Monday, April 23, 2018

স্মরণ : হুমায়ূূন আহমেদ

স্মরণ : হুমায়ূূন আহমেদ
আলী ফোরকান
জš§ : ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১৩ নভেম্বর
 মৃত্যু: ১৯ জুলাই ২০১২ 
তরুণ প্রজš§ বই পড়ে নাÑ এমন অপবাদ থেকে মুক্ত করে তাদের বইমুখী করে তোলার পথিকৃৎ হিসেবে হুমায়ূন আহমেদের অবদান অবিস্মরণীয়। শুধু বই নয় টিভি বিমুখ দর্শকদের টিভির সামনে বসাতে এবং দীর্ঘক্ষণ ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। তার রচিত এসব দিন-রাত্রী, কোথাও কেউ নেই, বহুব্রীহি, আজ রোববার নাটকগুলো জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করে ছিল। কোথাও কেউ নেই নাটকের বিশেষ চরিত্র বাকের ভাইয়ের ফাঁসি রোধ করতে রাজধানীর রাস্তায় মিছিল বের হয়েছিল। কোনো নাট্যকারের নাটকের চরিত্র নিয়ে এধরনের ঘটনা শুধু বিরলই নয় অকল্পনীয়ও। তিনি যেখানেই তার দৃষ্টি ফেলেছেন, মেধা বিনিয়োগ করেছেন সেখানেই যেন সোনা ফলেছে। তিনি একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা তিন শতাধিক। বাংলা কথাসাহিত্যে তিনি সংলাপপ্রধান নতুন শৈলীর জনক। তার বেশ কিছু গ্রন্থ পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে, বেশ কিছু গ্রন্থ স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত। সত্তর দশকের শেষভাগ থেকে আমৃত্যু তার গল্প-উপন্যাসের জনপ্রিয়তা ছিল তুলনারহিত। তার সৃষ্ট হিমু এবং মিসির আলী ও শুভ্র চরিত্রগুলো বাংলাদেশের যুবকশ্রেণীকে গভীরভাবে উদ্বেলিত করেছে। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীও তার সৃষ্টিকর্মের অন্তর্গত। তার রচিত প্রথম সায়েন্স ফিকশন ‘তোমাদের জন্য ভালোবাসা’ তার নির্মিত চলচ্চিত্রসমূহ পেয়েছে অসামান্য দর্শকপ্রিয়তা। সংখ্যায় বেশি না হলেও তার রচিত গানগুলোও বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করে। তার অন্যতম উপন্যাস হলো নন্দিত নরকে, মধ্যাহ্ন, জোছনা ও জননীর গল্প, মাতাল হাওয়া ইত্যাদি। তার নির্মিত কয়েকটি চলচ্চিত্র হলো দুই দুয়ারী, শ্রাবণ মেঘের দিন, ঘেঁটুপুত্র কমলা ইত্যাদি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘকাল কর্মরত ছিলেন।
হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১৩ নভেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্গত নেত্রকোণা মহুকুমার কেন্দুয়ার কুতুবপুরে জš§গ্রহণ করেন। পিতা শহীদ ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মা আয়েশা ফয়েজ। তার পিতা একজন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন এবং তিনি ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তৎকালীন পিরোজপুর মহকুমার এসডিপিও (উপ-বিভাগীয় পুলিশ অফিসার) হিসেবে কর্তব্যরত অবস্থায় শহীদ হন।
বগুড়া জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেন এবং রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। তিনি পরে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকেই বিজ্ঞানে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন শাস্ত্রে অধ্যয়ন করেন এবং প্রথম শ্রেণীতে বিএসসি (সম্মান) ও এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। পরে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পলিমার রসায়ন বিষয়ে গবেষণা করে পিএইচডি লাভ করেন। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত থাকা অবস্থায় প্রথম বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী তোমাদের জন্য ভালোবাসা রচনা করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। লেখালেখিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় একসময় তিনি অধ্যাপনা ছেড়ে দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জীবনে ‘নন্দিত নরকে’ উপন্যাস রচনার মধ্য দিয়ে হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্য জীবনের শুরু। শঙ্খনীল কারাগার তার দ্বিতীয় গ্রন্থ। তিনি অনায়াসে ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে অতিবাস্তব ঘটনাবলির অবতারণা করেন যাকে একরূপ জাদু বাস্তবতা হিসেবে গণ্য করা যায়।
বরেণ্য এই সাহিত্যিক ২০১১-এর সেপ্টেম্বের মাসে সিঙ্গাপুরে ডাক্তারি চিকিৎসার সময় তার দেহে ক্যান্সার ধরা পড়ে। ১২ দফায় তাকে কেমোথেরাপি দেয়া হয়েছিল। অস্ত্রোপচারের পর তার কিছুটা শারীরিক উন্নতি হলেও, শেষ মুহূর্তে শরীরে অজ্ঞাত ভাইরাসে আক্রমণ করায় তার অবস্থা দ্রুত অবনতির দিকে যায়। কৃত্রিমভাবে লাইভ সাপোর্টে রাখার পর ১৯ জুলাই ২০১২ তারিখে হুমায়ূন আহমেদ মৃত্যুবরণ করেন।

0 comments:

Post a Comment