শ্রম বাজার সম্প্রসারিত করতে হবে
আলী ফোরকান
নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। এ দেশের শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ কৃষি নির্ভর। তারা গ্রামে বসবাসরত। বাদবাকি ২০ ভাগ মানুষ শহরমুখী। ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটারের বাংলাদেশে ১৩৩.৪০ মিলিয়ন মানুষের বসবাস। গ্রাম শহর নগর বন্দর সর্বত্রই মানুষে ঠাসাঠাসি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা রাজ্য অথবা জাপানের হোক্কাইডো প্রদেশের সময়াতনের বাংলাদেশ। এ দেশের সামাজিক এবং পারিবারিক চিত্রের পরিবর্তন হয়েছে ৩০/৩৫ বছর পূর্ব থেকেই। কিন্তু মূলধনের অভাবে অর্থনৈতিক চিত্র বদলায়নি আজও। এর জন্য অনেকাংশে দায়ী জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি, তবে জনগণ জন্ম শাসনে পিছিয়ে নেই।
আমরা জাপানের অতীত ইতিহাসে যদি ফিরে যাই। তবে দেখতে পাবো মেইজি পুনরুদ্ধারের ইতিহাস। এই যুগে জাপানের তৎকালীন সরকার একদল প্রকৌশলী মাত্র। ভাষাবিদদের পশ্চিমে প্রেরণ করে সে দেশের জ্ঞান, বিজ্ঞান রপ্ত করার জন্য এদের প্রচেষ্টায় জাপানে শিল্পায়ন ঘটে, ফ্যামিলি বিজনেস বা জায়বাৎসু গড়ে ওঠে। ১৮৮০ সালের মধ্যভাগে মুদ্রা ব্যবস্থার সংস্কার হয়, ব্যাংক অব জাপান প্রতিষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত বস্ত্র শিল্পের ক্রমবর্ধমান উন্নতি হয়। যুদ্ধের পর সনি কর্পোরেশন গড়ে ওঠে। আকিও মোরিতার নেতৃত্বে যিনি একজন প্রকৌশলী নন অথচ এই প্রতিষ্ঠানটি পৃথিবীর মাঝে প্রথম সারির ইলেক্ট্রনিক্স প্রতিষ্ঠান।
১৯৭৩-৭৪ সালে আমি যখন কলেজছাত্র তখনকার সরকারি মালিকানাধীন সাপ্তাহিক বিচিত্রায় আনু মোহাম্মদ (জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর) এর অর্থনীতি বিষয়ক প্রবন্ধ পড়তাম। তখন প্রফেসর আবু আহম্মদ সেখানে লিখে চলেছেন। বাংলাদেশে অর্থনীতিবিদের অভাব নেই। তবুও কেন এই দুর্দশা দেশের। এমন একজন রাষ্ট্রের নির্বাহী প্রধান চাই বাংলাদেশে, যিনি জাতীয় আয় বা মজুরি দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা করার ঘোষণা দিবেন এবং বাস্তবায়ন করবেন। আনু মোহাম্মদ, আবু আহম্মদের মতো লেখকদের পার্লামেন্টে আমন্ত্রণ জানিয়ে রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক পলিসি কী হবে সে সম্পর্কে তাদের অভিমত নেয়া উচিত। ড. মোহাম্মদ ইউনূস, ফজলে আবেদদের আরো জন্ম নিতে হবে এ মাটিতে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর ৪ বছর জাপানের অর্থনীতি যেমন ছিল একজন সানিও ইলেক্ট্রিক কোম্পানির শ্রমিকের বেতন ছিল ৭.০০০ ইয়েন মাসিক। তা দিয়ে একজন মানুষের খাবারের ব্যয় এবং কাপড় কাচার ব্যবস্থা হতো।
আজ ৪,০০০ মার্কিন ডলার মাসিক বেতন একই শ্রমিকের। বাংলাদেশের একজন গার্মেন্টস হেলপারের বেতন ৩০০০ টাকা। অপারেটরের বেতন ৫০০০ টাকা। ঢাকা শহরে এদের থাকা খাওয়া বাবদ ৩৮,০০ টাকা দিতে হয় বা খরচ হয়। রিকশা, ভ্যান, ঠেলাগাড়িওয়ালাও দৈনিক ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় করে থাকে। ২২ লাখ গার্মেন্টস শ্রমিক তাদের ন্যূনতম মজুরি ৬ হাজার টাকা দাবি করে আসছে। আমাদের দেশের একজন শ্রমিকের ন্যূনতম দৈনিক আয় ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত অথচ জাপানে একজন শ্রমিকের আয় বাংলাদেশী টাকায় ৭,০০০ থেকে ২১,০০০ টাকা। যে দেশে মাত্র তিন দিন কাজ করলেই সারা মাসের খাবারের অর্থ জোগাড় করা যায়। আমাদের দেশে বাৎসরিক আয় ২০,০০০ টাকা। আমেরিকায় দিনহীন চললেও প্রতিদিন ২০ ডলার লাগে। জাপানে মধ্যবিত্তের মতো চললে প্রতিদিন ১ জন মানুষের ১০০ মার্কিন ডলার প্রয়োজন। এখন বাংলাদেশ থেকে মানুষ দক্ষিণ কোরিয়াতে যায় কাজের উদ্দেশ্যে।
দক্ষিণ কোরিয়া হুন্দাই মোটর কার, ডাউ মোটর কার, বাস, ট্রাক নির্মাণ করে থাকে যা বাংলাদেশে যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যবহার করে থাকে। বিদেশে বিশেষ করে জাপানি সুপারভাইজারগণ মাদার কোম্পানি থেকে কাজ আনার সময় কাজ করার কৌশল শিখে আসে যাতে স্বল্প সময়ে ও দ্রুত কাজ সম্পূর্ণ করে কোম্পানিকে লাভজনক পর্যায়ে নিয়ে আসা যায়। আমাদের দেশেও যদি স্কুল, কলেজ, খবরের কাগজে শ্রম বাজারের হালনাগাদ বিশে¬ষণ থাকে এবং টিভি-রেডিওতে প্রচার করে এবং কাজ ও টেকনিক মিডিয়াতে শেখায় তাহলে দেশ উন্নত হতে বাধ্য।
0 comments:
Post a Comment