Sunday, May 15, 2016

পলাশীর ষড়যন্ত্র

পলাশীর ষড়যন্ত্র
আলী ফোরকান
১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশী যুদ্ধের ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে (আসলে কোনো যুদ্ধই হয়নি) বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। এই ঘটনার পরম্পরায় ইংরেজরা সমগ্র ভারতবর্ষে তাদের ঔপনিবেশিক শাসন কায়েম করে। এই ২৩ জুনের হিজরি তারিখটি ছিল ৫ শাওয়াল ১১৭০। বাংলা তারিখ ১১ আষাঢ় ১১৬৪। সম্প্রতি আমার প্রণীত ‘প্রমিত বাংলা পঞ্জিকা’ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এই গ্রন্থে খ্রিষ্ট্রীয় সন ১-৪৭৯৯; বাংলা সন ৯৯১-৪২০৫ এবং হিজরি সন ১-১৫০০-এর বর্ষপঞ্জি সংকলিত হয়েছে। এই বর্ষপঞ্জি সংকলনকালে আমি লক্ষ্য করি যে, ২৩ জুন ১৭৫৭-এর দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার, ঈদুল ফিতরের তিনদিন পর। বাংলার স্বাধীনতা হরণে ষড়যন্ত্রকারীরা ঈদের সময়টা বেছে নিয়েছিল। নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার প্রধান সেনাপতি মীর জাফরের (মীর জাফর আলী খান) বিশ্বাসঘাতকতার ফলে ক্লাইভের অধীনস্থ ইংরেজ সৈন্যরা ১৯ জুন, ১ শাওয়াল ঈদের দিন (বর্ধমান জেলার অন্তর্গত) কাটোয়া দখল করে ২২ জুন মধ্যরাতে পলাশী প্রান্তরে উপস্থিত হয়েছিল এবং যুদ্ধের প্রহসন করে স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে সিংহাসনচ্যুত করে মীর জাফরকে ক্রীড়ানক নবাব বানিয়েছিল। নবাবকে সিংহাসনচ্যুত করার ষড়যন্ত্রটা ছিল এরূপ: ১৯ জুন, রবিবার ক্লাইভ তার সৈন্য নিয়ে কাটোয়ায় আসবে এবং মীর জাফর তার অধীনস্থ সৈন্য নিয়ে কাটোয়ায় ক্লাইভের সঙ্গে মিলিত হবে এবং যৌথ বাহিনী মুর্শিদাবাদ আক্রমণ করবে। কিন্তু এ ষড়যন্ত্রের কথা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় মীর জাফর কাটোয়ায় ক্লাইভের সঙ্গে মিলিত হয়নি। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তানুযায়ী ক্লাইভ পলাশী প্রান্তরে হাজির হয়। ক্লাইভের বাহিনীতে সৈন্য ছিল মাত্র ৯০০ এবং নবাব বাহিনীর সৈন্য ছিল কয়েক হাজার। পলাশীর আম্রকাননে দু’পক্ষের সেনা সমাবেশ হয়। সকাল বেলা কিছুক্ষণ কামানের গোলাবর্ষণ হলো। পরিকল্পনা মাফিক মীর জাফর নবাব বাহিনীর পশ্চাদপসারণের নির্দেশ দিল এবং তার উরৎবপঃ ঈড়সসধহফ-এর সৈন্যবাহিনী নিয়ে পশ্চাৎপসারণ করলো। ইংরেজ সৈন্য ছত্রভঙ্গ নবাব সৈন্যদেরও ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। নবাব পালিয়ে গেলেন। এই হলো পলাশীর যুদ্ধ! মীর জাফর গদিতে বসে ইংরেজ অফিসারদের বিরাট পরিমাণ অঙ্কের টাকা পুরস্কার দিলো। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বর্ধমান, মেদেনীপুর ও চট্টগ্রামের জমিদারি পেলো। বিনা শুল্কে জল ও স্থলপথে আমদানি-রপ্তানির সুবিধা পেলো। আর নবাব সৈন্যবাহিনী পরিচালনার ভার পেলো এবং এই দায়িত্ব পালনের জন্য নবাবের তরফ থেকে তাদের বাৎসরিক বিরাট অঙ্কের টাকা বরাদ্দ করা হলো। ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ পুনর্নির্মাণ করার অধিকার লাভ করলো ইংরেজরা, যা সিরাজ-উদ-দৌলা দখল করে নিয়েছিলেন। বাণিজ্য করতে এসে বিশ্বাসঘাতক মীর জাফর গং-এর সহায়তায় সুবে বাংলার কর্তা হয়ে বসালো ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। হায় পলাশী! 

0 comments:

Post a Comment