়-উপকূলের নিকটে আসিয়া ভাঙিয়া ভাঙিয়া পড়ে।’ নির্দিষ্টভাবে বিভিন্ন প্রাকৃতিক ভঙ্গিমাগুলির এখানে কোনো তাৎপর্য নেই, তবে সবটা মিলিয়ে একটা আবেদন রচনাই এখানে লক্ষ্য।
রবীন্দ্রনাথের পরের আরও নানা গল্পে বিভিন্ন আয়তনে ধরা পড়েছে প্রকৃতি। কখনো পর্যাপ্ত চিত্রকুল্পে, ককনো নিস্তরঙ্গ লাবণ্যে চারপাশের বর্ণাঢ্য আয়োজনকে ব্যবহার করেছেন তিনি। নানা কোণিক এই ব্যবহরের দু-একটি ধরন শুধু এই লেখায় টের পেতে চেয়েছি আমরা।
০১৭১১৫৭৯২৬৭

0 comments:

Post a Comment