Saturday, July 16, 2016

মাদকাসক্তি প্রতিকারের উপায়


মাদকাসক্তি প্রতিকারের উপায়
আলী ফোরকান
মাদক সেবনের কুফল সম্পর্কে মহাসমারোহে আলোচনা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম হয়। রাষ্ট্রীয়ভাবে বিপুল অর্থ ব্যয় করা হয়। বিভিন্ন এনজিও মাদক সেবন নিরুৎসাহিত করতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। মাদক পাচার, বহন ও ব্যবহারের বিভিন্ন শাস্তি রয়েছে। তবু মাদক ব্যবহার কমেনি। ফেনসিডিল, গাজা, হিরোইন, ইয়াবা, প্যাথেডিনের ব্যবসা রমরমা। নারী, পুরুষ উভয় শ্রেণীর মধ্যে মাদক সেবন প্রবণতা বাড়ছে। সাধারণ কৌতূহল থেকে শুরু হয়। পরে আসক্তি তীব্র হয়ে সাধারণ জীবনযাপন বিপন্ন হয়। নিঃসঙ্গতা ও বেকারত্ব থেকেও মাদক সেবনে আসক্তি জন্মে। মাদকদ্রব্য সংগ্রহের জন্যে নিজের বাড়িতে চুরি ও ভাংচুর করে নেশাখোররা। নিজের বাড়ি থেকে সঞ্চয় কিংবা অর্থ যোগানের ব্যবস্থা নিঃশেষ হলে রাস্তায় নামে নেশাখোররা। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একদল নেশাগ্রস্তরা ছিনতাই কাজে নিয়মিত অংশ নেয়। এমন খবর ও পাওয়া যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকার বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদক সেবন বৃদ্ধি পেয়েছে। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের হল, হোস্টেলে মাদকদ্রব্য সেবন, নেশার সামগ্রীসহ সিগারেটের বিপুল সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। ডিশ এ্যান্টেনার যুগে বিদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসন এদেশের কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীকে সমকামী, নেশাগ্রস্ত ও পশুপাখি সহযোগে বাস করার মানসিকতা তৈরী করছে। ঘুমের ওষুধ, হিরোইন, গাজা, এমনকি কুকুর মারার ইনজেকশন সেবন করছে মাদকসেবীরা। বিষ শরীরে ঢুকিয়ে নেশা করার মতো অভ্যাস গড়ে উঠছে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে। মাদকাসক্তরা বেপরোয়া জীবনযাপন করে। মাদকাসক্তরা সবসময় চড়া মেজাজে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে হতাশা থেকে মাদকাসক্তি গড়ে ওঠে। এক সমীক্ষা থেকে জানা গেছে রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা হতাশা ও কর্মবিমুখতা থেকে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। আরো উদ্বেগের বিষয় ছেলেদের থেকে মেয়েরা অধিক সংখ্যক ফেনসিডিল, হেরোইন ও ধূমপানে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে ধূমপান সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে দেদারসে। কয়েকদিন আগে গুলশান কালা চাঁদপুরে প্রেমিকের গুলিতে প্রেমিকার বাবা নিহত হয়েছে। কলাবাগানে সহপাঠীর চাপাতির আঘাতে আহত হয়েছে বান্ধবী, বান্ধবীর বাবা-মা। ইডেন কলেজ, বনানী, ধানমন্ডি এলাকায় বসবাসরত ছাত্র-ছাত্রীরা আসক্ত হয়ে বিভিন্ন অসামাজিক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। এদেশে ইংরেজরা বিনামূলে চা বিতরণ করে চাপায়ী সৃষ্টি করেছিল। অনেক স্থানে বিনামূল্যে মাদকদ্রব্য বিতরণ করে মাদকাসক্ত একটি শ্রেণী তৈরী করা হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এলাকায় মাদক বেচা-কেনা হরদম হচ্ছে। শিল্পপতি, ব্যবসায়ী প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সন্তানরাই অধিক মাদকাসক্ত। ধনী শ্রেণীর মেয়েরা লেখাপড়া নিয়মিত না করে মাদক সেবন করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড় য়া ছাত্র-ছাত্রীদের একটা অংশ মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার চারুকলা অনুষদ, টিএসসি, মধুর ক্যান্টিন, হাকিম চত্বর, মল এলাকা, ফুলার রোড, বিভিন্ন হল এলাকা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাদকাসক্ত যুবক ও পতিতাদের আনাগোনা লক্ষ্য করা যায়। আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা হানা দিলে কিছুদিন এদের সংখ্যা কম থাকে। পরে এদের আনাগোনা অব্যাহত থাকে। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে অনেকে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে।  দেশে মাদক সেবন বিরোধী আইন আছে। মাদক বহনকারীর শাস্তি অ-জামিনযোগ্য। এক সংবাদ সূত্র থেকে জানা যায় মাদক বিক্রেতা কালামিয়া ও তার স্ত্রী রানী বেগম বহুবার গ্রেফতার হয়েও জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে। বাংলাদেশ সমৃদ্ধ জনপদ। গোলাভরা ধান, পুকুরভরা মাছ ও প্রকৃতির সাথে ঘনিষ্ঠ মানুষের প্রাণ আকুল করা গান কক্তে ধারণ করা মানুষের দেশে কেন হবে তারুণ্যের এই অবক্ষয়। বিজ্ঞান, প্রযুক্তিতে আমাদের ছেলেমেয়েরা দক্ষতার স্বাক্ষর রাখছে। ইংরেজরা চীনাদের আফিমখোর বানিয়েছিল। বিদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসন সেভাবে আমাদের তরুণদের নেশাগ্রস্ত করে তুলছে। পরিবার শিক্ষার বাহন। আমাদের যৌথ পরিবার ভেঙে গেছে। স্বামী-স্ত্রী কর্মজীবী। তারা সন্তানদের দিকে খেয়াল করতে পারে না। যে তরুণ টগবগে প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর তাদের ঘরমুখী করতে হবে। সামাজিক ও ধর্মীয় অনুশাসন সন্তানের মানসিক বিকাশে অগ্রবর্তী ভূমিকা পালন করতে পারে। পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর সুন্দর সম্পর্ক রক্ষার বিকল্প নেই। সন্তানেরা তাদের পিতা-মাতাকে তাদের মডেল হিসেবে কল্পনা করে। মাদকাসক্ত ছেলে-মেয়েদের নিরাময়ের জন্যে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে পাঠাতে হবে। ক্রীড়া-সংস্কৃতিক কর্মকান্ডে যত বেশি তরুণ প্রজন্মকে যুক্ত করা যায় তত বেশি তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটবে। পরিবার হোক মাদকাসক্ত তরুণ-তরুণীর স্বস্তি ও শান্তিময় জীবনের তীর্থস্থান। এই-ই প্রত্যাশা।

0 comments:

Post a Comment