Monday, April 23, 2018

স্মরণ : মোহাম্মদ রফি

স্মরণ : মোহাম্মদ রফি
আলী ফোরকান
জš§ : ১৯২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর। 
মৃত্যু:  ১৯৮০ সালের ৩১ জুলাই 
উপমহাদেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী মোহাম্মদ রফি। জš§ ১৯২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর। তদানীন্তন ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাব এলাকার অমৃতসর গ্রামের কাছাকাছি কোটলা সুলতান সিংয়ের অধিবাসী হাজী আলী মোহাম্মদের ষষ্ঠ সন্তান হিসেবে জš§গ্রহণ করেন মোহাম্মদ রফি। সংগীতশিল্পী মোহাম্মদ রফির ডাক নাম ছিল ফিকো। তার নিজ গ্রামে এক ফকিরের ভজন গানকে অনুকরণ করে গান গাওয়া শুরু করেন তিনি। জীবিকার সন্ধানে তার বাবা হাজী আলী মোহাম্মদ ১৯২০ সালে লাহোরে চলে যান এবং ভাট্টি গেটের নূর মহল্লায় একটি স্যালুনের মালিক হন। তার বড় ভাই মোহাম্মদ দ্বীনের বন্ধু আবদুল হামিদ লাহোরে অবস্থানকালীন সময়ে রফির সংগীত প্রতিভা দেখে তাকে গান গাইতে সাহস জুগিয়েছিলেন। আবদুল হামিদ পরবর্তী সময়ে তার পরিবারের বড়দের কাছ থেকে সম্মতি আদায় করে রফিকে মুম্বাই পাঠান। ১৯৪৪ সালে মোহাম্মদ রফি বোম্বে গেলে সঙ্গী হিসেবে তার সঙ্গে আবদুল হামিদও গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলী খান, ওস্তাদ আবদুল ওয়াহিদ খান, পণ্ডিত জীবনলাল মত্তো এবং ফিরোজ নিজামীর মতো প্রথিতযশা শিল্পীদের কাছ থেকে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতে তালিম নেন।
১৩ বছর বয়সে রফি লাহোরের প্রথিতযশা শিল্পী কে. এল. সাইগলের সঙ্গে জীবনের প্রথম দর্শক-শ্রোতাদের মুখোমুখি হয়ে কনসার্টে গান পরিবেশন করেন। ১৯৪১ সালে শ্যাম সুন্দরের নির্দেশনায় লাহোরে নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী হিসেবে নিজেকে অভিষেক ঘটান। পাঞ্জাবি ভাষায় নির্মিত গুল বালুচ (১৯৪৪ সালে মুক্তি পায়) চলচ্চিত্রে জিনাত বেগমের সঙ্গে দ্বৈত সংগীত ‘সোনিয়ে নি, হেরিয়ে নি’ গানটি গান। একই বছরে মোহাম্মদ রফি অল ইন্ডিয়া রেডিও’র লাহোর সম্প্রচার কেন্দ্রে গান পরিবেশনের জন্য আমন্ত্রণ পান।
সংগীত কলায় অসামান্য অবদান রাখায় শ্রেষ্ঠ গায়ক হিসেবে জাতীয় পদক এবং ৬-বার ফিল্মফেয়ার পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন মোহাম্মদ রফি। এ ছাড়াও, ১৯৬৭ সালে ভারত সরকার প্রদত্ত পদ্মশ্রী সম্মানেও অভিষিক্ত হয়েছেন। প্রায় চল্লিশ বছর সময়কাল ধরে সংগীত জগতে থাকাকালীন ছাব্বিশ হাজারেরও অধিক চলচ্চিত্রের গানে নেপথ্য গায়ক হিসেবে সম্পৃক্ত ছিলেন মোহাম্মদ রফি। তিনি বহুবিধ গানে অংশ নেয়ার বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। তš§ধ্যে শাস্ত্রীয় সংগীত, দেশাত্মবোধক গান, বিরহ-বিচ্ছেদ, উচ্চ মার্গের প্রেম-ভালবাসা, কাওয়ালি, ভজন, গজলসহ বিভিন্ন গোত্রের গানে দক্ষতা ও পারদর্শিতা দেখিয়েছেন সমানভাবে। বিশেষ করে হিন্দি এবং উর্দু ভাষায় সমান দক্ষতা থাকায় তার গানগুলোতে বৈচিত্র্যতা এসেছে সমধিক। তিনি হিন্দিসহ কোনকানি, উর্দু, ভোজপুরী, উড়িয়া, পাঞ্জাবি, বাংলা, মারাঠী, সিন্ধী, কানাডা, গুজরাতি, তেলেগু, মাঘী, মৈথিলী, অহমিয়া ইত্যাদি ভাষায় গান গেয়েছেন। এছাড়াও আরো গান গেয়েছেন- ইংরেজি, ফার্সি, স্প্যানিশ এবং ডাচ ভাষায়। প্রায় চার দশকের গানের ভুবনে অসাধারণ অবদানের জন্য মোহাম্মদ রফি সব সময়ের, সব কালের ও সব বিষয়ের শিল্পী হিসেবে পরিগণিত হয়ে আছেন। ১৯৮০ সালের ৩১ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

0 comments:

Post a Comment