Friday, March 23, 2018

এইডস-বাঁচতে হলে জানতে হবে

 এইডস-বাঁচতে হলে জানতে হবে 
আলী ফোরকান 
বিশ্বে এইডস নিয়ে অনেক গবেষণা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। তবুও এইডস আক্রান্ত্রের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। সভ্যতা বিধ্বংসী পারমানবিক বোমার চেয়ে ভয়ংকর ঘাতক ব্যাধি এইডস বিশ্বকে গ্রাস করছে। মানব সভ্যতা আজ ধ্বংসের সম্মুখীন। এইডসের করাল গ্রাসে সব নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববাসীর এতোদিনের অভাবনীয় অগ্রগতির সব সাফল্যকে এইডস মলিন করে দেয়। এইডস মানব সভ্যতার অস্তিত্বের উপর বড় হুমকি স্বরুপ। আজ সকল শঙ্কার কেন্দ্র বিন্দু, কি করে এইডস থেকে মানব জাতিকে রক্ষা করা যায়। এইডস অনিরাময়যোগ্য কালব্যাধি। এ মারাত্মক ব্যাধি সারা বিশ্বকেই আতংকিত করে রেখেছে। এ ঘাতক ব্যাধির কোন ওষুধ আজ পর্যন্ত আবিস্কৃত হয়নি।
 বাংলাদেশেও থেমে নেই। এই মরণব্যাধি আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। এখনই সচেতন হতে নাপারলে দেশে ভয়ংকর এরোগে আক্রান্তের হার বেড়ে যাবে। সচেতন নাহলে আক্রান্ত রোগী থেকে অন্যান্য মানুষের মাঝে এরোগ ছড়াতে পারে। তাই আমাদের বাচঁতে, আমাদের সচেতন হতে হবে। 
বাংলাদেশেও এইচআইভি/এইডস সংক্রমণের ক্ষেত্রে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে। বিশেষজ্ঞরা জানায় বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারত, মায়ানমার, থাইল্যান্ডসহ আশ-পাশের আরো কয়েকটি দেশে এইচআইভি/এইডসের বিস্তার আমাদের দেশের জন্য ঝুঁকির কারণ। সংশ্লিষ্ট কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার রিপোর্টে জানিয়েছে, সীমান্ত পথে প্রতিনিয়ত প্রতিবেশী দেশ গুলো থেকে বিভিন্ন শ্রেণীর কর্মজীবী শ্রমিকেরা এদেশে গমনাগমন করে থাকে ও ঝুঁকিপূর্ণ যৌন আচরণ করছে। একই আচরণ বাংলাদেশী শ্রমিক কর্মজীবীরাও প্রতিবেশী দেশে গিয়ে করে থাকে । এসব আচরণের কারণে দেশের স্থল বন্দর ও নৌবন্দর এলাকা গুলো নয় শুধু, গোটা দেশেই এইচআইভি/এইডস বিস্তারের ঝুঁকি মারাত্মক ভাবে বেড়ে গেছে। পাশাপাশি ভারত থেকে চোরাপথে পরীক্ষা-নীরিক্ষা ছাড়াই রক্ত আসছে । একইভাবে আমাদের  দেশ থেকে অনেকেই চিকিৎসার জন্য ভারতে যান । যেহেতু দেশটি এ ক্ষেত্রে প্রবল ঝুকির মধ্যে সেহেতু  ঐ দেশে যে কোন রকমের চিকিৎসাও বিপদের  কারণ হতে পারে ।
 বাংলাদেশের পরিস্থিতিঃ ১৯৮৩ সালে বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সমূহের উদ্যোগে জাতীয় এসটিডি/এইডস নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় এইডস কমিটি গঠিত হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, ১৯৮৯ সালের অক্টোবর মাসে বাংলাদেশে প্রথম এইচআইভি সংক্রমিত লোকের সন্ধান পাওয়া যায় । সেই ব্যক্তি ছিলেন একজন বিদেশী। এরপর ১৯৯০ সালের মে মাসে চট্টগ্রামে এক ব্যক্তির এইচআইভি ধরা পড়ে। ১৯৯০ সালে এ সংখ্যা দাড়ায় ৩ জনে। ১৯৯১ সালে আক্রান্তেও সংখ্যা দাড়ায় ৯ জনে। ১৯৯২ সালে এসে দাড়ায় ১১ জনে। ১৯৯৩  সালে তা বেড়ে দাড়ায় ২৩ জনে।  ১৯৯৪ সালে এ সংখ্যা এসে দাড়ায় ৩৬ জনে।১৯৯৫ সালে তা বেড়ে দাড়ায় ৪৬ জনে। ১৯৯৬ সালে আক্রান্তের সংখা দাড়ায় ৭৫ জনে। ১৯৯৭ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাড়ায় ৯৪ জনে। ১৯৯৮ সালে তা বেড়ে ১০৬ জনে দাড়ায়। ১৯৯৯ সালে ১২৬ জনে দাড়ায়। ২০০০ সালে দাড়ায় ১৫৭ জন ও  ২০০১ সালে ১৮৮ জন। ২০০২ সালে ২৪৮ জনও ২০০৩ সালে এসংখ্যা দাড়ায় ৩৮৪ জনে।  ২০০৪ সালে নতুন করে আরো ১০২ জন ও ২০০৫ সালে আরো ১৯৩ জন নতুন এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়। ২০০৫ সালে এসংখ্যা এসে দাড়ায়  ৬৫৮ জনে। ২০০৫সাল পযর্ন্ত এইডসে মারা গেছে ৭৪ জন। এর মধ্যে ২০০৫ সালেই মারাগেছে ৩০ জন। ২০০৬ সালের নভের পযর্ন্ত ৮৭৪ জনকে এইচআইভি/ এইডস রোগী হিসেবে সনাক্ত করা হয়েছে। ২০০৭ সাল পর্যন্ত দেশে এইডসে মৃতের সংখ্যা ১০৯ জন। অপর একটি সূত্র বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ ও ইএন এইডসের বরাত দিয়ে জানায়, বাংলাদেশে এইচআইভি/এইডসে আক্রান্তের সংখ্যা ১৩ হাজার থেকে ২০ হাজার।
বিশ্ব ব্যাংকের একটি জরিপে দেখা যায়, এদেশে রয়েছে দুর পথে চলাচলকারি প্রায় ২শ ৫০ হাজার বাস-ট্রাক-লঞ্চ চালকও তাদের সহকারী। এছাড়া সারা দেশে ছড়িয়ে আছে ১৫ লাখ রিক্রা চালক। এদের প্রত্যেক শ্রেণীর ৭০ ভাগ যৌন কর্মীদের খদ্দের। জাতীয় এইচআইভি/সেরোলোজিকাল সার্ভেলেন্স জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশে শতকরা ৫২ ভাগ বিবাহিত ট্রাক শ্রমিক ও শতকরা ৭৫ ভাগ বিবাহিত রিক্সা শ্রমিক বাণিজ্যিক যৌনসঙ্গী (যারা যৌন পেশার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে) দের সাথে যৌন কাজ করে থাকে। যার মধ্যে শতকরা ৭০ ভাগ রিক্সা ও ট্রাক শ্রমিক বানিজ্যিক যৌন সঙ্গী এবং শতকরা ৬৪ ভাগ ট্রাক শ্রমিক ও শতকরা ৩১ ভাগ রিক্সা শ্রমিক অবানিজ্যিক (যারা অর্থের বিনিময়ে অপেশাদারভাবে যৌন কর্ম করে) এইচআইভি/এইডস সেরোলোজিকাল সার্ভেলেন্স অনুযায়ী মাত্র শতকরা ৩ ভাগ রিক্সা শ্রমিক ও শতকরা ২১ ভাগ ট্রাক শ্রমিক এইডস রোগ ছড়ানোর মাত্র ২টি উপায় জানে। শতকরা ৮৬ ভাগ রিক্সা শ্রমিক ও শতকরা ৩৩ ভাগ ট্রাক শ্রমিকদের এইডস সম্মন্ধে কোন ধারণা-ই নাই।
দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া এর সূত্র অনুযায়ী ভারতে নিরাপত্তা বাহিনী (বিএসএফ) বিশেষ করে বাংলাদেশ সীমান্তে নিয়োজিতদের মধ্যে এইডসের বিস্তার সবচেয়ে বেশি ঘটেছে। যা বাংলাদেশের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরুপ। আসাম বিএসএফ প্রধান লেঃ জেনারেল ভোপিন্দর সিং জানিয়েছেন বাংলাদেশ সীমান্তে নিয়োজিত জোয়ানদের মধ্যে ১৪১ জন এইচআইভি/এইডস ভাইরাস বহন করছে বলে পরীক্ষায় জানা গেছে। ইতিমধ্যে ৩২ জন মারা গেছে। ভারতের আর্মস ফোর্সেস মেডিকেল সার্ভিসের মহাপরিচালক ভাইস অ্যাডমিরাল ভিকে সিং বলেছেন, ভারত সরকারের রেকর্ড থেকে দেখা যায়, স¤প্রতি ৩০০ সৈন্য এইচআইভি জীবাণু বহন করছে। আসাম বিএসএফ প্রধান আরো জানান, সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এইডস আক্রান্ত নারীদের মাধ্যমে সীমান্তে নিয়োজিত বিএসএফ জোয়ানদের মধ্যে এইডস ছড়াতে পারে। দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ার সূত্র মতে, ভারতে সেক্স এখন একটি বিকাশমান শিল্প। দক্ষিণ ও মধ্য পূর্বাঞ্চল থেকে বিভিন্ন বয়সী নারীরা যৌনতা (পরিস্থিতির শিকার/স্বেচ্ছায়) বিক্রি করতে ভারতে যায়। এইডস, ভারতীয় ব্যবসায়ী, পর্যটক ও অবৈধ ভারতীয়দের মাধ্যমে বাংলাদেশে এইডস বিস্তার লাভ করতে পারে। ম্যাগাজিনটি সুপারিশ করে ভারতে বাংলাদেশ দূতাবাসকে ভিসা দেওয়ার আগে যেন স্বাস্থ্য সনদ চায়। বাংলাদেশেরও উচিত ভারতে গমনাগমণে সীমান্তে চেক পোষ্টে দেহ পরীক্ষার ব্যবস্থা করা।
“এইডস” ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তিদ্বারা এ রোগ সংক্রামিত হয়। বিশেষতঃ এইচআইভি/এইডস সংক্রমিত কোন নারী বা পুরুষের সাথে অন্যকোন নারী বা পুরুষের অনিরাপদ দৈহিক মিলন, এইচআইভি সংক্রমিত রক্ত গ্রহণ করলে, অথবা এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তির অপারেশনে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির ব্যবহার করলেও এইচআইভি সংক্রমিত অঙ্গ কোষ সমষ্টি কোন ব্যক্তির দেহে প্রতিস্থাপন করলে এবং এইচ আইভি সংক্রমিত সূচ বা সিরিঞ্জ অথবা অপারেশনের যন্ত্রপাতি জীবাণু মুক্ত না করে ব্যবহার করলে এ রোগ সংক্রমিত হয়। এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত মায়ের-মাধ্যমে তার শিশু সংক্রমিত হতে পারে। মূলতঃ বিশেষভাবে যৌনচার, কুরুচিপূর্ণ যৌন আবেদন ও বেপরোয়া মাদকাশক্তি এ রোগ আক্রান্তের প্রধান কারণ। ১৯৮১ সালের জুন মাসে লস এ্যাঞ্জেলস শহরে ৫ জন সমকামীর মধ্যে প্রথম এইডস ধরা পড়ে। তখন এই রোগটিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য কোন বড় সমস্যা আকারে দেখা হয়নি। কিন্তু দিন যত অতিবাহিত হয়েছে এইডস সমগ্র বিশ্বে ভীতির সঞ্চার করে চলেছে। যা এখন শুধুমাত্র চিকিৎসা বিজ্ঞানের সমস্যা নয়, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং নৈতিক মূল্যবোধের সমস্যা হিসেবে প্রকটভাবে দেখা দিয়েছে। পরীক্ষা করে বিশেষজ্ঞরা দেখেন উপরোক্ত সমকামীর প্রত্যেকের দেহে কোন কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংস হয়ে গেছে। কিন্ত তখন এর সঠিক কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি, তবে পারিবারিক সূত্রে জানা গেল এটা কোন জন্মগত সমস্যা নয়। কোন না কোন ভাবে তারা আক্রান্ত বা সংক্রমিত হয়েছে। এটাই ছিল এইডস আক্রমণের প্রথম আবিস্কার। ১৯৮১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টা রাজ্যের সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল এর ট্যাক্স ফোর্স ফেডারেল এজেন্সী কর্তৃক এইডস (অওউঝ-অপয়ঁরৎবফ ওসসঁহব উবভরপরবহপু ংুহফৎড়সব) নাম দেওয়া হয় সর্ব প্রথম। ১৯৮৬ সালে অওউঝ এর নাম দেওয়া হয় ঐওঠ (ঐঁসধহ ওসসঁহব উবভরপরবহপু ঠরৎঁং)। এইচআইভি/ এইডস এর উদ্ভবের ইতিহাস ও উদ্ভবের কারণ আলোচনার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো এ রোগের হাত থেকে মানবক‚লকে রক্ষা করার করণীয় নির্ধারণ করা। আমরা ভালভাবেই জানি য়ে, এইচআইভি/এইডস এর এখনও ফলপ্রসু কার্যকরী চিকিৎসা আবিস্কার করা সম্ভব হয়নি। তবে এ বিষয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানে সর্বকালের সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব ও অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত এইচআইভি/এইডস এর সংক্রমণ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় সঠিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ। “আমেরিকা ইউরোপে যদিও প্রথম এইচআইভি/এইডস এর প্রাদুর্ভাব ঘটে কিন্তু তাদের সচেতনতা ও সামগ্রিক প্রচেষ্টার ফলে তারা এইচআইভি/এইডস এর সংক্রমণের হার অনেক কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে অজ্ঞতা, অসচেতনতা, অসতর্কতা এবং সামাজিক কুসংস্কার তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে এইচআইভি/এইডস বিস্তার মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বিশেষভাবে মধ্য আফ্রিকার জায়েরে রুয়ান্ডা, বুরুডি, কেনিয়া, উগান্ডা তানজানিয়া প্রভৃতি দেশে এইডস মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এশিয়াও বর্তমানে মারাতÍক হুমকির মধ্যে রয়েছে এবং দ্রুত গতিতে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এইচআইভি/এইডস বিস্তার লাভ করেছে। একমাত্র ভারতেই বর্তমানে এইচআইভি/এইডস আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ লাখ ১০ হাজার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউএন এইডস ও ভারতীয় কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্স এর মতে ইতিমধ্যে ভারতের জনসংখ্যার এক ভাগের বেশি মানুষ এইডসে আক্রান্ত। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সি আই এ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, ২০১০ সালের মধ্যে ভারতে এইডসে আক্রান্তের সংখ্যা ২ কোটিতে দাঁড়াবে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের ভয়াবহ চিত্র থেকে অনুমান করা যায় এ দেশে এইচআইভি/এইডস কত ঝুঁকিপূর্ণ। যেভাবে এইডস রোগের যোগসূত্র তৈরী করে চলেছে তা অনতিবিলম্বে গোটা সমাজে এইচআইভি/এইডস আক্রান্তের সাথে সাথে এর ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণতা যে খুব সহজেই আমাদের দেশকে গ্রাস করে স্থায়ীত্বশীল উন্নয়নের প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করবে তা সহজেই অনুমেয়। এই অভিষ্ট জনগোষ্ঠীর মাধ্যমে এইডস ছড়ানোর ঝুঁকিপূর্ণতা প্রতিরোধের এখনই উপযুক্ত সময়। জাতিসংঘের এইডস বিষয়ক সংস্থা ও এইডস এপিডেমিক অপডেট ডিসেম্বর ২০০৭  সালের সর্বশেষ রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্বে এইচআইভি/এইডসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ২০(৩৩.২ মিলিয়ন) লাখ। এ সংখ্যার ২ কোটি ২৫ লাখই আফ্রিকার সাবসাহারান দেশগুলোতে। এছাড়া বিশ্বে প্রতিদিন৬৮০০ মানুষ নতুন করে এইচ আইভিতে আক্রান্ত হচ্ছে। ২০০৭ সালে নতুন কওে এইচ আইভি সংক্রমিত লোকের সংখ্যা ২৫ লাখ(২.৫ মিলিয়ন) যার  মধ্যে ১৫ বছরের নীচের শিশুর সংখ্যা ৪ লাখ ২০ হাজার। ২০০৭ সালে বিশ্বে প্রায় ২১ লাখ (২.১ মিলিয়ন) লোক এইডসে মারা গেছে। যার মধ্যে ১৫ বছরের নীচের শিশুর সংখ্যা ৩ লাখ ৩০ হাজার। এদের সাথে প্রতিদিন বিশ্বে  নতুন করে প্রাণ হারাচ্ছে ৫৭০০ এইডস রোগী।   বিশ্ব পরিস্থিতি ও প্রতিবেশী দেশের চিত্র দেখে, এখনই আমাদের কার্যকর প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণমূলক কর্মসূচী গ্রহণ করা প্রয়োজন। তা না হলে আমরাও আফ্রিকার মত স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ব। বিশেষজ্ঞদের মতে এই মরণব্যাধী থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হচ্ছে এর প্রতিরোধ। নিম্নোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এ রোগকে প্রতিহত করা যায়। (১) স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিশ্বস্ততা ও নিরাপদ দৈহিক সম্পর্ক বজায় রাখা, (২) কোন কারণে রক্ত গ্রহণের প্রয়োজন হলে রক্ত দাতার রক্তে এইচআইভি/এইডস ভাইরাস আছে কিনা তা অবশ্যই পরীক্ষা করে নেওয়া, (৩) প্রতিবারই ইনজেকশনের নতুন সুচ ও সিরিঞ্জ এবং অপারেশনের যন্ত্রপাতি ব্যবহারের পূর্বে জীবাণু মুক্ত করে ব্যবহার করা, (৪) এইচআইভি/এইডস সংক্রমিত মায়ের সন্তান গ্রহণের ক্ষেত্রে অথবা সন্তানকে বুকের দুধ প্রদানের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা, (৫) কারো কোন যৌন রোগ থাকলে দেরী না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া, (৬) এইচআইভি/এইডস এর ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করা, (৭) ধর্মীয় ও সামাজিক অনুশাসন মেনে চলা। 
বিদেশে পাচার হওয়া মেয়েরা এইডসে আক্রান্ত হচ্ছেঃ যৌন ব্যবসার ক্ষেত্রে আরেকটি অপ্রীতিকর বিষয় সংযুক্ত হয়েছে। যেসব কম বয়সী মেয়েদের যৌন ব্যবসার জন্য বিদেশে পাচার করা হয় তারা তাদের নিজেদের দেশে ফিরে আসে এইডসের ঝুকি নিয়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, ১৫ বছরের কম বয়সী যেসব মেয়েকে যৌন ব্যবসার জন্য পতিতালয়ে যেতে বাধ্য করা হয়। তারাই বেশি এইডস ভাইরাসে সংক্রমিত হয়। পতিতালয় থেকে ফিরে আসার পর যখন পরিবার ও গ্রামের লোকেরা তাদের কাছ থেকে দূরে সরে যায় তখন তারা বাধ্য হয়ে আবার যৌন ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। আর এভাবেই এইডসের ঝুকি আরো বেড়ে যায়। আমেরিকান মেডিকাল অ্যাসোসিয়েশন জার্নালে সম্প্রতি প্রকাশিত ওই গবেষণা নিবন্ধে নেপালিজ মেয়েদের সম্পর্কে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। তাদের ভারতে এনে পতিতালয়ে যৌন ব্যবসায় জড়াতে বাধ্য করা হয়। অবশ্য এ সমস্যা অন্য দেশেও দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন নিবন্ধটির মূল লেখক জে সিলভারম্যান। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ পাবলিক হেলথের হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট বিষয়ের প্রফেসর তিনি। চীনের ইউনান প্রদেশের মেয়েদের সাধারণত বিক্রি করা হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পতিতালয়ে। ইরাকের রিফিউজি ক্যাম্পগুলো থেকে মেয়েদের এনে বিক্রি করা হয় সিরিয়া ও জর্ডানে। আর আফগান মেয়েদের বিক্রি করা হয় ইরান ও পাকিস্তানে। তারা সবাই একইভাবে এইডসের শিকার হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রফেসর সিলভারম্যান। তার মতে তারা চীনের দক্ষিণ অঞ্চল, আফগানিস্তানসহ আরো অনেক জায়গায় এইচআইভি ভাইরাস ছড়িয়ে দিচ্ছে। সিলভারম্যান বলেছেন, বেশির ভাগ দেশই যৌন ব্যবসা ঠেকানোর চেষ্টা করছে কিন্তু এইচআইভি আক্রান্তদের নিয়ে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে কোনো প্রমাণ সংরক্ষণ করা হচ্ছে না। জাতিসংঘের এইডস সংস্থা ইউএন এইডস-এর নেপাল বিষয়ের সাবেক সমন্বয়কারী অরোরিটা মেনডোজা গবেষণাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, প্রথমবারের মতো আমি জানতে পারলাম যৌন ব্যবসার জন্য বিদেশে পাচারকারী মেয়েরা এইচআইভি সংক্রমণের হুমকিতে আছে। হিমালয় সংলগ্ন গরিব, ধার্মিকভাবে রক্ষণশীল দেশ নেপালে এইডসের ঝুকি ছিল না আগে। কিন্তু ইদানীং সেখানে এইডসের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সরকারি হিসাব মতে দেশটিতে এইডস আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। তবে ইউএন এইডসের কর্মকর্তারা বলছেন, এ সংখ্যা ৭৫ হাজার। অবশ্য এ সংখ্যা অনেক বেশি। আগে বেশ কয়েকটি দেশের এইডস আক্রান্তের সংখ্যা বিষয়ে ভুল তথ্য দিয়েছিল সংস্থাটি। উদাহরণ হিসেবে, একমাস আগে নেপালের পাশের দেশ ভারতে এইডস আক্রান্তের সংখ্যা ৫৬ ভাগ কমিয়েছে তারা। সে হিসেবে তাদের মতে বর্তমানে ভারতে এইডস আক্রান্ত রোগী ২.৫ মিলিয়ন। যা সাউথ আফ্রিকা ও নাইজেরিয়া ছাড়া অন্য সব দেশের চেয়ে বেশি। এ গবেষণাটি পরিচালনার জন্য আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট অফিস থেকে এবং হার্ভার্ড ও বস্টন ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থ সাহায্য দেয়া হয়েছে। এ গবেষণার ক্ষেত্রে কাঠমন্ডুতে মাইতি নেপাল বা নেপালিজ মাদারস হোম নামের একটি চ্যারিটি সংস্থা ২৮৭ জন মেয়েকে পরীক্ষা করেছে। তাদের প্রায় সবাইকে ইনডিয়ার পতিতাবৃত্তি বিরোধী সংস্থাগুলো পুলিশের সহায়তায় নেপালে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে। সিলভারম্যানের টিম যেসব নেপালিজ মেয়েকে পরীÿা করেছে তাদের ৩৮ শতাংশ এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত বলে জানা গেছে। তবে কম বয়সী যে ৩৩ জন মেয়েকে ১৫ বছর বয়সের আগেই পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হয়েছিল।  তাদের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণের হার ছিল ৬১ শতাংশ। সিলভারম্যান জানিয়েছেন, কম বয়সী মেয়েদের জন্য পতিতালয়ের মালিকরা দ্বিগুণ অর্থ দেয় এবং তাদের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের জন্য বেশি অর্থ দাবি করে। অনেক সময় তাদের ভার্জিন (ঠরৎমরহ) বা কুমারী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। কারণ পুরুষরা অনেকে মনে করে কম বয়সী মেয়েদের যৌনরোগ কম থাকে। এছাড়া কয়েকটি দেশে একটি সাধারণ বিশ্বাস চালু আছে যে কুমারী মেয়ের সঙ্গে সহবাস করলে এইডস নিরাময় হয়। সিলভারম্যান বলেছেন, এটা সত্যি হৃদয় বিদারক। সেসব মেয়েদের অনেকে খুবই ছোট, বাস্তবতা বোঝে না। ব্যাপারটি যে কোনো বাবা ও তার মেয়ের জন্য একটি দুঃস্বপ্ন। যেসব মেয়েকে পরীÿা করা হয়েছে, তাদের অর্ধেককেই ভারতে বাড়ির ঝি হিসেবে অথবা রেস্টুরেন্টে চাকরি দেয়ার লোভ দেখানো হয়েছিল। সেই মেয়েদের অনেককে আত্মীয়রা বেড়ানোর কথা বলে ও তীর্থস্থান ঘুরে বেড়াতে আমন্ত্রণ জানিয়ে ভারতে এনে বিক্রি করে দিয়েছিল। অনেককে বিয়ের মিথ্যা আশ্বাসও দেয়া হয়েছিল। সিলভারম্যানের মতে, তাদের অনেককে পাবলিক মার্কেট অথবা ট্রেন স্টেশন থেকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বয়স্ক মহিলারা চা ও সফট ড্রিংকসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাওয়াতো তাদের। এতে তারা অজ্ঞান হয়ে পড়লে নিয়ে যাওয়া হতো তাদের। সাবেক ইউএন এইডস কর্মকর্তা মেনডোজা বলেছেন, সবাইকে এভাবে কিডন্যাপ করা হয়নি। অভাবের কারণে অনেকে নিজ ইচ্ছাতেও পতিতাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়েছে। ভারতের সাবেক ন্যাশনাল আইন কার্যকর কর্মকর্তা রমেশ ভট্টাচার্য বলেছেন, এ নিষ্ঠুর ব্যবসা উপমহাদেশে গত ছয় দশকের বেশি সময় ধরে ছড়িয়ে পড়েছে। নেপালের উত্তরের অনেক এলাকায় যে কেউ বলতে পারে কোন বাড়ির মেয়ে ভারতের পতিতালয়ে কাজ করছে। যদি বাড়ির ছাদ টিনের হয় তবে সেটি পতিতালয়ের অর্থে তৈরি বলে মনে করা হয়। মেনডোজা জানিয়েছেন, ওইসব মেয়েদের তাদের পরিবার ও গ্রামের লোকেরা অনেক সময় এলাকায় ফিরে আসতে নিষেধ করে। কারণ তারা ভয় পায় যে ওই মেয়েরা অন্য মেয়েদের বিপথগামী করে ফেলতে পারে। এছাড়া গ্রামের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে পারে। যার ফলে এ গ্রামের কম বয়সী মেয়েদের কেউ বিয়ে করতে চাইবে না আর। আর এ কারণে কিডন্যাপ হওয়া ও ধর্ষিতা ওইসব মেয়েরা বাধ্য হয়েই দেহ ব্যবসা চালিয়ে যায়। সিলভারম্যান বলেছেন, কাঠমন্ডুর পতিতাদের ওপর জরিপ চালিয়ে জানা গেছে, তাদের অর্ধেক সংখ্যক ভারতে কাজ করেছে। ওইসব পতিতাদের অনেকেই গর্ভবতী হয়ে পড়ে এবং তাদের সন্তানরা চিকিৎসার অভাবে রোগে আক্রান্ত হয়। গবেষণাটিতে জানা গেছে, বিশ্বের অন্যতম বড় শহর মুম্বাইয়ের পতিতালয় এইডসের জন্য খুব ঝুকিপূর্ণ। কম বয়সী ওইসব মেয়েদের বিভিন্ন পতিতালয়ে পালাক্রমে রাখা হয়, যার ফলে এইডসের ঝুকি আরো বেড়ে যায়। ভারতে যৌন কর্মীদের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। ট্রাক ড্রাইভাররা সাধারণত যৌন কর্মীদের বড় খদ্দের। যৌন কর্মী, পুরুষে পুরুষে সমকামী সম্পর্ক, ড্রাগ গ্রহণ, এসব দেশটির শিল্প উন্নত দক্ষিণ অঞ্চলে এবং পাকিস্তান-মিয়ানমারের হেরোইন স্মাগলিং সীমান্ত এলাকায় বেশি দেখা যায়। তবে নেপালের সীমান্তে ওইসব সমস্যা নেই। আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্টের সূত্র মতে বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় পাচ লাখ কম বয়সী মেয়েকে দেহ ব্যবসার জন্য এক দেশ থেকে অন্য দেশে পাচার করা হয়। সবচেয়ে বেশি ১ লাখ ৫০ হাজার নারী পাচার হয় দক্ষিণ এশিয়ায় এবং তাদের বেশির ভাগ ইনডিয়ার বিভিন্ন শহরে পতিতা হিসেবে কাজ করে। দ্বিতীয় তথ্যটি জানিয়েছে আমেরিকার কংগ্রেশনাল রিসার্চ সার্ভিস। 
অভিমতঃ এই দিবসটিকে সামনে রেখে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. মো. শাহজাহান বিশ্বাস এক স্বাক্ষাৎকারে বলেন, এইডস মোকাবিলায় সমন্বিতভাবে কাজ করার বিকল্প নেই। দুজনেই মনে করেন, ব্যাপক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এ দেশের মানুষ। বাংলাদেশে এইচআইভি আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা কম হলেও ক্রমেই তা বাড়ছে। তারা মনে করেন এইচআইভি/ এইডস মোকাবিলা করতে হলে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, এনজিও, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থাকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। এ ছাড়াও এইচআইভি রোধ করতে হলে কনডমের ব্যবহার বাড়াতে হবে। কারণ কনডম একাধারে এইডসের ঝুঁকি কমায় এবং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এইডস মোকাবিলা করতে হলে কনডমের ব্যবহার বাড়ানো ও সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।  এক স্বাক্ষাৎকারে সুলতানা কামাল বলেন, এইডস শুধু চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট বিষয় নয়, এটা সামাজিক বিষয়ও বটে। এইডস প্রতিরোধের জন্য খাদ্য, পুষ্টি ও শিক্ষার নিশ্চয়তার পাশাপাশি সচেতনতা বাড়ানো দরকার। সুলতানা কামাল বলেন, ইউএনএফপি-এর হিসাবে ১৯৮৯ সালে প্রথম এইডস রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত দেশে এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা ৮৭৪ জন বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে ২৪০ জন এইডস রোগী, এই রোগে এ পর্যন্ত মারা গেছে ১০৯ জন। যারা সিরিঞ্জের মাধ্যমে সিরায় মাদক নেই, সেই জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি এইচআইভি ঝুঁকির মধ্যে। এসব মাদকাসক্তের মধ্যে সংক্রমণের হার ৭ শতাংশ। এই হার অত্যন্ত বিপজ্জনক। মাদকাসক্তদের কাছ থেকে তাদের স্ত্রী বা স্বামী, রিকশাওয়ালা, নারী ও পুরুষ, যৌনকর্মী, হিজড়া এসব গোষ্ঠীর মধ্যে সংক্রমণ ঘটার আশঙ্কা প্রবল। অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. মো. শাহজাহান বিশ্বাস বলেন,  দেশে এইচআইভি সংক্রমণের হার কম হওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার। প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমারে সংক্রমণের হার খুব বেশি, সেটা এ দেশের জন্য ঝুঁকি। কনডম এইচআইভি সংক্রমণ প্রতিরোধে বড় ভ‚মিকা রাখলেও এইডস বিষয়ক জাতীয় কর্মসূচিতে কনডমের প্রচার-প্রসার বা ব্যবহার বৃদ্ধিতে কোনো বরাদ্দ নেই। তিনি কনডমের বিষয়টি জাতীয় কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার আশ্বাস দেন। ডা. শাহজাহান বিশ্বাস বলেন, এইডস বিষয়টি যুব বা তরুণ সমাজের কাছে যেভাবে উপস্থাপন করা উচিত ছিল সেভাবে করা হয়নি। এ দেশে যৌন শিক্ষার প্রসার হওয়া দরকার বলে তিনি জানান। সংক্রমণের হার ১ শতাংশের নিচে আছে বলে দেশের মানুষ নিরাপদ আছে বা কম ঝুঁকিতে আছেÑ এ কথা মানতে নারাজ সুলতানা কামাল। তিনি বলেন, ‘বিপদে না পড়লে আমরা কোনো কিছু নজরে নিতে চাই না। দ্রুতগতিতে ব্যক্তিগত সম্পর্কের মাধ্যমে এই রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে।’ এ ব্যাপারে তিনি আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের করুণ ইতিহাসের কথা বলেন। তিনি বলেন, রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজন জনসচেতনতা বৃদ্ধি। এই রোগের এখনো কোনো প্রতিষেধক তৈরি হয়নি। সংক্রমণ এড়ানোই রোগ মোকাবিলার সবচেয়ে ভালো পন্থা। ব্যক্তির আচরণ পরিবর্তন এ ক্ষেত্রে বেশি প্রয়োজন। তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক উভয়েই বলেন, সমাজের আড়ালে থেকে কত মানুষ এই রোগ ছড়াচ্ছে তা কেউ জানে না। তাই এ ÿেত্রে সঠিক তথ্য থাকাটা জরুরি। তারা প্রচার বাড়ানোর ÿেত্রে ধর্ম কোনো বাধা নয় বলে মত প্রকাশ করেন। মুসলিম দেশ হয়েও ইন্দোনেশিয়ায় কনডম ব্যবহারের হার শতকরা ১০০ ভাগ। বাংলাদেশে কর্মপদ্ধতি ও কৌশলেরও পুনর্মূলায়ন হওয়া দরকার বলে তারা জানান। 
অসহায় পৃথিবীর মানুষঃ এককালে বলা হতো, যার হয় য²া তার নাই রক্ষা। আজ কথাটা উল্টে গেছে। এখন বলা হয়, য²া হলে রক্ষা নাই, এ কথার ভিত্তি নাই। বিজ্ঞান আজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। দুরারোগ্য বহু ব্যাধির প্রতিষেধক আবিষ্কার করেছে, চিকিৎসায় বহু কঠিন রোগ ভালো হয়। কিন্তু মানুষ আজো একটি ক্ষেত্রে বড় অসহায়। তা হচ্ছে এইডস। 
১৯৮১ সালে হলিউড তারকা রক হাডসনের এ রোগ ধরা পড়ার পর উন্নত বিশ্বের টনক নড়ে। চলতে থাকে গবেষণা। খরচ হচ্ছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার। সেরা গবেষকরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে আজ পর্যন্ত যতোটুকু অগ্রসর হয়েছেন তা খুবই সামান্য। গোটা মানব জাতির সামগ্রিক পরিত্রাণের ÿেত্রে সে আবিষ্কার কোনো ভ‚মিকাই রাখতে পারছে না। অথচ বিশ্বে এইডস পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর, বিশেষ করে আফৃকা এবং এশিয়ায়। আফৃকার সাব-সাহারান দেশগুলোতে অবস্থা খুবই খারাপ। এশিয়ার অবস্থাও খারাপের দিকে ক্রমান্বয়ে। বিশেষ করে প্রতিবেশি দেশ ইনডিয়ার অবস্থা ভয়ঙ্কর রূপ নিতে শুরু করেছে। টঘঅওউঝ/ডঐঙ, ২০০৭-এর তথ্য মতে, ইনডিয়ার এইচআইভি সংক্রমিত জনসংখ্যা ৫৭ লাখ এবং মিয়ানমারে তিন লাখ ৬০ হাজার। সে পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের ১১ হাজার এবং সেটা ততো ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেনি বলে আপাতত মনে হলেও এ রোগের বিস্তারে প্রতিবেশি দুই দেশের প্রভাব দ্রুত পড়তে পারে। তাছাড়া এ রোগের বিস্তারের অনুক‚ল পরিবেশ বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও বিরাজমান। 
সে ব্যাপারে পরে আসছি। আপাতত প্রতিবেশি দুই দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের নিম্নবিত্ত ও উচ্চবিত্ত লোকের ব্যাপক যাতায়াত রয়েছে। বিস্তারিত বিবরণে না গিয়েও এটুকু বলা যায়, জীবিকা চিকিৎসা ভ্রমণ বা ধর্মীয় কারণেও বহু লোক প্রতিদিন ভারতে যাতায়াত করে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণায় দেখা যায়, ভ্রমণকালে অনেকেরই অনিরাপদ যৌনকর্মে লিপ্ত হওয়ার প্রবণতা রয়েছে। ফলে ইমিগ্রান্ট জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণের আশংকা বেশি থাকে। দেশের অভ্যন্তরে এখন মাদকাসক্ত লোকের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। অবশ্য বেকারত্ব, হতাশা, দারিদ্র্য বাড়লে মাদকের বিস্তার প্রায়ই ঘটে থাকে। বাংলাদেশে এর ব্যাপক বিস্তার সম্পর্কে কোনো তথ্য দেয়ার প্রয়োজন নেই। কেননা পত্রিকার পাতা জুড়ে থাকে ফেনসিডিল, হেরোইনের খবর। তা যাই হোক না কেন, এইডস বিস্তারে সিরিঞ্জের মাধ্যমে শিরায় নেশা গ্রহণ খুবই ভয়াবহ প্রভাব রাখছে। 
দেখা গেছে, বাংলাদেশের কোনো কোনো অঞ্চলে ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদকদ্রব্য গ্রহণকারীদের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণের হার ১০.৫%। কোনো উচ্চ ঝুকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণের হার পাচ শতাংশ হলেই তা মহামারি বলে গণ্য হয়। বিশেষত অনিরাপদ যৌনকর্ম অপেক্ষা ও ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদকদ্রব্য গ্রহণকারীদের মধ্যে এ রোগের বিস্তার দ্রুত ঘটে। একই স্থানে বসে ১০/২০ জন একই সিরিঞ্জ দিয়ে মাদক গ্রহণ করে। তাদের কারো রক্তে এইচআইভি পজিটিভ থাকলে সে তার বিস্তার ঘটাতে পারে সহজেই। তাছাড়া নেশা গ্রহণকারীদের অনেকে পেশাদার রক্ত বিক্রেতা হয়ে থাকে। ফলে তারা অনেককে সংক্রমিত করতে পারে। দেখা যায়, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা বা অন্যান্য কারণে হঠাৎ করে রক্তের প্রয়োজন হতে পারে। নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্রের সংখ্যা খুবই কম। সে কারণে জীবন বাচানোর তাগিদে দ্রুত যে রক্ত দেয়া হলো তার মধ্যেই থাকতে পারে ভয়ঙ্কর জীবনঘাতী ভাইরাস। এছাড়া অন্য যেসব কারণে এইচআইভির সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ঘটতে পারে তার মধ্যে বহু কারণই এ দেশে বিদ্যমান রয়েছে। পতিতালয় উচ্ছেদ করে গোটা দেশকেই তাদের বিচরণ ক্ষেত্রে পরিণত করা হয়েছে। যৌনকর্মীরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে সর্বত্র। রঙ্গালয়, বিধানালয়, দেবালয় প্রাঙ্গণ Ñ কোথায় নেই তারা?  সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী জনসংখ্যা এ দেশে ৩৩ মিলিয়ন। যাদের নতুন কিছু জানার ও পরখ করার কৌত‚হল থাকে। শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের কারণে তারা অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করে। তারা এইচআইভি সংক্রমণ সম্পর্কে অজ্ঞ। এদের অনেকেই প্রাথমিক চিকিৎসার সাহায্য থেকে বঞ্চিত। ঝুকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে দুই লাখ ৫০ হাজারের বাস, ট্রাক, লঞ্চ চালক ও তাদের সহকারী এবং ১৫ লাখ রিকশাচালক। বিষয়টি বাংলাদেশ সরকার গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে এবং দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এ ব্যাপারে পায়াকট, বাংলাদেশ (চওঅঈঞ, ইধহমষধফবংয) খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে চলেছে। যার অর্থায়ন করেছে এষড়নধষ ঋঁহফ এবং তত্ত¡াবধান করছে ঝধাব ঃযব ঈযরষফৎবহ টঝঅ. দেখা দরকার এমন কোনো প্রজেক্ট গ্রহণ করা যায় কি না যাতে দেশের অশিক্ষিত, সুবিধাবঞ্চিত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে তথ্য পৌছে দেয়া এবং সচেতন করা সম্ভব।  
বছরে দুবার এইচ আইভি পরীক্ষা করানো ভালঃ  হলিউডের অভিনেত্রী জোহানসন বছরে দু’বার এইচআইভি পরীক্ষা করান। আমেরিকান এই অভিনেত্রী বলেছেন, ‘বছরে আমি দু’বার এইচআইভি পরীক্ষা করাই। এর মধ্যে একবার করাই সামাজিক সচেতনতা হিসেবে। এইচআইভি পরীক্ষা করা একজন সচেতন মানুষের সামাজিক দায়িত্ব বলে মনে করি আমি। সবারই বছরে দু’বার এইচআইভি পরীক্ষা করানো উচিত। এইচআইভি পরীক্ষা না করানোটা দায়িত্বহীনতার পরিচয়।স¤প্রতি জোহানসেন ব্রিটেনে যৌন স্বাস্থ্য প্রচারণার কাজ শুরু করেন। ২১ বছর বয়সী জোহানসেন যুক্তরাজ্যের অ্যালিউর ম্যাগাজিনকে বলেছেন, ‘মানুষের ধারণার বিপরীতে বলতে চাই, আমি এলোমেলো মেয়ে নই। যদিও পর্দায় চরিত্রের প্রয়োজনে আমাকে খোলামেলা হতে হয়, কিন্তু যৌনতা স¤ক্সর্কে আমি মুক্তমনা নই। আমি সব সময়ই সচেতন থাকি।’ ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতার জোহানসেন চলতি মাসের শুরুতে স্টার ম্যাগাজিনের দৃষ্টিতে বিশে^র সেরা আবেদনময়ী নারী নির্বাচিত হন।  
জনসচেতনতা জোরদার করুনঃ এইচআইভি/এইডসের ভয়াবহতা দিন দিন বেড়েই চলছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে আক্রান্তের হার দিন দিন বেড়েই চলছে। পার্শ্ববর্তী দেশ হিসেবে আমরাও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে অন্যতম। আমাদের দেশে এইচআইভি/এইডস-এ আক্রান্ত হওয়ার সবগুলো উপাদানই রয়েছে। যেমন ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক গ্রহণকারী বহুগামীতার মাধ্যমে রিকশাচালক, ট্রাকড্রাইভার, গাড়িচালক। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশে এইচআইভি সংক্রমণ ১% এর নিচে। তাই বলে আমাদের আশ্বস্ত হওয়ার কিছু নেই। জরিপে আরো দেখা গেছে, মাত্র ৬৫% যুবক, প্রায় ২০% বিবাহিত নারী এবং ৩৩% বিবাহিত পুর"ষের মাঝে এইডস বিষয়ে ধারণা রয়েছে। আর আমাদের দেশ তথা পুরো বিশ্বে যুবক স¤প্রদায়ই এইডস আক্রান্ত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশের জরিপে দেখা গেছে, নেশা গ্রহণকারীদের মধ্যে শতকরা ৪ জন এইচআইভি আক্রান্ত। এদের মধ্যে একই সিরিঞ্জের মাধ্যমে ইঞ্জেকশন বহুজন ব্যবহার করার প্রবণতা রয়েছে। তাছাড়াও এসব আক্রান্ত নেশাগ্রহণকারীরা তাদের স্ত্রীর সঙ্গে ও যৌনকর্মীদের সঙ্গে যৌনকর্ম করে থাকে। ঝুঁকিপূর্ণ আচরণকারীদের মধ্যে যৌনকর্মীদের সঙ্গে যৌনকর্ম করার প্রবণতা ৭০ শতাংশের মধ্যে এইডস পাওয়া গেছে। এসব ক্ষেত্রে কনডমের ব্যবহারের প্রচলন খুবই কম। ফলে এইচআইভি/ এইডস ঝুঁকিতে এরাও রয়েছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোও আমাদের ঝুঁকির পরিমাণ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
বাঁচতে হলে জানতে হবেঃ বাংলাদেশে এইচআইভি/এইডসের ঝুঁকি বাড়ছে। ‘৮৯ সাল থেকে ৮৭৪ জন এইচআইভি পজিটিভ কেস পাওয়া গেছে। এইচআইভি সংক্রমিত হওয়ার একটি প্রধান মাধ্যম নারী-পুরুষের অনিরাপদ দৈহিক সম্পর্ক এবং এর মাধ্যমেই এইচআইভি সবচেয়ে বেশি ছড়ায়। এতে পুরুষের সঙ্গে সঙ্গে নারীরও সমান অংশিদারিত্ব রয়েছে। তাই এইডস বিষয়ে নারীকে সচেতন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে নারীকে বুঝতে হবে একমাত্র কনডমই নারী ও পুরুষের দৈহিক সম্পর্ক নিরাপদ করতে পারে। নারীকে বোঝাতে হবে অনিরাপদ যৌন মিলন শুধু এইচআইভি নয়, অন্যান্য যৌনবাহিত রোগও দ্রুত সংক্রমিত হয়। তবে অন্যান্য রোগের চেয়ে এইচআইভি ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি দুই থেকে নয় গুণ বেশি। যদি কনডম ব্যবহার করা যায় তাহলে এটি ৬০ থেকে ৯৬ ভাগ প্রতিরোধ হয়। ইউএনএফপিএ সূত্রে জানা যায়, ৯৮ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বাংলাদেশের যৌনপল্লীতে কনডমের ব্যবহারের ফলে সিফিলিসের হার কমে গিয়েছিল। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ক্ষেত্রে কনডম কেন জরুরি হবে, এমন প্রশ্নও তোলা হয়। কিন্তু যদি স্বামী কখনো এইচআইভি আক্রান্ত হন তখন? যেমন কোনো শ্রমিক বিদেশে কাজ করতে যাচ্ছেন, তিনি যদি এইচআইভি পজিটিভ হয়ে দেশে ফেরেন তখন তো স্ত্রীও ঝুঁকিতে থাকেন। পরবর্তী সময় একটি পরিবার সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। তাই সংশিøষ্টদের মতে, পরিবার-পরিকল্পনা কর্মসূচির মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীকে সর্তক করা প্রয়োজন। এ ÿেত্রে কনডম ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরতে হবে। মেল কনডম ও ফিমেল কনডম ব্যবহারের গুরুত্ব বোঝাতে হবে। এ সম্পর্কে ইউএনএফপিএ-র অপারেশন ম্যানেজার আফসানা তাহের বলেন, ফিমেল কনডম মেয়েদের ক্ষমতায়নও করে। ছেলেরা যখন কনডম ব্যবহারে আগ্রহী হয় না তখন ফিমেল কনডম মেয়েদের নিজেদের রক্ষা করার কিছুটা ক্ষমতায়ন দেয়। নারীর এইচআইভি সম্পর্কে বাংলাদেশ উইমেন হেলথ কোয়ালিশনের উপ-নির্বাহী পরিচালক ড. জুলিয়া আহমেদ বলেন, এইচআইভি ঝুঁকির মধ্যে অনেকেই চলে আসছে। এই ভাইরাস দেহে প্রবেশের জন্য একজন যৌনকর্মী হওয়ার দরকার নেই। একজন বিবাহিত নারী বিভিন্নভাবে এই ঝুঁকির আওতায় চলে আসতে পারে। এ ছাড়া কনডমের ক্ষেত্রে রয়েছে জেন্ডার বৈষম্য। একটি ছেলে যদি না চায় একটি মেয়ের পক্ষে কখনোই সম্ভব না কনডম ব্যবহার। এখানে পুরুষের কতৃত্বের একটি বিষয় রয়েছে। এদিকে এইচআইভি/এইডস আক্রান্তদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী সংস্থ্যা আশার আলো সোসাইটি সূত্রে জানা যায়, তাদের ৪৫১ জন সদস্য, তার মধ্যে ২০০১-এর ওপরে রয়েছে নারী। তাদের বেশিরভাগই স্বামীর কাছ থেকে আক্রান্ত হয়েছে। তারা সবাই গৃহবধূ। ২৩ জন শিশু মায়ের কাছে থেকে আক্রান্ত হয়েছে। নারীর সমস্যা সম্পর্কে আশার আলো সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক হাবীবা আক্তার বলেন, নারী যেমন আগে প্রতিরোধক হিসেবে কিছু গ্রহণ করতে পারে না, তেমনি স্বামীর মাধ্যমে এইচআইভি আক্রান্ত হলে চিকিৎসাও পায় না। দেখা গেছে, স্বামী এইচআইভি পজিটিভ হয়ে মারা যাচ্ছেন। তুব আক্রান্ত স্ত্রীকে বাইরে চিকিৎসা নিতে মানা করা হয়। সংিিশ্লষ্টদের মতে, ১৫ কোটি মানুষের দেশে যে এক-শতাংশ এ রোগে ভুগছে, তা বিরাট একটি সংখ্যা। তাছাড়া এটা এমন একটি রোগ যা ব্যক্তিগত সম্পর্কের মাধ্যমে ছড়িয়ে যেতে পারে। স্বামী-স্ত্রীর মাধ্যমে হতে পারে, যৌনকর্মীদের মাধ্যমে হতে পারে। মায়ের মাধ্যমে আক্রান্ত হতে পারে শিশুরা। শিশুদের কথা চিন্তা করেই শিশুদের জন্য আইন ও সালিশ কেন্দ্র কর্মসূচি শুরু করেছে। কর্মসূচিটি হলোÑ ‘প্রোটেকশন ফর ওয়ার্কিং চিলড্রেন’ এটি স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান। এখানে শিশুদের একেবারে সরাসরি দৈহিক সম্পর্কের কথা না বললেও বিভিন্নভাবে তাকে সে সম্পর্কে শিক্ষা দিতে বা সচেতন করতে চেষ্টা করা হয়। 
এইডস কেবলই নৈতিক শক্তি দিয়ে মোকাবেলাঃ আমাদের ভাবনা অনেকটা রুটিনঘেরা হয়ে গেছে। কিন্তু এইডসের সংত্রক্রমণ নিয়ে ভাবনাটি কি বার্ষিক রুটিন অনুযায়ী বিশেষ দিনের জন্য রেখে দিলে নিস্কৃতি পাওয়া যাবে? ভয়াল ঘাতক এইচআইভি ভাইরাস প্রতি ৬০ সেকেন্ডে ১০ জনকে মৃত্যুপীড়ায় আক্রান্ত করছে। বর্তমানে এইডস নামক পীড়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছে যে ৪ কোটি মানুষ সে হতভাগ্য মানুষের সংখ্যাটা বাড়ছে এমনিভাবেই। মিনিটে ১০ জন। দুই দশক আগে যখন এ ভাইরাস আÍপ্রকাশ করে তখন ভাবা যায়নি এতটাই বেপরোয়া জীবনঘাতী হবে সে। ৩৬৫ দিনের বছরে গড়ে সে কি-না কেড়ে নিচ্ছে ৩০ লাখ মানুষের প্রাণ। এশিয়ার দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চল অনেকটা স্বস্তিতেই ছিল; কিন্তু ¹েèাবালাইজেশনের সুবাদে সে স্বপ্ন খুব দ্র“তই ভেঙ্গে যাচ্ছে। এ ভয়াল ঘাতককে রুখতে বাংলাদেশ কতটা প্রস্তুত সেটি পরিমাপ করা সহজ হবে এইচআইভি বিষয়ে বাংলাদেশের সমাজশক্তির সচেতনতার মাত্রাটি প্রত্যক্ষ করা গেলে। কিছুদিন আগে বিশ^ এইডস দিবসে ময়মনসিংহে ‘সুরক্ষা সুধী সমাবেশ’ হলো জেলা প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে। নানা স্তরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত হয়েছিলেন তাদের ঘাতক এইচআইভি ভাবনা নিয়ে কথা বলতে, শুনতে ও ভাবনার শেয়ার করতে। আমলা-ডাক্তার-শিক্ষক-বুদ্ধিজীবী-আইনজীবী-উন্নয়নকর্মী-মানবাধিকার কর্মী-সাংবাদিক-ইমাম-ব্যবসায়ী-রাজনৈতিক নেতা-ঠিকাদার-নারীবাদ  সমাজকর্মী-কবি-স্বাস্থ্য কর্মী-ছাত্র-সাংস্কৃতিক কর্মী সবাই ছিলেন সেখানে। কেবল সমাবেশে ছিলেন না এইডস ভাবনায় যার গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি সে যৌনকর্মী। এইডসের আলোচনায় তাদের একজন প্রতিনিধি াকলে ভালো হতো এমন ভেবেই আয়োজকদের একজনকে কাছে ডেকে যখন জানতে চাইলামÑ আমাকে সে এই বলে যে, ‘সুধী সমাবেশে তো যৌনকর্মী আনা যায় না। বলেনি যে, আনলে তুলকালাম বেধে যেতে পারে।’ সাবধানী আয়োজকদের আর আমি ঘাঁটাতে চাইনি। কিন্তু ভেবে কিনারা করতে চাই যে, আজ এ সুধী সমাবেশে যৌনকর্মী নিষিদ্ধ গণ্য হচ্ছে তো কোন অনিবার্য বাস্তবতায় এ শহরের হƒৎপিন্ডে অনেক বছর আগে গড়ে উঠেছিল এ যৌনপল্লী। আমরা আশাকরি দেশের ও বিশ্বের মানুষকে এইডস থেকে রক্ষা করতে  সরকার বাস্তবতা নিরিখে ভূমিকা পালন করবে। তাহলেই কেবল আমরা এইচআইভি/এইডস-এর বিরুদ্ধে এ যুদ্ধে জয়ী হতে পারবো। খুলনা ২৯ নভেম্বর-০৭                                               

0 comments:

Post a Comment