Tuesday, April 18, 2017

প্র্রসঙ্গঃ ট্রানজিট বা ট্রান্সশিপমেন্ট

প্র্রসঙ্গঃ ট্রানজিট বা  ট্রান্সশিপমেন্ট
আলী ফোরকান 
ট্রানজিটের বিষয়টি আবার নতুন করে আলোচনায় এসেছে। বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার মতায় আসার আগেও এ নিয়ে কথা উঠেছে। গত বছরের ১০ জুলাই ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের সময় ট্রানজিটের প্রশ্নটি উত্থাপন করেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ভারতকে ট্রানজিট দেয়া বা না দেয়ার বিষয়টিকে রাজনৈতিকভাবে বিবেচনা না করে অর্থনৈতিকভাবে বিবেচনা করা উচিত। শ্রী চক্রবর্তীর এই তথ্যটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কেননা তিনি ওই মন্তব্যটি করেছিলেন এমন একটি সময় যার এক সপ্তাহ পর বাংলাদেশ ও ভারত নয়াদিলিøতে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে বৈঠকে মিলিত হয়েছিল। ১৬-১৭ জুলাই ওই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় এবং বৈঠকে ট্রানজিটের বিষয়টি ছিল অন্যতম একটি আলোচিত বিষয়। দ্বিতীয়. আরও একটি বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হয়। আর তা হচ্ছে বাংলাদেশে তখন একটি তত্ত¡াবধায়ক সরকার মতায় ছিল। তখন ভারত বাংলাদেশের কাছে এই দাবিটি উত্থাপন  করে। সাধারণত এ ধরনের কোনো নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত একটি রাজনৈতিক সরকারকেই নেয়ার কথা। এেেত্র ভারত একটি অরাজনৈতিক সরকারের কাছে এই দাবিটি উত্থাপন করেছিল। এখানে বলা ভালো, বিগত তত্ত¡াবধায়ক সরকারের আমলেই ভারতকে এয়ার ট্রানজিট দেয়া হয়েছে। এটা নিয়েও কম বিতর্ক হয়নি। তৎকালীন বিমান সচিব এয়ার ট্রানজিট সংক্রান্ত একটি চুক্তি নয়াদিল্লি স্বার করার পর ঢাকায় ফিরে এলে, তাকে ওএসডি করা হয়েছিল। বর্তমানে ভারত র্নিবাচিত সরকারের কাছে এ দাবি জানিয়েছে।  অনেকের মতে,  ভারতকে অনেক আগেই নৌট্রানজিট দেয়া হয়েছিল। ভারত এখন যা চাচ্ছে, তা মূলত স্থল ট্রানজিট। অর্থাৎ ভারত তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যে (আসাম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, আরুণাচল, মেঘলয় ও ত্রিপুরা) পণ্য পরিবহনের জন্য বাংলাদেশের ভ‚মি ব্যবহার করতে চায়। এরই নাম ট্রানজিট। আর ভারত যে এই প্রথম ট্রানজিট চাইল, তা নয়। এর আগে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকার যখন মতায় ছিল (১৯৯৬-২০০১) তখনও ভারত বাংলাদেশের কাছে ট্রানজিট চয়েছিল। তখন এর নামকরণ করা হয়েছিল ট্রান্সশিপমেন্ট। পরে জোট সরকার মতাসীন হওয়ার পর (২০০১-২০০৬) ভারত বিভিন্ন সময় এই দাবি উত্থাপন করে। যদিও কোনো সরকারের আমলে ভারতকে ট্রান্সশিপমেন্ট বা ট্রানজিট কোনোটাই দেয়া হয়নি। তবে ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় বাংলাদেশ ও ভারতের বাণিজ্য সচিবদের মধ্যে যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তাতে যে একটি সম্মত কার্যবিবরণী স্বারিত হয়েছিল, সেখানে ‘গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস’ কথাটা উলেøখ হয়েছে। সার্ভিসেস-এর আড়ালে ভারত চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার ও ট্রানজিট সুবিধা চাইছে। সেই দাবি থেকে ভারত কখনো ফিরে আসেনি। এজন্য তখন ভারতীয় হাই কমিশনার ট্রানজিটের দাবি তোলেন। গত প্রায় বারো-তের বছর ধরে ভারত প্রত্য ও পরোভাবে এ দাবি জানিয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় ভারত এ দাবি করছেন। ভারত বলছেন ট্রানজিটের বিষয়টি অর্থনৈতিক। রাজনৈতিক নয়। কেন তাহলে এর সঙ্গে এদেশের মানুষ একমত হতে পাররছে না। ট্রানজিটের বিষয়টি অবশ্যই রাজনৈতিক। আর এর সঙ্গে বাংলাদেশের নিরপত্তার প্রশ্নটি সরাসরিভাবে জড়িত। কেন রাজনৈতিক, সে প্রশ্নেই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। ভারত আসলে ট্রানজিট কেন চায়? ভারত বলেছে তারা তাদের পণ্য এক রাজ্য থেকে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে অন্য রাজ্যগুলোতে নিয়ে যেতে চায়। এই যুক্তিতে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। ইউরোপের অনেক দেশ কিংবা ল্যাটিন আমেরিকার কোনো কোনো দেশ এই সুবিধা ভোগ করছে। এখানে পার্থক্যটা হচ্ছে ইউরোপের দেশগুলো তাদের পণ্য স্থলপথে অন্য একটি দেশের মধ্য দিয়ে তৃতীয় আরেকটি দেশে নিয়ে যেতে চায়। ভারতের মতো এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্য নয়। ল্যাতিন আমেরিকার অবস্থাটাও ঠিক তেমনি। এর চাইতেও বড় যে পার্থক্য তা হচ্ছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত বোন রাজ্য ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ আন্দোলন চলছে, যা ইউরোপে বা ল্যাতিন আমেরিকায় নেই। অভিযোগ আছে ভারত বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে যে পণ্য সরবরাহ করতে চায়, সেখানে পণ্যের আড়ালে তারা উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে অবস্থানরত কয়েক লাখ সৈন্যের জন্য খাদ্য, রশদ ও সামরিক সরঞ্জামও সরবরাহ করবে। এতে তাদের খরচ কম ও সুবিধা অনেক। কেননা পরিবহন খরচ আগে বেশি। এই ধারণা আরও বদ্ধমূল হয়েছে এ কারণে যে, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতীয় পণ্যের যে ‘ট্রান্সশিপমেন্ট’ হবে, তার কোনো চেকিং অধিকার বাংলাদেশর থাকবে না। অর্থাৎ বাংলাদেশ কখনই জানতে পারবে না পণ্যের আড়ালে কী ধরনের মালামাল উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতবোন রাজ্যে নেয়া হয়েছে। আলোচনার কোনো এক পর্যায়ে বাংলাদেশ তার নিজস্ব পরিবহনে ওইসব পণ্য ভারতীয় সীমান্তে পৌঁছে দেয়ার প্র¯Íাব করলেও ভারতীয়প তাতে রাজি হয়নি। আর তাতে করেই সন্দেহ ঘনীভ‚ত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে উলফা নেতা পরেশ বড়–য়ার একটি সাাৎকারের কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন। বড়–য়া এই সাাৎকারটি বিবিসি বাংলা বিভাগকে দিয়েছিলেন ১৯৯৭ সালের ১১ জানুয়ারি। তাতে তিনি বলেছিলেন, গত সাত বছর ভারতীয় বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেও তাদের কিছু করতে পারেনি। আজ বাংলাদেশ যদি ভারতের সঙ্গে যোগ দেয়, তাতেও কোনো লাভ হবে না। ভবিষ্যতে উলফা গেরিলাদের প্রতি আক্রমণের জন্য ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশকেও তৈরি থাকতে হবে। পরেশ বড়–য়ার এই হুঁশিয়ারি বলে দেয় বাংলাদেশ ভবিষ্যতে উলফা গেরিলাদের নতুন ল্যস্থলে পরিণত হতে পারে। এ ধরনের হুমকিকে হালকাভাবে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বিঘিœত হোকÑ এমন কোনো সিদ্ধান্ত ওেয়া ঠিক হবে না। বলা ভালো, সাত বোন রাজ্যের বিচ্ছিন্নতাবাদীতার ইতিহাস অনেক পুরনো। এখানে ‘বিদ্রোহ দমনে’ ৩ লাখ ৬৫ হাজার ভারতীয় সেনাবাহিনী ও ৯৩ হাজার অতিরিক্ত সামরিক বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। এ অঞ্চলে মোট ১৬টি গেরিলা গ্রæপের সন্ধান পাওয়া গেছে। যারা ভারতীয় কর্তৃপরে বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে এবং তারা ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছে। যেসব বিদ্রোহ গ্রæপের খবর পাওয়া গেছে, সেগুলো হচ্ছে আসামের (১) ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম (উলফা) ও মোড়ো নিরাপত্তা বাহিনী। নাগাল্যাÐের (১) ন্যাশনাল সোসালিস্ট কাউন্সিল অফ নাগাল্যান্ড (মুভিয়া গ্রæপ ও কাপলং গ্রæপ), (২) নাগা ন্যাশনাল কাউন্সিল (আদিবো গ্রæপ ও খোদাও গ্রæপ)। মনিপুরের (১) পিপলস লিবারেশন আর্মি, (২) ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট, (৩) পিপলস রেভ্যুলিউশনারী পার্টি। মেঘালয়ের (১) আচিন লিবারেশন পার্টি, (২) হাইনিট্রেপ ভলান্টিয়ার কাউন্সিল। অরুনাচলের (১) ইউনাইটেড লিবারেশন ভলান্টিয়ার অফ অরুণাচল, (২) ইউনাইটেড পিপলস ভলান্টিয়ার অফ অরুণাচল, (৩) ইউনাইটেড লিবারেশন মুভমেন্ট অব অরুণাচল। মিজোরামের হোমার পিপলস কনভেনশন। ত্রিপুরার (১) এল ত্রিপুরা টাইগারস ফোর্স ও (২) ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অফ ত্রিপুরা। এর বাইরেও আরও কিছু উপদল রয়েছে। যারা সশস্ত্র সংগ্রাম পরিচালনা করছে। এ অঞ্চলে নাগারই প্রথমে ‘নিদ্রোহ’ করেছিল। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির সময় নাগারা মনে করেছিল ব্রিটিশরা তাদের স্বাধীনতা দিয়ে যাবে। ভারত স্বাধীন হওয়ার ঠিক আগের দিন নাগাল্যাÐ স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিল; কিন্তু ভারতের শাসকবর্গ নাগাদের এই স্বধীনতা মেনে নেয়নি। ১৯৫৩ সালে নাগা ফেডারেল আর্মি গঠিত হয় এবং এরাই সশস্ত্র সংগ্রাম পরিচালনা করে আসছে। ষাটের দশকে মিজোরামে বড় ধরনের দুর্ভি হয়। এতে বহু লোক মারা যায়। ওই দুর্ভি প্রতিরোধে ভারতীয় কর্তৃপ কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে পারেনি। ফলে সেখানকার মানুষদের অসন্তোষকে পুঁজি করে লাল ডেঙ্গার নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল মিজো জাতীয় ফ্রন্ট। আর ১৯৭৮ সালে প্রথমবারের মতো ত্রিপুরায় বিজয় রাংকেলের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল ট্রাইবাল ন্যাশনাল ভলান্টিয়ারস ফোর্স। যারা বাঙালি অধিবাসীদের বিরুদ্ধে তাদের সংগ্রাম শুরু করে। ইতিমধ্যে সেখানে গঠিত হয়েছে অল ত্রিপুরা টাইগার্স ফোর্স। আসামে উলফার জন্মও ১৯৭৮ সালে। এরা ভারতীয় কর্তৃপকে চ্যালেঞ্জ করে সশস্ত্র সংগ্রাম পরিচালনা করে আসছে। উলফা ছাড়াও আসামে বোড়োদের সশস্ত্র সংগ্রামের কথা জানা যায়। এই বোড়োরা ষাটের দশক থেকে উদয়াচল নামে আলাদা একটি রাজ্যের দাবি করে আসছে। সাতবোন রাজ্যের সশস্ত্র সংগ্রামের এই হচ্ছে সংপ্তি ইতিহাস। স্বতন্ত্র পরিচিতি বোধ, দিল্লির তামহেলা, অপাহাড়িদের আগ্রাসন ইত্যাদি কারণ পাহাড়িদের আন্দোলনের ইতিহাস প্রায় চল্লিশ বছরের পুরনো। দিল্লি দীর্ঘদিন ধরে সপ্তকন্যার সশস্ত্র সংগ্রাম অবসানে বাংলাদেশের সহযোগিতা চাইছে। আজ ট্রানজিটের সুবিধা দিয়ে বাংলাদেশ বিদ্রোহী গওুপগুলোর টার্গেটে পরিণত হতে পারে না। আশার কথা বিগত তত্বাবধায়ক সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র সচিবও জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশের স্বার্থ বিঘিœত হয়, এসব কোনো সিদ্ধান্ত তারা সে সময় নেয়নি। দিল্লি বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্তও হয়নি। দ্বিতীয়ত. বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতীয় হেভী ট্রাক চলাচলের জন্য যে অবকাঠামো দরকার, সেই অবকাঠামো বাংলাদেশে নেই। রা¯Íাঘাট প্রশ¯Í নয় এবং তা হেভি ট্রাফিকের জন্য উপযুক্ত নয়। সুতরাং ভারতীয় হেভি ট্রাকগুলোকে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে চলাচলে সুযোগ দিলে অবধারিতভাবে অবকাঠামো উন্নয়নে বাংলাদেশকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হবে। যা বাংলাদেশের জন্য হয়ে যাবে বোঝাস্বরূপ। তৃতীয়ত. ভারতের সাত বোন রাজ্যে বাংলাদেশি পণ্যের বেশ চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ সরকারিভাবে যেসব পণ্য ভারতে রফতানি করে, তার একটা বড় অংশ যায় ‘সাত বোন রাজ্যে’। ট্রানজিট সুবিধা দিলে বাংলাদেশি পণ্য রফতানি হ্রাস পাবে। এমনিতেই নানা শুল্ক প্রতিবন্ধকতার কারণে চাহিদা থাকা সত্তে¡ও বাংলাদেশি পণ্য ভারতে যেতে পারছে না। চতুর্থত. ভারত বাংলাদেশের কাছে ট্রানজিট সুবিধা চাইলেও ভারত বাংলাদেশকে কখনো ট্রানজিট সুবিধা দেয়নি। বাংলাদেশ বাংলাবান্ধা ও নেপালের কাকরভিটার মধ্যে যোগাযোগের ট্রানজিট সুবিধা পাচ্ছে না। ভারত নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলেছে। এমনকি সড়কও সংস্কার করেনি ভারত। ওই সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্মুক্ত হলে বাংলাদেশের সঙ্গে নেপালের বাণিজ্য আরও বাড়ত। যেখানে ভারত নিজেই তার নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলে বাংলাদেশ ও নেপাল ট্রানজিট সুবিধা দিচ্ছে না, সেখানে বাংলাদেশের নিরাপত্তা যেখানে ঝুঁকির মুখে, সেখানে বাংলাদেশ ট্রানজিট দেয় কীভাবে? পঞ্চমত. ভারত তার ‘সাত বোন রাজ্যে’ পণ্য সরবরাহ করার জন্যই মূলত ট্রানজিট চায়। ভারত খুব সহজেই বাংলাদেশের সীমান্তে একটি ‘ইপিজেড’ প্রতিষ্ঠা করে ওই শিল্পাঞ্চলে উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য শতকরা ১০০ ভাগ শুল্কমুক্তভাবে ‘সাত বোন রাজ্যে’গুলোতে নিয়ে যেতে পারে। তখন ট্রানজিটের আর প্রয়োজন হবে না। চট্টগ্রামের দেিণ কোরিয়ার নিজস্ব ‘ইপিজেড’ রয়েছে। জাপানিরাও আলাদা ‘ইপিজেড’ প্রতিষ্ঠা করে তাদের কিছু কিছু শিল্প বাংলাদেশে নিয়ে আসতে চায়।  যেখানে উৎপাদিত পণ্য তারা এখান থেকেই বিদেশে রফতানি করবে। দণি কোরিয়া তাই করছে। ভারত এ কাজটি করতে পারে। কিন্তু ভারত তা করছে না কেন? এখানেই ভারতের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। ষষ্ঠত. ভারত বলছে ট্রানজিট দিলে বাংলাদেশ আর্থিকভাবে লাভবান হবে। এর একটি ব্যাখ্যা থাকা প্রয়োজন। ট্রানজিট ফি বাবদ বাংলাদেশ বছরে ৭০০ কোটি টাকা পেতে পারে। এ টাকা দিয়ে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমানো যাবে না। ওই ৭০০ কোটি টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ঝুঁকি (বাণিজ্য) হ্রাস, অবকাঠামো উন্নয়ন, নিরাপত্তা কয়েকগুণ বেশি। সপ্তমত. একবার স্থল ট্রানজিট দিলে ভারতকে চট্টগ্রাম সামুদ্রিক বন্দর ব্যবহার করতে দিতে হবে। যা বাংলাদেশকে বৈদেশিক বাণিজ্যের জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে। কেননা এমনিতেই চট্টগ্রাম পোর্ট কনটেইনার হ্যান্ডলিং করতে হিমশিম খাচ্ছে। এর উপরে সাত বোন রাজ্যগুলোর কনটেইনার যদি হ্যান্ডলিং করতে হয়, তাহলে তা চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করবে। বাংলাদেশের রফতানি তাতে তিগ্র¯Í হবে। অষ্টমত. ট্রানজিট সুবিধা না থাকার কারণে ভারতকে তার পূর্বাঞ্চলীয় বেশ কিছু পণ্য, যেসব কাঠ, বনজ সম্পদ, নানা ধরনের খনিজ সম্পদ, রাবার, ফলমূল ইত্যাদি কম মূল্যে বাংলাদেশে রফতানি করে। মেঘালয়ের কাঠ, কয়লা, কমলা বাংলাদেশ কম মূল্যে আমদানি করে। ভারত বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ট্রানজিট সুবিধা পেলে তখন এসব পণ্য সহজেই কলকাতা বাজার পাবার সুযোগ পাবে ও বাংলাদেশ বর্তমানের সুযোগ হারাবে। সুতরাং যে কোন বিবেচনায় ভারতকে ট্রানজিট দেয়া হলে বাংলাদেশের নিরাপত্তা যেমনি ঝুঁকির মাঝে থাকবে, ঠিক তেমনি বাংলাদেশের অর্থনীতি বিপর্য¯Í হবে, ভেঙে পড়বে। দিল্লি বৈঠক শেষ করে পররাষ্ট্র সচিব ঢাকায় ফিরে এসে বলেছেন, ট্রানজিট প্রশ্নে তেমন কোনো আলোচনা হয়নি। দ্বিপাকি বৈঠকে নানা প্রশ্ন উঠতে পারে। বাংলাদেশকে দেখতে হবে তার জাতীয় স্বার্থ রতি হয় কীসে, তা বিবেচনায় নেয়া। ভারতকে ট্রানজিট দিয়ে আমরা আমাদের জাতীয় স্বার্থ রা করতে পারব না। বাংলাদেশ প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি ‘কমিশন’ গঠন করতে পারে, যারা ট্রানজিটের বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। ওই ট্রানজিট ইস্যু নিয়ে জল ইতিমধ্যে কম ঘোলা হয়নি। উচ্চ আদালতে একটি রিটও হয়েছে। সুতরাং খুব সতর্কতার সঙ্গে ট্রানজিটের বিষয়টি ‘ডিল’ করতে হবে। এদেশের জনগণ চায় বিশাল মতাধর এসরকার কোনো ‘চাপ’ এর কাছে নতি স্বীকার করবেনা। এছাড়া ভারতের সাথে বাংলাদেশের যে কয়টি বিবাদমান ইস্যু রয়েছে সেগুলো খুবই জটিল। এর প্রত্যেক বিষয়ের সাথে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন জড়িত। ভারতের  দৃষ্টিভঙ্গি ও বাংলাদেশের সুদূরপ্রসারী লাভালাভের বিবেচনায়, কৌশলে যথাযথ সিন্ধান্ত নিতে হবে। এছাড়া দু’দেশের মধ্যে দ্বিপাকি বৈঠকের মাধ্যমে অমিমাংসীত বিষয়গুলোর সমাধান করতে হবে। (বিদ্র: লেখাটি দৈনিক নয়াদিগন্তে ২০০৭ সালে প্রকাশিত) অনেক পাঠকের অনুরোধে অন লাইন বøগে পোস্ট দিলাম। আপনাদের প্রয়োজন টা আশাকরি মেটাতে পারবেন।
লেখক: গবেষক 
মোবাইল:০১৬১১৫৭৯২৬৭

0 comments:

Post a Comment