মাদক : আসবে মুক্তি
আলী ফোরকান
সংবাদপত্রে প্রতিদিন যেসব খুন, সন্ত্রাসী, মাদকাসক্তদের ঘটনাসহ সকল অপরাধ এর খবর ছাপা হচ্ছে। তার সকল ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে দেশের তরুন যুব সমাজ এর একটি অংশ। কিন্তু সবচেয়ে মারাত্মক যে বিষয়টি জাতীর জন্য উদ্বেগের এবং আমাদেরকে সতর্ক হতে নির্দেশ দিচ্ছে। তা হলো এদের অধিকাংশই আজ তরুন। নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারনেই দেশে যুব সমাজের মধ্যে মাদকাসক্তির পরিমান সামপ্রতিক সময়ে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। সর্বনাশা মাদকের কারনে যুবসমাজ যে শুধু মেধা শুন্য হচ্ছে তাই নয় । এই মাদকাশক্তদের মধ্যে মনুষ্যত্বও লোপ পাচ্ছে । তাই, দুঃখজনক হলেও সত্য যে, "মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব" কথাটাও বোধ হয় আজ আর বলা যাবে না ।
এখানে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মহাবাণী উদ্ধৃতি দেয়া যেতে পারে-
"তৃণলতা সহজেই তৃণলতা, পশুপাখি সহজেই পশুপাখি , কিন্তু মানুষ সহজেই মানুষ নয়, এজন্য তাকে নিরন্তর সাধনা করতে হয় "।
প্রশ্ন জাগে, যে মেয়েটিকে বাবা মা জন্ম থেকে তিলেতিলে আদর ভালবাসা দিয়ে মানুষ করে তুলেছেন সে কিভাবে তার বুকে ছুরি বসায়। হত্যা করতে দ্বিধা করে না বাবা আর মাকে কিংবাযে ছেলেটি আজ বাবা মায়ের মাথার ঘাম পায়ে ফেলানোর কষ্টার্জিত অর্থ নিয়ে নামকরা একটি কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছে সে কেন আজ মাদকাসক্ত ? সন্তানকে তার বাবা-মা একমাত্র সম্বল সেই জমি বিক্রির টাকা দিয়ে একটি কারণে পড়তে পাঠান- ছেলেটা যেন পড়াশুনা শেষ করে মানুষের মত মানুষ হয়। কিন্তু সেই সব বাপ মায়ের ছেলে/মেয়েদের এ হেন কান্ডকীর্তি কি মানুষের পর্যায়ে পড়ে ? পুলিশ প্রশাসনের মতে, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও খুনসহ রাজধানীতে সংঘটিত অধিকাংশ অপরাধের সঙ্গেই মাদকাসক্তির সম্পর্ক রয়েছে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ধূমপায়ীদের মধ্যে শতকরা ৯৮% ভাগই মাদকাসক্ত। তার মধ্যে শতকরা ৪৪% ভাগই বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত। সিগারেট থেকে নেশা শুরু করলেও মাদকের প্রতি আসক্তি তাদের ধীরে ধীরে শুরু হয়। বেশীর ভাগই শুরু হয় বন্ধুবান্ধবদের সাহচার্যে। মূলত মাদক কেনার অর্থ জোগাড় করতে গিয়েই কিশোর-তরুনেরা ব্যাপকভাবে নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। এ সুযোগে মাদক ব্যবসায়ী ,সংঘবদ্ধ অপরাধীচক্র খুন, অপহরণ ও চাঁদাবাজিসহ নানা কাজে তাদের ব্যবহার করতে থাকে। মাদকের এই নেশার জালে একবার জড়িয়ে পড়লে কেউ আর সহজে এ জাল থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। ফলে মাদকসেবীরা দিনে দিনে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। আমাদের দেশে কিশোর সন্ত্রাসীর ক্রমবর্ধমান দাপটের যে তথ্য সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে তার মূল কারণ সম্ভবত নিহিত রয়েছে এখানেই। দেশের সর্বত্র স্কুল-কলেজগামী মেয়েদের নানাভাবে উত্তক্ত করা, গুলি বা ছুরিকাঘাতে হত্যা করা কিংবা সড়ক দুর্ঘটনার আধিক্যের পেছনেও মাদকাসক্তির ভূমিকা অন্যতম। বাংলাদেশ দূর্ভাগ্যজনকভাবে ভৌগোলিক কারণে মাদক উৎপাদনকারী দেশ না হয়েও মাদকাসক্তির জন্য একটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। যে সব দেশে মাদক উৎপাদন হয় সেসব দেশের চক্রের মধ্যে বাংলাদেশ অবস্থিত। যেমন দক্ষিন-পূর্বে গ্লোডেন ট্রায়াংগেল,থাইল্যান্ড,মিয়ানমার ও লাওসে পপি গাছ(আফিম)উৎপন্ন হয়। আবার উত্তর-পশ্চিমে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ইরান। ফলে এতদাঞ্চলের মাদক ব্যবসায় প্রভাব বাংলাদেশকেও প্রভাবিত করে।
আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য যে খুব সহজেই যত্রতত্র পাওয়া যাচ্ছে তার নমুনা আমরা প্রতিদিন খবরের কাগজে পাই। ইয়াবা 'দ্য কুইন ': নেশার জগতে দীর্ঘদিন যাবত্ রাজা হয়ে বসে আছে হেরোইন , বর্তমানে নতুন রানীর সন্ধান পাওয়া গেছে তার নাম দ্যা কুইন । নেশার জগতে নতুন সংস্করণ ইয়াবা এখন বাজারে এসেছে ' ইয়াবা প্লাস'নামে। তরুণ-তরুণীদের ভাষায় দ্য কুইন। কারণ হচ্ছে হেরোইন সাধারণত ছেলেরা সেবন করে , মেয়েদের মধ্যে হেরোইনসেবীর সংখ্যা নেই কিন্তু ইয়াবার নেশায় মেয়েরা মোটেও পিছিয়ে নেই। ইয়াবা দিয়ে নেশার জগতে প্রবেশের পর ইয়াবাসক্তরা এখন অন্যান্য নেশাতেও জড়িয়ে পড়ছে। ইয়াবাসক্ত এক তরুণী তার বক্তব্যে বলেছে ইয়াবা নেয়ার পর সিগারেট ধরেছি , বন্ধুর কাছ থেকে সিগারেট আর ফেনসিডিলও খেয়েছি । অনুসন্ধানে বর্তমানে ইয়াবা সম্পর্কে পাওয়া গেছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। আর সমপ্রতি ও-লেভেল এর ইংলিশ মিডিয়ামের ১৬ বছর বয়সের এক ছাত্রীর ইয়াবা আসক্তির ঘটনা তো আমরা সকলেই দেখে হতভম্ব হলাম। ইয়াবা নিয়মিত গ্রহণ করলে মস্তিষ্ক কোষে ডোপামিন কমে গিয়ে পার্কিনসন্স রোগ হতে পারে। ইয়াবা মস্তিষ্কের রক্তবাহী সুক্ষ নালীগুলোকে ধবংস করে ব্রেইন স্ট্রোক ঘটাতে পারে। ইয়াবা কোকেনের চেয়েও মারাত্মক উত্তেজনা সৃষ্টিকারী মাদক এবং প্রতিক্রিয়া কোকেনের চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী। বিভিন্ন সময়ে আইন শৃংখলা বাহিনীর হাতে আটক হওয়া তালিকার দিকে তাকালেই আতঙ্কিত হতে হয়। ভয় হয় এবং সহজেই অনুমান করা যায় ইতোমধ্যে দেশে মাদকের আগ্রাসন কতোটা সর্বগ্রাসী রূপ ধারণ করেছে । তবে এটা যে বিশাল ডুবো পাহাড়ের সামান্য চুড়ো মাত্র। তাতে বিন্দু মাত্র সন্দেহ নেই। ফেনসিডিল নামের মাদকদ্রব্যটি মূলত সর্দি কাশির সিরাপ । ফেনসিডিল একটি ভয়ঙ্কর মাদক দ্রব্য। সীমান্ত পথে প্রতিদিন গড়ে অন্তত দুই লাখ বোতল ফেনসিডিল দেশে ঢুকছে। অর্থাৎ্ বার্ষিক জাতীয় বাজেটের প্রায় এক- পঞ্চমাংশের সমান টাকা ধবংস হচ্ছে এই নেশার পেছনে। এটির নিয়মিত সেবনে উচ্চ রক্তচাপ ,মস্তিস্ক বিকৃতি , বিকলাঙ্গতা ঘটতে পারে। বিষয়টি দীর্ঘ দিন পরে ভারতীয় ড্রাগ কন্ট্রোল ব্যুরোও ধরতে পারে । বর্তমানে ভারতে এটি প্রেসক্রিপশনের মাধ্যমে বিক্রি হলেও এখন মূল মার্কেট বাংলাদেশ । আমাদের দেশে তরুন মেয়ে ও মহিলাদের মধ্যে ও মাদকাসক্তদের সংখ্যা বাড়ছে । একটি জাতীয় দৈনিকের রিপোর্টে বলা হয় ঢাকা শহরের নামিদামী মহিলা কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের প্রায় পাঁচ সহস্রাধিক ছাত্রী মাদকাসক্ত । মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের এক পরিসংখ্যানে দেশে শতকরা প্রায় ১০ জন তরুনী ও বয়স্ক মহিলা মাদকাসক্ত। এদের মধ্যে শতকরা ৩ জন গৃহবধূ । এক জরিপে দেখা যায় মাদকাসক্ত ছাত্র/ছাত্রীদের মধ্যে ১৫ বৎ্সরের নীচে শতকরা ১৫% এবং শতকরা ৮২% ভাগই ১৫- ৩৫ বৎ্সর বয়সের। ভৌগোলিকভাবে গোল্ডেন ক্রিসেন্ট এবং গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল এর কারনে আমাদের দেশে নানাভাবে নানা পথে বানের জলের মতো মাদক ঢুকছে। তার একটি অংশ আবার পাচার হয়ে যাচ্ছে বিদেশে। অবশষ্টি মাদক ছড়িয়ে পড়ছে দেশের আনাচে-কানাচে । অত্যন্ত লাভজনক এ ব্যবসাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বিশাল একটি জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক চক্র। পুলিশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী , ঢাকায় মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ৫ শতাধিক ব্যক্তির মধ্যে নারীর সংখ্যাও কম নয়। সবচেয়ে ভয়াবহ তথ্যটি হলো , এ কাজে শিশুদের ব্যবহার করা হচ্ছে ব্যাপকভাবে । জাতিসংঘসহ একাধিক সংস্থার জরিপে দেখা গেছে, মাদক বহনকারী এ শিশুদের বৃহদংশই মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে। আমাদের দেশে যারা এই অপরাধগুলো করেন তাদের দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী বিচার দিতে হবে। যাতে অন্যরা তাদের এই শাস্তি দেখে বুঝতে পারে। এ অন্যায় কাজের মুল্য কত কঠিন। সমপ্রতি একটি সংবাদ আমাদেরকে ক্ষনিকের জন্য হলেও বেশ একটুখানি নাড়া দিয়েছে । খবরটি ছিলো বিশ্বের বিখ্যাত নারীদের একজন তার নাম নাওমি ক্যাম্পবেল । ৩৬ বছর বয়স্কা এই সুপার মডেল সমপ্রতি তার হাউজকিপারকে মোবাইল ফোন ছুড়ে মেরেছিলেন আর নিউইয়র্কের ক্রিমিনাল কোর্ট নাওমির বিরুদ্ধে যে শাস্তি ঘোষণা করেছে তা হলো একটি মিউনিসিপ্যাল স্যানিটেশন ভবনে তাকে পাঁচদিন ফ্লোর ক্লিনারের কাজ করতে হবে ! এখানেই শেষ নয় , ৩৬ বছর বয়স্ক এই মডেলকে ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ কোর্সে অংশগ্রহণেরও আদেশ দিয়েছেন আদালত! আমাদের দেশেও তেমনি যে কোনো শ্রেণীর লোকই অপরাধ করুন না কেন তাকেও এমনি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে । বাংলাদেশে এই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে প্রতিষ্ঠিত হয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর । অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল- দেশে অবৈধ মাদক প্রবাহ রোধ, মাদক পরিবহন ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও পুর্নবাসন নিশ্চিতকরন এবং মাদকের কুফল সম্পর্কে গনসচেতনতা সৃষ্টি। ১৯৯০সালে রাস্ট্রপতি সচিবালয় থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরকে যখন পৃথক করা হয়, তখন পরিকল্পনা ছিল যে অধিদপ্তরের জন্য হেলিকপ্টার , গাড়ি , আলাদা পোশাক ও অস্ত্র দেওয়া হবে। বিগত বছর গুলোতে ফেনসিডিল আসক্তের মাত্রা ১০ গুন বেড়েছে একই সঙ্গে ফেনসিডিল আটক বেড়েছে ৩ হাজার বার, ফেনসিডিলের পর নেশা হিসেবে প্রচলন রয়েছে হিরোইনের। তরুনদের একটি বড় অংশ গাজা , ও মারিজুয়ানায় আসক্ত অনেকে সিডাক্সিন, মেনড্রেক্স সহ ঘুমের বড়ি সাথে সিরিঞ্জ নেশাগ্রস্তদের মাত্রাও কম নয় । গবেষনায় দেখা যায় এ ধরনের রোগীর সংখ্যা ১৭ শতাংশ বেড়ে গেছে । একটি জরীপে দেখা গেছে ঢাকা শহরের একটি এলাকায় শিরায় মাদক গ্রহনকারীদের মধ্যে শতকরা ১১ শতাংশই এইচ আইভি সংক্রামিত । আমাদের দেশে ১৯৮১ সালে থেকে এই পর্যন্ত ১ হাজার ৭৪৫ জন এইডস রোগী চিহ্নিত হয়েছে । প্রতি বছর এর সংখ্যা বাড়ছে। গবেষণায় বলা হয়, শতকরা ৫৭% জন মাদকাসক্ত যৌন কর্মীর কাছে যায় এবং শতকরা ১০% শিরায় মাদকাসক্ত পুরুষ সমকামী । ফলে এইডস এর জন্য বাংলাদেশকে একটি ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিনিয়ত পাশ্ববর্তী দেশগুলো থেকে মাদক পাচার হয়ে আসছে। ফলে মাদকাসক্তদের মাধ্যমেও এইডস ছড়াচ্ছে স্বল্প জনবল ও আনুসঙ্গিক সুযোগ সুবিধার অভাবে তা প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না ।সমপ্রতি কয়েকটি ঘটনাও মাদকাসক্ত বখাটে ছেলেদের কারনে সমাজে উদ্বেগ অনেক বেড়েছে। কেন তারা আজ মাদকাসক্ত। মাদক কি আমাদের সমাজে তাহলে সকল পরিবারেই ঢুকে পড়ছে ? নাকি আমরা আমাদের সন্তানদের সঠিকভাবে পরিচালিত করতে পারছিনা? এই দায়ভার কারা নেবে? পরিবার, সমাজ না দেশ? বিষয়টি নিয়ে আমাদের গুরুত্ব সহকারে এগুতে হবে। নতুবা সাম্প্রতিক ঘটনার মতো মাদকাসক্ত ছেলে বা মেয়ের হাতে বাবা-মাকে প্রাণ দিতে হবে যেমন পিংকি, সিমি, তৃষ্ণা, ফাহিমা, মহিমা আর ইলোরার মতো আরও অনেক মা-বোনকে আমাদের হারাতে হয়েছিলো। এখনই সময় প্রতিরোধ ব্যবস্থার । এখনই সময় - কঠিন আইন প্রয়োগের । নতুবা আপনি ,আমি যে কোন কেউ এই পরিস্থিতির স্বীকার হতে পারি। যে ক্নো পরিবার থেকে ঝরে পড়তে পারে একমাত্র আশা ভরসা । দুর্বৃত্ত বখাটেদের জন্য আর অমূল্য জীবন অকালে হারাতে দেয়া যায় না । একেকটি পরিবারের আশা ভরসা এভাবে শেষ হতে দেয়া যায় না । কিন্তু এখানেই শেষ নয় । এভাবে ঘটনা ঘটতে থাকবে আর আমরা দোষীদের চিহ্নিত করে আইনের হাতে দিবো, তবেই সব শেষ হবে না। এর জন্য প্রয়োজন যে নৈতিক মুল্যবোধের অভাব হয়েছে তার জন্য ব্যবস্থা নেয়া। দেশে এই মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার রোধে প্রশাসনকে আরও কঠিন বাস্তবমুখী প্রদক্ষেপ নেয়া। সর্বোপরি মাদকাশক্তি প্রতিরোধে গনসচেতনতা বাড়ানোর সকল প্রচষ্টো নেয়া এখন অতি জরুরী ।
চিকিৎসা: উপযুক্ত চিকিৎসা ও পুর্নবাসনের মাধ্যমে মাদকাসক্তকে সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা যায়। মাদকাসক্তি এক ধরনের আচরণগত ও মানসিক প্রবণতার সমস্যা উদ্ভূত রোগ। মাদকাসক্তকে ঘৃণা কিংবা অভিসম্পাত হয়, তাদের জন্য দরকার ভালবাসা এবং সুস্থ জীবনে ফিরে আসার জন্য সহযোগিতা পিতা- মাতা এবং অভিভাবকের সচেতনতা , সহানুভুতি ও উদ্যোগ ছাড়া মাদকাসক্তির চিকিৎসা সম্ভব নয়। ইউনাইটেড স্টেটস এন্ড ওয়ার্ল্ড এর রিপোর্টে বলা হয়, "পিতামাতাই পারেন সন্তানকে মাদকের গ্রাস থেকে রক্ষা করতে "। সুতরাং পিতামাতারা, আপনার সময়ের একটা নির্দিষ্ট অংশ সন্তানের দেখাশুনার জন্য বরাদ্ধ রাখুন, তাদের সঙ্গে বন্ধুর মত আচরণ করুন । তাদের অসুবিধাগুলো সমাধানে সচেতন হোন। আপনার অসুবিধাগুলো সম্পর্কে তাদের সচেতন করুন। বাবা মায়ের সাহচর্যে স্বাধীনভাবে বেড়ে উঠা সন্তান বাকিদের চাইতে অনেক কম কুপথে পা বাড়ায়। বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে যে সব পরিবারে পারিবারিক বন্ধন ঢিলে হয়ে গেছে। বা যাদের পরিবারে বাবা মায়ের সাথে সন্তানের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে তারাই বেশীর ভাগ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। সমাজে সুস্থ সংস্কৃতির চর্চ্চা না থাকলে , নানা ক্ষেত্রে অবক্ষয় , হতাশা বাড়তে থাকলে মাদকাসক্তি ক্রমেই বাড়বে । তাই , অসুস্থ্য সংস্কৃতির বলয় থেকে আমাদের বের হতে হবে। মানবিক মূল্যবোধকে আবার জাগরিত করতে হবে। তবেই আসবে মুক্তি । সুতরাং আমাদের আবার পূর্ব পরিচয়ে ফিরে যেতে হবে। যেখানে একটি পরিবারে বাবা -মা, সন্তান, চাচা -চাচি , মামা -মামি, ফুফা - ফুফু , নানা - নানী , সবাইকে নিয়ে আমরা বসবাস করতাম। সবাই সবার আনন্দ ,সুখ, ব্যথা, বেদনাকে ভাগাভাগি করে নিতাম । তাতে পরস্পরের যে সমস্যা দুঃখ যন্ত্রণা আছে তা সহজেই সমাধান করতে পারতাম। ফলে মাদকাসক্তির মত ভয়াবহ পরিস্থিতি তখন সৃষ্টি হয়নি। কিন্তু বর্তমানে আমরা সবাই এককেন্দ্রিক হয়ে গেছি। আমরা পরস্পরকে শ্রদ্ধা করি না। ফলে দেখা দিচ্ছে অবক্ষয় , অসামাজিক কান্ডকীর্তি। তাই এখন প্রয়োজন সামাজিক বন্ধনকে দৃঢ় করা। প্রয়োজন, বাবা মায়ের সাথে সন্তানের সম্পর্ক আরও নিবিড় করা । সহজকথায়, মাদক হলো বহু গুরুতর অপরাধের জননী। একটি পরিবারের জন্য মাদক কত বড় অভিশাপ হতে পারে তা আমাদের দেশের প্রতিদিনের দৈনিক খবরের কাগজ খুললেই বোঝা যায়। মাদকাশক্ত ছেলের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে এক মা তার মেয়ের সহযোগিতায় তার একমাত্র ছেলেকে হত্যার মত কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। অন্যদিকে, মাদকের টাকা না পেয়ে বাবা, মাকে খুন করার ঘটনা ও ঘটে যখন তখন।
পিতামাতা ও মাদকাসক্ত সন্তান: আসক্ত সন্তানের অভিভাবক বিশেষত বাবা/ মায়ের কারণে কখনো কখনো সমস্যাটি আরো মারাত্মক হয়ে দাঁডয়। স্নেহাতিশয্যে মা /বাবা সন্তানের এই দুষ্কর্মের কথাটি যতদিন সম্ভব পরিবারের অন্যান্য অভিভাবকদের কাছে গোপন রাখার চেস্টা করেন এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব সন্তানের অনেক অযৌক্তিক দাবি (টাকা পয়সা ও অন্যান্য) একদিকে পূরণ করে চলেন। অন্যদিকে নানাভাবে সন্তানের প্রতি নজর রাখতে বা বুঝিয়ে শুনিয়ে সন্তানকে মাদক গ্রহণ থেকে বিরত রাখতে চেষ্টা করেন। অবশেষে প্রচষ্টো যখন ব্যর্থ হয়ে যায় তখনই বিষয়টি পরিবারের অন্যান্য অভিভাকদের গোচরে আসে। কিন্তু ততদিনে সন্তান মাদক গ্রহণ এমনভাবে অভ্যস্ত হয়ে যায় যে তাকে মাদকমুক্ত করা অনেকাংশে কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং মাদক গ্রহণের ব্যাপারে যথা শিগগির সম্ভব নিশ্চিত হওয়া এবং অভিভাবকদের যথোচিত প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে এ সমস্যা মোকাবেলায় দৃঢ় সংকল্প হওয়া-উভয়ই সন্তানের মাদকাসক্তি সমস্যা মোকাবেলায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও কার্যকরী কাজ। অতএব মা বাবা অভিভাবক সকলে মিলেই সমস্যাটির সমাধান প্রথম থেকেই নিবেন। সরকারের কাছে আমার অনুরোধ, এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন। সেই সাথে এর বাজার রোধকল্পে জরুরী ভিত্তিতে একটি টাস্কফোর্স গঠন করবেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের সাথে এই টাস্ক ফোর্স যৌথভাবে কাজ করবে। যাতে একটি পরিবার, একটি সমাজ, একটি দেশকে ভয়াবহ ধ্বংস থেকে আমরা রক্ষা করতে পারি।
0 comments:
Post a Comment