Tuesday, May 1, 2018

স্মরণ : ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর

স্মরণ : ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর
আলী ফোরকান
জন্ম  : ১৮২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর। 
মৃত্যু : ১৮৯১ সালের ২৯ জুলাই 
ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্ম ১৮২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর। মেদিনিপুর জেলার বীর সিং গ্রামে এক ব্রাহ্মণ পরিবারে। বাবার নাম ঠাকুর দাস বন্দোপাধ্যায়। মা ভগবতি দেবী।
শৈশব ও বাল্য জীবন তার চরম দারিদ্র্যের ভেতর দিয়ে অতিবাহিত হয়। প্রাথমিক শিক্ষা জীবন কৃতিত্বের সঙ্গে সমাপ্ত করার পর উচ্চতর শিক্ষার জন্য তিনি কলকাতায় আসেন। ১৮২৯ সালের ১ জুন ভর্তি হন সংস্কৃত কলেজের ব্যাকরণ বিভাগের তৃতীয় শ্রেণীতে। ১৮৪১ সালের ৪ ডিসেম্বর তিনি কৃতিত্বের সাথে তার উচ্চতর শিক্ষা জীবন সমাপ্ত করেন এবং সংস্কৃত কলেজের তরফ থেকে তার অসাধারণ মেধার স্বীকৃতিস্বরূপ ইংরেজ সরকারের পক্ষ থেকে লাভ করেন বিদ্যাসাগর উপাধি।
১৮৪১ সালের ২ ডিসেম্বর ফোর্ট উইলিয়স কলেজের প্রধান পণ্ডিতরূপে তার কর্মজীবন শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৮৫১ সালে অধিষ্ঠিত হন সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ পদে। অসাধারণ মেধার বলে শুধু সংস্কৃতি নয়, ইরেজি ও হিন্দি ভাষাতেও তিনি অসামান্য ব্যুপত্তি অর্জন করেন।
বিদ্যাসাগরকে বলা হয় বাংলা গদ্যের জনক। গদ্যেরও যে একটি নিজস্ব ছন্দ আছে তিনিই প্রথম তা’ আবিষ্কার করেন। গদ্য ভাষার যতিচিহ্নাদির যথাযথ প্রয়োগ ও প্রচলনের কৃতিত্বও তার।
সমাজ সংস্কারক হিসেবে ঈশ্বর চন্দ্রের দৃঢ় ভূমিকার কথা ইতিহাস বিদিত। হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিধবা বিবাহের প্রচলন ও বহু বিবাহ প্রথা নিবারণে তার অকুতোভয় ও নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা বাংলা তথা উপমহাদেশের সমাজ সংস্কারের আন্দোলনের ক্ষেত্রে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত অবিস্মরণীয় ঘটনা।
পত্রপত্রিকা সম্পাদনা ও পরিচালনার ক্ষেত্রে ও তার ভূমিকা সুবিদিত। ‘সর্ব শুভকরী’ পত্রিকা ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’, ‘সোম প্রকাশ’ ও ইংরেজি ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ এর মতো পত্রিকাগুলো তৎকালীন বাংলা ভাষা অঞ্চলের সাংবাদিকতার ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। বিদ্যাসাগর এসব পত্রিকার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। ছোট বড় বহু নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও বিদ্যাসাগরের ছিল অগ্রণী ভূমিকা। এ সবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘হিন্দু মেট্রোপলিটন’ স্কুলের প্রতিষ্ঠা, যা তারই একান্ত উদ্যোগে অচিরেই রূপান্তরিত হয়েছিল কলেজে।
দারিদ্র্যপীড়িত অসহায় সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে কবি ও শিল্পী-সাহিত্যিক বৃন্দের পৃষ্ঠপোষকতার ক্ষেত্রেও ঈশ্বর চন্দ্র ছিলেন উদার। কবি মাইকেল মধূসুদন দত্তের সঙ্গে তার ছিল নিবিড় আত্মিক সম্পর্ক। দানশীলতার জন্য তার খ্যাতি এতখানিই ছিল যে, তাকে ‘দয়ার সাগর’ বলে অভিহিত করত।
ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের উল্লেখযোগ্য রচনা
বেতাল পঞ্চ বিংশতি ১৮৪৭ খ্রি:, বাংলার ইতিহাস ১৮৪৮ খ্রি:, জীবন চরিত্র ১৮৪৯ খ্রি:, বোধাদয় ১৮৫১ খ্রি:, উপক্রমনিকা ১৮৫১ খ্রি:, খৃজুপাঠ ১৮৫১ খ্রি:, ব্যাকরণ কৌমুদী ১৮৫১ খ্রি:, শকুন্তলা উপাখ্যান ১৮৫৪ খ্রি:, বিধবা বিবাহ ১৮৫৫ খ্রি:, বর্ণ পরিচয় প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগ, ১৮৫৫ খ্রি:, আখ্যান মঞ্জুরি ১৮৬৩ খ্রি:, ও ভ্রান্তি বিলাস ১৮৬৯ খ্রি:।
১৮৯১ সালের ২৯ জুলাই কলকাতায় তার নিজস্ব বাস ভবনে দূরারোগ্য ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান।
বাংলা ভাষার উন্নতি সাধনে, বাঙালির আত্ম-মর্যাদাবোধ জাগাতে, দানে, দয়ায় ও মনুষ্যত্বে আজো আমাদের কাছে বিদ্যাসাগর স্মরণীয় হয়ে আছেন।

0 comments:

Post a Comment