ইসলাম ধর্ম ও মুসলিম সমাজ “প্রসঙ্গ”
ফোরকান আলী
মুসলিমদের প্রধান দায়িত্ব তার ধর্মকে রা করা। ধর্মকে রা করতে প্রয়োজন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে রা করা। মুসলিম মনিষীদের মতে এটি একটি জরুরী কাজ। আরো গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মুসলিম জগতে পাশ্চাত্যের সর্বগ্রাসী আগ্রাসনকে এর সঠিক ঐতিহাসিক পটভূমিকা ও ধারাবাহিকতা সবার সামনে তুলে ধরা। আর এ প্রসঙ্গটি এসেছে সম্প্রতি দেশের আইনমন্ত্রীর বিভিন্ন সভা সমাবেশের বক্তব্যের কারণে। শুধু ঘটনা এখান থেকে শুরু নয়। মুসলিম জগতের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যের আগ্রাসনের একটি দীর্ঘ ঐতিহাসিক পটভূমি রয়েছে তা মনে রেখেই মুসলিম জগতের প্রতি ও ইসলাম ধর্মের প্রতি পাশ্চাত্যের আজকের নীতি ও আচরণ বিচার করতে হবে।
একটি ভাষণের সামান্য একটু অংশ, একটি মাত্র বাক্য শুনি। অত্যচারীদের হাত থেকে আপনাদের বাঁচানো ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্য আমি আপনাদের এখানে আসিনি, এ কথাটি কার? কথাটি কি জর্জ বুশ বা ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রশাসক পল ব্রেমারের বলে অনায়াসেই চালিয়ে দেয়া যেতে পারে না? কথাটি ২৮ বছর বয়সী এক ফরাসি সমর নায়কের। ১৭৯৮ সালের ২৮ জুন ৪’শ রণতরীতে ভর করে ৩৬ হাজার সৈন্যের এক বাহিনী নিয়ে মিসরে এসে কথাটি তিনি বলেছিলেন। তার নাম নেপোলিয়ান বোনাপাট। আর তার হাতেই হয় মুসলিম জগতের বিরুদ্ধে ও ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যের অব্যাহত আগ্রাসনের পরিকল্পিত উদ্বোধন। এরপরের ১৫০ বছর প্রায় পুরো মুসলিম জগৎ ছিল পাশ্চাত্যের উপনিবেশ। নেপোলিয়ন মিসরে তিন বছর (১৭৯৮-১৮০১) ছিলেন। কিন্তু অল্প সময়ে অত্যন্ত চতুর এই সমর নায়ক মুসলিম জগৎ দখল ও ইসলামী শাসনের বিপে একটি স্থায়ী কার্যকর ছক তৈরী করে দিয়ে যায়। সেই ছকই এখনো কাজ করছি। আজ ২০০ বছরের অধিক হয়ে গেলে ও এতে তেমন হেরফের ঘটেনি। গ্লানিময় ইতিহাসের এই সূচনার কথা মুসলমানদের অনেকেই ভুলে বসে আছি। ১৭৯৮ সালের সেই কলঙ্কজনক দিন থেকে মুসলিম জগৎ ও ইসলাম ধর্ম একটির পর একটি আগ্রাসন, দখলদারি, শোষণ ও অপমানজনক নিগ্রহের শিকার হয়ে চলেছে। চলছে মুসলিম সমাজের বুনিয়াদ হিসেবে যে সব প্রতিষ্ঠান ও ঐতিহ্য আছে সে গুলোকে নেপোলিয়নের মতো একই কায়দায় বিনাশ করার পালা। একটি উদাহরণ দেয়া যাক। ইরাক দখল করার পর যে প্রশাসনিক পরিষদ গঠন করা হয়, তা ছিল নেপোলিয়নের চালু করা “দিওয়ান’’ এর মতো। নেপোলিয়নের মতলব ছিল স্থানীয় লোক দিয়েই স্থানীয় লোকদের জব্দ করা। নেপোলিয়নের সব ধরনের দখল দারিত্বের প্রতিরোধের নাম দেয়া হয়েছিল, “সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ’’। যারা এখন প্রতিরোধে অংশ নিয়েছে তাদের বলা হয়েছে দূস্কৃতকারী। আজও হুবহু এসব ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে। ভাষা এক বড় অস্ত্র। কামান-বন্দুকের চেয়ে বেশি বৈ-কম শক্তিশালী নয়। নেপোলিয়নের শাসন ও শোষনের কলাকৌশলের বিস্তারিত বিবরণ ইতিহাসের বইয়ে সংরতি আছে। মিশরে ঐ সময় নেপোলিয়নের সাথে একদল ফরাসি পন্ডিত ও এসেেিছলেন। ১৮০৯ থেকে ১৮২৯ সাল পর্যন্ত ২০ বছরে তাদের অনেক লেখা প্রকাশিত হয়। এই লেখা গুলো পাশ্চাত্যের সাথে মুসলিম জগতের সংঘাত ও সংঘর্ষের বিষয়ে অমূল্য ঐতিহাসিক দলিল। আল-জাবারতির লেখা পড়লে বিদেশী দখলদারদের কৌশলের কথা বুঝতে বাকি থাকে না। এ লেখায় আমরা দেখতে পাই মিসরে নেপোলিয়নের কর্মপদ্ধতি। প্রথমে নেপোলিয়ন চেষ্টা করেছিলেন, স্থানীয় লোকজনের মন ভোলাতে। ইসলাম সম্বন্ধে, ইসলামের নবী (সাঃ) সম্বন্ধে, নবীর (সঃ) শাসন পদ্ধতি সম্বন্ধে নেপোলিয়ন এখন অনেক মধুর মধুর কথা বললেন, যা শুনে মানুষের মন জুড়িয়ে যায়।
এ থেকে শুধু নেপোলিয়নের চার্তুযই প্রমাণিত হয় না, মুসলমানদের নির্বুদ্ধিতা ও মূর্খতাও বুঝা যায়। তখন অনেক মানুষই নেপোলিয়নের কথায় মুগ্ধ হয় ও আকৃষ্ট হয়। মুসলমানদের সামনে আজ যে সব সমস্যা তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সমসাময়িক ঘটনাবলি ও পরিস্থিতিকে ঠিকমত মূল্যায়ন করতে না পারা এবং বর্তমান অবস্থাকে ইতিহাসের ধারাবাহিকতার নিরিখে দেখতে না শেখা।
মুসলিম বিশ্বে ও আমাদের দেশে আজ যা হচ্ছে, তা কোনো বিচ্ছিন্ন কিংবা হঠাৎ ঘটে যাওয়া ব্যাপার নয়। যদি পুরো বিষয়টি যে ভাবে দেখা দরকার, তা দেখতে ভুল করা হয় তাহলে মুসলমানদের উপলব্ধি, সিদ্ধান্ত ও কর্মপন্থা ও ভুল হতে বাধ্য। অপরদিকে আইন মন্ত্রীর বেফাঁস বক্তব্য নিয়ে খোদ দলীয় লোকজন ও হতবাক হচ্ছেন। মুসলিম দেশের আইনমন্ত্রী হয়ে তার একের পর এক ইসলাম বিদ্বেষী বক্তব্য জন্ম দিচ্ছে বহু বিতর্কের। তিনি বক্তব্যের জন্য কখনো ভুল স্বীকার করছেন? আইন মন্ত্রীর বক্তব্য মিডিয়ায় প্রচারের পর দেশের আলেম সমাজসহ ধর্মপ্রিয় মুসলমানেরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানায়। দেশের সাধারণ মানুষ ও দেশের আলেম-ওলামাদের প্রবল প্রতিবাদ এবং ধিক্কারের মুখে আইনমন্ত্রী তার মত পরিবর্তন করেন। সর্ব মহলের প্রতিবাদের মুখে কার্যত তিনি ভুল স্বীকার করে নিজের অবস্থান থেকে পিছু টান দেন। কওমী মাদ্রাসা নিয়ে মন্তব্যের রেশ কাটতে না কাটতেই তিনি আবার “রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম” নিয়ে মন্তব্য করে বিতর্কের সৃষ্টি করলেন। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, আইনমন্ত্রীর মুখে ইসলাম বিদ্বেষী এ ধরনের বক্তব্যে মহাজোট সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিতে পারে। প্রকাশিত সংবাদে আরো বলা হয় ইসলাম বিদ্বেষী মানষিকতা প্রশাসন পরিচালনায় মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। আবার অনেকে বলছেন আমরা কি আবার ১৭৯৮ সালের নেপোলিয়নের যুগে ফিরে যাচ্ছি। আশাকরি বর্তমান মহাজোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় এনে বাঙালী মুসলমানের মর্যাদা রা ও সমৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন বর্তমান ও আইনমন্ত্রীর ব্যাপারেও যথাযথ সিদ্ধান্তে আসবেন। প্রাসংগিক ভাবে উল্লেখ করতে হয় যে, বাজার গরম করা বা উল্টাপাল্টা বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে যাঁরা মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হওয়ার প্রবণতায় ভোগেন তাঁদের ব্যাপারেও সিদ্ধান্তে আসা দরকার। এটাই সময়ের দাবী।
†jLK: W.†dviKvb Avjx
M‡elK I mv‡eK Aa¨¶
36 MMbevey †ivo,Lyjbv
01711579267
Email- dr.fourkanali@gmail.com
0 comments:
Post a Comment