মাদক:ইয়াবা সংশ্লিষ্ট কঠোর আইন চাই
আলী ফোরকান
মাদক ইয়াবা। বর্তমানে যুবসমাজ ধ্বংসের হাতিয়ার হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। একারনে, সর্বনাশা মাদকদ্রব্য ইয়াবা নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীরা। তারা বলছেন, ভয়াবহ এই মাদকের বিরুদ্ধে জনমত ও জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি কঠোর আইন প্রণয়ন। আইনের প্রয়োগ ও নজরদারির ব্যবস্থা করতে হবে। শাস্তি মৃত্যুদন্ড তো দূরের কথা, 'ইয়াবা' নামে বাংলাদেশে প্রচলিত কোনো আইনে কিছুই উল্লেখ নেই- এমন বিষয় জানিয়ে আইনজীবীরা বলেন, সংশ্লিষ্ট আইনে মাদকদ্রব্য 'ইয়াবা' শব্দটি সরাসরি অর্ন্তভুক্ত করে এর সংজ্ঞা, উপাদান ও শাস্তির বিবরণ উল্লেখ করতে হবে বিস্তারিতভাবে। শুধু তা-ই নয়, ইয়াবা সেবন, উৎপাদন, বহন ও ব্যবসায় সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি প্রমাণ হলেই শাস্তি হতে হবে মৃত্যুদন্ড। বিশিষ্ট আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীরা বলেন, প্রতিবেশী চীনে মাদকের শাস্তি মানেই মৃত্যুদন্ড। বাংলাদেশেও এর শাস্তি বাড়াতে হবে। দেশের তরুণ ও যুবসমাজকে ভয়াবহ এই মাদকের আগ্রাসন থেকে রক্ষা করতে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ নিতে হবে এখনই। এ বিষয়ে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি বলেন, ইয়াবার আগ্রাসন ভয়াবহ ও সর্বনাশা রূপ নিয়েছে। একে রুখতে হবে এখনই। নইলে এর কবল ও ছোবল থেকে তরুণ ও যুবসমাজকে বাঁচানো যাবে না। তিনি বলেন, আইনে তৈরির উপাদানের পরিমাণ অনুযায়ী শাস্তির কথা বলা থাকলেও সরাসরি 'ইয়াবা' শব্দটি উল্লেখ করা হয়নি। ফলে যে মামলাগুলো বিচার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হয়। এর অধিকাংশেই 'ইয়াবা'র সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করা যায় না। দেশজুড়ে ইয়াবার বিস্তারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান। তিনি বলেন, ইয়াবা নিয়ন্ত্রণে নতুন আইন করার প্রয়োজন নেই। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি সংশোধনী এনেই এর শাস্তি নির্ধারণ করা যায়। মূল বিষয় হচ্ছে, আইনে সংশোধনী এনে উপাদানের বর্ণনাসহ 'ইয়াবা' শব্দটি সরাসরি অর্ন্তভুক্ত করতে হবে। সেখানে শাস্তি হিসেবে উল্লেখ করতে হবে মৃত্যুদন্ডের বিষয়টি। সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ড. তুহিন মালিক বলেন, ইয়াবা-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে লড়াই করার সক্ষমতা আমাদের আইনেরও নেই। সম্ভবত আইন প্রয়োগকারী সংস্থারও নেই। তবে বিভিন্ন সময় এর বিরুদ্ধে যে লড়াই করা হয়েছে, তা বিচ্ছিন্নভাবেই। এটি সর্বজনীনভাবে করা হয়নি। তিনি বলেন, এ ধরনের মামলায় সাক্ষী পাওয়া যায় না। সাক্ষ্য দিতে সাক্ষী ভয় পায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চার্জশিট হয় না। এই মাদক রোধে সংশ্লিষ্টদের শক্তি, অর্থ ও প্রভাব ধ্বংস করতে হবে। এ জন্যও আইন প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে এলিট ফোর্সের মতো একটি ফোর্স তৈরি করা যেতে পারে। সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম বলেন, আইন প্রণয়নের চেয়ে প্রয়োগ বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও সজাগ, সতর্ক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। একই সঙ্গে জাতীয় পর্যায়ের একটি মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে। এ ছাড়া জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য স্কুল-কলেজের পাঠ্যপুস্তকেও ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকের ভয়াবহতা ও কুফল সম্পর্কে পাঠ অর্ন্তভুক্ত করা যেতে পারে বলেও মত দেন সিনিয়র এই আইনজীবী। আমরা আশাকরি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনায় আনবে।
0 comments:
Post a Comment