স্মরণ : শিক্ষাবিদ ছগীর মোহাম্মদ
আলী ফোরকান
জন্ম : ২২ মে ১৯৫৭ সালে
মৃত্যু : ১০ মার্চ ২০১৮
ছগীর মোহাম্মদ বহুমাত্রিক প্রতিভার বাতিঘর। শিক্ষক, মুক্তিযোদ্ধা, সাহিত্য, সংস্কৃতি–সমাজসংগঠক। জীবনব্যাপী অসাম্প্রদায়িক, বিজ্ঞানমনস্ক মানুষটি শিক্ষা আন্দোলনের পাশাপাশি সকল প্রগতিশীল আন্দোলন–সংগ্রামে নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। সাদামাটা, নিরঅহংকার আত্মপ্রত্যয়ী । গত ১০ মার্চ ২০১৮ তিনি পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে।
পটিয়া উপজেলার নাইখাইন গ্রামের এক নি¤œবিত্ত পরিবারের পিতা ছিদ্দিক আহাম্মদ ও মাতা মোমেনা খাতুনের ঘরে ২২ মে ১৯৫৭ সালে তার জন্ম। শৈশব থেকেই অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রতিকূলতার মধ্যে তার বেড়ে ওঠা ১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আহবানে ছাত্রাবস্থাতেই মুক্তিযোদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। বিএ শ্রেণিতে অধ্যয়ন কালে সংসারের হাল ধরতে হয় তাকে। ১৯৭৫ সালে গৈড়লা কেপি উচ্চ বিদ্যালয়ে অফিস সহকারী কাম শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু। ১৯৭৮ সালে ইউনিয়ন কৃষি উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক ও ১৯৮৫ সালে এয়াকুবদ–ী উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এ.এস. রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন ১৯৮৬ সালের ১৬ জুন। একই স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন ২০১৪ সালে ২২ নভেম্বর।
২০১৭ সালের ২১ মে তিনি স্কুল থেকে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর গ্রহণের পর তিনি অল্প কিছুদিন চন্দনাইশ বীর মুক্তিযোদ্ধা মনছফ আলী– জাহানারা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্ব পালন করেন।
সাহিত্য–সংস্কৃতি : পটিয়ার বিভিন্ন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকা–ের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সম্মিলিত বর্ষবরণ উদ্যাপনে তাঁর ভূমিকা প্রশংসনীয়। বর্ষবরণ কমিটিতে তিনি বাংলা ১৪১৯ সালে সদস্য সচিব এবং ১৪১৭ সালে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। সাহিত্য–সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি তিনি বহু যাত্রা ও মঞ্চ নাটকেও অভিনয় করেছেন। তিনি পটিয়া ক্লাবের আজীবন সদস্য।
সাংবাদিকতা : দৈনিক মুক্তকণ্ঠ, সাপ্তাহিক চট্টলা, আজকের চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন পত্রিকায় পটিয়া প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি পটিয়া প্রেসক্লাবের কার্যকরী কমিটির সহ–সভাপতি ছিলেন।
শিক্ষা ও শিক্ষক আন্দোলন : শিক্ষার মানোন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষকদের পেশা ও মর্যাদা রক্ষার সংগ্রামে তাঁর অনবদ্য ভূমিকা ছিল। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বাশিস) চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্বশেষ খলিলুর রহমান মহিলা ডিগ্রী কলেজ গভর্নিং বডির সদস্য ছিলেন।
দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলন : টিআইবির অনুপ্রেরণার গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটি পটিয়ার প্রতিষ্ঠাকালীন আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি পটিয়া শাখার সদস্য ছিলেন।
আজ তিনি নেই, রয়ে গেছে তাকে ঘিরে অংসখ্য স্মৃতি। সহজ– - সরল আত্মভোলা, সাদা মনের মানুষটিকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি।
0 comments:
Post a Comment