Friday, June 1, 2018

স্মরণ :মাস্টার আবদুস সোবহান চৌধুরী

স্মরণ :মাস্টার আবদুস সোবহান চৌধুরী
জন্ম : ১৯৩৮ সালের ১ জানুয়ারি
 মৃত্যু : ২০০৯ সালের ১ জুন
আলী ফোরকান
মাস্টার আবদুস সোবহান চৌধুরী। তিনি প্রয়াত হয়েছেন ২০০৯ সালের ১ জুন।১৯৩৮ সালের ১ জানুয়ারি চট্টগ্রামের বোয়ালিয়া গ্রামের ঐতিহ্যবাহী দোভাষ পরিবারে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৪২ সালে শিশু বয়সে তিনি পিতাকে হারান। মা’র অনুপ্রেরণায় নিজ গ্রামের বোয়ালিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা শুরু করেন। পঞ্চম শ্রেণীর বৃত্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান লাভ করে শিশুকালেই মেধার স্বাক্ষর রাখেন। পরবর্তীকালে ভর্তি হন বটতলী এস.এম.আউলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে। ১৯৪৭ সালে উক্ত বিদ্যালয় হতে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে বৃত্তি লাভ করেন। সেখান থেকে তিনি উচ্চ শিক্ষা লাভে চলে আসেন চট্টগ্রাম সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ে। পারিবারিক ও সামাজিক অসহযোগিতার কারণে অর্থাভাবে তিনি এক পর্যায়ে পড়ালেখা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন।
চলে আসেন বাড়িতে, ১৯৪৮ সাল থেকে জড়িয়ে পড়েন পারিবারিক চাষাবাদ ও ছোটখাট ব্যবসা বাণিজ্যে। তাতে তিনি বুঝতে পারেন পড়ালেখা ছাড়া জীবনে উন্নতি করা কিছুতেই সম্ভব নয়। অতঃপর ১৯৫১ সালে পুনরায় চট্টগ্রাম কাজেম আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে পড়ালেখা শুরু করেন। উক্ত স্কুলের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক আবদুর রাজ্জাক, সহকারী প্রধান শিক্ষক মোজাম্মেল হক সাহেবের সুনজরে মেধাবী ছাত্র আবদুস সোবহান চৌধুরী নবম ও দশম শ্রেণীতে বিনা বেতনে অধ্যয়নের সুযোগ পান। বিদ্যালয়ের সাহিত্যসেবি শিক্ষক আয়ুব খানের পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি ঝুঁকে পড়েন সাহিত্য সাধনায়। সেই ছাত্রাবস্থাতেই তিনি একাধিক ছোট গল্প, নাটক, প্রবন্ধ রচনা করেন, তা পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হলে তাঁর সুনাম ও মেধার বিকাশ ফুটে ওঠে। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন চলাকালে তিনি সরাসরি যুক্ত হয়ে পড়েন ভাষা আন্দোলনে। এক পর্যায়ে ভাষা সৈনিক মাহবুবুল আলম চৌধুরীর সংম্পর্শে এসে শহরের বিভিন্ন স্থানে মিছিল মিটিং এবং নিজ থানা আনোয়ারায় এসে ছাত্রদের সংগঠিত করে বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে ভাষা আন্দোলনের পক্ষে মিছিল মিটিং এ নেতৃত্ব দেন। ১৯৫৩ সালে কৃতিত্বের সাথে মেট্রিক পাস করার পর ভর্তি হন চট্টগ্রাম কলেজে। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন্ওে তিনি নিজ এলাকা আনোয়ারায় জোরালো ভূমিকা রাখেন। ১৯৫৫ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে আই–এ পাস করেন। ১৯৫৭ সালে বি.এ পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের প্রাক্কালে টাইফয়েড রোগে আক্রান্ত এবং একই সময়ে স্নেহময়ী মাতার মৃত্যুর কারণে তাঁর ডিগ্রি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করা আর হয়নি।
পরবর্তীকালে আর্থিক সংকটের কারণে ১৯৫৮ সালের ১৪ জানুয়ারি চান্দগাঁও মডেল হাই স্কুলে জুনিয়র শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতায় নিয়োজিত হণ। ৬২ সালে শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেন। ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলনে তিনি সরাসরি জড়িয়ে পড়েন। আওয়ামী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়ে বিভিন্ন সভা সমাবেশে বক্তৃতা করতে গিয়ে তিনি অল্প দিনের মধ্যে তুখোড় বক্তা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন এবং জননেতা এম এ আজিজের সংস্পর্শে আসেন।
শিক্ষকতার পাশাপাশি ১৯৬৬ সালে শিক্ষক পরীক্ষার্থী হিসেবে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৬৭ Ñ–৬৮ শিক্ষাবর্ষে কৃতিত্বের সাথে বি.এড ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৯ সালে অসহযোগ আন্দোলনে তিনি চট্টগ্রাম ও নিজ থানা আনোয়ারায় ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসর গ্রহণের র্পূর্ব পর্যন্ত তিনি সাতকানিয়ার ডেমুসিয়া জুনিয়র হাই স্কুল, পটিয়ার দৌলতপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, চান্দগাঁও এন এম সি মডেল হাই স্কুল, মেরিন একাডেমী উচ্চ বিদ্যালয়, বটতলী শাহ মোহছেন আউলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে একাধিক্রমে ৩৬ বৎসর প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। উল্লেখ্য যে, এ সময়কালে তিনটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে বিদ্যালয়গুলো প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত কুমিল্লা মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্র্ডের ইংরেজি বিষয়ের পরীক্ষক, ছক বিন্যাসক ও প্রধান পরীক্ষক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষাক্ষেত্রে বিরল অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৯৭ সালে আনোয়ারা উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে সরকারি পুরস্কারে ভূষিত হন।


0 comments:

Post a Comment