Tuesday, May 1, 2018

স্মরণ : কবিরাইনার মারিয়া রিলকে


স্মরণ : কবিরাইনার মারিয়া রিলকে
আলী ফোরকান
জন্ম : ১৮৭৫ সালের ৪ ডিসেম্বর 
মৃত্যু  : ১৯২৬ সালের ২৭ ডিসেম্বর 
তুমি বাড়তে থাকো নিঃশব্দে অব্যাহত ও ঐকান্তিকভাবে। আর তোমার এই বেড়ে ওঠার সময়, তুমি বাইরে না তাকিয়ে তোমার মতো করে বেড়ে ওঠো। নিজের দিকে তাকাও, নিজের সত্তার দিকে তাকাও নিজেকে সুন্দরভাবে তৈরি করো এবং ভাবো যে, এ মুহূর্তে এই কথাটি অন্য কেউ এভাবে দেখেনি বা বলেনি কখনো
এক তরুণ লেখক তার লেখা কবিতা সমালোচনার জন্য রাইনার মারিয়া রিলকের কাছে পাঠায়। প্রতি উত্তরে রিলকে ওই তরুণ লেখককে সাহিত্যসমৃদ্ধ একটি চিঠি পাঠিয়েছিল। ওই চিঠি পরবর্তীকালে ‘অ ষবঃঃবৎ ঃড় ধ ুড়ঁহম ৎিরঃঃবৎ’ শিরোনামে বই আকারে প্রকাশিত হয় এবং বিশ্বের অগণিত লেখক, পাঠক ও বুদ্ধিজীবী মহলে প্রশংসা ও আলোড়ন সৃষ্টি করে। ফলে চিঠি বিশ্বসাহিত্যে এক গুরুত্বপূর্ণ রচনা হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। 
প্রিয় লেখক,
তুমি আমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছ বটে, কিন্তু আমি তোমার প্রেরিত কবিতাগুলো সমালোচনা করতে পারছি না বলে আন্তরিকভাবে দুঃখিত। কারণ কবিতা সমালোচনার কাজ আমার কাছে খুবই জটিল ও অত্যন্ত বিদঘুটে বলে মনে হয়। তা ছাড়া মূলত লেখাই আমার কাজ, লেখার সমলোচনা বা কাটা-ছেঁড়া আমার কাজ নয়। কোনো সমালোচনা বা বাক্যবাণ একটা শিল্পকে যতটা ব্যাহত করে, অন্য কোনো কিছুতেই তা করে না। আমার ধারণা, আলোচনা করতে গিয়ে যা করা হয়, তার বেশির ভাগ না বুঝে করা হয়। সমালোচনা করতে গিয়ে একজন সমালোচক যে যে কথা বলেন, তা সবই যে বস্তুসঙ্গত এমনটি নয়। তবুও সমালোচক এসব বলেন। আমাদের বেশির ভাগ অভিজ্ঞতাই বর্ণনাযোগ্য নয়। কেননা অভিজ্ঞতাগুলো এমন এক জগতে ঘটে, সে জগতের ঘটনা গুটিকতক শব্দ বা বাক্য দিয়ে বর্ণনা করা যায় না। শিল্পসৃষ্টিও তেমনই একটি কাজ, যা অন্য যেকোনো কাজের বর্ণনার চেয়ে কঠিন। আমি যখন একটি শিল্প সৃষ্টি করব, সেটি সহজে কখনোই নষ্ট হবে না। কিন্তু অন্য যেকোনো সৃষ্টি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। 
তোমার কবিতাগুলো পড়ে মনে হয়েছে, এর মধ্যে তোমার একান্ত ব্যক্তিগত কিছু আছে, যা অন্যের কবিতার ভেতরে নেই। কিন্তু এই ব্যক্তিগত কিছুর মধ্যে তুমি বিশেষ কোনো শৈল্পিক আকার বা গঠন নিয়ে আসোনি। তোমার প্রেরিত কবিতাগুলোর মধ্যে ‘আমার আত্মা’ নামে যে কবিতাটি আছে, তাতে তোমার নিজের কিছু অভিজ্ঞতা আছে বলে আমার মনে হয়েছে। এ ছাড়া কবিতাটির মধ্যে এমন কিছু অনুভূতি আছে, যা তোমার নিজের কথা হয়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে। তবে অন্যান্য কবিতায় কিছু প্রতিশ্রুতি লক্ষ করা গেছে। যা যেকোনো মুহূর্তে নতুন কিছু হয়ে উঠতে পারে। তোমার কবিতাগুলো পাঠ করার পর আমার মনে হয়েছে তোমার কবিতার বেশ কয়েকটি স্থানে কিছু ভুল আছে। এ ছাড়া কিছু কিছু লাইন অত্যন্ত দুর্বল। কিন্তু কোথায় এবং কী দুর্বল, তা আমি বলতে পারছি না।
তুমি আমার কাছে জানতে চেয়েছো যে, তোমার কবিতা ভালো কি না। কারণ এর আগে যখন তুমি অন্য কাউকে এমনটি জিজ্ঞাসা করেছ এবং পত্রপত্রিকাতেও পাঠিয়েছ, তখন তারা ও সম্পাদকেরা তোমার কবিতাগুলোকে মূল্যায়ন করেনি। এ জন্য তুমি মানসিকভাবে অসম্ভব রকম ভেঙে পড়েছ। আর এ জন্যই তুমি এসব বিষয়ের ওপর আমার কাছে পরামর্শ চেয়েছ। কিন্তু আমি বলি কী, আমার কাছে পরামর্শ চেয়ো না। বরং তুমি এ মুহূর্ত থেকে বাইরের দিকে তাকানো বন্ধ কর। আর এটাই এখন তোমার বড় বেশি প্রয়োজন। কারণ আমার মনে হচ্ছে তুমি এখন বড় বেশি বাইরের দিকে তাকাচ্ছ। কিন্তু যতই তুমি অন্যের কাছে সাহায্য চাও না কেন, এ কথা স্মরণ রেখো যে, প্রকৃতপক্ষে কেউ তোমাকে সাহায্য বা উপদেশ দিতে পারবে না। বরং একটা কাজ তুমি করতে পারো, তা হলো, এখন থেকে তুমি তোমার নিজের ভেতর নিমগ্ন হও- তোমার চিত্তের ভেতর তুমি ডুবে যাও, মনটাকে নির্দিষ্ট একটি কেন্দ্রবিন্দুতে রাখো এবং তোমার চিন্তার পরিধিকে ব্যাপৃত করে সামনের দিকে এগিয়ে যাও। তুমি গভীরভাবে ভেবে দেখো যে, কিসের প্রভাবে এবং কী উদ্দেশ্যে তুমি লিখছ। তুমি প্রকৃত শিল্পী হতে পারবে এবং যদি তা-ই হও তাহলে, তোমার ওপর যে নিয়তি বর্তাবে তাকে বহন করার শক্তি অর্জন কর। আর এটুকুর জন্য তোমাকে সারা জীবন তৈরি থাকতে হবে। তুমি থাকবে তোমার সাথে যেখানে আর কেউ থাকবে না। এ ছাড়া তুমি যে কাজ করছ, তার স্বীকৃতিস্বরূপ তুমি কি পুরস্কার পাবে তার কোনো প্রশ্নই আসবে না এবং সে জন্য তোমাকে জগৎ-সমান্তরাল হিসেবে তৈরি হতে হবে। আর যদি তুমি এভাবে নিজের ভেতরে ঢুকে যাও, নিসর্গের কাছে সমর্পিত হও, তাহলে তখন কবি হওয়া ছাড়া তোমার আর কোনো পথ থাকবে না। 
কেউ যদি মনে করে যে, সে না লিখে বাঁচতে পারবে, তাহলে সে ভুল করবে, কিন্তু তুমি যদি এখন কবি না হও, লেখক না হও, তাহলেও তুমি তোমার একাকিত্বের দিকে তাকিয়ে তোমার আত্ম-অন্বেষণ বৃথা যাবে না। বরং এ থেকে তোমার যাত্রা শুরু হবে। তোমার সেই যাত্রা হবে মঙ্গলময়, সমৃদ্ধ ও প্রশস্ত। আমি বিশ্বাস করি, পৃথিবীর প্রতিটি জিনিসের একটি নিজস্ব শক্তি আছে। 
সবশেষে আর একটি উপদেশ আমি তোমাকে দিতে চাই। তুমি বাড়তে থাকো নিঃশব্দে অব্যাহত ও ঐকান্তিকভাবে। আর তোমার এই বেড়ে ওঠার সময়, তুমি বাইরে না তাকিয়ে তোমার মতো করে বেড়ে ওঠো। নিজের দিকে তাকাও, নিজের সত্তার দিকে তাকাও নিজেকে সুন্দরভাবে তৈরি করো এবং ভাবো যে, এ মুহূর্তে এই কথাটি অন্য কেউ এভাবে দেখেনি বা বলেনি কখনো। তুমি দেখে অনুভব করো ভালোবাসো বা যা তুমি হারাও, সেই বোধগুলোকে অতিক্রম করো। তুমি যা চাও, তা পাওয়ার জন্য লেখো। তবে, পেয়ে গেলে আর লিখো না। 
তোমাকে আমি আরো বলব যে, তুমি যেসব বিষয়কে খুব ঠুনকো ও সাদামাটা ভাববে, সেসব বিষয় নিয়ে কখনো লিখবে না। বিশেষ করে প্রেমের কবিতা তুমি লিখো না। প্রেমের কবিতা লেখা সবচেয়ে কঠিন, কারণ এটা খুবই সহজ। প্রত্যেকেই প্রেমে পড়ে প্রথমে কিছু অর্জন করেন, কিন্তু পরে তা সব বর্জন করেন। এ ছাড়া অতি সাধারণ যেসব বিষয় আছে, যে থিমগুলো আছে সেগুলো লেখা থেকে তুমি বিরত থাকো। বরং তোমার প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা তোমাকে যা দিচ্ছে, সে বিষয়গুলো নিয়েই তুমি লেখো। আরো ভাবো যে, তুমি কার ও কোন আদেশে লিখতে যাচ্ছ এবং তোমার ভেতরে যে আদেশ তোমাকে লিখছে, সে আদেশের শিকড় ডালপালা তোমার ভেতর বিস্তার লাভ করছে কি না। এরপর তুমি তোমার নিজের ভেতরে ঢুকে যাও এবং সর্বদা নিজেকে লেখার জন্য তৈরি রাখো। এবার তুমি তোমার সার্বভৌম নীরব মুহূর্তকে জিজ্ঞাসা করো, তোমাকে আসলেই লিখতে হবে কী? উত্তরের অপেক্ষায় নিজেকে খুঁড়তে থাকো ততক্ষণ-যতক্ষণ না তুমি তোমার প্রশ্নের উত্তর পাও। যদি তোমার প্রশ্নের উত্তর সম্মতিসূচক হয়, তাহলে তখন তুমি তোমার প্রয়োজনের আলোকে সারা জীবনের জন্য জীবনটাকে গড়ে নাও। এবার তুমি তোমার জীবনের সাদামাটা উদাসী মুহূর্তে লিখতে শুরু করো। লিখতে লিখতে তুমি প্রকৃতির খুব কাছাকাছি চলে এসো। তুমি তোমার ইন্দ্রীয় ভৌতিক, আদি ভৌতিক, বোধ- এদের কাছে আত্মসমর্পণ করো এবং বোধের ভেতরে প্রবেশ করো। দেখবে, তুমি যখন ওই প্রদেশে নিজের ভেতর নিমগ্ন হচ্ছ, তখন তুমি পৃথিবীর অনেক কিছুই দেখতে পাবে না। তোমার খুব কাছেও যদি লোকে কথা বলে- তোমার মনে হবে তা বহু দূর। সে সময় তুমি তোমার ভেতরের দিকে তাকাও এবং ওই মুহূর্তে তোমার ভেতর থেকে যে কবিতাগুলো লেখা হয়ে বেরিয়ে আসবে, সেগুলোকে তুমি না বুঝেই গ্রহণ করো। তোমার এ লেখাগুলো পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর, সেগুলো পাঠকের আগ্রহ সৃষ্টি করুক বা না করুক, সে মুহূর্তে তোমার লক্ষ্য সেটি হবে না বরং, তুমি তোমার বর্তমান মুহূর্তগুলো উদ্ধার করতে পেরেছ কি না সেটাই দেখতে হবে। যদি তা-ই হয়, তাহলে তোমার এই কবিতাগুলো হবে খুবই ভালো এবং অতি উচ্চমানের কবিতা। কারণ এই কবিতাগুলো তোমার জীবনের সত্তার অন্তর্গত। এটা তোমার জীবনের খণ্ডিত টুকরো। এতে কারো কোনো আগ্রহ সৃষ্টি হোক বা না হোক, তোমার কোনো কিছু এসে-যায় না। কেননা, তুমি যা সৃষ্টি করেছো তা দিয়ে নিঃসন্দেহে একটি শিল্পকে বিচার করা যায়।
আমি তোমাকে আর বেশি উপদেশ দেবো না বা দিতে চাচ্ছি না। আমি শুধু বলব, তুমি তোমার ভেতরে ডুবে যাওÑ ডুবে গিয়ে দেখো, তোমার গভীরতা কতটুকু, যে গভীরতা থেকে তোমার কবিতা উত্থিত হচ্ছে। তোমার ভেতরের গভীরতা থেকেই তুমি বুঝতে পারবে যে, তোমাকে সৃষ্টি করতে হবে। তুমি তোমার ওই উত্তাপ এবং ওই কথা গ্রহণ করো, যা তোমার ভেতর থেকে উঁকি দিচ্ছে। কিন্তু ওই ব্যাখ্যা করতে যেয়ো না বা করো না এবং তা হলেই তুমি বুঝবে যে, তুমি শিল্পী হয়ে গেছো।
তুমি তোমার মতো করে যা দেখছ, তা নিয়েই লিখ। এটা কতটুকু ভালো বা মন্দ সে দিকে তাকানোর কোনো প্রয়োজন নেই। আর এভাবেই যদি তুমি নিজেকে তৈরি করতে পারো, তাহলে তুমি নিজের দুঃখকষ্টের বর্ণনা করো। যে চিন্তা তোমার মনে ঢুকেছে তা নিয়ে লিখ। তোমার ভেতর যে ভাবনা প্রবাহিত হচ্ছে, যে দুঃখকষ্ট তুমি পাচ্ছ, তা নিয়ে লিখ। লিখ, তোমার ভেতরে যে সৌন্দর্য দেখছো, সেসব বিষয় নিয়েই। এর বাইরে তুমি যেয়ো না। একটা নির্দিষ্ট নিয়মের ভেতরেই তুমি থাকো। তুমি তোমার চার পাশের বিষয়বস্তু নিয়েও লিখ। তবে জোর করে কোনো কিছুর বর্ণনা করে কোনো কিছু লিখ না। প্রথমে দেখো, এরপর ভালোবাসো এবং তারপরই তুমি বর্ণনা করো। হয়তো লেখার সময় তোমার মনে হতে পারে যে, তোমার জীবনে যেসব ঘটনা ঘটেছে, তাতে লেখার মতো কিছুই নেই। কিন্তু এতে তোমার দৈনন্দিন জীবনটাকে গরিব মনে করে তাকে দোষ দিয়ো না। বরং তোমাকে দোষ দাও। তুমি এ কথা স্বীকার করে নাও যে, তোমার ভেতরে এখনো কোনো কবিত্ব সৃষ্টি হয়নি। যার মাধ্যমে কোনো সাদামাটা জিনিসের ভেতর থেকেও তুমি কিছু বের করে আনতে পারবে। এ কথাটি সব সময় স্মরণ রাখবে যে, সৃষ্টিকর্তার কাছে কোনো বিষয়ই দরিদ্র নয়।
লেখার প্রথম কথা, তুমি তোমার চার পাশে যা দেখো, তা নিয়েই তুমি লিখ। তুমি ভেবো না যে, তোমার চার পাশের সব ঘটনাই তুচ্ছ। মনে করো না যে, এসবের ভেতরে কিছু নেই। বরং হতাশাকেই এর ভেতর থেকে খুঁজে বের করতে হবে। যখন চার পাশে কিছুই থাকে না, তখনো জীবন থাকে, থাকে অতীতÑ থাকে স্মৃতি। তুমি তোমার স্মৃতির দিকে ফিরে তাকাও। তুমি তোমার কবিতা শুনিয়ে, এই বিশাল অতীতে ডুবন্ত অনুভূতিগুলোকে টেনে আনার চেষ্টা করো। এবং তোমার ব্যক্তিত্বকে বিকশিত করো। তুমি যদি তোমার ওই বিশাল সঙ্কীর্ণ কারাগারের ভেতরে কিছুই না দেখো, তাহলে তুমি তোমার জীবনের ভেতরে তাকাও। দেখবে, তুমি অনেক স্মৃতি দেখতে পাচ্ছো। তখন তুমি সেগুলোকে টেনে আনো। দেখবে, তুমি তোমার নৈঃসঙ্গের কাছে চলে গেছো এবং সেখানে তুমি শুধু তোমাকেই দেখছ। এরপর তুমি এমন জায়গায় পৌঁছবে, যেখানে না আঁধার না আলো। 
তুমি লেখক। আমার কথা মনে করছ ভেবে ভালো লাগছে। তোমার পাঠানো কবিতা আমি রেখে দিতে পারতাম, কিন্তু আমি তা করলাম না। তবে এ কথা সত্য যে, তুমি তোমার এ লেখাগুলো না পাঠালে আমি হয়তো এ কথাগুলো তোমাকে বা অন্য কাউকেও কখনো বলতে পারতাম না। এ জন্য তোমাকে ধন্যবাদ। তুমি আমার কথাগুলো গ্রহণ করতেও পারো, আবার নাও পারো। তুমি ভেবেছিলে, আমি তোমার পত্রের উত্তর দেবো না। কিন্তু আমি উত্তর দিচ্ছি। কারণ- তোমার পত্র আমার ভেতরে এক গভীর আনন্দ জাগিয়ে দিয়েছে।
সবশেষে দু’টি জিনিস সম্পর্কে আমি তোমাকে বলব- বলব দু’টি বই সম্পর্কে। যে দু’টি বই সারা জীবন আমাকে প্রভাবিত করেছে। জীবনে যত বই পড়েছি, তার মধ্যে এই বই দু’টিই আমার জন্য অপরিহার্য মনে হয়েছে। আর সে কারণেই আমি যেখানেই যাই, বই দু’টিকে সঙ্গে নিয়ে যাই। সে বই দু’টি এখনো আমার পাশে আছে। বই দু’টির মধ্যে একটি হলো- ‘বাইবেল’; অন্যটি হলো জে পি জ্যাকবসনের বই। তুমি এই বই সম্পর্কে জানার চেষ্টা করো। এ ছাড়া তুমি সেই বইগুলো পড়বে, যে বইগুলো তোমার হাতে আসবে। বই পড়তে পড়তে বইয়ের ভেতরে তুমি জেগে উঠবে। যা শেখা দরকার, বইয়ের ভেতর থেকে তুমি তা-ই শিখবে এবং সর্বোপরি বইকে ভালোবাসবে। তুমি যদি বইকে ভালোবাসো, তাহলে বইও তোমার ভালোবাসাকে সমৃদ্ধ করে ফিরিয়ে দেবে। তুমি এমন যদিও হও যে, তুমি লেখো না, সৃষ্টি করো না তা হলেও তুমি যদি বাইবেল বা ধর্মগ্রন্থ পড়ো, তবে তোমার ভেতরে এক নতুন প্রেম ও ভালোবাসায় উদ্ভব লক্ষ করবে। তোমার সব জয় এবং প্রাপ্তির সময় একমাত্র বই-ই তোমার পাশে এসে দাঁড়াবে। আর কেউ নয়। তোমার সুন্দর ও মঙ্গলময় জীবন কামনা করি। তোমার পথ সাফল্যমণ্ডিত হোক। 
(রাইনার মারিয়া রিলকে ১৮৭৫ সালের ৪ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। পুরো নাম রেনে কার্ল উইলহেম জোহান জোসেফ মারিয়া রিলকে। তৎকালীন আস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের আওতাধীন প্রাগ শহরে তার জন্ম। জোসেফ রিলকে ও সোফি ইনজ দম্পতির একমাত্র সন্তান রিলকের শৈশব ও যৌবন কাটে প্রাগ শহরে।
১৯১০ সালে তার আধা আত্মজৈবনিক ধাঁচের উপন্যাস ‘দ্য নোটবুকস অব মালটে লুরিডস ব্রিগে’ প্রকাশিত হয়। ১৯১২ সালে তিনি বিখ্যাত দুনো ইলিজির কবিতাগুলো লেখা শুরু করেন। কিন্তু শেষ করতে এক দশক সময় লাগে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধকাল থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত তিনি ইউরোপের বেশ ক’টি শহরে ভ্রমণ করেন। প্যারিসে তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ও নিলামে ওঠায় তিনি আর সেখানে ফেরেননি। ১৯২৬ সালের ২৭ ডিসেম্বর সুইজারল্যান্ডের একটি স্যানোটোরিয়ামে তিনি মারা যান।)


0 comments:

Post a Comment