কৃষিক্ষেত্রে প্রয়োজন জৈবপ্রযুক্তি
ফোরকান আলী
কৃষি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ একক শিল্প। আদিম মানুষ সভ্যতার পরশ লাভ করার পর থেকে কৃষিই হয়ে উঠে বেঁচে থাকার অবলন্বন। তাই খাদ্য উৎপাদনে মানুষ নতুন নতুন পরিকপনা নিচ্ছে। কৃষিভিত্তিক কর্মকান্ডের ওপর চলছে নানা গবেষণা। খাদ্য উৎপাদনে মানুষ সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানের কৃষি ব্যবস্থা অতিতের জরাজীর্ণতাকে কাটিয়ে এক সমৃদ্ধ শিল্পে রূপায়িত হয়েছে। প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন প্রযুক্তি। ফলে আবাদী শস্যের ফলন এবং গুণাগুণ বহুলাংশে বৃদ্ধি পাচ্ছে। উন্নত বিশ্বের আমেরিকায় মাত্র ১০% লোক কৃষি কাজে জড়িত। অথচ তারা তাদের মোট চাহিদার ২০% বেশী খাদ্য শষ্য উৎপাদনে সম হয়েছে। এর প্রধান কারণ নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন এবং এর সঠিক ব্যবহার। শুধু উন্নত বিশ্বেই নয় ইন্দোনেশিয়া, মালেশিয়া, ভারত এবং ফিলিফাইনের মত উন্নয়নশীল দেশ ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। জাতীয় রাজস্বের ৩৫ শতাংশ আসে কৃষি খাত থেকে। দেশের ৮৫% লোক কৃষি কাজের সাথে জড়িত। তার পরেও এর মোট চাহিদার মাত্র ৫৬ ভাগ উৎপাদনে সম হয়। এর অন্যতম কারণ সনাতন পদ্ধতির কৃষি ব্যবস্থাপনা। বাংলাদেশের মাটি এবং জলবায়ু কৃষি কাজের জন্য খুবই উপযোগী। ফলে কৃষি উন্নয়নের েেত্র বিপুল সুযোগ রয়েছে। আধুনিক জৈব প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বর্তমান সনাতন কৃষি ব্যবস্থার পরিবর্তন করে একটি সুখী সমৃদ্ধশীল দেশ গড়া সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন কৃষি েেত্র প্রযুক্তির ব্যবহার। দেশে বর্তমানে কৃষির বিভিন্ন েেত্র প্রযুক্তির ব্যবহার চলছে। এতে দিন দিন নতুন নতুন সুফল বয়ে আসছে। কৃষি পণ্যের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন দেশে গড়ে উঠে থাকে বিভিন্ন ধরণের শিল্প প্রতিষ্ঠান। আমাদের দেশেও কৃষি পণ্যের উপর নির্ভর করে গড়ে উঠে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান। উপহার দিচ্ছে উন্নত খাদ্য ও বহুবিধ নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যবহার্য শিল্প পণ্য। এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে কাঁচা মালের সহজ লভ্যতা করা গেলে উৎপাদন যেমন বৃদ্ধি পাবে, উৎপাদিত পণ্যের মুল্যও আনুপাতিক হারে হ্রাস পাবে। বিশ্বেও বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ৬’শ কোটি। আর প্রতি বছর ৯০ মিলিয়ন নতুন মুখ যুক্ত হচ্ছে। সনাতন কৃষি ব্যবস্থা এ বিশাল জনগোষ্ঠীর অন্ন,বস্ত্র, বাসস্থান, স্বাস্থ্য ও শিার নিশ্চয়তা দিতে পারবে না এ বিষয়ে কোন সন্দে নেই। এ কারনে কৃষি ব্যবস্থার পরিবর্তন এবং আধুনিক কৃষি ব্যবস্থার প্রবর্তন জরুরী হয়ে পড়েছে। উন্নত কৃষি প্রযুক্তি, দ জনশক্তি সর্বোপরি আর্থিক সঙ্গতিই এ পরিবর্তন আনতে পারে। এ সকল সুযোগ সুবিধার অভাবে বর্তমানে অনেক দেশই প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারছে না। উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত বিশ্বে এ সমস্যা প্রকট আকারে বিরাজিত। আমাদের দেশও এমন একটি সমস্যায় জর্জরিত। বাংলাদেশে বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৫ কোটি। সে তুলনায় জমি বাড়েনি এক ইঞ্চিও। বাংলাদেশে মোট জমির পরিমাণ ৩ কোটি ৩৮ লাখ একর। এর মধ্যে আবাদি জমির পরিমাণ ২ কোটি ১লাখ ৫৭ হাজার একর। বন্যা প্লাবিত জমির পরিমাণ ১ কোটি একর। সেচ ব্যবস্থাধীন জমির পরিমাণ ৯২ লাখ একর। মাথাপিছু আবাদী জমির পরিমাণ ০.২৮ একর বা ০.৮ হেক্টর। আর একজন কৃষকের আবাদযোগ্য জমি রয়েছে ১.৫০একর। যার বিপরীতে রয়েছে ক্রমবর্ধমান বিপুল জনসংখ্যার চাপ। পরিণতিতে বাংলাদেশের লোকসংখ্যা ও খাদ্যাভাব সংকটজনক অবস্থা বিরাজ করছে। শিা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দিক দিয়ে বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে। একারণে বর্তমানে আমাদের খাদ্য ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। বিশাল এ জনগোষ্ঠীর খাদ্যের চাহিদা পূরণ বর্তমান কৃষিেেত্র বিরাট চ্যালেঞ্জ। আর এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কৃষিকাজ এখন কৃষিবাণিজ্যে পরিণত হয়েছে। বিনিয়োগ করা হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। কিন্তু ফসল উৎপাদনে সফলতা আসছে না। কারণ সফল ফসল উৎপাদন নির্ভর করে আধুনিক চাষাবাদের উপর। বিভিন্ন দেশে জিন প্রকৌশল কৃষি েেত্র এক নতুন বিপ্লবের জম্ম দিয়েছে। এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে উদ্ভিদ এবং প্রাণীর ব্যাপক উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। আমরা আশাকরি সেদিন আর বেশি দুরে নয়, যেদিন বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশও এসব জৈবপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে খাদ্যে স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে। এ সকল প্রযুক্তির সমম্বয়ে যে কোনো জটিল বিষয়ে দ্রুত দভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া যায়। ফসলের এলাকা ভিত্তিক উপযোগিতা রোগের পূর্বাভাস,যথাযথ দমন ব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া এ সকল জৈবপ্রযুক্তির ব্যবহারে যথেষ্ট সহজতর হতে পারে। তাছাড়া সহনশীল কৃষি ব্যবস্থাপনার স্বার্থে সমম্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা (ওচগ) বা সমন্বিত রোগ ব্যবস্থাপনা (ওউগ) ইত্যাদি প্রয়োগের জন্য যথেষ্ট তথ্যের প্রয়োজন। আর এসকল তথ্য পেতে জৈবপ্রযুক্তির ভুমিকা অপরিসীম। ইন্টারনেট সুবিধার মাধ্যমে কৃষিেেত্রও তথ্য আদানÑ প্রদানের বিশ্বজোড়া ত্রে তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে মৃত্তিকাসম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্র (ঝজউও) , ধান গবেষণা কেন্দ্র (ইজজও) ও কৃষি গবেষণা কেন্দ্র (ইঅজ) জৈব প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করেছে। যাতে একটি সহনশীল উপায়ে কৃষিবাণিজ্যের উৎপাদন ও লভ্যাংশ বৃদ্ধি করা যায়। কৃষিেেত্র জৈবপ্রযুক্তির ব্যবহার আরো সম্প্রসারিত হলে আমাদের কৃষি নতুন শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সম হবে।
†jLK: W.†dviKvb Avjx
M‡elK I mv‡eK Aa¨¶
36 MMbevey †ivo,Lyjbv
01711579267
Email- dr.fourkanali@gmail.com
0 comments:
Post a Comment