Wednesday, March 7, 2018

গঠনমূলক সমালেচনা - কোন্টা রেখে কোন্টার

গঠনমূলক সমালেচনা - কোন্টা রেখে কোন্টার
আলী ফোরকান
দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি সাংবাদিকদেরকে বলেছেন, সমালোচনা আপনারা করুন। কিন্তু সে সমালোচনা গঠনমূলক হতে হবে। একথা আরও সরকারি কর্তাদের মুখে শোনা গেছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যে চলতি প্রেÿাপটে এ কথাগুলো বলেছেন তা সবিশেষ গুরুত্ববহ। কারণ তিনি যখন সরকার প্রধান তখন রাষ্ট্রের অন্যতম অঙ্গ বিচারবিভাগ থেকেও কিছু কথা এসেছে। আর সংসদ সদস্যরা তাদের সার্বভৌমত্বের স্বাধিকারে অনেক কথাই বলছেন কেবলমাত্র সমালোচনার জন্যই সমালোচনার সমালোচনায়। গঠনমূলক সমালোচনাই বলুন আর আলোচনাই বলুন অনেক কিছু¡ই বলা যায়। তবে আজকে আমি সাংবাদিক হিসেবে একটা বিষয়ে গঠনমূলক সমালোচনা করতে চাই। ‘গঠনমূলকতার’ সংজ্ঞা’কে নির্র্ধারণ করতে পারেন তা আমার জানা নেই। আমি মনে করি, সমালোচনার শর্ত হলো বিবেক। যেমন বলা হয়ে থাকে বিবেক হলো সর্বোচ্চ আদালত। কথাটা আমরা আজকাল বাসের পেছনেও লেখা থাকতে দেখছি। তবে এখানেও কথা সর্বোচ্চ আদালত ছাড়া বোধ করি নি¤œতম আদালতের বেলাতেও প্রযোজ্য। তবে আজ সে কথা থাক। সরাসরি কথায় আসি। আমাদের সৎ ও বিবেকবান শিÿামন্ত্রীর কথাবার্তায় আশাবাদী হয়েছিলাম। মনে করেছিলাম হয়তো ভবিষ্যৎ বংশধরের জন্য সত্যিকারের কল্যাণকর কিছু হবে। তিনি নোটবই বন্ধ করলেন। একই মানের লেখাপড়ার কথা বললেন। জানি, একমাত্র শিÿাই পারে দারিদ্র্য হটাতে। ভাতের অভাবে আকাল হয় না, হয় আইডিয়ার অভাবে? এও জানি, একমাত্র জ্ঞানই পারে সভ্যতার সংঘাতের এই বা¯Íবতার যুগে একটি জাতিকে টিকিয়ে রাখতে। জ্ঞানই সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ একটি জাতির জন্য। দেশের জন্য। আমাদের শিÿামন্ত্রী শিÿকদের যথাসম্ভব মর্যাদা বৃদ্ধির চেষ্টা করলেন। তিনি প্রগ্রতি ও বামবাদী নেতা। তিনি শিÿাকে সকলের জন্য উš§ুক্ত করবেন ও যদ্দূর সম্ভব সকলের বিশেষ করে মধ্য, নি¤œবিত্ত ও গরিবদের সাধ্যের মধ্যে রাখবেন লেখাপড়া সেটাই প্রত্যাশিত। এবার উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পরীÿায় সবচেয়ে বেশি ছেলেমেয়ে জিপিএ ৫ পেয়েছে। কিন্তু সরকার শিÿা প্রতিষ্ঠানে শিফট বাড়িয়ে ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনুমতি দিয়েও উদ্দেশ্য সাধন করতে পেরেছেন বলে মনে হয় না। মনে হয় না এ কারণে যে, সরকারি পর্যায়ে এখন বলা হচ্ছে কোচিং শিÿাদানের একটা অংশ বলে ধরে নিতে হবে। অথচ এই কোচিং-এর বিরুদ্ধেই সম্ভবত ছিল তাঁর ‘ক্রুসেড’। সরকার উত্তম পাঠ্যবই প্রণয়ন করতে যোগ্যতার পরিচয় দিচ্ছেন বলে মনে হয় না। এমনকি একটা ভালো বাংলা ব্যাকরণ লেখার মতো লোকও পাওয়া যাচ্ছে না বাংলাদেশে। ভারতীয় বই এখন আমাদের অধিকাংশ বেসরকারি শিÿা প্রতিষ্ঠানের আদর্শ। আর কী মজার ফল তা আমরা দেখেছি কয়েক বছর আগে ইত্তেফাকের একটি রিপোর্টে। তাতে বলা হয়েছে ভারতীয় বই পড়ে ছেলে-মেয়েরা জাতির জনক বলেছে মহাত্মা গান্ধীকে যিনি ভারতের জনক। তাহলে ধরে নিয়ে হয় যে আমাদের বই লেখার জন্য উপযুক্ত শিÿক বা লেখক নেই। তা যদি না হয় তাহলে আমাদের এতোগুলো সরকারি ও বেসরকারি এবং অন্যান্য শিÿা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞ ব্যক্তিরা কী করছেন? দেখা যাচ্ছে এইসব কথিত সারস্বত ব্যক্তিরা বেসরকারি শিÿা প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে লেগে গিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত অধ্যাপকদের পড়াশোনা ও বই লেখার জন্য যে ছুটি দেয়া হয় তা সাধারণত তাঁরা বিদেশ থেকে গাড়ি বা বিত্ত নিয়ে আসায় কিংবা বিদেশে থেকে যাওয়ায় পর্যবসিত হচ্ছে কিংবা দেশে রাজনীতির আগুনে ঘি ঢালা যায় এমন সব বই লেখায় কাজে লাগাচ্ছেন। তাহলে সে অবস্থায় ছাত্রছাত্রীদের কী করণীয় হবে বলে দিতে হবে কী। সত্যিকারের কাজ কিছু তাঁরা করছেন না। অথচ বুক ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া কী করছে তা আমাদের শিÿাভুবনের কর্তাব্যক্তিদের জানা উচিত। সরকারি শিÿা প্রতিষ্ঠানগুলোই এখন মূলত বেসরকারি শিÿা প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন তাঁর সরকারি পদের নাম ভাঙ্গিয়ে। কোচিং-এ তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে যারা সামরিক বাহিনীতে ভর্তি হবে সেজন্য জেনারেল, কর্নেলরা কোচিং খুলে বসেছেন? অথচ খেলার মতোই এখানে অলঙ্খনীয় শর্ত হলো ক্যাচ দেম ইয়াং। কেননা সামরিক বাহিনী প্রথম প্রশিÿণ প্রতিষ্ঠাতাদের জন্য আইকিউ নির্ধারিত। এই পাপ যারা করে চলেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা কি। এখন কোচিং প্রতিষ্ঠান এতো বিশাল বিনিয়োগ যে তারাও বিশ্ববিদ্যালয় করেছে বা করছে। এটা কোন্ নৈতিকতায় কে বলবে? আমার মনে হয় শিÿামন্ত্রী এ বিষয়ে আলোকপাত করতে পারেন। আর ও জায়গাটাই যে প্রশ্নপত্র ফাঁস হবার আদর্শ জায়গা তা বলাই বাহুল্য। সর্বশেষ প্রশ্নপত্র ফাঁসের কেলেঙ্কারিতে যা দেখা গেছে ÿমতাধর ও শিÿা প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিরাই দীর্ঘদিন ধরে জড়িত। কার কি হচ্ছে? যারা এসব করছেন তাদের নিজ সন্তানদেরও ÿতি করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশকে ডিজিটাল পরিবেশে নিয়ে যাবার সুসংবাদ দিচ্ছেন কিন্তু খবরের কাগজে খবর আসছে অন্যরকম। বলা হচ্ছে দেশের বিদ্যালয়গুলোর অধিকাংশ স্কুলে কম্পিউটার শিÿক নিয়োগ করা হচ্ছে। তারা ছাত্রছাত্রীদের আইসিটি প্রযুক্তির শিÿা দেবেন। কিন্তু দেখা গেলো তাদের অনেকে কম্পিউটার খুলতেই জানেন না। অনেক বিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ সংযোগই নেই। তাতে কি! কম্পিউটার শিÿকও অন্যায় সুপারিশে নিয়োগ করা হয়ে গেছে তার জন্য এমপিও-র ব্যবস্থাও হয়ে গেছে। এটা কি করে হলো? সেটাও এক চমৎকার ফন্দির মাধ্যমে ঐ সব বিদ্যালয়ে জেনারেটর কেনা হয়েছে। তবে সেটা কোন্ খাত থেকে জানা না গেলেও গোমর বুঝতে অসুবিধে হয় না। ওটা কেবলই শিÿা কর্মকর্তাদের চোখে ধুলো দেয়ার জন্য। ÿতি হচ্ছে কাদের? শিÿাখাতে বেতন দিতেই সরকারের সিংহভাগ যায়। আর শিÿামানের অবনতি ঘটে। অনৈতিক ‘গ্রেস’ দিতে হয় । সত্যিকারের মেধার স্বীকৃতি মেলে না। তবে হয়তো অনেক কথিত মেধাবীদের বুড়িগঙ্গা ভ্রমণের নামে অনৈতিক প্রেরণা যোগায় আমাদের মিডিয়া। এই ক’দিন আগে খবর পাওয়া গেলো, গত এইচএসসি পরীÿায় খাতা চ্যালেঞ্জের পর বেশকিছু ছাত্রছাত্রী সুফল পেয়েছে। তাদের গ্রেড বদলে গেছে, উন্নত হয়েছে, ফেল করারা পাস করেছে। যদি এ অভিযোগের মধ্যে সামান্য সত্যও থাকে তাহলে কী ভয়ানক অপরাধ চলছে? এ ঘটনা বিরল হওয়া দৃষ্টান্ত হওয়া উচিত। অনেক ভালো ছাত্রছাত্রীও তো বোর্ডের ফল মেনে নেয়। চ্যালেঞ্জে যায় না। তারা যদি করে এ ফল তো তাদের আরও উন্নত হতে পারে? কাজেই ওখানেও কি কালো ভেড়া থাকতে পারে না? বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সিরিয়াস ব্যবসা করার খবর সংবাদপত্রে বেরোচ্ছে তারই বা কি? তবে হয়তো সমালোচনাটা অনেকটাই অগঠনমূলক হয়ে যাচ্ছে। তাই ফেরা যাক। সরকার তো দেশের নানা জায়গায় নানা বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার বিশাল ব্যয়বহুল পরিকল্পনা নিচ্ছেন। এমনকি মেলিন্ডা ফাউন্ডেশনের সহায়তায় বেসরকারি খাত বিনিয়োগে এগিয়ে আসছে আন্তর্জাতিকমানের বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে সেÿেত্রে সরকার কি একটি মাত্র ভার্চুয়াল ইউনিভার্সিটি গড়তে পারেন না যেখানে থাকবে সর্বোচ্চ মেধা , দÿতা , নিষ্ঠা ও সততার সমাবেশে দেশের সকল ছাত্রছাত্রী তথা আগামী প্রজšে§র স্বার্থে? তার সুফল ভোগ করবে সবাই। কোচিং-এর দিন ঘনিয়ে আসবে, এটা দরকারও। 

0 comments:

Post a Comment