মাদকের বিরুদ্ধে চাই সামাজিক প্রতিরোধ
আলী ফোরকান
সারা দেশের মানুষ শপথ নিক মাদকের বিরুদ্ধে। যেমন,বগুড়ার এরুলিয়া ইউনিয়নের সর্বস্তরের মানুষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এখন থেকে তারা নিজেরাই মাদক নির্মূলে একযোগে কাজ করবে। অর্থাৎ তারা সর্বনাশা মাদকের বিরুদ্ধে গড়ে তুলবে সামাজিক প্রতিরোধ আন্দোলন। পুলিশ প্রশাসনও এই সামাজিক আন্দোলনে সকল প্রকার সহযোগিতা প্রদানের অঙ্গীকার করেছে। মাদকের সর্বনাশা নেশার পেছনে দেশে বার্ষিক ব্যয় হয় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি হতে সাত হাজার দুইশত কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, এই টাকার অংকটি বাস্তবে জাতীয় উন্নয়ক বাজেটের এক চকতুর্থাংশেরও বেশী। এই সর্বনাশা মাদক শুধু তরুণ সমাজের জন্য নয়, গোটা জাতির জন্যেই আজ হয়ে উঠেছে এক মারাত্মক চ্যালেঞ্জ। কেননা শুধু রাজধানী ঢাকাতেই নয়, প্রতিটি জেলা শহর, থানা, ইউনিয়ন এমন কি প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছে এই ভয়াবহ মাদকাসক্তি সমস্যা। জানা যায়, ১০ বৎসর আগেও যা সীমাবদ্ধ ছিল শহরাঞ্চলের মুষ্টিমেয় অপরাধী চক্রের মধ্যে। ইদানিং তা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের সর্বত্র। ১৩ হতে ১৫ বৎসরের তরুণ কিশোরদের মধ্যে। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (ইউএনডিসিপি) ও অন্যান্য সংস্থার ‘র্যাপিড স্টাডি এসেসমেন্ট স্টাডির’ রিপোর্ট, দেশের মাদকাসক্ত লোকের সংখ্যা ২০ লাখেরও অধিক। তন্মধ্যে শতকরা ৯১ ভাগ কিশোর তরুণ ও যুবক। মাদকাসক্তদের এক-শতাংশের বয়স ১৫ বৎসরের নিচে, ৫০ শতাংশের বয়স ১৫ হইতে ২৫, আর ৫০ শতাংশের বয়স ২৬ হইতে ৩৭। রিপোর্ট হতে প্রকাশ, মাদকাসক্তির ভয়াবহ বিস্তার ঘটিয়ে চলছে ছাত্র ও শিক্ষিত বেকারদের মধ্যে। জীবনের সব চাইতে কর্মক্ষম সুবর্ণ সময়টাকেই তারা ব্যয় করছে এই সর্বনাশা মাদকের পেছনে। এক বেসরকারি সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মাদকাসক্তদের মধ্যে মারাত্মক ক্ষতিকর ইয়বা সেবনের মাত্রা বর্তমানে ভয়াবহ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। মাদকাসক্তদের শতকরা ৭৫ ভাগ এখন ইয়াবাসেবী। ১৯৯৬ সালে হেরোইন সেবীর হার ছিল ৫১ শতাংশ, ৯৮ সালে ছিল ৬২ শতাংশ, এবং ২০০০ সালে ছিল ৭২ শতাংশ। অর্থাৎ এই হার ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরিণতিতে ঘরে ঘরে শুরু হয়েছে অশান্তি। স্বাস্থ্যহানি এবং গোটা পরিবারে দুর্ভোগ। এই অবস্থায় বগুড়ার এরুলিয়া ইউনিয়নের অধিবাসীরা মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ আন্দোলনের যে সিদ্ধান্ত ও উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, আমরা স্বাগত: জানাই। আশা করি, দেশের অন্যত্র যেখানে যেখানে মাদকাসক্তির অভিশাপ দেখা দিয়েছে, সে সব এলাকার সচেতন জনগণও এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করবেন এবং অনুরূপ সামাজিক প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলবেন। প্রকাশ, বগুড়া শহর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে এরুলিয়া ইউনিয়ন। এখানে রয়েছে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, সিমেন্ট ফ্যাক্টরী, বিমান বন্দর ও বেশকিছু ছোট ছোট কল কারখানা। এলাকাবাসীর মতে, এরুলিয়ার প্রধানতম সমস্যা হচ্ছে মাদক ও জুয়া। প্রায় প্রতিটি বাড়ীর তরুণ ও যুবকেরা এই মাদক ও জুয়ার অপকর্মে জড়িত হয়ে পড়েছে। তাদেরকে এই অপকর্মে জড়ানো হচ্ছে। ইতিপূর্বে এরুলিয়ার পার্শ্ববর্তী এলাকায় একই ধরনের পরিস্থিতির মোকাবিলায় কমিউনিটি পুলিশ কার্যক্রম চালু করা হয়েছিল। কিন্তু কার্যকালে দেখা গিয়েছে, কমিউনিটি পুলিশ সদস্যরাই মাদকসহ নানান অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। এরুলিয়া ইউনিয়নের চারমাথা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকা মাদকের স্বর্গরাজ্য হিসাবে পরিচিত। কোন নির্দিষ্ট এলাকা সম্পর্কে পত্রপত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশিত হলে প্রথম প্রথম ২/৪ দিন অভিযান, ধরপাকড় ইত্যাদি চলে। অতপর পরিস্থিতি শুধু আগের মত নয়, তার চাইতেও নিদারুণ হয়ে পড়ে। এই অবস্থায়, এরুলিয়াবাসীরা যে উদ্যোগ গ্রহণ করেয়ছেন। তাতে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ এ বিষয়ে এলাকাবাসীদের এই আন্দোলন ও উদ্যোগের প্রতি সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানে রাজী হয়েছে। এটা জানা কথাই যে, কোন সামাজিক আন্দোলনের পিছনে সরকারী তথা প্রশাসনিক ব্যাকিং না থাকলে তা সফল হতে পারে না। আমরা আগেও বলেছি, আবারও বলছি, এরুলিয়ার দৃষ্টান্ত অনুসরণে মাদক ও জুয়া দুর্গত সকল স্থানের স্থানীয় জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে। সে সাথে প্রয়োজন হবে স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনকে এ ধরনের যাবতীয় উদ্যোগের প্রতি সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করা। মাদক ও জুয়া আজ গোটা জাতির জন্য বিরাট এক চ্যালেঞ্জ। এভাবে সামাজিক প্রতিরোধ আন্দোলনের মাধ্যমেই আজ সেই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হবে। ইহা সময়েরও দাবী।
0 comments:
Post a Comment