Wednesday, August 23, 2017

পবিত্র কাবা শরীফের ইতিহাস


পবিত্র কাবা শরীফের ইতিহাস
আলী ফোরকান
মুসলমানদের কেবলা কাবা শরীফ। এ কাবা শরীফ মহান আল্লাহতায়ালার এক অপূর্ব সৃষ্টি। প্রতিবছর লাখ লাখ মুসলমান কাবাঘর তওয়াফ করতে মক্কা গমন করেন। পৃথিবীতে সর্বপ্রথম আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতারা কাবাঘর নির্মাণ করেন। কাবাঘরকে লক্ষ্য করে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের সুরা আল-ইমরানের ৯৬ আয়াতে বলেন, “নিশ্চয়ই সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের ইবাদত গা রূপে নিরূপিত হয়েছে, তা ঐ ঘর যা মক্কাতে অবস্থিত”। কাবাঘরটি আল্লার আরশে মুয়াল্লার ছায়াতলে সোজাসুজি বাইতুল মামুরের আকৃতি অনুসারে স্থাপন করেন। হযরত আদম (আঃ) ও হযরত হাওয়া (আঃ) এর পৃথিবীতে মিলন হলে তারা উভয় আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ইবাদতের জন্য একটি মসজিদ হযরত আদম (আঃ) আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন। আল্লা তাদের দোয়া কবুল করেন এবং বাইতুল মামুরের আকৃতিতে পবিত্র কাবাঘর স্থাপন করেন। এখানে হযরত আদম (আঃ) সন্তুষ্ট চিত্তে আল্লার ইবাদত করতে থাকেন (শোয়াব-উল-ঈমান, হাদিসগ্রন্থ)। অনেক তফসীরবিদের মতে, মানব সৃষ্টির বহু আগে মাহন আল্লাহ তায়ালা কাবাঘর সৃষ্টি করেন। অনেক তফসীরবিদ বলেন, “আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বাইতুল্লাহর স্থানকে সমগ্র ভূপৃষ্ঠ থেকে দুহাজার বছর আগে সৃষ্টি করেন”। মুসলিম শরিফের একটি হাদিসে হযরত আবুযর গিফারী হতে বর্ণনা হয়েছে, রাসুল (সঃ) এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “বিশ্বের সর্বপ্রথম মসজিদ হচ্ছে মসজিদে হারাম। এরপরের মসজিদ হচ্ছে মসজিদে আকসা। মসজিদে হারাম নির্মাণে ৪০ বছর পর মসজিদে আকসা নির্মিত হয়”। হযরত আদম (আঃ) কাবাঘর আল্লাহর আদেশে নির্মাণ করেন। এরপর বহুদিন অতিক্রম হয়। শতশত বছর ধরে আল্লাহর বান্দারা কাবাঘর জিয়ারত করতে আল্লাহর কাছে হাজিরা দিতে এ কাবাঘরে সমবেত হয়। কাবাঘরে এসে মহান আল্লাহর পবিত্রতা ও অংশীদারহীনতা ঘোষণা দিত। “লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নেয়ামাতা, লাকাওয়ালা মুলক, লাশারিকা, লাকা লাব্বাইক”। এভাবে চলতে চলতে অনেক দিন গত হতে থাকে। এরপর হযরত শীষ (আঃ) কাবাঘর পুনঃনির্মাণ করেন। দিন দিন একাত্ববাদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এরপর কাবা শরীফ নির্মাণ বা পুনঃনির্মাণ করেন হযরত ইব্রাহীম (আঃ)। হযরত ইব্রাহীম (আঃ), হযরত ইসমাইল (আঃ)কে সাথে নিয়ে কাবাঘর নির্মাণ বা পুননির্মাণ করেন। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কাবাঘর সংস্কার করে আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন। “হে আমার প্রতিপালক! আমাদের উভয়কে আজ্ঞাবহ কর, আমাদের বংশ থেকে একটি অনুগত দল সৃষ্টি কর, আমাদের হজ্বের রীতিনীতি বলে দাও এবং আমাদের ক্ষমা কর। নিশ্চয়ই তুমি দয়ালু। হে প্রতিপালক! তাদের মধ্যে থেকেই তাদের কাছে একজন পয়গম্বর প্রেরণ করুন। যিনি তাদের কাছে তোমাদের আয়াত তেলাওয়াত করবেন। তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দিবেন এবং পবিত্র করবেন। নিশ্চয়ই তুমি মহাপরাক্রমশালী। এর কয়েকশ বছর পর পবিত্র কাবাঘর সংস্কার করে আমালিকা সম্প্রদায়। তারপর আরো শ শ বছর কিংবা হাজার বছর পরে কাবাঘর সংস্কার করে মক্কার জুরহাস সম্প্রদায়। আরবের অর্থাৎ মক্কায় যে সকল গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের প্রতিপত্তি ছিল, তাদের দায়িত্ব থাকতো কাবা শরীফ রক্ষণাবেক্ষণের। এ দায়িত্ব পালনকে তারা সম্মানিত ও গর্বের মনের করতো। শতাব্দীর পর শতাব্দী অতিবাহিত হয়। এরপর কাবা শরীফ ও কাবা ঘরকে সংস্কার করেন মোযার সম্প্রদায়। মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) নবুয়ত প্রাপ্তির ৫ বছর আগে কাবাঘর সংস্কার করে মক্কার বিখ্যাত কোরাইশ বংশ। এ কোরাইশ বংশেই মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) ৫৭০ খ্রীঃ জন্মগ্রহণ করেন। কোরাইশরা কাবা শরীফ সংস্কারের পর হাযরে আসওয়াত স্থাপন নিয়ে মতভেদ দেখা দেয়। সকলের সম্মতিক্রমে আল্লাহর রাসূল কাবাগৃহে হাযরে আসওয়াদ কাবা শরীফে স্থাপন করেন। মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) জীবিত অবস্থায় ৬৪ হিজরীতে আবদুল্লাহ ইবনে জোবায়ের (রাঃ) কাবা শরীফ সংস্কার করেন। হাজ্জাজ বিন ইউসুফ ৭৪ হিজরীতে কাবা শরীফ সংস্কার করে। সুদীর্ঘ ১৪শ বছরে কাবাগৃহে কোনো সংস্কারের প্রয়োজন হয়নি। শুধুমাত্র কাবাঘরের চারপাশে অবস্থিত মসজিদে হারামের পরিবর্ধন, সংস্কার বা সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। কাবাঘরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সৌদি রাজপরিবারের। সৌদি সরকারের প্রধান (বাদশাহ) কাবা শরীফের মোতোয়াল্লির দায়িত্বে থাকেন। ভৌগোলিক দিক দিয়ে মক্কা ও আরব উপদ্বীপ এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার মধ্যস্থলে অবস্থিত। মক্কানগরীর পৃথিবীর কেন্দ্রস্থলে হওয়ায় মহান আল্লাহ কাবাঘর মক্কাতেই স্থাপন করেন। পবিত্র হজ্ব পালন করতে মাসের ১০ তারিখ ঈদুল আজহার দিন। এদিন কোরবানী দিতে হয়। যা হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর ও হযরত ইসমাইল (আঃ)-এর স্মৃতি বহন করে চলছে হাজার হাজার বছর ধরে। যমযম কূপও ঠিক তেমনি হযরত ইসমাইল (আঃ) ও তার মা বিবি হাজেরার (আঃ) স্মৃতি বহন করে চলছেন। এ যমযম কূপ মহান আল্লাহর কুদরতের অপরূপ ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ মাত্র। হজ্ব মুসলমানদের ঈমানের অন্যতম স্তম্ভ¢। আরবের মক্কা নগরীর পবিত্র কাবাঘর হেফাজতের মালিক মহান আল্লাহ নিজেই। বিশ্ব মুসলমানদের মিলন মেলা ঘটে হজ্বের মাধ্যমে পবিত্র কাবা শরীফে। আমাদের সবাইকে এই পবিত্র ঘরে জিয়ারত করার তৌফিক দান করুন। আমিন ছুম্মা আমিন।


0 comments:

Post a Comment