Monday, March 12, 2018

স্যার রবীন্দ্রনাথ ও স্যার যদুনাথ

স্যার রবীন্দ্রনাথ ও স্যার যদুনাথ
আলী ফোরকান
স্যার যদুনাথ সরকার (১৮৭০-১৯৫৮)-এর পিতা রাজকুমার সরকারের সঙ্গে স্যার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১)-এর পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিচয় ছিল। রাজকুমারের বাসস্থান বর্তমান নাটোর জেলার করচমারিয়া গ্রাম দেবেন্দ্রনাথের জমিদারি পতিসরের পাশের এলাকা।
ব্রিটিশ সরকার স্যার রবীন্দ্রনাথকে ১৯১৫ সালে এবং স্যার যদুনাথকে ১৯২৯ সালে নাইট (স্যার) উপাধি দ্বারা ভ‚ষিত করে। ১৩ এপ্রিল ১৯১৯ অমৃতসরের জালিওয়ালাবাগে ব্রিটিশ সৈন্যদের গুলিতে ৩৭৯ জন লোক নিহত ও বহু আহত হয়। এর প্রতিবাদে স্যার রবীন্দ্রনাথ তাঁর নাইট উপাধি পরিত্যাগ করেন। সমসাময়িক ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য টাইমস মন্তব্য করে যে, এই উপাধি পরিত্যাগ করার কোনো বিধান ছিল না। তাঁর মৃত্যুর পর রবীন্দ্রনাথকে স্যার রবীন্দ্রনাথ বলেই বিদেশে উলেøখ করা হয়। ব্রিটিশ শাসনের অনুরাগী সমর্থক স্যার যদুনাথের উপাধি পরিত্যাগ করার কোনো প্রশ্নই ওঠেনি। ১৮৯৪ সালে ‘সাধনা’য় যখন রবীন্দ্রনাথ ছোটগল্প লিখছেন তখন রিপন কলেজের অধ্যাপক যদুনাথ ইডেনের হোস্টেলের সুহৃদ সমিতির পত্রিকা ‘সুহৃদ’-এ রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প সম্বন্ধে ইংরেজিতে একটি প্রবন্ধ ঞযব ঘবি খবধাবহ রহ ইবহমধষ লেখেন। ১৯১০ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯১৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত মডার্ন বিডিউ-এ রবীন্দ্রনাথের ১৭টি প্রবন্ধ ও একাধিক কবিতার ইংরেজি অনুবাদ করেন যদুনাথ। ১৩১৮/১৯১১ সালে প্রবাসীর আষাঢ় সংখ্যা প্রকাশিত রবীন্দ্রনাথের অচলায়তন নাটকটির প্রথম পাতার পাদটীকায় নাটকটি ‘আন্তরিক শ্রদ্ধার নিদর্শন স্বরূপ’ যদুনাথকে উৎসর্গ করা হলে পরের বছর গ্রন্থাকারে প্রকাশের সময় ওই উৎসর্গটি ছিল না। ১৯২২ সালে রবীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতীয় কর্ম সমিতির সদস্যপদ গ্রহণ করতে আমন্ত্রণ জানালে যদুনাথ বিশ্বভারতীয় আদর্শ সম্বন্ধে তাঁর মনোভাব প্রকাশ করে ৩১ মে, ১৯২২ এক দীর্ঘ পত্র লেখেন:
শ্রদ্ধাস্পদেষু,
আমি মে ও জুন মাসের জন্য এখানে আসিয়াছি সুতরাং আপনার ৭ জ্যৈষ্ঠের রেজিস্টারি পত্র কটক ঘুরিয়া এখানে পৌঁছিতে দেরি হইল। বিশ্বভারতীয় গভর্নিং বডির সদস্য হইতে আহŸান করিয়াছেন, তাহা আমার পÿে গৌরবের বিষয় হইলেও দুইটি গুরুতর কারণে ঐ পদ অস্বীকার করিতে বাধ্য হইলাম, তজ্জন্য মার্জনা করিবেন। প্রথমতঃ আমি এখন দূরে থাকি, এবং আর কয়েক বৎসর পরে পেনশন লইয়া নিম্নবঙ্গে বাস না করিবার ইচ্ছা। সুতরাং শান্তিনিকেতনের কার্যের তত্ত¡াবধান করা, নূতন সমস্যা উঠিলে তাহার সম্বন্ধে পরামর্শ দেওয়া আমার পÿে অসম্ভব। বৎসরে একবার মাত্র বার্ষিক অধিবেশনে দেখা দিলে কর্তব্য পালন হইবে না। যেখানে কাজ করিতে পারিব না, সেখানে নামে সদস্য হইয়া থাকাটা আমি নিজের পÿে লজ্জাকর ব্যবহার এবং ঐ সংস্থানের প্রতি অবিচার বলিয়া মনে করি। এই যেমন, হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের বাহিরের ও দূরের সদস্য এত অধিক যে ৩০ জন সদস্যের মধ্যে অনেক অধিবেশনে ৭ জনও জোটে না, অধিবেশন পণ্ড হয়। যদি ইচ্ছা করেন এবং অন্য বন্দোব¯েÍর মধ্যে এরূপ দ্রব্যের জায়গা হইতে পারে তবে বড়দিনের সময় ৩/৪টা বক্তৃতা বা ইতিহাসের রিসার্চ স্টুডেন্টদিগকে উপদেশ দিবার জন্য বোলপুরে যাইতে পারি। গ্রীষ্মে ও পূজায় আপনাদের ও আমাদের এক সময়েই ছুটি থাকে। এবার কি এ অঞ্চলে আসিবেন না?  বিনীত শ্রীযদুনাথ সরকার ২ জুন ১৯২২  রবীন্দ্রনাথ ওই পত্রের উত্তরে যদুনাথকে লেখেন,
শ্রদ্ধাস্পদেষু,

আমি কিছুদিন হইতে অনুমান করিতেছিলাম যে আপনার মনে হয়তো আমার সম্বন্ধে কোন কারণে বিরক্তির সঞ্চার হইয়াছে। সেইজন্য মনের মধ্যে বেদনা অনুভব করিয়াছি এবং সেইজন্যই আপনাকে বিশ্বভারতীয় সদস্যপদ গ্রহণ করিবার জন্য অনুরোধ করিতে সঙ্কোচ বোধ করিয়াছিলাম। আমার কাজের বিরুদ্ধে আমার দেশের লোকের একটা প্রতিক‚ল ধারণা আছে, ইহা আমার পÿে বিষম বাধা। কিন্তু আপনার মধ্যে সেই বিরুদ্ধ মনোভাব আমার কাছে এতই অপ্রত্যাশিত যে, আপনার চিঠির মর্ম এখনো স্পষ্ট করিয়া বুঝিতেই পারিতেছি না। বিশেষত: আপনি অনেকবার এখানে আসিয়াছেন, সকল প্রকার অভাব অসম্পূর্ণতা সত্তে¡ও এখানকার প্রতি স্নিগ্ধভাব রÿা করিয়াছেন। আপনি যে এখানকার আবহাওয়া বা কার্যপ্রণালিকে নিন্দনীয় বলিয়া মনে করেন এমন আভাস তখন আপনার নিকট হইতে একবারও পাই নাই। আপনি বলিয়াছেন, বোলপুরের ছাত্রগণ বীধপঃশহড়ষিবফমব ঘৃণা করিতে শেখে এবং এইরূপ জ্ঞানের শিÿক ও সাধকগণকে ‘হৃদয়হীন, শুস্কম¯িÍষ্ক’, ‘বিশ্বমানের শত্রæ’ বলিয়া উপহাস করিতে অভ্য¯Í হয়। একথা যদি সত্য হয় তবে আমার এই বিদ্যালয় কেবল যে নিষ্ফল তাহা নহে, ইহার ফল বিষময়। কিন্তু একথার আপনি কোন প্রমাণ পাইয়াছেন?
এতকাল পর্যন্ত এখানে ছাত্রেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীÿার জন্য প্রস্তুত হইত। এখানে বেশিরভাগ কেবল ছিল সঙ্গীত, চিত্রকলা, বাংলা সাহিত্য এবং অল্প কিছু বিজ্ঞান। যে কারণেই হউক দেখা গিয়াছে এখানকার অধিকাংশ ছাত্রই কলিকাতার কলেজে গিয়া বিজ্ঞান বিভাগেই ভর্তি হইয়াছে। অবশ্য জিজ্ঞাসা করিতে পারেন, দেশে তো হাইস্কুল যথেষ্ট আছে, তাহার উপর আর একটা বোঝা বাড়াইবার প্রয়োজন কী ছিল। তাহার উত্তর দিতে ইচ্ছা করি না। আমার বক্তব্য এই যে এদেশে হাইস্কুলে ছাত্রেরা যেটুকু শেখে এখানকার ছাত্রেরা অন্তত সেইটুকুই শিখিত। আপনি কি কোন প্রমাণের দ্বারা ইহা জানিতে পারিয়াছেন যে, ইহারা সেই স্বল্পপরিমাণ শিÿার মধ্যেই ধপপঁৎধঃব শহড়ষিবফমব -কে উপহাস করিতে দীÿিত হইয়াছে এবং তাহাদের মনের মধ্যে এই একটি মত দাঁড়াইয়া গেছে যে, প্রমাণসঙ্গত প্রণালিতে যে মনস্বীরা জ্ঞানের ভিত্তিপত্তন করিয়া থাকেন তাহারা ‘বিশ্বমানবের শত্রæ’?  একথা আপনার জানা আছে যে, যথোচিত পদ্ধতিতে আমি নিজে শিÿা লাভ করি নাই। মনে করিতে পারেন সেই অশিÿাবশতই জ্ঞানান্বেষণের বিহিত প্রণালিকে আমি অশ্রদ্ধা করি এবং সেই অশ্রদ্ধা আমার জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে এখানকার অপরিণতবুদ্ধি বালকদের মনে সঞ্চারিত হইয়া থাকে। এমন কথা যদি স্থির করিয়া থাকেন তবে আমাকে আপনি জানেন না ইহার বেশি আর কিছু বলিতে পারি না। নিজের পÿে নিজেই সাÿ্য দিতে বাধ্য হইলাম, আমার কথা আপনি গ্রহণ করুন বা না করুন সত্যের দোহাই দিয়া আমি বলিব যে, সর্বপ্রকার জ্ঞানের বিষয় সম্বন্ধে প্রমাণসঙ্গত অনুসন্ধানপ্রণালির প্রতি আমার একান্ত শ্রদ্ধা আছে; আমাদের দেশের সাবেক পন্ডিত, এমনকি, হালÐআমলের শিÿিত সাধারণের মধ্যেও প্রামাণিক পদ্ধতির চর্চা নাই বলিয়া আমি আÿেপ করি। আপনার প্রতি চিরদিন যে শ্রদ্ধা করিয়া আসিয়াছি তাহার প্রধান কারণ আপনি ব্যক্তিগত অন্ধসংস্কার বা মিথ্যা ভাবুকতার মোহে আকৃষ্ট হইয়া সত্যসন্ধানের পথ হইতে ভ্রষ্ট হন না। আমাদের দেশের অনেকে যাহারা ঐতিহাসিক বলিয়া গণ্য তাহাদের সাধনা এরূপ বিশুদ্ধ নহে। আপনার প্রতি আমার এই শ্রদ্ধা আছে বলিয়াই এখানকার কাজে আপনার সহায়তা পাইবার জন্য এমন আগ্রহের সহিত বারম্বার ইচ্ছা করিয়াছি। আপনাকে যদি ‘বিশ্বমানবের শত্রæ’ বলিয়া মনে করিতাম তবে আপনার সংস্রব এমন করিয়া কামনা করিতাম না। আচার্য বসুর অনুসন্ধানলব্ধ তত্ত¡গুলোকে দেশের যে একদল লোক প্রাচীন আর্যাঋষিদের ঝুলির মধ্যে গুপ্ত আছে বলিয়া কল্পনা করেন আপনার পত্রে আপনি তাহাদের কথাও উলেøখ করিয়াছেন; আপনার চেয়ে আমি তাহাদিগকে কম অশ্রদ্ধা করি না। য়ুরোপীয় পন্ডিতরা যে প্রণালি অবলম্বন করিয়া পুরাতন পুঁথির বিশুদ্ধ পাঠ ও অর্থ উদ্ধার করিয়া থাকেন, সেই প্রণালিকে যাহারা অবজ্ঞার সহিত অস্বীকার করেন আপনি তাহাদের কথাও লিখিয়াছেন। আমি যে সে দলের নহি আপনি যদি তাহার প্রমাণ পাইতে ইচ্ছা করেন তবে আমাদের শাস্ত্রী মহাশয়ের কথা আলোচনা করিবেন, আমি তাহাকে সুদীর্ঘকাল ধরিয়া, প্রামাণিক প্রণালি অনুসারে শাস্ত্র আলোচনা ও উদ্ধার করিবার জন্য, যথাসাধ্য উৎসাহ দিয়া আসিয়াছি। এখানকার লাইব্রেরিতে তাহার প্রমাণ আছে। আমার এখানে ভাবাবেশের অস্পষ্টতায় বৈজ্ঞানিক সত্যদৃষ্টি কলুষিত হইয়া যায় এমন কথা আমার কোন কোন বন্ধুমহলেও প্রচলিত আছে ইহা আমি জানিÐকিন্তু তাহারা এখানকার কাজ নিকট হইতে দেখেন নাই এবং ব্যক্তিগত বিশেষ সংস্কারবশত তাঁহাদের ধারণা নির্মল নহে, কিন্তু আপনার মধ্যেও এইরূপ প্রতিক‚লতা যদি এমন প্রবল আবেগে উগ্র হইয়া ওঠা সম্ভবপর হয় তবে তাহা আমার পÿে বড় দুর্ভাগ্যের বিষয়। অবশ্য একটা কথা আমাকে স্বীকার করিতে হইবে যে, বৈজ্ঞানিকতাকে আমি যেমন মানি, ভাবুক তাকেও তেমনি মানি। আমাদের আশ্রমের বায়ুতে সেই ভাবুকতার উপাদান যদি কিছু থাকে তবে সেটা কি চিত্তবিকাশের পÿে হানিকর? সেই সঙ্গে আর কিছুও কি নাই? এখানে যে কৃষিবিভাগ খোলা হইয়াছে তাহা যদি কাছে আসিয়া দেখিতেন তবে দেখিতে পাইতেন যে, তাহা যেমন বৈজ্ঞানিক তেমনি কার্যোপযোগী, তাহার কার্যÿেত্র ও শিÿাপ্রণালি বহুব্যাপক। গ্রীষ্মপ্রধান দেশের রোগ ও আরোগ্যতত্ত¡ সম্বন্ধে আলোচনার জন্য হাসপাতাল সমেত একটি শিÿা বিভাগ খুলিবার চেষ্টা করিতেছি, হয়তো শীঘ্র ছোট আকারে তাহার গোড়াপত্তন করিতে পারিব। এখানে ছুতারের কাজ, কামারের কাজ, চামড়া পাকা করিবার কাজ আরম্ভ হইয়াছে। ইহাতে ’বিশ্বমানবের’ বিরুদ্ধতা করা হয় বলিয়া এখানকার কেহই মনে করেন না। কিন্তু আপনারা কি বলেন যে, ভাবুকতার কোনো সম্পর্ক না রাখিয়া কেবল বিজ্ঞান ও এই সকল কারখানার কাজ শিখাইলেই বীধপঃ শহড়ষিবফমব -এর সাহায্যে ছাত্রদের মন পূর্ণ পরিণতি লাভ করে। আপনার পত্রের এক জায়গায় আপনি অত্যন্ত অসহিষ্ণুভাবে ’খৃষ্টপূর্ব যুগে রচিত বেদান্তের নূতন ভাষ্যের ভাষ্য তস্য ভাষ্য, নবন্যায়ের কচকচি, কেঁথা সেলাইয়ের প্যাটার্ন এবং আলিপনার নকসার’ উলেøখ করিয়াছেন। আপনি যাহাকে ’বোলপুরের বায়ু’ বলেন সে কি কেবল এই সকল ফসলেরই উপযোগী? বেদান্তের নূতন ভাষ্য ও নবন্যায়কে বিদ্রƒপ করিতে পারি এতটুকু জ্ঞানও আমার নাই। কিন্তু ’কেঁথা সেলাইয়ের প্যাটার্ন ও আলিপনার নকসা’ সম্বন্ধে য়ুরোপের বৈজ্ঞানিক ইতিহাসবিৎ ও আর্ট সমালোচকদের সঙ্গে আমার আলাপ হইয়াছেÐ দেখিয়াছি সকল প্রকার জ্ঞান ও ভাবপ্রকাশের প্রতি তাহাদের মানসিক বায়ু পরিশুদ্ধ বলিয়াই এগুলিকে তাহারা বহুমূল্য গণ্য করেন। আমার ইচ্ছা যে, আমাদের আশ্রমের মানসিক বায়ু সেইরূপ পরিশুদ্ধ হউক যাহাতে এই সকল পদার্থকে অকিঞ্চিৎকর বলিয়া কেহ অবজ্ঞা না করে এবং সেই সঙ্গেই জ্ঞানসাধনায় বিজ্ঞানের যে স্থান আছে তাহাকেও সকলে সম্মান করিতে শেখে। আপনার চিঠির ভাষা হইতে বুঝিলাম ’বিশ্বমানব’ ’বসুধৈব কুটুম্বকং’ প্রভৃতি ভাষা ও ভাবের প্রতি আপনি অপ্রসন্ন হইয়াছেন। অসংযতভাবে এই সকল শব্দের অমিত ব্যবহার অত্যন্ত বিরক্তিকর সন্দেহ নাই। আমার দ্বারা হয়তো তাহা ঘটিয়া থাকিবে। কিন্তু আমার বর্তমান ও পূর্বতন ছাত্রদের মধ্যে আমি একজনকেও জানি না যে ব্যক্তি বিশ্বমানব বা বসুধৈব কুটুম্বকং লইয়া প্রবন্ধে বা গ্রন্থে, বক্তৃতায় বা কবিতায় কোনো আলোচনা করিয়াছে। আমি কেবল একটি মাত্র ছাত্রকে জানি যাহার মন ভাবাবিষ্টতায় অভিভ‚ত। কিন্তু মানব চরিত্রের বৈচিত্র্য সাধনে প্রকৃতি দেবীর নিজের কি কোনো হাত নাই, আমাদের আশ্রমের ’ভক্তিবাষ্পাকুল বায়ু’র আর্দ্রতাতেই কি মন তৈরি হইয়া উঠে? এখানকার একটি ছাত্র চুরিও করিয়াছে সেজন্য কি এখানকারই বায়ু দায়ী? বৈজ্ঞানিক বায়ুতে কোনো বিকার কাহারও ঘটে না? আমার ব্যক্তিগত প্রভাবকেই হয়তো আপনি দোষ দিতে চান। সে সম্বন্ধে আমার দুটি মাত্র কথা বলিবার আছে। আমার জীবনে আমি ভাবাবেগের যথেষ্ট চর্চা করিয়াছি তাহাতে সন্দেহ নাই, কিন্তু আমি কি ভাবাকুল হইয়া কেবলি রসবিলাসে জীবন কাটাইলাম?
আমি কি কাজের জন্য কোন উদ্যোগ কোন ত্যাগ কোন সাধন করি নাই! সেই সাধনায় কি কাঠিন্য নাই? চিন্তাকে বাক্যে প্রকাশ করাতেই কি কেবল যাথাতথ্যের প্রয়োজন, কাজে প্রকাশ করিতে কি শৈথিল্যত্যাগ ও বুদ্ধি এবং কল্পনার সংযম লাগে না? অতএব আমার প্রভাব কি আমার ছাত্রদিগকে কেবল ভাবাবেগের জড়তায় আচ্ছন্ন করিবে, আর যে ÿেত্রে আমি অর্থাভাব এবং দেশের লোকের শ্রদ্ধা ও সহকারিতার অভাবের সহিত নিরন্তর সংগ্রাম করিয়া একটা জিনিসকে গড়িয়া তুলিলাম সেই ÿেত্রটি ছেলেদের চোখেই পড়িবে না, আর সেই কঠোর সাধনার কোনো প্রভাবই তাহাদের উপর কাজ করিবে না? আমার এই বিদ্যালয়ের ’এরোপ্লেন’ কি কেবল ভাবের আকাশে উড়িল, ইহা কি কেবল ’আনন্দেই সৃষ্ট’ হইয়াছে, ইহার মধ্যে সংকল্প নাই, চিন্তা নাই, পরীÿা নাই, দুঃখ নাই? এখানকার ছাত্রেরা কি তাহা দেখিতে পায় না? দ্বিতীয় কথা, আমার শিÿা, আমার মতি এবং চরিত্র যাহা করিতে পারে তাহার বেশি কিছু করা আমার পÿে অসম্ভব। আমি আমার সামর্থ্যরে অসম্পূর্ণতা জানি বলিয়াই আপনাদের মতো জ্ঞানের সাধকদিগকে চাহিয়াছিলাম। যদি পাইতাম তবে সম্পূর্ণভাবেই আপনাদের পরিচালনাপ্রণালি শিরোধার্য করিয়া লইতাম। এখানে যাহারা কাজ করেন তাহারা আমার কর্তৃত্বাধীনে করেন না Ð তাহারা নিজেরা পরামর্শ করিয়া কাজ করেন। আমার নিজের শক্তি সম্বন্ধে যদি আমার অভিমান থাকিত তবে আমি নিজেই কর্তৃপদ লইতাম। এখানকার বায়ু একমাত্র আমার ভাবাবেশের দ্বারা কলুষিত হওয়া সম্ভবপর নহে, কারণ আপনি যদি সন্ধান করিতেন তবে জানিতেন আমার ভাবের সঙ্গে এখানকার অধ্যাপকের ভাবের মিল নাই, আর এখানকার ছাত্রদের পনেরো আনা রাষ্ট্রীয় এবং অন্যান্য অনেক বিষয়ে আমার ভাবের প্রতি আস্থা রাখে না। তাহাদের এই স্বাতন্ত্র্যকে আমি বাধা দিই না, ইহাকে আমি শ্রদ্ধা করি। আপনার চিঠি পড়িয়া ব্যথিত ও বিস্মিত চিত্তে আমি অনেক চিন্তা করিয়াছি। আপনার মনে আমি ÿোভের কোনো কারণ ঘটাইয়াছি যাহাতে আমাদের সম্বন্ধে আপনার এরূপ বিরুদ্ধতা ঘটিল তাহা অনেক ভাবিয়াও ঠিক করিতে পারিলাম না। আপনি ‘ফিলিস্টাইন’, আপনার কার্য ও কার্যপ্রণালী ‘বিশ্বমানবের’ ÿতিকর, এমন কথা আমি কোনোদিন প্রকাশ্যে বা গোপনে আভাসেও প্রকাশ করি নাই কারণ ইহা আমার চিন্তাতেও আসিতে পারে না। আপনার পত্রে বাংলার আর্টিস্টদের সম্বন্ধে যে উগ্রতা আছে তাহাতে সন্দেহ হয় তাহাদের সঙ্গে হয়তো আপনার বাদ প্রতিবাদ ঘটিয়া থাকিবে। আমি তাহা জানিও না এবং তাহাদের আলোচনায় ঘরের কোণেও কোনোদিন যোগ দিই নাÐ যদিও একথা স্বীকার করা কর্তব্য বোধ করি যে, বাংলার আর্টিস্টদের সম্বন্ধে ও আর্ট সাধনা সম্বন্ধে আপনি যে মত যেভাবে প্রকাশ করিয়াছেন তাহার সঙ্গে আমি মিলি না। আমাদের দেশে অল্প যে কয়জন সাধকের প্রতি আমার গভীরতম শ্রদ্ধাতম আছে আপনি তাহাদের মধ্যে একজন। এই কারণে আমার কর্মের প্রতি আপনার এমন অবজ্ঞাবিমিশ্রিত অশ্রদ্ধার তীব্রতায় আমি নিরতিশয় ব্যথিত হইয়াছি। আমাদের এখানে ত্রæটির অভাব নাই, ত্রæটি অন্যত্রও আছে, কিন্তু যথাবিহিতরূপে আপনি কি তাহার সন্ধান ও যথোচিতভাবে তাহা নির্দেশ করিয়াছেন? বিশ্বভারতীয় সংকল্প মাথায় লইয়া ভারতবর্ষে যখন ফিরিলাম তখন সহায়তার জন্য সর্বপ্রথম আপনাকেই সন্ধান করিয়াছিলাম। কিন্তু যখন বিশ্বভারতীর সহিত আপনার নাম আপনি সংযুক্ত রাখিতে চান না তখন তাহা প্রত্যাহরণ করিব; তৎসত্তে¡ও ভাবুক বলিয়া আপনি আমাকে প্রত্যাখ্যান করিলেও সত্যসাধক বলিয়া শেষ পর্যন্ত আপনার প্রতীÿা করিব। ইতি, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৩২৯। বিনীত শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।’
৩১ মে ১৯২২ যদুনাথ যে চিঠি লেখেন রবীন্দ্রনাথ সেই চিঠির কথা ভুলতে পারেননি বহুদিন ধরে। ২ জুলাই ১৯২৭ তিনি রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়কে লেখেন: ‘যদুবাবুর কাছ থেকে একটা অত্যন্ত অবজ্ঞাপূর্ণ নিষ্ঠুর চিঠি পাই, সে কথাও আপনি জানেন, সেই অবধি তার সঙ্গে ব্যবহার করতে আমি সাহস করিনি। তিনিও সম্ভবত আমার কর্মনীতি ও কর্মরীতির প্রতি শ্রদ্ধা হারাইয়াছেন।’
১৯২৮ সালের ৭ অক্টোবর রবীন্দ্রনাথ যদুনাথ সম্পর্কে রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়কে লিখিত আর এক পত্রে অনুযোগ করেন। তিনি যদুনাথ বিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে অবধি চিরকাল ছেলে পড়ানো ব্যবসাতেই এতকাল কাটিয়েছেন, অর্থাৎ বাঁধা নিয়মের পুনরাবৃত্তি করেছেন ও উপরওয়ালাদের হুকুম মেনে চলেছেন। সেজন্যই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কেও তিনি মৃত পদার্থের মতোই ব্যবহার করেছেনÐনিজের চিত্ত থেকে তাকে কিছুই দিতে পারেননি, বরং তার ÿয় সাধন করেছেন।’ রবীন্দ্রনাথ তার সম্পর্কে কোনো বিরূপ সমালোচনা সহজে গ্রহণ করতে পারতেন না। প্রয়োজনে ছদ্মনামে তিনি সমালোচনার উত্তর দিতেন কঠোর ভাষায়। ২৪ ফেব্রæয়ারি ১৯৩৯ শান্তিনিকেতনে শিÿক তেজেশচন্দ্র সেন লিখিত এক পত্রে রবীন্দ্রনাথ তার আশ্রম প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য এবং তার অসফলতার কথা এক আবেগ ভাষায় বললেন, ‘এখানে আমরা অনেকদিনের অনেক যতেœ কতকগুলি আনন্দের উৎস খুলে দিয়েছিÐএখানে আঁকা হচ্ছে ছবি, এখানে গাওয়া হচ্ছে গান, এখানে নানা অভিনয় নিয়ে নানা উৎসব হচ্ছে। এখানে সাহিত্য আলোচনার সভা চলছে, এখানে কখনোবা দেশ-বিদেশের বড় বড় মনস্বীরা আপন আপন অভিজ্ঞতার ব্যাখ্যা করছেন, শান্তিনিকেতন-শ্রীনিকেতনের সাম্বৎসরিক অনুষ্ঠান হচ্ছেÐএ সকল প্রেরণায় যাঁদের মন সায় দেয় না কিংবা অত্যন্ত সুপ্রত্যÿ উপেÿার সঙ্গে এদের সঙ্গে একেবারে নির্লিপ্ত হয়ে থাকেন তারা ভালো মাস্টার হতে পারেন এবং হয়তো তারা কর্তব্যনিষ্ঠ, কিন্তু আন্তরিকভাবে তারা এ আশ্রম থেকে বিচ্ছিন্ন।ঃ ‘আমি কেবল দুঃখ পাইÐপ্রত্যহ দেখতে পাই যেখানে এই আশ্রমের প্রাণ সেখানে সেবা পৌঁছায় না। নিজের ভাগ্যকে ধিক্কার দিইÐবুঝতে পারি এতকাল ধরে আমার সম¯Í আকাঙÿা এবং ত্যাগ অনেকটাই ব্যর্থ হয়েছেÐআশ্রম হয়েছে ইস্কুলÐএই জড়ভার বহন করতে হচ্ছে সহজে নয়, জোগাতে হচ্ছে অনেক বলি। আমারই কর্মভোগ। বিশ্বভারতী নিয়ে রবীন্দ্রনাথের মনে বেশ অসন্তোষ ছিল। তার কথায়, তিনি ভাবুকমাত্র এবং বহুকে এক লÿ্যে অতিমুখে প্রেরণ করা কেবল ভাবুকের কাজ নয় এবং কাজের যোগ্য বলেই প্রথম দিন থেকেই নিরতিশয় দুঃখ ও বিরুদ্ধতা পেয়েছিলেন। বিদেশি অধ্যাপকদের সঙ্গে শান্তিনিকেতনের বাঙালির মধ্যে কোনো আত্মীয়ভাব ও সামাজিকতা গড়ে ওঠেনি। বাংলার বাইরের ছাত্রদের সঙ্গে বাঙালিরা চিত্তসংকীর্ণতাবশত সহজে মিলতে পারেনি। অথচ রবীন্দ্রনাথ শিÿায় মিলনের কথা বলেছিলেন বারবার। অমিয় চক্রবর্তীকে লিখিত একাধিক চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তবে তাঁর অহঙ্কারের কথাও বলেছেন ২৯ এপ্রিল ১৯৩৪ সালের এক চিঠিতে ঃ ‘আজকাল বাংলাদেশ থেকে নাচ গান ও ছবির ঢেউ সম¯Í ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়েছে এর প্রথম প্রবর্তনা এইখান থেকেই, সে কথা স্বীকার করতে হবে।’
জাভা-যাত্রার পূর্বে কলকাতা ইউনির্ভাসিটি ইন্সটিটিউটে বৃহত্তর ভারত পরিষদের উদ্যোগে পরিষদের স্থায়ী সভাপতিকে রবীন্দ্রনাথকে ১৯২৭ সালের জুলাই মাসে বিদায় সম্ভাষণের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য যদুনাথ সরকার সভাপতির ভাষণে রবীন্দ্রনাথকে ‘পূর্বতন ঋষিদের স্থলাভিষিক্ত অধুনাজীবিত ব্যক্তি’ বলে অভিহিত করেন।  ১৯২৮ সালে যদুনাথ মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে যে স্যার উইলিয়াম মেয়ার স্মারক বক্তৃতামালার 'জধনরহফৎধহধঃয ঞধমড়ৎব'ং ডড়ৎষফ গরংংরড়হ ড়ভ ওহফরধ' অংশে যদুনাথের নিম্নোক্ত মন্তব্যকে এর কারণ বলে অনুমিত হয়। : 'ঞযরং ষধঃবংঃ ভৎড়স ড়ভ ঃযব ঐরহফঁ ৎবারাধষ বি ড়বি ঃড় জধনরহফৎধহধঃয ঞধমড়ৎ. ওঃ রং ধ াবৎু পষড়ংব নঁঃ ঁহপড়হংপরড়ঁং পড়ঢ়ু ড়ভ ঃযব সড়াবসবহঃ যিরপয নবমধহ রহ জঁংংরধ রহ ঃযব ১৯ঃয পবহঃঁৎু, ঃযব াবৎু ষধহমঁধমব ড়ভ ঃযব ঝষধাড়হরপ ষবধফবৎং নবরহম ৎবঢ়বধঃবফ নু ঃযব ওহফরধ ঢ়ড়বঃ'-ঔধফঁহধঃয ঝধৎশধৎ, ওহফরধ ঞযৎড়ঁময ঃযব অমবং (১৯২৩) ঢ়.১২৫ ঊনিশ শতকের রাশিয়ার ঝষধাড়ঢ়যরষব আদর্শের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিভঙ্গির সাদৃশ্য দেখিয়ে যদুনাথ বলেন, ঞযরং ষধঃবংঃ ভৎড়স ড়ভ ওহফরধ ঃযড়ঁমযঃ রং নধংবফ বহঃরৎবষু ড়হ ধ হবি রহঃবৎঢ়ৎবঃধঃরড়হ ড়ভ ড়ঁৎ ধহপরবহঃ টঢ়ধহরংযধফং ঁহফবৎ ঃযব ঁহপড়হংপরড়ঁং রহভষঁবহপব ড়ভ পযৎরংঃরধহরঃু."
”সকল বড় দেশেই বিদ্যাশিÿার নিম্নতর লÿ্য ব্যবহারিক সুযোগ লাভ; উচ্চতর লÿ্য মানবজীবনের পূর্ণতাসাধন। এই লÿ্য হতেই বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক উৎপত্তি। রবীন্দ্রনাথ চেয়েছিলেন বিশ্বভারতীয় শিÿা প্রণালীর মাধ্যমে ছেলেদের মনে দাসত্ব মোচন করে তাদের এই উচ্চতর লÿ্য-েচিন্তায়-কর্মে, ধ্যান-ধারণায়, জীবনচর্চায় পরিপূর্ণতার পথে পৌঁছে দেওয়া। 
এই প্রসঙ্গে ১৩২৬ সালের শ্রাবণে এক ভাষণে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে বিদ্যাসমবায়ের একটি বড় ÿেত্র চাই, যেখানে, বিদ্যার আদান-প্রদান ও তুলনা হইবে, যেখানে ভারতীয় বিদ্যাকে মানবের সব বিদ্যার ক্রমবিকাশের মধ্যে রাখিয়া বিচার করিতে হইবে। 
ঃ বাহির হইতে মুসলমান যে জ্ঞান ও ভাবের ধারা এখানে বহন করিয়া আনিয়াছে, সেই ধারা ভারতের চিত্তকে ¯Íরে ¯Íরে অভিষিক্ত করিয়াছে, তাহা আমাদের ভাষায় আচারে শিল্পে সাহিত্যে সঙ্গীতে নানা আকারে প্রকাশমান। অবশেষে সম্প্রতি ইউরোপীয় বিদ্যার বন্যা সকল বাঁধ ভাঙ্গিয়া দেশকে প্লাবিত করিয়াছে; তাহাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীÿায় উত্তীর্ণ হওয়া আবশ্যিক ছিল না। পঠনীয় বিষয় সম্পর্কে শিÿার্থীর উপযুক্ত অধিকার ও অনুরাগই ছিল যোগ্যতার নির্ণায়ক। প্রসঙ্গত উলেøখযোগ্য তখনও শিÿাভবন (কলেজ বিভাগ) প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ছাত্র-ছাত্রীরা আশ্রমবিদ্যালয়ের পাঠ সমাপ্ত করেই বিশ্বভারতীতে প্রবেশাধিকার পেত।’
এই শিÿাপদ্ধতি যদুনাথ অনুমোদন করেননি। তিনি যে উপযুক্ত যোগ্যতা সৃষ্টি, সুনির্দিষ্ট নিয়ম-কানুনের মধ্যে অধ্যয়ন, বিদ্যার উৎপাদন অর্থাৎ গবেষণার ÿেত্রে কঠোর শ্রম-সাধনার দ্বারা নির্দিষ্ট ফল লাভকেই বাঞ্ছনীয় মনে করতেন। তাঁর মনে হয়েছিল বিশ্বভারতীতে নীতিনিয়মের কঠোরতা নাই। কেবল আদর্শ ও ভাবের পরিবেশই এখানে রচিত হয়েছে। পূর্বতন ব্রহ্মচর্যাশ্রমে শিশু ও কিশোরদের পÿে এটা উপযোগী হতে পারে, কিন্তু বিশ্বভারতীর উচ্চতর বিদ্যাচর্চার ÿেত্রে এটি উপযোগী নয়। এই পাঠপদ্ধতিতে পরীÿা গ্রহণের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। পাঠক্রমে অধ্যয়ন করার জন্য অনুমোাদিত কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীÿায় উত্তীর্ণ হওয়া আবশ্যক ছিল না। ছাত্র-ছাত্রীরা আশ্রম বিদ্যালয়ের পাঠ সমাপ্ত করেই বিশ্বভারতীতে প্রবেশাধিকার পেত।  কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীÿায় উত্তীর্ণ হওয়ার প্রস্তুতি ব্যতিরেকেই উচ্চতর পাঠক্রমে প্রবেশাধিকারকে যদুনাথ সন্তুষ্টিচিত্তে গ্রহণ করতে পারেননি। ১৯০৪ সাল থেকে মারাঠা ইতিহাস গবেষণা সূত্রে গোবিন্দ সখারাম সরদেশাইয়ের সঙ্গে যদুনাথের পরিচয় ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব জন্মে। ওই সময় থেকে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে যদুনাথের পরিচয়। অনুমিত হয় যদুনাথের পরামর্শে সরদেশাই তাঁর পুত্র শ্যামকান্তকে (১৮৯৯-১৯২৫) শান্তিনিকেতনে পড়াশোনা করতে পাঠান। বিশ্বভারতীর শিÿাক্রম সম্পর্কে যদুনাথ রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করেননি। রবীন্দ্রনাথের পÿে যদুনাথের এই মনোভাব সহজভাবে গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। যদুনাথ অবশ্য রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সহজভাবেই ঘনিষ্ঠতা রÿা করেন। তিনি দার্জিলিং-এ তার টোঙ্গা রোডের বাড়ি থেকে প্রায়শ রবীন্দ্রনাথের জন্য টাটকা ছানা ও ছানার মিষ্টি রবীন্দ্রনাথের দার্জিলিং-এর বাসায় পাঠাতেন। (সংকলিত)  

0 comments:

Post a Comment