Monday, April 23, 2018

স্মরণ : আবদুল আলীম

স্মরণ : আবদুল আলীম
আলী ফোরকান
জন্ম :২৭ জুলাই ১৯৩১ সালে 
মৃত্যু: ১৯৭৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর
 ‘নাইয়া রে নায়ের বাদাম তুইলা’, ‘সর্বনাশা পদ্মা নদী’, ‘হলুদিয়া পাখী’, ‘মেঘনার কূলে ঘর বাঁধিলাম’, ‘এই যে দুনিয়া’, ‘দোল দোল দুলনি’, ‘দুয়ারে আইসাছে পালকি’, ‘কেন বা তারে সঁপে দিলাম দেহ মন প্রাণ’, ‘মনে বড় আশা ছিল যাবো মদীনায়’, ‘বন্ধুর বাড়ি মধুপুর’ ইত্যাদি বাংলা লোকসংগীতের কিংবদন্তি শিল্পী আবদুল আলীম। বাংলাদেশের লোকসংগীতের ইতিহাসে আবদুল আলীম অবিস্মরণীয় নাম। জন্ম ২৭ জুলাই ১৯৩১ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের তালিবপুর গ্রামে। বাংলা লোকসংগীতের এই অমর শিল্পী লোকসংগীতকে অবিশ্বাস্য এক উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন যেখানে জীবন জগৎ এবং ভাববাদী চিন্তা একাকার হয়ে গিয়েছিল। ছোটবেলায় তার সংগীত গুরু ছিলেন সৈয়দ গোলাম আলী।
পরবর্তীকালে তিনি কলকাতায় আব্বাসউদ্দিন ও কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়ে গান করেছেন। তিনি লোক ও শাস্ত্রীয় সংগীতের ওপর দীক্ষা নিয়েছিলেন বেদার উদ্দিন আহমেদ, ওস্তাদ মোহাম্মদ খসরু, মমতাজ আলী খান, আবদুল লতিফ, কানাই লাল শীল, আবদুল হালিম চৌধুরী প্রমুখের কাছে। লেটো দলে, যাত্রা দলেও কাজ করেছেন। দেশ বিভাগের পরে আবদুল আলীম ঢাকায় চলে আসেন এবং রেডিওতে স্টাফ আর্টিস্ট হিসেবে গান গাইতে শুরু করেন। তিনি পরে টেলিভিশন সেন্টার চালু হলে সেখানেও সংগীত পরিবেশন শুরু করেন। এছাড়াও তৎকালীন বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’সহ বিভিন্ন বাংলা চলচ্চিত্রে আবদুল আলীম গান করেছেন। সব মিলিয়ে প্রায় ৫০০ শ’র মতো গান রেকর্ড হয়েছিল তার। আবদুল আলীম তার আধ্যাত্মিক ও মরমি মুর্শিদি গানের জন্য অমর আছেন। কণ্ঠস্বরের অসাধারণ ঐশ্বর্য নিয়ে তিনি জšে§ছিলেন এবং সেক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী।
দরাজ কণ্ঠের অধিকারী আবদুল আলীম যখন গান গাইতেন, তখন মনে হতো পদ্মা মেঘনার ঢেউ যেন আছড়ে পড়ছে শ্রোতার বুকের তটভূমিতে। মানুষের মনের কথা, প্রাণের সঙ্গে প্রাণ মিলিয়ে যে গানের সুর আবদুল আলীমের কণ্ঠ থেকে নিঃসৃত হতো, তা শুধু এই বাংলাভাষীদের মনেই নয়; বিশ্বের সব সুর রসিক যারা, বাংলা ভাষা জানেন না- তাদেরও আপ্লুত করত। পেশাগত জীবনে আবদুল আলীম ছিলেন ঢাকা সংগীত কলেজের লোকগীতি বিভাগের অধ্যাপক। বাংলা লোকসংগীতের এই অমর শিল্পী লোকসংগীতকে অবিশ্বাস্য এক উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন যেখানে জীবন জগৎ এবং ভাববাদী চিন্তা একাকার হয়ে গিয়েছিল। খুব অল্প বয়স হতেই বাংলার লোকসংগীতের এই অমর শিল্পী গান গেয়ে নাম করেছিলেন। মাত্র তেরো বছর বয়সে তার গানের প্রথম রেকর্ড হয়। কালজয়ী এই লোকসংগীত শিল্পী মাত্র ৪৩ বছর বয়সে ১৯৭৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার পিজি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৭ সালে তাকে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করে সম্মানিত করে। এ ছাড়াও তিনি পূর্বাণী চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।
আবদুল আলীম নেই। কিন্তু আছে তার গান। গানের মাঝেই তিনি সংগীত পিপাসু মানুষের মাঝে বেঁচে থাকবেন। মরমি শিল্পী আবদুল আলীমের জন্ম দিনে তাকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।

0 comments:

Post a Comment