Tuesday, March 20, 2018

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের বিপদ

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের বিপদ 
আলী ফোরকান
প্রয়াত বুদ্ধিজীবী ড. মযহারুল ইসলাম একটি জাতীয় দৈনিকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের বিপদ সম্পর্কে লিখেছিলেন। তার ভবিষ্যদ্বাণী অÿরে অÿরে ফলে যাচ্ছে। একটি জাতীয় দৈনিকে ‘রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সরকার’ শিরোনামের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনটি পড়ে আতঙ্কিত হয়েছি। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের মতো একটি সমস্যাবহুল দেশে বহুমাত্রিক বাড়তি সমস্যা তৈরি করে যাচ্ছে।
এমনিতে এক গাছের বাকল অন্য গাছে লাগে না। এটা প্রকৃতিরই নিয়ম। কোনো শাস্ত্রীয় তন্ত্রমন্ত্র বা শেøাক প্রকৃতির নিয়ম পাল্টাতে পারবে না। এক দেশের নাগরিক অন্য দেশে খাপ খাবে না, তারা বহিরাগত হিসেবে বিপত্তি বাধাবেই বাধাবে। রোহিঙ্গারাও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নানা বিপত্তি, অনাসৃষ্টি করছে। জাতিসংঘ এবং বাংলাদেশের দাতা দেশগুলোর অনুরোধে বাংলাদেশ সরকার বাধ্য হয়েছিল মিয়ানমারের মুসলিম নাগরিক রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে। মানবতার খাতিরে তা না দিয়েও পারেনি। সেই অনুরোধ এখন বাংলাদেশের অ¯িÍত্ব সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোহিঙ্গাদের কারণে দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ÿুণœ হচ্ছে। এতে বাংলাদেশ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে। সৌদি আরবে বহু বছর যাবৎ বাংলাদেশের শ্রমিক, কর্মজীবী, চাকরিজীবীরা নিরিবিলি সততার সঙ্গে কাজ করছে, বেতন পাচ্ছে, দেশে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে। এর মধ্যে রোহিঙ্গারা যেহেতু মুসলমান সে সুযোগে বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে, বাংলাদেশি নাগরিক পরিচয় দিয়ে সৌদিতে ঢুকে নানা অপকর্ম বাধাচ্ছে। বদনাম হচ্ছে বাংলাদেশের। এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সুদূরপ্রসারী। বেকারত্বের ভারে জর্জরিত বাংলাদেশ। বিদেশে লাখ লাখ বাংলাদেশি নাগরিক পাড়ি দিচ্ছে কর্মের জন্য। সেখানে ভিনদেশি নাগরিক যদি বাংলাদেশি পরিচয়ে চাকরি নেয়, তাহলে বাংলাদেশের কোটা কম হলো না? তারপর যদি বাংলাদেশি পরিচয়ে নানা অপকর্ম করে, তাহলে বাংলাদেশের কর্মজীবীদের ওপর, সরকারের ওপর তার বিরূপ প্রভাব পড়ে না? দেশের অর্থনৈতিক অ¯িÍত্ব বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয় না? জানা গেছে, এ বছর ৯৪ হাজার হজযাত্রীর মধ্যে ৪০ হাজার টাকা জমা দিয়েছে। এই ৪০ হাজার হজযাত্রীর মধ্যে ২০ হাজারই রোহিঙ্গা। এরা হজের নাম করে সৌদি আরব যাচ্ছে। এরা যদি হজ শেষে ফিরে না এসে সৌদিতেই থেকে যায়, নানা কর্মে ঢুকে অনুপ্রবেশ করে বদনাম সৃষ্টি করে, তাহলে সে অপযশ বাংলাদেশের ঘাড়ে এসে পড়বে, বাংলাদেশ তার বাজার হারাবে। তদুপরি সামনের বছর সৌদি আরবে হজে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হবে। মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন বাংলাদেশে অবৈধ পন্থায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছে। তারা নির্ধারিত ক্যাম্পে থাকছে না, সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যেখানে মাত্র ২৭ হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান করার কথা, সেখানে এক লাখেরও ওপরে রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আছে বলে গোয়েন্দা সংস্থা সরকারকে জানিয়েছে। এরা নানা অপকর্মে জড়িয়ে বাংলাদেশের পরিবেশ জটিল করছে। আজকাল দৈনিক পত্রিকাগুলো খুললেই দেখি ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশে, বিশেষত সীমান্তগুলোতে মাদক ব্যবসা ভয়ংকর আকার ধারণ করছে। এই মাদক চোরাচালানের সঙ্গে রোহিঙ্গারা জড়িত। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের বিভ্রান্ত একটি অংশ মাদক সেবন এবং নেশাকর দ্রব্যের শিকার হয়েছে। এই সর্বনাশের আগুনে হাওয়া দিচ্ছে মাদক চোরাচালানিরা, এদের মধ্যে রোহিঙ্গাও আছে। রোহিঙ্গারা গোপনে বাংলাদেশের আন্ডারগ্রাউন্ডের জঙ্গিদের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছে। মাদক ব্যবসার অর্থ জোগান দিচ্ছে জঙ্গিদের। তাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি আছে বলেও জানা গেছে। বর্তমান সরকারের জন্য রোহিঙ্গারা বেশ উদ্বেগজনক। রোহিঙ্গারা ধর্মের দোহাই দিয়ে ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে দলে দলে প্রবেশ করছে? কারণ মিয়ানমারে গণতন্ত্র নেই, সুশাসন নেই। ওখানকার গণতন্ত্রের নেত্রী, নোবেল প্রাইজপ্রাপ্ত অবিসংবাদিত নেত্রী অং সান সু চিকে বছরের পর বছর গৃহবন্দি করে রেখেছে সামরিক জান্তা সরকার। এই অগণতান্ত্রিক, অবরুদ্ধ পরিবেশে রোহিঙ্গা নামে পরিচিত নাগরিকরা পীড়নের শিকার হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। অর্থাৎ প্রতিবেশী একটা দেশে গণতান্ত্রিক শাসন না থাকলে পাশের দেশকেও তার খেসারত দিতে হয়। আজ প্রায় ২৬ বছর হলো, মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের বুকের ওপর অবস্থান নিয়েছে। তাদের ফেরত নেয়ার নাম নেই। উল্টো সীমান্ত দিয়ে নতুন নতুন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে নানামুখী ক্রাইমের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর কয়েক লাখ বিহারি বাংলাদেশে আটকা পড়ে। বহু চেষ্টা, তদ্বির, দেন-দরবার করেও ওই আটকে পড়া বিহারিদের পাকি¯Íানে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। কয়েক লাখ বিহারিকে দরিদ্র বাংলাদেশকে ভাত, কাপড়, জায়গা-জমি, ভোটাধিকার দিতে হচ্ছে অর্ধশতাব্দী ধরে। এর ওপর বিপত্তির নতুনমাত্রা যোগ হলো রোহিঙ্গাদের নিয়ে। যে কোনো উপায়ে হোক, নিত্য নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে হবে। না হলে বাংলাদেশের অ¯িÍত্ব বিপন্ন হবে। রোহিঙ্গারা আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালান এবং অস্ত্র চালানের রুট হিসেবে ব্যবহার করছে বাংলাদেশকে। দাতা সংস্থা এবং জাতিসংঘের মাধ্যমে সরকারের উচিত মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা, যাতে তারা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরত নিয়ে নেয়। অবৈধ পথে অনুপ্রবেশকারীদের কঠোর হ¯েÍ পুশব্যাকের উদ্যোগ নেয়া উচিত। কোনো রকম শিথিল চিন্তা এ ÿেত্রে বিপদ বাড়িয়ে দেবে। 

0 comments:

Post a Comment