মাদকাসক্তদের চিহ্নিত করুন
আলী ফোরকান
দেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর জন্য সব শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ করে বিভিন্নমুখী প্রশিক্ষণ দেয়ার কথাও শোনা যায়। মাদকদ্রব্যের অবাধ ব্যবহারের এবং চলাচলের ওপর নজর রাখার জন্য পর্যাপ্ত জনবলসহ প্রয়োজনীয় যানবাহন রাখা আছে। তবুও গাঁজা, আফিম, ফেনসিডিল, হেরোইন (ব্রাউন সুগার) দেশের মধ্যে চলাচলের সময় আটক হবার খবরও পাওয়া যায়। আন্তর্জাতিক চক্র রয়েছে সব ধরনের মাদকসামগ্রীর চলাচল পথে। এদলের সদস্যদের চেনা কঠিন। সকল জেলার নিজ নিজ এলাকাই এদের ব্যবসায়িক এলাকা। তাদের আচরণ সার্বক্ষণিক অপ্রকৃতিস্থ। সূর্যাস্তের পর থেকে রাত দুপুর অবধি সাইকেল কেরিয়ার সাইকেল (স্থানীয় নাম হেলিকপ্টার) ও মোটরসাইকেল এবং বিপুল পরিমাণ চালান গন্তব্যে পৌঁছতে বেবীট্যাক্সি-মাইক্রোবাস ব্যবহৃত হয়। দেশের কলেজ, হাইস্কুল নিকটস্থ ছোট-বড় ভাঙ্গাচোরা দোকান চালানো হয় লোক দেখানো। সেগুলোই সকল মাদকদ্রব্যের স্থানীয় বিক্রয় কেন্দ্র। দিনের বেলায় খোলা রাখা হয় নামমাত্র, রাতে জমজমাট। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বহু নেশাগ্রস্ত কর্মচারী রাতে বা দিনে দায়িত্ব পালন করে এবং পাশাপাশি ছাত্রদের প্রলুব্ধ করে মাদকাসক্ত হওয়ার জন্য। দেশের পাচারচক্র ব্যবসায় সম্প্রসারণ করতে ঐ সব কর্মচারীকে সম্পৃক্ত করে রেখেছে দলের সঙ্গে। দেশের সবখানেই মদখোর, গাঁজাখোর, হেরোইন ও ফেনসিডিলসেবী আছে। সমাজের সকলেই তাদের চেনে। কিন্তু চেনে না সরকারি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ দফতর। এর কারণ সর্বজনবিদিত। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম-অষ্টম শ্রেণী থেকে যে সব ছাত্র প্রতিষ্ঠানের নেশাগ্রস্ত কর্মচারীদের সান্নিধ্যে এসে মাদকাসক্ত হচ্ছে তারাই কলেজে ঢুকে নিজেকে গড়ছে অন্যভাবে। আন্তর্জাতিক মাদকচক্রের সদস্যরা প্রকাশ্য কোনো পেশায় নিয়োজিত থাকে না তবে বিভিন্ন জেলায় হঠাৎ করে যাতায়াত এবং এলাকায় একস্থানে ‘বন্ধু সমাবেশ’ নামে বৈঠক করা বা মিলিত হওয়া মাদকদ্রব্য ব্যবহার আদান-প্রদান ও চালানের নক্শা-কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়। হকাররা ঐ সব দোকান থেকে সরবরাহ নেয় হাট-বাজারে সওদা করার নামে ঘোরাঘুরিতে বিক্রি করতে। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্মচারীরা ছাত্রদের দোকান চিনিয়ে দেয়, মূল্য আদায় করে, প্রলুব্ধ করে দলীয় সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করে থাকে। মাসের পর মাস দেখা যায় একই ব্যক্তি রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, ফেরিঘাট, বাজার মোড়ের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় চুপচাপ বসে থাকে দিন বা রাতের তাদের নিজস্ব ছক নির্ধারিত সময়ে। এরাই তারা, যারা সমাজ, দেশ ও জাতির ঘৃণীত শত্রু মাদক পাচার দলের সদস্য। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কল্যাণে দেশ-জাতির স্বার্থে অবিলম্বে সর্বাগ্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এবং সংশ্লিষ্ট হোষ্টেল বোর্ডিং হাউসে নিযুক্ত মাদকাসক্ত কর্মচারীদের চিহ্নিত করতে হবে, এবং সব জায়গার আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে মাদকাসক্তদের তালিকা প্রণয়নে সর্বস্তরের জনগণের সহযোগিতা নিতে হবে। এ ব্যাপারে মসজিদের ইমাম, মন্দিরের-গীর্জার এবং প্যাগোডা বা মঠের পুরোহিতগণ বিশেষ সহায়তা দিতে পারেন। এখানে বলা প্রয়োজন যে, আন্তর্জাতিক মাদকচক্র তাদের মালামাল পরিচিতি প্রসঙ্গে ‘কোড ওয়ার্ড’ বা সাংকেতিক নাম ব্যবহার করে থাকে। যেমন ডাল, জাগ, সোডা, পাতা, সরুপাতা ইত্যাদি। এগুলো প্রদানকারী ও গ্রহণকারীরা বিভিন্ন ভঙ্গিমায় উচ্চারণ করে থাকে বলে জানা যায়। দেশের পূর্ব ও পশ্চিম সীমান্তে মাদকদ্রব্য চলাচলের দুর্ভেদ্য ঘাঁটি প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। যা সারাদেশে সরবরাহ ও পাচারের জন্য নিরাপদ স্থান।
0 comments:
Post a Comment