Wednesday, April 25, 2018

স্মরণ: ইলা মিত্র

স্মরণ: ইলা মিত্র
আলী ফোরকান
জš§:১৯২৫ সালের ১৮ অক্টোবর 
মৃত্যু: ১৩ অক্টোবর ২০০২ সালে 
ইলা মিত্র ১৯২৫ সালের ১৮ অক্টোবর কলকাতায় জš§গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪০ সালে বেথুন স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৪২ সালে বেথুন কলেজ থেকে আইএ এবং ১৯৪৪ সালে একই কলেজ থেকে অনার্সসহ বিএ পাস করেন। এর চৌদ্দ বছর পর ১৯৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে এমএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ছাত্রাবস্থায়ই জড়িয়ে পড়েন রাজনীতির সঙ্গে। পর্যায়ক্রমে তিনি যুক্ত হন গার্লস স্টোরস কমিটি, ছাত্র ফেডারেশন, মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি ও বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে। মন্বন্তরের সময় তিনি একদিকে খাদ্য আন্দোলন ও ভুখা মিছিলে যোগদান করেছেন, লঙ্গরখানা পরিচালনায় সহায়তা করেছেন, অন্যদিকে খাদ্যাভাব, কাপড়ের সংকট, মহামারী এবং বিশেষত নারী-ব্যবসায়ীদের হাত থেকে অসহায় মেয়েদের বাঁচাতে তার সংগঠন সক্রিয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। বিবাহসূত্রে ১৯৪৫ সালে তাকে চলে আসতে হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের রামচন্দ্রপুরে। সামন্ত পরিবারের রক্ষণশীলতাকে ভেঙে, তখনকার পল্লীর অচলায়তনকে অতিক্রম করতে তিনি শিক্ষক হিসেবে যুক্ত হন মেয়েদের জন্য গড়া নতুন স্কুলের সঙ্গে। পরবর্তীসময়ে কমিউনিস্ট নেতা ও স্বামী রমেন্দ্রনাথ মিত্র এর সঙ্গে তিনি যুক্ত হন জমিদারি উচ্ছেদ ও জোতদারি শোষণের বিরুদ্ধে স্থানীয় পর্যায়ের আন্দোলনে। ১৯৪৬ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময়ে নোয়াখালীর হাসনাবাদে ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কাজেও তিনি অংশ নেন।
১৯৪৬-৪৭ সালে ফসলের দুই-তৃতীয়াংশের ওপর কৃষকের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে বাংলার ১৯টি জেলায় গড়ে ওঠে তেভাগা আন্দোলন, তা পরিব্যপ্ত থাকে ১৯৪৯-৫০ সাল পর্যন্ত। তেভাগার দাবিতে রাজশাহী জেলার, বিশেষভাবে নাচোলের কৃষকদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রে ইলা মিত্র অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করেন। আদিবাসী কৃষকদের মধ্যে তার এতটা গ্রহণযোগ্যতা ছিল যে, তারা তাকে শুধু বিশ্বাসই করতেন না, সে সঙ্গে নিজেদের একজন বলেও ভাবতেন। ইলা মিত্র ক্রমশ হয়ে ওঠেন সাঁওতাল ও অন্য কৃষকদের ‘রাণীমা’। নাচোলের বিদ্রোহের ঘটনায় ইলা মিত্রসহ ২৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে যুক্তফ্রন্ট সরকার ক্ষমতাসীন হলে চিকিৎসার প্রয়োজনে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে কলকাতা যাওয়ার পর ইলা মিত্র আর পূর্ব বাংলায় ফিরে আসেননি। ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নিশ্চিত না হওয়ায় প্রচণ্ড দুরবস্থায় কয়েক বছর বস্তিতে জীবনযাপন করেন। এরপর এমএ পাস করে তিনি কলকাতা সিটি কলেজে অধ্যাপনায় যোগ দেন। ১৯৬২-৭৮ সময়ের মধ্যে মানিকতলা নির্বাচনী এলাকা থেকে তিনি পর পর চারবার পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভার সদস্য নির্বাচিত হন। এর মধ্যে দুবার তিনি ছিলেন বিধান সভায় কমিউনিস্ট পার্টির ডেপুটি লিডার। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের পক্ষে তিনি জনমত সংগঠিত করতে অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা নেন। রাজনৈতিক কারণে পশ্চিম বাংলাতেও তিনি চার বার (১৯৬২ থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত) কারাবরণ করেন। ১৩ অক্টোবর ২০০২ সালে ইলা মিত্রের কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

0 comments:

Post a Comment