Thursday, May 10, 2018

স্মরণ : কবি ও নেতা মাও সেতুং

স্মরণ : কবি ও নেতা মাও সেতুং 
আলী ফোরকান
জন্ম : ১৮৯৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর 
মৃত্যু : ১৯৭৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর 
কিছু কিছু জন্ম এমনভাবে সার্থক হয়ে ওঠে যা তার মৃত্যুকে ছাপিয়ে তার ব্যাপ্তিকে পৌঁছে দেয় এক অনন্য উচ্চতার শিখরে। ঠিক তেমনই একজন নেতা সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা এবং গণ চীনের বিপ্লবী পুরুষ, মার্কসবাদী তাত্তি¡ক ও রাজনৈতিক নেতা কমরেড মাও সেতুং। জন্ম ১৮৯৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর। চীনের হুনান প্রদেশের শাওশান গ্রামের এক সচ্ছল কৃষক পরিবারে জন্ম নিয়ে আলোকিত করেছিল পরিবারটিকে। বাবা ছিলেন কনফুসিয়াসপন্থি এবং মা ছিলেন বৌদ্ধ পরিবারের। সে কারনে ছেলেবেলায় দুটি ভিন্ন মতে বিশ্বাসী হয়ে উঠেছিলেন মাও সেতুং। ১৯১১ সালের হুনান প্রদেশের রাজধানীর চাঙশায় টির্চাস কলেজে ভর্তি হন মাও সেতুং। এখানেই তাঁর প্রথম পরিচয় হয় পাশ্চাত্য দর্শনের সাথে। তখন গোটা চীন জুড়ে চলছিল কিঙ রাজতন্ত্রের দুঃশাসন। মানুষ ফুসে উঠেছিল জাতীয়তাবাদীদের তীব্র গনআন্দোলনে। তখন জাতীয়তাবাদীদের আদর্শিক নেতা ছিলেন সান ইয়াত সেন । তিনি রাজতন্ত্র ভেঙ্গে গঠন করতে চান প্রজাতন্ত্র। মায়ের অনুপ্রেরণায় উদ্ধুদ্ধ হয়ে মাও সেতুং যোগ দিলেন প্রজাতন্ত্রের সৈন্যবিভাগে। রাজতন্ত্রবিরোধী আন্দোলনে জয়ী হলেন সান ইয়াত সেন এবং তাঁর আদর্শিক দল। গঠন হলো কউমিঙটাঙ নামক জাতীয়তাবাদী দল এবং দলের প্রধান হলেন সান ইয়াত সেন।
১৯১৮ সালে হুনান টির্চাস কলেজে থেকে পাস করে মাও সেতুং পাড়ি জমান বেজিংয়ে। অনেক চেষ্টায় কাজ জুটল বেজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে। কাজের অবসরে তিনি পাঠ করতে লাগলেন সভ্যতার বিস্ময়কর এক তত্ত¡: মাকর্সবাদ। বুঝতে পারলেন মায়ের বুদ্ধমতবাদ আর বাবার কনফুসিয়বাদ চীনের সামাজিক সমস্যা সমাধানে অক্ষম। এসব বালখিল্য দর্শন চীনকে পিছিয়ে রেখেছে আজন্ম। চীনের প্রয়োজন পাশ্চাত্যের আদলে প্রবল আধুনিকায়ন। খাতা কলম নিয়ে নড়েচড়ে বসলেন মাও সেতুং। একটার পর একটা ঐতিহ্যবিরোধী লেখা লিখে আলোচীত হয়ে উঠলেন চীনের আপামর মানুষের কাছে। বিভিন্ন বিষয়ে কবিতা লিখেছেন।
১৯২০ সালে মাও সেতুং চাঙশায় ফিরে এসে হুনান প্রদেশে গনতান্ত্রিক সংস্কারের জন্য উদ্যোগী হলেন এবং পরে তা র্ব্যথ হয়। এর পর ১৯২১ সালে সাঙহাই এসে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গোপন বৈঠকে যোগ দেন তিনি। তারপর হুনানে এসে কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক শাখা খুললেন। কিভাবে ধর্মঘট করতে হয়, কিভাবে নিজেদের অধিকার আদায় করতে হয় চীনের শ্রমিকদের শেখালেন মাও সেতুং। 
১৯২৫ সালে নিজগ্রাম শাওশানে কৃষক সংগঠন গড়ে তোলেন এবং ১৯২৭ সালে কৃষক আন্দোলন নিয়ে লিখলেন বিপ্লবি বইপত্র। তিনি বলতে চাইলেন, কৃষকরাই হচ্ছে দেশের প্রধান চালিকাশক্তি শ্রমিকরা নয়। এ ছিল চরম মার্কসবাদবিরোধী বক্তব্য। তার সে লেখায় নিজের দলে হইচই পড়ে গেল। চীনের প্রদেশে প্রদেশে চাউর হতে লাগল তাঁর নতুন আদর্শনীতি। দলে দলে লোক এই আর্দশ গ্রহণ করতে লাগল। চীনে হঠাৎই একটা মোড় পরির্বতন চলে আসল। শত বছরের ইতিহাসের চাকা ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম হলেন বিপ্লবি কমরেড মাও সেতুং। তিনি হুনান প্রদেশের কৃষকদের নিয়ে সৈন্যবাহিনী গঠন করলেন। এই বাহিনী নিয়ে তিনি সশস্ত্র আন্দোলনের পথে ঝাপিয়ে পড়লেন এবং আরেকবার ঘুরিয়ে দিতে চাইলেন চীনের ইতিহাসের চাকা। কিন্তু সে আন্দোলন আলোর মুখ দেখেনি, চরমভাবে পরাজিত হলেন মাও সেতুং।
মাও সবচে বেশী নজর দিতে লাগলেন কৃষকের দিকে। কারন মোট কৃষকের তুলনায় চাষের জমি খুবই কম ,যার কারনে চীনে দুর্ভিক্ষ লেগেই থাকত। কৃষকদের বোঝানো হল জাতীয়তাবাদী দল বা গুওমিংতান দের হটালে আমরা সুখী এক দেশ গড়তে পারব। বিপ্লবী অনুশারীদের নিয়ে ঠাংসা থেকে শুরু করলেন লং মার্চ। গানসু গিয়ে যাত্রাবিরোতি দিয়ে ফিরে গেলেন বেইজিং। হতদরিদ্রদের সাহায্যে তার লং মার্চ সফল হল। মাও তার সমাজতান্ত্রিক বিষয় জনগণকে মেনে চলার পরামর্শ দিলেন কিন্তু জনগণ থেকে তেমন সাড়া পেলেন না। তখন তৃতীয় স্ত্রী জিয়াং ছিং হাতে ক্ষমতা তুলে নিয়ে সমাজতান্ত্রিক সফলতা আনতে তার চার সঙ্গিকে নিয়ে বুড়ো মাওকে বোঝাতে পারলেন যে শিক্ষিত আর পয়সাকড়িওলারাই হচ্ছে সমাজের প্রধান শত্রæ।
বর্ণাঢ্য জীবনের শেষ ভাগে এসে মাও সে তুং বেশ দুর্বল ও অসুস্থ হয়ে পডলেন। সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা এবং গণ চীনের এই অবিসংবাদিত মহান নেতা ১৯৭৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরন করেন। মাওয়ের ইচ্ছা ছিল তিনিসহ তার দলের সব কেন্দ্রীয় নেতার মৃত্যুর পর তাদের দেহ যেন পুড়িয়ে ফেলা হয়। পরবর্তীতে তার সমাধিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে ‘মাও সেতুং স্মৃতিসৌধ’। চীন বিপ্লবের মার্কস্বাদী তাত্তি¡ক ও রাজনৈতিক নেতা এবং চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এবং গণ চীনের অবিসংবাদিত মহান নেতা কবি মাও সেতুং অমর হয়ে থাকবেন মানুষের হৃদয়ে।

0 comments:

Post a Comment