Wednesday, April 27, 2016

এমন আর কোথাও হয়নি: রবীন্দ্রনাথ




এমন আর কোথাও হয়নি: রবীন্দ্রনাথ
আলী ফোরকান
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ। বাঙালি জীবনে তিনি প্রাতস্মরণীয়। ঋষি রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করার উপলক্ষের শেষ নেই। বাংলাদেশে তার অনেক স্মৃতি। তেমনই এক স্মৃতিময় জায়গা নেত্রকোনা। যদিও তিনি কোনদিন সেখানে পদার্পণ করেননি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার শিলাইদহে এলেও তৎকালীন বৃহত্তর ময়মনসিংহের নেত্রকোনায় কোনদিন আসেননি। কিন্তু এরপরেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নেত্রকোনার সাথে একটা যোগসূত্র রয়েছে যা আজো অম্লান। আর এই যোগসূত্রটির মাধ্যম ছিলেন নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ থানার কৃতী সন্তান শৈলজারঞ্জন মজুমদার। যিনি এক সময় রবি ঠাকুরের বিশ্ব ভারতীর সঙ্গীত ভবনের অধ্যক্ষ ছিলেন। তিনি আর বেঁচে নেই। 
কবিগুরুর জš§দিন বা পঁচিশে বৈশাখ বা তার পরলোক গমনের তারিখ ২২ শ্রাবণ এলেই আমরা কবিকে বিশেষ ভাবে স্মরণ করি। তার জš§দিনে সারা দেশে পালিত হয় রবীন্দ উৎসব। আমাদের এই ভাটির জেলা নেত্রকোনাও এর ব্যতিক্রম নয়। এখানেও পালিত হয় রবীন্দ নাথের জš§দিন। কিন্তু আপনারা কি কেউ জানেন যে, এই নেত্রকোনাতেই উপমহাদেশের মধ্যে প্রথম রবীন্দ নাথের জš§ উৎসব ঘটা করে পালিত হয়েছিল। যা কোলকাতা বা ঢাকাতেও এর আগে হয়নি। আজ থেকে আশি বছর পূর্বে ১৯৩০ সালে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মহকুমা শহর নেত্রকোনায় রবীন্দ নাথের জš§-জয়ন্তী উদ্যাপিত হয়েছিল। নেত্রকোনাবাসী গর্বিত হয়েছিলেন। সবুজ ঘাসফুল আর শিশির ভেজা নেত্রকোনার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ছিল সবসময়। আর এ কারণেই সকল বাধা অতিক্রম করে সাহসের সঙ্গে নেত্রকোনায় রবীন্দ জš§-জয়ন্তী উদযাপন করা গেছে। যা আজো স্মৃতিতে অম্লান। নেত্রকোনা শহরের প্রাচীনতম বিদ্যালয় হচ্ছে নেত্রকোনা দত্ত উচ্চ বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়েই ১৯৩০ সালের ২৫ বৈশাখ কবির জš§দিন পালন করার জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়। কিন্তু ঝড়ের কারণে তা দু’দিন পর পার্শ্ববর্তী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে স্থানান্তরিত করা হয়। আর এ আয়োজনের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন শৈলজা রঞ্জন মজুমদার। উপমহাদেশের প্রথম রবীন্দ্র জš§-জয়ন্তী হওয়াতে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ এ অনুষ্ঠানের প্রশংসা করে উত্তর ভারতের শৈলাবাস থেকে চিাঠ লিখেছিলেন শৈলজা রঞ্জন মজুমদারকে। চিঠি লিখেছিলেন একটু দেরি করে ১৯৩৯ সালের ২৫ মে। নেত্রকোনায় প্রথম রবীন্দ জš§-জয়ন্তী পালন করা প্রসঙ্গে কবিগুরু তাঁর চিঠিতে লিখেছিলেন, “ তোমাদের নেত্রকোনায় আমার জš§দিনের উৎসব যেমন পরিপূর্ণ মাত্রায় সম্পন্ন হয়েছে, এমন আর কোথাও হয়নি। পুরীতে আমাকে প্রত্যক্ষ সভায় নিয়ে সš§ান করা হয়েছিল। কিন্তু নেত্রকোনায় আমার সৃষ্টির মধ্যে অপ্রত্যক্ষ আমাকে রূপ দিয়ে আমার স্মৃতির যে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, কবির পক্ষে সেই অভিনন্দন আরো অনেক বেশি সত্য। তুমি না থাকলে এত উপকরণ সংগ্রহ করত কে? এই উপলক্ষে বৎসরে বৎসরে তুমি আমার গানের অর্ঘ্য পৌঁছিয়ে দিচ্ছ তোমাদের পল্লী মন্দিরের ভোগ মন্ডপে-এও কম কাজ হচ্ছে না। আমার জš§দিন প্রতি বৎসর তোমাদের কাছে নিয়ে যাচ্ছে উৎসব, আমাকে এনে দিচ্ছে ক্লান্তির ডালিতে নতুন বোঝা। এবার পাহারে এখনো দেহমনে অবসাদ আসক্ত হয়ে আছে। পৃথিবী জুড়ে যে শনির সšর্§াজনী চলেছে-বোধ হচ্ছে তার আঘাত এসে পড়বে আমার ভাগ্যে। দেখা হলে নৃত্যকলা সম্পর্কে তোমার সঙ্গে আলাপ করব”। ইতি ২৫/৫/৩৯, তোমাদের রবীন্দ নাথ। শৈলজা রঞ্জনকে লেখা কবিগুরুর এই পত্র দেয়া থেকেই বুঝা যায় নেত্রকোনার প্রতি তাঁর টান। এক রবীন্দ জš§-জয়ন্তী পালনের মাধ্যমে তিনি নেত্রকোনাকে সহজ ভাবে চিনেছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের কোলকাতা থেকে প্রকাশিত ১৯৯৭ সালের জুলাই মাসে প্রকাশিত এবং নেত্রকোনারই আর এক কৃতী সন্তান সত্যকিরণ আদিত্য সম্পাদিত নেত্রকোনা সšি§লনির মুখপত্র ‘সুনেত্র’ পত্রিকার ত্রয়োদশ সংখ্যায় (১৯৯৪-১৯৯৫) নেত্রকোনার রবীন্দ জš§-জয়ন্তী উপলক্ষে শ্রী সলিল চন্দ বর্মন লিখেছেন, শান্তি নিকেতনের বাহিরে নেত্রকোনাতেই প্রথম রবীন্দ জয়ন্তী উৎসব পালিত হয়। এর পরের বছর কোলকাতার টাউন হলে ১৯৩১ সালে কবির জš§-জয়ন্তী পালন করা হয়। নেত্রকোনায় রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করতে গিয়ে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল তার কথাও তিনি লিখেছেন। তিনি লিখেছেন, নেত্রকোনায় তখন কোন স্থায়ী মঞ্চ ছিল না। ছিল না বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা। প্রথম বৎসর অনুষ্ঠানে নেত্রকোনার তৎকালীন মহকুমা শাসক বীরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী (যিনি পরে ভারতের হরিয়ানার রাজ্যপাল হয়েছিলেন) এই অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন। নেত্রকোনার তৎকালীন মুন্সেফ প্রখ্যাত সাহিত্যিক অচিন্ত্য কুমার সেনগুপ্ত রবীন্দ্র জš§-জয়ন্তীতে অংশ নিয়ে একটি স্বরচিত কবিতা পাঠ করেছিলেন। এই অনুষ্ঠানে নেত্রকোনার মেয়েরাও অংশগ্রহণ করেন। আগামী বছর অর্থাৎ ২০১১ সালে কবির ১৫০তম জš§-জয়ন্তী ভারত বাংলাদেশ মিলে যৌথভাবে উদযাপন করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নেত্রকোনা জেলাতেও যাতে তা ভালভাবে উদযাপন করা হয় সেজন্য সংশ্লিষ্টমহলের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকলো।
১৯৩০ সালে শুরু হওয়া রবীন্দ জš§-জয়ন্তী আর থেমে থাকেনি। প্রতি বছরই কবিগুরুর জš§-জয়ন্তী এখানে পালন করা হয়। এইধারা এখনো অক্ষুণœ রয়েছে। নেত্রকোণার বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক যতীন সরকার একটি তথ্য দিয়ে জানান, রবীন্দ্রনাথ নেত্রকোনা নামের শব্দটি দিয়ে তার শান্তি নিকেতনের বাসার একটি জানালার নাম রেখেছিলেন ‘নেত্রকোনা’। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নেত্রকোনাকে জানতেন নেত্রকোনায় জš§-জয়ন্তী আর বিশ্বভারতীর সঙ্গীত ভবনের অধ্যক্ষ শৈলজা রঞ্জন মজুমদারের মাধ্যমে। আমরা কবিকে আমাদের গভীর শ্রদ্ধা এবং প্রণাম জানাই আর সেই সাথে শৈলজা রঞ্জন মজুমদারকেও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। তথ্য সূত্রঃ ‘সুনেত্র’ কোলকাতা।
০১৭১১৫৭৯২৬৭



0 comments:

Post a Comment