Monday, April 23, 2018

স্মরণ : আশুতোষ ভট্টাচার্য

স্মরণ : আশুতোষ ভট্টাচার্য
আলী ফোরকান
জন্ম: ১৯০৯ সালের ১৭ জানুয়ারি  
মৃত্যু : ১৯৮৪ সালের ১৯ মার্চ 
আশুতোষ ভট্টাচার্য ১৯০৯ সালের ১৭ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ জেলার ঝালুয়া গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। পৈতৃক নিবাস ছিল একই জেলার বকজোড়গান্দি গ্রামে। পিতা মুরারিমোহন ভট্টাচার্য ছিলেন আইনজীবী। আশুতোষ ভট্টাচার্য বরাবরই মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তিনি কিশোরগঞ্জ উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে ১৯২৬ সালে ম্যাট্রিক এবং ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে ১৯২৮ সালে আইএ পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংস্কৃত ও বাংলায় অনার্সসহ এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই তিনি পিএইচডি ডিগ্রিও লাভ করেন। প্রাতিষ্ঠানিক পাঠ শেষে তিনি আসানসোল রেলওয়ে স্কুলে শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৩৭ সালে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলার প্রভাষক পদে। এরপর ১৯৫৫ সালে যোগ দেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক পদে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পর্যায়ক্রমে রবীন্দ্র অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হন এবং ১৯৭৭ সালে অবসর গ্রহণ করেন। মাঝে তিনি প্রখ্যাত নৃতত্ত্ববিদ ভেরিয়ার এলউইনের রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট হিসেবে অ্যানথ্রোপলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ায় সাত বছর কাজ করেন। লোকসংস্কৃতি পরিষদ, নিখিলবঙ্গ সাহিত্য-সম্মেলন ইত্যাদি সম্মেলনে তিনি প্রতিনিধিত্ব করেন এবং আমেরিকা, রাশিয়া ও ইংল্যান্ডসহ পৃথিবীর বহু দেশে লোকসাহিত্য সম্পর্কে বক্তৃতা দেন। পুরুলিয়ার ‘ছৌ’ নৃত্যকলাকে তিনিই প্রথম বিশ্বজনসমক্ষে তুলে ধরেন।
একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন লোকসংস্কৃতিবিদ হিসেবেই আশুতোষ ভট্টাচার্যের প্রধান পরিচয়। তিনি মধ্যযুগের বাংলা মঙ্গলকাব্য এবং আধুনিক যুগের বাংলা নাটকের ইতিহাস রচনা করেও খ্যাতি অর্জন করেন। বাংলা মঙ্গলকাব্যের ইতিহাস, দুই খণ্ডে বাংলা নাট্যসাহিত্যের ইতিহাস এবং বাংলা সামাজিক নাটকের বিবর্তন তার তিনটি মৌলিক গ্রন্থ। বাংলা লোকসাহিত্য সম্পর্কেও তার একাধিক গবেষণাগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে, যথা: বাংলার লোকসাহিত্য, বাংলার লোকশ্রুতি, বঙ্গীয় লোকসংগীত রতœাকর, বাংলার লোকনৃত্য, বাংলার লোকসংস্কৃতি, ঈযযধঁ উধহপব ড়ভ চঁৎঁষরধ, ঞযব ঝঁহ ধহফ ঃযব ঝবৎঢ়বহঃষড়ৎব ড়ভ ইবহমধষ, ঋড়ষশষড়ৎব ড়ভ ইবহমধষ ইত্যাদি। আশুতোষ ছৌ-নৃত্যের পুনরুজ্জীবন ও ভূমিজ শিল্পিদের সংগঠিত করে দেশে-বিদেশে এর প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেন। ‘রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব ফোক-কালচার’ প্রতিষ্ঠা এবং লোকশ্রুতি পত্রিকা সম্পাদনা করে তিনি লোকসংস্কৃতি চর্চায় নতুন মাত্রা যোগ করেন। তার মৌলিক ও সম্পাদিত অন্যান্য গ্রন্থ হলো: বাংলার কথাসাহিত্যের ইতিহাস, মহাকবি শ্রীমধুসূদন, রবীন্দ্র-নাট্যধারা, রবীন্দ্রনাথ ও লোকসাহিত্য, দ্বিজেন্দ্রলালের প্রহসন, বাইশ কবির মনসামঙ্গল বা বাইশা, শিবায়ন, গোপীচন্দ্রের গান, পদ্মাপুরাণ, কৃত্তিবাসী রামায়, কাশীদাসী মহাভারত, নটী বিনোদিনী রচনা সমগ্র ইত্যাদি। এ ছাড়াও তিনি কয়েকখানি কাব্য, ছোটগল্প, উপন্যাস ও ভ্রমণকাহিনী রচনা করেন। ভ্রমণকাহিনীর মধ্যে সোভিয়েতে বঙ্গ-সংস্কৃতি, পুরুলিয়া থেকে প্যারিস, সুন্দরী ইন্দোনেশিয়া, ইরান ভ্রমণ, অজানা অস্ট্রেলিয়া, জাপানের আঙ্গিনায়, অন্ধকারের আন্দামানে উল্লেখযোগ্য। আশুতোষ ভট্টাচার্য সাহিত্য-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অবদানের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সরোজিনী বসু স্বর্ণপদক, শিশির স্মৃতি স্বর্ণপদক, কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটির বি.সি.এল স্বর্ণপদক এবং দিল্লির সংগীত নাট্য আকাদেমির ফেলোর সম্মাননা লাভ করেন। ১৯৮৪ সালের ১৯ মার্চ কলকাতায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

0 comments:

Post a Comment