Thursday, June 30, 2016

পরিবেশ : দূষণরোধে কেঁচোই কৃষিবান্ধব

পরিবেশ : দূষণরোধে কেঁচোই কৃষিবান্ধব
আলী ফোরকান
বহু আগে থেকেই কেঁচোকে বলা হয় ‘প্রকৃতির লাঙ্গল’। সাধারণ লাঙ্গল মাটি কর্ষণ করে ওলটপালট পর্যায়ে এনে দেয়। মাটির বিভিন্ন স্তরে জমাকৃত খনিজ উপাদান বা মাটির পুষ্টি ছড়িয়ে পড়ে সমস্ত অংশে। ফলে পুষ্টি সমৃদ্ধ মাটি কৃষি উৎপাদনে রাখে আশাব্যঞ্জক ফল। তাই কেঁচোকে আরেক অর্থে বলা হয় ‘কৃষকের বন্ধু’। কেঁচোর এ কর্মপ্রক্রিয়া সাধারণ দৃষ্টে বিচার সাপেক্ষে এসব অভিধা দেয়া হয়েছে। এ যাবৎ বৈজ্ঞানিক ভিত্তি প্রমাণে একই চেষ্টা করা হলেও লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি একদল বিজ্ঞানী শুনিয়েছেন, নতুন তথ্য। তাদের ভাষায়, দূষিত মাটি পরিশুদ্ধকরণে কেঁচো যে সব প্রক্রিয়া অবলম্ব করে তার সন্ধান মিলেছে। মোদ্দাকথা মাটিকে দূষণমুক্তকরণে কেঁচোর ভূমিকা বা তার পর্যায়ক্রমিক কাজের ধরন সম্পর্কে অবহিত হওয়া গেছে। রিডিং ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক যুক্তরাজ্যের কয়েকটি পরিত্যক্ত খনি, সাবেক শিল্পঅঞ্চল এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কারখানার দূষিত মাটিতে কেঁচো ছেড়ে দিয়ে ব্যাপক অনুসন্ধান চালায়। বেশ কিছুদিন তারা মাটির দূষণমাত্রা নিয়ে কাজ করেন। একই ধরনের দূষিত মাটিতে কেঁচো ছেড়ে দিয়ে এবং পার্শ্ববর্তী অনুরূপ দূষিত মাটিতে কেঁচো না দিয়ে তুলনামূলক উপাত্ত সংগ্রহ করেন। তাতে তারা যে পার্থক্য দেখতে পান তার ওপর ভিত্তি করে রচনা করেন একটি নিবন্ধ। তাতে উল্লেখ করা হয়, কেঁচো মাটি খেয়ে থাকে। একই সঙ্গে তারা মাটির দূষিত অংশ যেমন আর্সেনিক, লেড, তামা ও জিঙ্ক গলাধঃকরণ করে। পরবর্তীতে বিষ্ঠা আকারে যে উচ্ছিষ্ট বের করে দেয় তা দূষিত মাটিকে দূষণমুক্ত করতে সহায়ক হয়। গবেষকদলের প্রধান মার্ক হড্সন বলেন, কেঁচো দূষিত মাটি ভক্ষণের পর যে বিষ্ঠা ছাড়ে তাতে এক প্রকার প্রোটিন থাকে যা মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখে। লিভারপুলে অনুষ্ঠিত ব্রিটিশ এসোসিয়েশন সায়েন্স ফেস্টিভেল-এ আমন্ত্রিত বিজ্ঞানীরা বলেন, কেঁচো একবিংশ শতাব্দীর পরিবেশ দূষণরোধে যোদ্ধার ভূমিকা রাখতে পারে। তাদের ভাষায়, কেঁচো মাটির স্বাস্থ্য সমন্ধে নিশ্চিত হওয়ার ক্ষেত্রে গোয়েন্দার কাজ করতে পারে। কেননা কেঁচোর উপস্থিতি প্রমাণ করে মাটির স্বাস্থ্য সঠিক অবস্থায় রয়েছে। অতএব কেঁচো যাতে বংশ বিস্তার করতে পারে সেদিকে সকলের নজর দেয়া উচিত। প্রকৃতির লাঙ্গল প্রকৃতিকে যাতে দূষণমুক্ত রাখতে পারে তাতে সকলের সহায়তা করা দরকার। তবেই পরিবেশ দূষণ অনেকাংশে কমে আসবে। খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনেও গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জিত হবে। বর্তমান বিশ্বে যা খুবই জরুরি। মৃত্তিকা গবেষকদের মতে, মাটির গহ্বরে বাসকারী যত প্রাণী রয়েছে তার মধ্যে কেঁচোই কৃষিবান্ধব। যদিও কেঁচোর কাজ চোখে পড়ে না তথাপি গোপনে অদৃশ্যভাবে কৃষিক্ষেত্রে মূল্যবান অবদান রাখে। সেদিক বিবেচনায় কেঁচো মাটি খায়; বিনিময়ে শস্যের জোগান ভারি করে। অতএব কেঁচোর বংশ বৃদ্ধিতে প্রতিবন্ধতা সৃষ্টি করে এমন কোন কাজ করা উচিত হবে না। 



0 comments:

Post a Comment