Tuesday, October 8, 2013

মার্কিন আগ্রাসনের কবলে মুসলিম বিশ্ব




gvwK©b AvMÖvm‡bi Ke‡j gymwjg wek¦ 
†dviKvb Avjx
 যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ প্রস্তুতি নিচ্ছে না। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্ডোলিসা রাইস বলেছেন, ভাইস-প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি এই নীতি সমর্থন করেন। সম্প্রতি ইউরোপ সফরের শেষ পর্যায়ে স্পেনে তিনি একথা বলেন। কন্ডোলিসা রাইস বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট আমাদের ইরান নীতি পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন। মন্ত্রী পরিষদের সব সদস্য এবং ভাইস-প্রেসিডেন্টও এই নীতি সমর্থন করেছেন। সম্প্রতি জাতিসংঘের পরমাণু কর্মসূচি নজরদারি সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ এল বারাদি মন্তব্য করেছেন যে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নতুন করে এক ধরনের উগ্র মনোভাব লক্ষ্য করা যায়। যারা চান ইরানে বোমা বর্ষণ করা হোক। তিনি এ ধরনের চিন্তাধারার প্রতি সতর্ক হওয়ার জন্য বিবিসি সাক্ষাৎকারে যে বক্তব্য রেখেছেন, তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী উপরোক্ত মন্তব্য করেন। কন্ডোলিসা রাইস বলেন, ইরান জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের কাছ থেকে সঠিক বার্তাই পাচ্ছে। তারা ইতিপূর্বে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি প্রশ্নে দু’দফা অবরোধ জারি করেছে। কাজেই তিনি আশা করেন, আগামীতেও আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থা থেকে আরো জোরালোভাবে সঠিক বার্তাটিই যাবে। এদিকে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রবার্ট গেটস পরমাণু কর্মসূচি প্রশ্নে ইরানের ওপর জোরালো অবরোধ জারির পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। তিনি সতর্কবাণী উচ্চারণ করে একথাও বলেন যে, সামরিক হস্তক্ষেপ কোন সমাধান নয়, কারো জন্যই নয়। তিনি বলেন, প্রত্যেকেই বিষয়টির কূটনৈতিক সমাধান চায়। সিঙ্গাপুরে এশিয়ার নিরাপত্তা বিষয়ক এক সম্মেলনে বক্তব্য রাখার সময় তিনি একথা  বলেন। ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ার পরিকল্পনা রুখে দিতে না পারলে নিজেরাই ওই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় যোগ দিয়ে নিজেকে নিরাপদে রাখতে চাইছে রাশিয়া। অন্য ইউরোপীয় দেশকে সঙ্গে নিয়ে ক্রেমলিন এমন একটি বিকল্প ব্যবস্থা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। যাতে করে ওয়াশিংটন ও মস্কো উভয়েরই মানরক্ষা হয়। মার্কিন পরিকল্পনার বিপরীতে প্রেসিডেন্ট ভøাদিমিরি পুতিনের একের পর এক বিকল্প প্রস্তাব আর ক্রেমলিনের সাম্প্রতিক কূটনীতিক একথা এখন স্পষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট বুশের কেনিবাঙ্কপোর্টের বাড়িতে বুশ-পুতিন অন্তরঙ্গ বৈঠকে ক্ষেপণাস্ত্র ইসুতে নতুন করে শুরু হওয়া রুশ-মার্কিন স্নায়ুযুদ্ধের শীতল আবহ আপাতত দূর হলেও সমস্যা সমাধানের কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। তবে মস্কো ভিত্তিক উন্নয়ন সহায়তা সংস্থা ‘ইউএসএ এন্ড কানাডা ইনস্টিটিউট’-এর উপ-প্রধান ভিক্টর ক্রেমেনিউক বলেছেন, ‘অবশ্যই এক ধরনের বিবর্তন ঘটে গেছে এ ইস্যুতে।’ ক্রেমেনিউক বলেন, ‘মুখোমুখি অবস্থানের কারণেই আরো বেশি ভারসাম্যপূর্ণ একটি প্রক্রিয়া শুরুর পথ সৃষ্টি হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘তার (পুতিনের) প্রস্তাব থেকে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, একটা বৈশ্বিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাই সবচেয়ে অর্থবহ হয়ে উঠতে পারে। তাতে আমাদেরও অবদান রাখার সুযোগ আছে।’ এ ধরনের একটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় রাশিয়ার যোগ দেওয়াটা মস্কোরই স্বার্থরক্ষা করবে। কারণ, এর মধ্য দিয়ে রাশিয়া নিশ্চিত হতে চাইবে যে, এ ব্যবস্থার লক্ষ্যবস্তু তারা নিজেরা নয়। অবশ্য তা সত্ত্বেও আত্মরক্ষার বিষয়ে পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে পারছে না রাশিয়া। মস্কোর একনম্বর উপ-প্রধানমন্ত্রী সের্গেই ইভানভ গত সপ্তাহে বলেছেন যে, এরপরও যদি যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র পরিকল্পনা চলতে থাকে তাহলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে নিজের সীমানায় নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা গড়ে তুলবে রাশিয়া।
এদিকে ইরাক বিশেষজ্ঞরা বলছেন,বিশ্বের সব দেশের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার রক্ষাকবচ নামে পরিচিত জাতিসংঘ সত্যই ইঙ্গ-মার্কিন শক্তির কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। জাতিসংঘের অনুমতি ছাড়াই ইরাককে তারা ধ্বংস করে চলেছে। তারপর জাতিসংঘের অনুমতি ছাড়াই ইরাকের জনগণের ওপর নিজের লোকদের নিয়ে গঠিত সরকারকেও চাপিয়ে দিল। ইরাকের অপরাধ ছিল সাদ্দাম হোসেন ব্যাপক বিধ্বংসি অস্ত্র তৈরি করেছে।  এখন ইরাক ইঙ্গ-মার্কিন শক্তির অধিকৃত হয়েছে, কিন্তু তারা আজ পর্যন্ত কোন নিষিদ্ধ অস্ত্রের খোঁজ পায়নি। অথচ এই অপরাধেই সাদ্দাম সরকারকে হটায়ে তাকেসহ তার সরকারে অনেককে ফাঁসিতে ঝুঁলানো হয়েছে। বরং ইঙ্গ-মার্কিন শক্তি ইরাকের ২ কোটি ৬০ লক্ষ মানুষের ওপর ক্লাষ্টার, নোয়াবের মতো বিধ্বংসী রাসায়নিক বোমা নিক্ষেপ করে ইরাকের মাটিকে দূষিত বিষাক্ত করছে প্রতিনিয়ত। এককালের ব্যাপক সমৃদ্ধ বাগদাদ আজ ভূতুড়ে শহরে পরিণত হয়েছে। খাদ্য নেই, পানি নেই, গ্যাসসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিছুই নেই সমগ্র ইরাকে। এক  দশকের ইউ এন নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত ক্ষুধার্ত ইরাকীদের ওপর ইঙ্গ-মার্কিন হামলা হচ্ছে মরার ওপর খাঁড়ার ঘা। প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ নিষেধাজ্ঞার কারণে তৎসময় মারা যায়। মোট কথা মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে ধনী, শিক্ষিত, ইরাকী জাতিকে প্রথমে ইউ এন নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে গরীব বানিয়ে ফেলা হয়। পরে বোমা হামলা করে সবকিছু ধ্বংস করে ভিক্ষুক জাতিতে পরিণত করা হচ্ছে। শিক্ষা-দিক্ষা ও সাংস্কৃতিকভাবে পঙ্গু করার জন্য ইরাকের সবচেয়ে বড় লাইব্রেরী, মিউজিয়াম লুট করা হয়েছে। ইরাকীদের নৈতিকভাবে দুর্বল জাতি প্রমাণের জন্য বলা হলো এসব লুট করেছে ইরাকীরাই। কিন্তু পরে থলের বিড়াল বেরিয়ে এল। এখন শোনা যাচ্ছে, মার্কিন সৈন্যরা এসব লুট করে নিয়ে গেছে। এসব অভিযোগ বেশ কিছু মার্কিন সৈন্য ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এখন তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চালানো হচ্ছে। ইঙ্গ-মার্কিন জোটের সাথে থাকা ৬ শত এমডেড নামে পরিচিত সাংবাদিক পর্যন্ত লুটপাটে অংশ নিয়েছে।
শোনা যাচ্ছে সাদ্দামের পতনকে ত্বরান্বিত করতে ইঙ্গ-মার্কিন সেনারা আগেই ফেদাইন ও শক্তিশালী রিপাবলিকান গার্ড বাহিনীকে ঘুষ দিয়ে কব্জা করেছিল। তাদের বিশ্বাসঘাতকতা যদি সত্য হয় তবে তারা ইতিমধ্যেই বুঝতে ও জানতে পেরেছে যে ইরাকের ভবিষ্যৎ সামনে আরো অন্ধকারাচ্ছন্ন হতে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষও তেমন পরিণতির কথা উড়িয়ে দিচ্ছে না। কারণ যুদ্ধ শুরু পর পদে পদে মার্কিন বাহিনী চরম মার খায়। তাদের মনোবলও বেশ ভেঙ্গে পড়েছিল। অন্যদিকে ইরাকী সৈন্যরা অমিত তেজে দখলকারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। কিন্তু দেখা গেল বাগদাদে সেই সৈন্যরা কোন প্রতিরোধ গড়া ছাড়াই পালিয়ে গেল বা বিশ্বাসঘাতকতা করল। বাগদারের পতন এতো দ্রুত বাস্তবায়িত হওয়ায় অনেকের মনেই বিশ্বাস জন্মেছে, ফেদাইন ও রিপাবলিকান গার্ড সৈন্যরা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। বাগদাদ পতনের পরও তাদের প্রতিরোধ গড়ার কোন খবর পাওয়া যায়নি। সাড়ে ৩ লাখ সৈন্য গেল কোথায়? এ প্রশ্ন তখন সবার মুখে মুখে ছিল। কয়েকশ জঙ্গী বিমানের একটিও কেন একবারও আকাশে উড়ল না।  এসব নিয়ে এখনও মানুষের মনে খটকা লেগেই আছে। কেউ কেউ আবার বলছেন হয়ত খোদ সাদ্দামই ইরাকীদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। কিন্তু তার সম্ভাবনা ছিলনা বললেই চলে।
সাদ্দামের শূণ্যস্থান পূরণে যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘকে ছাড়াই ইরাকে নিজ ইচ্ছামত সরকার বসায় । যুক্তরাষ্ট ইরাকের তেলকে টার্গেট করে ইরাক দখল করে। তেল লুট করার জন্য কারজাই টাইপের ইয়েস প্রেসিডেন্টকে ক্ষতায় বসায় । মোট কথা ইসরাইলের বন্ধু হবে এমন ব্যক্তিকে ক্ষমতায় বসানো হবে তা আগে থেকেই ঠিক করা হয়ে ছিল।  কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের তেমন ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে ইরাকীদের বাগড়া দিতে ব্যাপক বিক্ষোভ মিছিল  শুরু করছে। দেশটির সংখ্যাগুরু শিয়ারা এখন বলছে সাদ্দামের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র বেশি খারাপ। তারা মার্কিনের চাপানো কোন সরকার মেনে নেবে না বলেই ঘোষনা দিয়েছে। আম্মানে ৬ আগষ্ট সোমবার অক্সফাম এবং ইরাকের বেসরকারি সংস্থাসমূহের কোয়ালিশন প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রায় ৮০ লাখ ইরাকির জরুরি ত্রাণ সহযোগিতা প্রয়োজন। এ উদ্বেগজনক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ৪০ লাখ ইরাকি খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে এবং তাদের বিভিন্ন ধরনের মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। এছাড়া ২০ লাখেরও বেশি ইরাকি দেশের ভেতরেই স্থানচ্যুত হয়েছে এবং ২০ লাখেরও বেশি ইরাকি শরণার্থী হিসেবে জীবন যাপন করছে। ‘রাইজিং টু দ্য হিউম্যানিটেরিয়ান চ্যালেঞ্জ ইন ইরাক’ শীর্ষক এ রিপোর্টে আরো বলা হয়, এসব ইরাকির অনাকাক্সিক্ষত দুঃখ-দুর্দশা হ্রাসে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলো আরো বেশি মানবিক সহায়তা প্রদান করতে পারে। অক্সফাম এবং এনজিও কো-অর্ডিনেশান কমিটি ইন ইরাক (এনসিসিআই)-এর যৌথ রিপোর্টে সতর্ক করে বলা হয়েছে, ইরাকের চলমান সহিংসতা বড় ধরনের মানবিক সংকট সৃষ্টি করছে। এ দিকে ইরাকিদের জন্য খাবার,পানি,আশ্রয় এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হয়ে নুরি আল মালিকির কোয়ালিশন সরকার থেকে আরো ৪ মন্ত্রী পদত্যাগ করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, আমেরিকা শিয়া-সুন্নির ভেতর বিরোধ বাঁধিয়ে দিয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্র“পের প্রধান ইরাক বিশেষজ্ঞ হুস্ট হিল্টারম্যান বলেছেন, এত সব সমস্যা নিয়ে মালিকি সরকার টিকবে না।  মোট কথা ইরাকে এখন গৃহযুদ্ধের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে।
গেরিলা যুদ্ধের জন্য ইরাক কোন উপযুক্ত স্থান নয় বলেই যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে তিয়েতনামের মতো পরাজিত হবার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে। তবে গনসংগ্রাম বা স্বাধীনতার সংগ্রাম শুরু হলে তা হবে ভয়াবহ। কারণ কোন জাতির মুক্তির সংগ্রাম ঠেকানো বেশ শক্ত। তেমন ইঙ্গিতই দেখা যাচ্ছে ইরাকীদের সাম্প্রতিক মনোভাবে। আত্মঘাতী বোমা হামলা ইদানিং যেখানে যুক্তরাষ্ট্র বলছে ইরান শিয়াদের মার্কিনিদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলছে। ইরান নাকি ইরাকে ইসলামপন্থী সরকারও প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। এ অজুহাতে ইরান সীমান্তে যুক্তরাষ্ট্র সেনা সমাবেশও ঘটিয়েছে। মাঝখানে যেমন শোনা যাচ্ছিল যে ইরাকের পর যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়াকে টার্গেট করবে। বর্তমান সময়ে আরব চাপে হয়ত যুক্তরাষ্ট্র সে পরিকল্পনা কিছু সময়ের জন্য স্থগিত করেছে। আর সিরিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিনের অভিযোগ তুলে ছিল তারা সাদ্দাম ও তার শীর্ষ সহযোগীদের আশ্রয় দিয়েছিল। যুদ্ধের সময় সিরিয়া ইরাকী সৈন্যদের অস্ত্রও দিয়েছে। কিন্তু সে অভিযোগের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র কোন প্রমাণ দিতে পারেনি। তাই বৈশ্বিক ও আরব চাপে সিরিয়াকে এই মুহুর্তে টার্গেট না করে যুক্তরাষ্ট্র এখনই ইরানকে টার্গেট করেছে। ইরানের বিরুদ্ধে অভিযোগ ইরান পরমাণু বোমা তৈরী করেছে। সম্প্রতি আবার ইরানী প্রেসিডেন্ট মোঃ খাতামী স্বীকার করেছেন ইরান ইউরোনিয়ামের উন্নয়ন ঘটিয়েছে এবং তারা পরমাণুর বিদ্যুৎ প্লান্ট তৈরী করেছে। যার ফলে যুক্তরাষ্ট্র আরো সামনে বাড়িয়ে বলছে ইরান সন্ত্রাসবাদে সমর্থন দেয়ার সাথে সাথে ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্রও তৈরী করেছে। এবার ইরাক যুদ্ধের পর ইরান নাকি শিয়া নেতাদের ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম শুরু করতে উদ্ভুদ্ধ করেছে। ইরানী রাষ্ট্রীয় এজেন্টরা নাকি এ কাজে খুব তৎপর। এ জন্যই যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর হামলা করতে চাচ্ছে। ইসরাইলের শত্র“দের খতম করার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র আঞ্চলিক নতুন পরিস্থিতি তৈরী করতে চাচ্ছে। যে পরিস্থিতিতে ইরাক, ইরান ও সিরিয়াকে দমন করার কথা আছে। এর মধ্যে প্রথম শত্র“ ইরাকের শাসক উৎপাটিত হয়েছে। এরপর তালিকায় ইরান সিরিয়া রয়েছে। তারা আজ না হোক কাল ইরাকের ভাগ্যবরণ করুক এবং ইসরাইল শত্র“মুক্ত থাকুক যুক্তরাষ্ট্র সেটাই চায়। এর মধ্যে আবার আরব জাতীয়তাবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। যেটা পরবর্তীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ উদ্ধারের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ কারণে সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্র অন্তত ইরানকে দমন করতে বেশি দেরি করতে চায় না। যুক্তরাষ্ট্র ভেবেছিল ইরাকে সবাই তাকে স্বাগত জানাবে, কিন্তু তা আর হচ্ছে না। যে কুর্দীরা মার্কিনের খুব কাছের মিত্র তারা পর্যন্ত প্রতিরোধ আন্দোলনের কথা ভাবছে। কারণ এটি নিশ্চিত তুরষ্ককে হাতে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র অবশ্যই ইরাকে একটি কুর্দী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হতে দেবে না। আবার শিয়া ও সুন্নীরা একত্রিত হয়ে মার্কিন বিরোধিতায় নেমেছে। অথচ যুক্তরাষ্ট্র ভেবেছিল শিয়া, সুন্নী ও কুর্দীদের মধ্যে জাতিগত সংঘাতের সুযোগে সে ইরাকের ওপর দখলদারিত্বকে শক্ত করবে। কিন্তু তা হচ্ছে না বলেই যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা বেকায়দায় আছে। ইরাকীদের বর্তমান গণজাগরণ যে সামনের দিনগুলোতে গণপ্রতিরোধ বা গেরিলা যুদ্ধে রূপ নেবে না তা কেউ বলতে পারছে না। গেরিলা যুদ্ধ শুরু হলে সবচেয়ে দুঃখিত হবে যে রাষ্ট্র সে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ইরাকীরা একত্রিত হলে এটা নিশ্চিত যে ইরাক ত্যাগ করা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সামনে কোন পথ থাকবে না।
ইহুদিপ্রেমী গার্নার ইরাকের বস: পেন্টাগন যার হাতে সাদ্দাম-পরবর্তী ইরাকের নেতৃত্ব তুলে দেয়ার আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তার নাম জিম গার্নার তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত একজন জেনারেল ও অস্ত্র ব্যবসায়ী। আরবরা তাকে অবিশ্বাস করলেও ইসরাইল তাকে খুব বিশ্বাস করে। মধ্যপ্রাচ্যে একটি শক্তিশালী ইহুদি রাষ্ট্রের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাকে তিনি জরুরি মনে করেন। এই গার্নারই ইরাকের নেতৃত্বে গ্রহন করতে যাচ্ছেন। তবে ইরাকে তিনি যে পদটির দায়িত্ব রয়েছেন সেই পদের পোশাকি নাম ‘অফিস অব রিকনস্ট্রাকশন অ্যান্ড হিউম্যানিট্যারিয়ান অ্যাসিসট্যান্স’। তবে পোশাকি নাম খুলে ফেলে প্রচারমাধ্যমগুলো তাকে ইরাকের ভবিষ্যতের বাদশা, ভাইসরয়, বাগদাদের শেরিফ এসব নামে ডাকতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে ইরাকের তেল সম্পদের দেখভাল করার কাজটিও তার হাতে রয়েছে।
গার্নারের পরিচয় ঃ ১৯৩৮ সালের ১৫ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রে গার্নারের জন্ম। সেনাবাহিনীতে যোগ দেন ২২ বছর বয়সে। তিনি ভিয়েতনামে যুদ্ধ করেন। ১৯৯৬ সালে সিনাবাহিনীর অ্যাসিষ্ট্যান্ট ভাইস চিফ অব
ষ্টাফের পদ থেকে অবসর নেন। অবসর গ্রহণের আগে তিনি কৌশলগত ক্ষেপনাস্ত্র প্রতিরক্ষা কর্মসূচীতে যুক্ত ছিলেন। সোভিয়েট ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের তারকা যুদ্ধকালে তার নেতৃত্বে কৌশলগত ক্ষেপনাস্ত্র প্রতিরক্ষা বেশ সাফল্য দেখায়। এরপর থেকেই তাকে তারকা যুদ্ধের শুরু খেতাব দেয়া হয়। ফিলিস্তিন ইস্যুতে গার্নার কট্টর ইহুদিবাসী। সাদ্দামবিরোধী কুর্দ্দীদের সঙ্গে তার ভালো যোগাযোগ আছে। মূলধারা ইরাকিরা বা সুন্নিরা তার সম্পর্কে বিশেষ কোনো ইতিবাচক ধারনা পোষন করে না। আর ৬৫ বছর বয়স্ক এই গার্নারই ২ কোটি ৬০ লাখ লোকের দেশ ইরাকের এখন অঘোষিত দন্ডমুন্ডের কর্তা।
যুদ্ধোত্তর ইরাকে কে কোন পদে বসবেন : ইরাকে যুদ্ধেপরবর্তী শান্তি ও পুনর্গঠন কার্যক্রম পরিচালনার পুরো দায়িত্ব নিয়ে নেবে মার্কিন সামরিক বিভাগের লোকেরা। এ সম্পর্কিত পুরো পরিকল্পনার নীলনকশাই যে কেবল তৈরী ছিল শধু তাই নয়, যে মার্কিন জেনারেলের অধীনে ইরাকের প্রশাসন পরিচালিত হবে সেই
সাবেক জেনারেল জিম গার্নার এবং তার সম্ভাব্য সহকর্মীদের কয়েক’শ লোক যুদ্ধ শুরু হওয়ার সাথে দায়িত্ব বুঝে নেয়ার জন্য ইরাকে এসে পৌঁছে। পেন্টাগণের নীলনকশায় মোটামুটি তিন মাস পর্যন্ত মার্কিন সমরবিদদের দিয়ে ইরাকের প্রশাসন পরিচালনার কথা বলা হয়েছে মার্কিন মানবিক সহায়তা ও পুনর্গঠন বিভাগের প্রধান অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল জিম গার্নার হবেন ইরাকে মার্কিন প্রশাসনের প্রধান। মানবিক সাহায্য কর্মসূচির দায়িত্ব নেবেন জর্জ ওয়ার্ড, পুনর্গঠনের দায়িত্ব দেয়া হবে লুইস লাককে এবং বেসামরিক প্রশাসন পরিচালনা করবেন মাইকেল মবস। তিন মাস পর একটি অন্তবর্তীকালীন ইরাকী সরকারের কাছে দায়িত্ব তুলে দেয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্র ইরাকের ২৩টি মন্ত্রণালয় পরিচালনার জন্য প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ে একজন করে উপদেষ্টা নিয়োগের পরিকল্পনা ইরাক আক্রমণের আগে থেকে করেছে। সেইসঙ্গে তারা ইরাকী মুদ্রা দিনারের পরিবর্ত সেখানে মার্কিন ডলার চালু করবে। ইরাকের নতুন সরকারের প্রবাসী ইরাকীদের অংশগ্রহণ কতটা বৈধ সেই প্রশ্নও তোলা হয়েছিল। প্রবাসী ইরাকী নেতা আহমদ চেলাবির নেতৃত্বাধীন ইরাকী ন্যাশনাল কংগ্রেসকে খুব বেশি ক্ষমতা দেয়ার বিরোধিতা করেছিল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর। সাদ্দামের নিশ্চিত উৎখাত ও ফাঁিসর পর পরিস্থিতি শান্ত হলেই অন্তবর্তী সরকারের নাম প্রকাশ করা হবে। এমন পরিকল্পনা নিয়েই মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর এগোচ্ছিল। মার্কিন নীলনক্শা একতরফাভাবে প্রণয়ন করা হলেও তার মিত্র ব্রিটেনসহ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ চায় জাতিসংঘের মাধ্যমে নতুন ইরাকী সরকারকে বৈধতা দেওয়া হোক। যুক্তরাষ্ট্রের সাফ জবাব জাতিসংঘ নয়, সব কিছু তারাই করবে।
কর্তৃত্বহীন জাতিসংঘ: ইরাকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন একতরফা সামরিক অভিযানের মধ্য দিয়ে জাতিসংঘের ভূমিকাকে অবজ্ঞা করা হয়েছে কি না তা এখন বিশ্বব্যাপী আলোচনার-বিশ্লেষনের বিষয়। একটি বিশ্ব সংস্থা হিসেবে জাতিসংঘকে যদি উপেক্ষা করা হয়েই থাতে, তাহলে তো মহাসচিব কফি আনানের পদত্যাগ করা উচিত ছিল। কিন্তু তিনি তা করেননি। তাহলে কি জাতিসংঘকে অবমূল্যায়ন করা হয়নি?  অবশ্যই হয়েছে। ইরাকে প্রথম বোমাটি পড়ার মুহুর্তেই এই বিশ্ব সংস্থাটির নৈতিক মৃত্যু হয়েছে। জাতিসংঘ যে একটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান, কার্যক্ষেত্রে যে তার কোনো ভূমিকা নেই সেটা পুনরায় প্রমাণিত হয়েছে। তাহলে এই সংগঠনটির ভবিষ্যৎ কি? প্রকৃত পক্ষে জাতিসংঘের আর কোনো ভবিষ্যৎ নেই। তারা আফগানিস্তান এবং শেষে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হামলা ঠেকাতে পারেনি। প্রশ্ন উঠতে পারে, হামলা ঠেকাতে জাতিসংঘ সর্বোচ্চ কতটুকু পদক্ষেপ নিতে পারে? অবশ্যই পারে। কারণ ইরাকে হামলা-পূর্ববর্তী প্রেক্ষাপটগুলো জাতিসংঘের মধ্যদিয়ে এসেছে। কিন্তু জাতিসংঘ হামলার অনুমতি না দিলেও যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে হামলা চালিয়ে এই সংস্থাটিকে হত্যা করেছে। জাতিসংঘের আইন অনুযায়ী অস্ত্র পরিদর্শক দলের প্রধান হ্যান্স ব্লিক্সের রিপোর্টে যদি বলাও হতো সাদ্দামের কাছে ব্যাপক বিধ্বংসী জীবানু ও রাসায়নিক অস্ত্র আছে, তবু জাতিসংঘ দ্রুত ইরাকে হামলার অনুমতি দিতে পারতো না। এ অবস্থায় জাতিসংঘ প্রথমে ইরাককে শান্তিপূর্ণভাবে নিরস্ত্র হওয়ার সুযোগ দেবে। বহু প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জাতিসংঘ ইরাকের ওপর হামলা করার অনুমতি দেবে। কিন্তু ইরাক বিষয়ে বিশ্ব একটি ভিন্ন প্রেক্ষাপট দেখলো। হ্যান্স ব্লিক্স ও আল বারাদেই রিপোর্ট দিলেন ইরাকে ব্যাপক বিধ্বংসী কোনো অস্ত্র নেই। বুশ-ব্লেয়ার বললেন, ইরাকে অবশ্যই ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র আছে। অতএব তাদের বিরুদ্ধে সামরিক হামলার অনুমতি সংবলিত দ্বিতীয় একটি প্রস্তাব পাসের চেষ্টা করে কিন্তু ব্যর্থ হলো তারা। যুক্তরাষ্ট্র বললো, জাতিসংঘের অনুমোদনের দরকার নেই। ইরাককে নিরস্ত্র করতে তারা একাই যথেষ্ট।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে জাতিসংঘ ইরাকসহ অনেক যুদ্ধই ঠেকাতে পারেনি। কিন্তু বর্তমান ইরাক যুদ্ধে জাতিসংঘকে সবচেয়ে বেশি অবজ্ঞা ও উপেক্ষা করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত জাতিসংঘের অনুমোদন ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে হামলা করে এই সংস্থাটির অস্তিত্বকে হুমকির মধ্যে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এবার যুক্তরাষ্ট্র
ইরাকের তেল লুট করে নেয়ার জন্য আবদার তুলেছে ইরাকের ওপর আরোপিত সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হোক। অথচ যুদ্ধ পরবর্তী ইরাক ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সব দেশের চাপ সত্বেও জাতিসংঘকে জড়াতে চাচ্ছে না। ইরাকের কাজ নিয়েছে মার্কিন কোম্পানি ইরাক পুনর্গঠনের নামে যে ভাগ-বাটোয়ারা পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে তা বিশদভাবে তুলে ধরা হয়েছে মার্কিন লুক আউট ম্যাগাজিনে নাওমী ক্লেইনের এক প্রতিবেদনে। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন কোম্পানিগুলো ইরাককে একটি স্বর্গরাজ্য হিসেবে ধরে নিয়েছে। যেখানে তারা ব্যবসার অফুরন্ত সুযোগ পাবে। লুক আউট ম্যাগাজিনের রিপোর্ট অনুসারে উম্ম কাসর নগরীর বন্দর নির্মাণে ৪০ লাখ ৮০ হাজার ডলারের ম্যানেজমেন্ট কন্ট্রাক্ট দেয়া হয়েছে মার্কিন কোম্পানী ষ্টিভেডরিং সার্বিসেস অব আমেরিকা (এস এস এ)। ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইরাকের সেতু সড়ক নির্মাণ থেকে শুরু করে স্কুল কলেজের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের কাজ দেয়ার জন্য মার্কিন মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। ইরাক পুনর্গঠনের কাজের চুক্তি এর মধ্যেই পেয়ে গেছে ওয়াশিংটন ও নর্থ ক্যারোলিনার দুটি প্রতিষ্ঠান। ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এআইডি ১ কোটি ডলার কাজের মধ্যে ৭০ লাখ ৯০ হাজার ডলার কাজের চুক্তি বন্টনের কথা জানিয়েছে। অন্যদিকে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির হ্যালিবার্টন কোম্পানির সহযোগী প্রতিষ্ঠান কেবিআর ইরাকের তেল ক্ষেত্রগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের ৭শ কোটি ডলারের চুক্তি পেয়েছে।
বাথ পার্টির উত্থান ও পতন পর্ব: সমসাময়িককালে বিশ্বের অন্যতম আলোচিত-সমালোচিত শাসক, বেপরোয়া, যুদ্ধংদেহী ও সমরবিলাসী রাষ্ট্রপতি সাদ্দাম হোসেনের ইরাক শাসনের অন্যতম হাতিয়ার ছিল ক্ষমতাসীন বাথ পার্টি। ১৯৫১ সালে ইরাকে এই দলের জন্ম হয়। তবে ইরাকে বাথ পার্টির জন্মেরও ১১ বছর আগে ১৯৪০ সালে সিরিয়ার মূল বাথ পার্টির গোড়াপত্তন ঘটে। গ্রিক অর্থোডক্স মিশেল আফলাক ও সুন্নী মুসলিম নেতা সালেহ আল-দ্বীন আল মিতারসহ ফ্রান্সে লেখাপড়া করা ক্ষুদ্র একদল বুদ্ধিজীবী সিরিয়ায় বসে আরব সোস্যালিষ্ট বাথ পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। এই পার্টির প্রধান আদর্শ হচ্ছে আরব ঐক্য ও ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদ। তবে এর পাশাপশি বাথ পার্টি তখন সমাজতান্ত্রিক আদর্শও ধারণ করে। আরবী ভাষায় ‘বাথ’ শব্দের অর্থ হচ্ছে, রেনেসাঁ বা পুনর্জাগরণ।
সামরিক বাহিনীর সহযোগিতায় সংগঠিত এক অভ্যূত্থানের মাধ্যমে তৎকালীন শাসক ব্রিগেডিয়ার আবদেল করিম কাশেমকে উৎখাত করে বাথ পার্টি ১৯৬৩ সালের ৮ ফেব্র“য়ারী ইরাকের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে। তবে কয়েক মাসের মধ্যেই ব্রিগেডিয়ার কাশেমের মিত্র কর্নেল আবদেল সালাম মুহাম্মদ আরেক পাল্টা অভ্যূত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা পূর্বদখল করেন। এর আগে ১৯৫৮ সালে ব্রিগেডিয়ার আবদেল কাশেম ব্রিটিশ সরকারের সহায়তায় ক্ষমতাসীন হওয়া একনায়কতন্ত্রের পতন ঘটিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। কিন্তু বাথ পার্টি আবার সাদ্দামের আত্মীয় কর্নেল আহমেদ হাসান আল-বকরের নেতৃত্বে ক্ষমতা দখল করে নেয়। তারা দু’জনে একযোগে কাজ করতে থাকেন এবং দলীয় নেতৃত্বে প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। তখন সাদ্দাম হোসেন ধীরে ধীরে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে এগুতে থাকেন।
ষাট দশকে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যদিয়ে ইরাকের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় দ্রুত পালাবদল ঘটে। এরই এক পর্যায়ে সাদ্দাম হোসেন ১৯৬৬ সালে বাথ পার্টির সহকারী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। দুই বছরের মাথায় ১৯৬৮ সালে তিনি আরেকটি সুফল অভ্যূত্থান ঘটায়। ১৯৮০ সালে বাথ পার্টি দাবি করে, ইরাকে মোট ১৫ লাখ লোক এই দলের সদস্য যা ইরাকের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ। মূলত সামরিক বাহিনীর আদলেই গড়ে তোলা হয় বাথ পার্টির কাঠামো। প্রত্যন্ত গ্রামেও এই পার্টির তিন থেকে সাত সদস্যের সেল গঠন করা হয় বা আঞ্চলিক ও জাতীয় কমান্ডে বি¯তৃত ছিল। সাদ্দাম হোসেনের শাসনে
বাথ পার্টির বাহ্যিক নিয়ন্ত্রণ কাঠামো পরিচালিত হলেও ২০০৩ এপ্রিল তার পতনের সঙ্গে সঙ্গেই এই পার্টির সংহতি ভেঙ্গে গেছে বলেই অনেকের বিশ্বাস।অস্ত্র ব্যবসায়ীদের সুসময়: যুদ্ধের প্রথম দুই সপ্তাহে ইরাকে মার্কিন বাহিনী প্রায় ৯ হাজার বোমা নিক্ষেপ করে। মিসাইল নিক্ষেপ করে ৩ হাজারের বেশি। সামরিক-বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুর ওপর ট্যাংক, মেশিনগান, কামান ও অত্যাধুনিক রাইফেল থেকে নিক্ষিপ্ত গোলাবারুদের সংখ্যা কোটি কোটি। যুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে শত শত বিমান ও হেলিকপ্টার। শুধু ২০০৩ সালেই যুদ্ধের খরচের পরিমাণ হচ্ছে ৪০ হাজার কোটি ডলার। বাংলাদেশের মুদ্রায় দাঁড়ায় প্রায় ২৪ লাখ কোটি টাকা। বাংলাদেশ এই পরিমাণ অর্থে বর্তমান আকারের ৪০-৬০টি রাজস্ব ও উন্নয়ণ বাজেট প্রণয়ন করতে পারে। এক বছরে যুক্তরাষ্ট্রের ৪০ হাজার কোটি ডলার সামরিক বাজেটের তুলনায় ইরাকের ব্যয় মাত্র ১৪০ কোটি ডলার। অর্থাৎ প্রায় ৩০০ গুণ বেশী। যুদ্ধ স্বল্পস্থায়ী হোক কিংবা দীর্ঘস্থায়ী হোক, মার্কিন অস্ত্র ব্যবসায়ীদের উৎফুল্ল হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। যুদ্ধে যে অস্ত্র ও গোলাবারুদ ব্যবহার হচ্ছে তা পূরণ করতেই কয়েক বিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে হবে। এক হিসাবে বলা হয়, এ বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অস্ত্র বিক্রয়ের পরিমাণ ১৪০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। ২০০২ সালে এর পরিমাণ ছিল ১২৫০ কোটি ডলার। জাতিসংঘের হিসাবে অনুযায়ী ১৯৯৯ সালে বিশ্বে সামরিক খাতে ব্যয় হয় ৭৮ হাজার কোটি ডলার, ২০০১ সালে ৮৪ হাজার কোটি ডলার। বর্তমানে  অস্ত্র ব্যবসায়ীরা বছরে এর পরিমাণ এক লাখ কোটি ডলারে নিয়ে যেতে তৎপর রয়েছে। ইরাক যুদ্ধের কারণে দারিদ্রের বিরুদ্ধে বিশ্বের সংগ্রাম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশগুলো উন্নত দেশগুলো থেকে আরও কম সাহায্য পাবে। তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামো উন্নয়ণ কর্মসূচী ব্যহত হচ্ছে। এ যুদ্ধ অস্ত্র ব্যবসায়ীদের লাভ ছাড়া কোন কল্যাণ আনছে না।
গণযুদ্ধ ঠেকাতে গৃহযুদ্ধ বাধাতে চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র : মার্কিন নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন বাহিনীর বাগদাদ দখলের পর থেকে একের পর এক ঘটনা ইরাকে একটি জনযুদ্ধ শুরুর ইঙ্গিত দিচ্ছে। অন্যদিকে মার্কিনীদের সমর্থন লাভ করে ক্ষমতা দখলের নানামুখী প্রচেষ্টা দেশটিকে একটি গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। হানাদার বাহিনী দখলের পর তাদের প্রত্যক্ষ সমর্থমে শুরু হয় ব্যাপক লুটপাট। সরকারি অফিস, আদালত, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, সাধারণ মানুষের বাড়ি-ঘর, লাইব্রেরী, মিউজিয়াম, এমনকি হাসপাতালও লুটেরাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। এ ধরনের লুন্টনের ফলে শান্তিপ্রিয় ইরাকীরা ক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তায় নেমেছে। মার্কিনীদের মরাণাস্ত্রের আঘাত থেকে আত্মরক্ষা করতে এক সময় যারা বাঙ্কারে আশ্রয় নিয়েছিল। সেই ইরাকীরাই এখন রাইফেলের সামনে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করছে। ইরাকী জনগণের এ প্রতিবাদ স্বতঃস্ফুর্ত প্রতিরোধে পরিণত হচ্ছে দিন দিন।
শিয়া সম্প্রদায়ের নেতারা বরাবর সাদ্দামবিরোধী ছিল। সাদ্দামের ফাঁসির পর তারা মার্কিনীদের বিরুদ্ধে জেহাদের ডাক দিয়েছে। এ সম্প্রদায়ের শীর্ষ নেতা মোহাম্মদ আল খলিশী এবং আয়তুল্লাহ আলী সিসতানি নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রতিরোধ-এর ডাক দিয়েছেন। তিনি বলেন সাদ্দাম যুক্তরাষ্ট্রের চেওেয় ভাল ছিল। শিয়ারা এটাও জানিয়ে দিয়েছেন মার্কিন নেতৃত্বাধীন কোন ইরাকী সরকারকে তারা মেনে নেবেন না। তাদের এসব আহবান সহজেই ইরাকীদের সংগঠিত করে নতুন প্রতিরোধ যুদ্ধে নামাতে পারে। এ ধরনের প্রতিরোধ সংগঠিত হতে থাকলে  ফেদাইন ও রিপাবলিক গার্ড ও অন্যান্য বাহিনীর আঘাত নিরস্ত্র যোদ্ধারা তাদের সাথে যোগ দিতে পারেন। এ ধরনের যুদ্ধ শুরু হলে মার্কিন বোমা হামলার নিহত হাজার হাজার ইরাকীর আত্মীয় পরিজনরাও হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না। আফগাস্তিানে বছরের পর বছর গৃহযুদ্ধ বাধিয়ে রেখে যেভাবে তাদেরকে বিভক্ত করে রেখেছে মার্কিনীরা। ইরাকের তেল সম্পদ লুটপাটের সুবিধার্থে এখানেও সে ধরনের পরিস্থিতি তৈরী করছে। ফলে দেশটিকে একটি দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধের মুখে ঠেলে দিচ্ছে আমেরিকা। সামগ্রিক ঘটনাবলী ইরাকে এমন যে মার্কিনীদেরকে ভিয়েতনামের মতো আরেকটি পরাজয়ের মুখে পড়তে হতে পারে। কারণ কোনো দেশের জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে একটি হানাদার বাহিনী কখনেই জয়ী হতে পারে না। আর এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে মাকির্নীদের বাঁচার একমাত্র পথ ইরাকী জনগনের উপর একটি গৃহযুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া। আর ইরাকীদের সামনে এখন দুটি
সম্ভাবনা জনযুদ্ধের মাধ্যমে নিজেদের দেশকে হানাদারমুক্ত করার প্রচেষ্টা অথবা গৃহযুদ্ধের মাধ্যমে দেশকে ভবিষ্যৎ ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া।
আরব জাতীয়তাবাদের উত্থান: ইরাকে ইঙ্গ-মার্কিন আক্রমনের প্রতিক্রিয়ার মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে আরব জাতীয়বাদের ঢেউ উঠতে শুরু করেছে। পাশাপাশি মুসলিম দুনিয়ায় মরক্কো থেকে ইন্দোনেশিয়ার ব্রিটিশ-
মার্কিনবিরোধী ইসলামী চেতনাও বাড়ছে। আরব দেশগুলোতে লাখ লাখ আরব জনসাধারণ যুদ্ধের প্রথম দিকে জোটসেনা প্রতিরোধে ইরাকী ফৌজের লড়াইয়ে গর্বিত হয়। আরব দেশে দেশে জনবিক্ষোভ ব্যাপক দেখা যায়। কায়রোর আল-আহরাম সেন্টার ফর ষ্ট্রাটেজিক ষ্ট্যাডিজের মুহম্মদ সাঈদ বলেছিলেন, ইরাকীদের প্রতিরোধ লড়াইয়ে এতদিন ঢেকে রাখা আরব ভাবমূর্তি আবার জেগে উঠেছে। ৩/৪ দশক পর আবার আরবদের আত্মমর্যাদার বিষয়টি পুনরুত্থিত হয়েছে। ১৯৫০ ও ’৬০ এর দশকে মিসরের প্রেসিডেন্ট জামাল আবদেল নাসের জাতীয়তাবাদের নায়ক হয়ে উঠেছিলেন। এবার শহীদ হওয়ার আগ পর্যন্ত নায়ক হয়ে উঠেছিলেন সাদ্দাম হোসেন। ইরাক যুদ্ধের প্রতিবাদে মিসর লেবাননসহ সবকটি আরব দেশে বিক্ষোভকারীদের হাতে দেখা গিয়েছিল  সাদ্দাম ও নাসের ছবি। শ্লোগানও উঠেছিল সাদ্দাম ও
নাসের’র নামে। নতুন আরব জাতীয়তাবাদের ডাক দিয়ে কয়েকটি মিসরীয় এনজিও আরব সরকারগুলোকে মার্কিন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বাস্তবোচিত পদক্ষেপ নিতে আহবান জানায়। একই সঙ্গে আরবভূমির সংস্কার, সাংস্কৃতিক সম্পর্ক উন্নয়নের কথাও বলা হয়েছে। ইরাক যুদ্ধে উদ্ভুত ক্রোধে এবং ক্ষোভে আরবদের ভিতর রাজনৈতিক চেতনা ছড়িয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে আরব দেশের সরকারের ভূমিকার সমালোচনায় জনগণ মূখর। জর্দানের বাদশাহ আব্দুল্লাহ মার্কিন ফৌজকে ঘাঁটি করতে দিয়েছেন। জনক্ষোভের চাপে তিনি জোট সৈন্যদের হানাদার ও ইরাকে মার্কিন হামলায় নিহতদের শহীদ আখ্যা দিয়েছেন। আরব জাতীয়তাবাদের উত্থানের প্রেক্ষাপটে ৪ হাজার স্বেচ্ছাসেবী আরব ইরাক যুদ্ধে অংশ নেয়। লেবাননের শিয়া জঙ্গী সংগঠন হিজবুল্লাহ’র নেতা শেখ হাসান নসরুল্লাহ উগ্র জাতীয়তাবাদী লড়াইয়ের ডাক দিয়ে ইরাক লড়াইকে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী যুদ্ধ আখ্যা দিয়েছেন। বহু আরব এটাও বলতে শুরু করেছেন, ইরাকে হামলার পিছনে ইসরাইলের চক্রান্ত রয়েছে। মোট কথা ইরাক যুদ্ধ আরব জাতীয়তাবাদকে উল্টে দিল।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইরাক যুদ্ধের প্রভাব: বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইরাক যুদ্ধের প্রভাব কী পড়বে? এ প্রশ্নের উত্তর এক কথায় দেয়া সম্ভব নয়। ইরাক যুদ্ধের কারণে অর্থনীতিতে পরোক্ষ প্রভাব নির্ভর করছে কতগুলো বিষয়ের ওপর। এগুলো হচ্ছে তেলের আন্তর্জাতিক মূল্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট এবং বাণিজ্য ঘাটতি, ডলারের মূল্য, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন প্রভৃতি। যুদ্ধের ফলে অর্থনীতিতে প্রত্যক্ষ যেসব প্রভাব পড়বে সেগুলো হচ্ছে বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিকদের দেশে প্রত্যাবর্তন। রেমিট্যান্স কমে যাওয়া তেল এবং তেলজাতীয় পদার্থের আন্তর্জাতিক মূল্য বৃদ্ধি বৈদেশিক সাহায্য কমে যাওয়া প্রভৃতি।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইরাক যুদ্ধের প্রভাব : বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইরাক যুদ্ধের প্রভাব কী পড়বে? এ প্রশ্নের উত্তর এক কথায় দেয়া সম্ভব নয়। ইরাক যুদ্ধের কারণে অর্থনীতিতে পরোক্স প্রভাব নির্ভল করছে কতগুলো বিষয়ের উপর। এগুলো হচ্ছে তেলের আন্তর্জাতিক মূল্য, যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট এবং বাণিজ্য ঘাটতি, ডলারের মূল্য, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন প্রভৃতি। যুদ্ধের ফলে অর্থনীতেতে প্রত্যক্ষ যেসব প্রভাব পড়বে সেগুলো হচ্ছে বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিকদের দেশে প্রত্যাবর্তন, রেমিট্যান্স (প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ) কমে যাওয়া, তেল এবং তেলজাতীয় পদার্থের আন্তর্জাতিক মূল্য বৃদ্ধি, বৈদেশিক সাহায্য কমে যাওয়া প্রভৃতি। যুক্ত রাষ্ট্রের অর্থনীতিতে মন্দাভাব দেখা দিলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়বে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র এ সময় পণ্য আমদানী কমিয়ে দেবে এবং সাহায্যও কমিয়ে দেয়া হবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা এসময়ে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য সহায়তাও কমিয়ে দেবে। যুদ্ধের ফলে বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগের পরিমাণও কমে আসবে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের মতে, বাংলাদেশের মোট রফতানি আয়ের প্রায় সাড়ে ৩ শতাংশ এবং মোট আমদানির প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ আসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে। মধ্যপ্রাচ্যে হয়তো রফতানির দিক থেকে কম সমস্যার পড়বে। কিন্তু আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে মন্দাভাব সৃষ্টি হওয়ায় বিশ্বের বাজারে বাংলাদেশের রফতানি অনেক কমে যায়। তবে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশের পণ্যগুলো প্রতিযোগিতামূলক নয়। এ কারণে হয়তো এ দেশের পণ্য কিছুটা মার যাবে। যুদ্ধের কারণে তেলের দাম বেড়ে যায়। বাংলাদেশে যদি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের উৎপাদন ব্যায়ও বেড়ে যায়। সিপিডি বলেছে, যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে রেমিট্যান্স পরিস্থিতি কি দাঁড়াবে সেটা দেখার বিষয়। কারণ গোটা রেমিট্যান্স এর ৭৭ ভাগই আসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহ থেকে। এটি মোট রফতানি আয়ের প্রায় ৩২ শতাংশ। তবে এর মাঝেও একটি দুঃসংবাদ আমাদের জন্য সংবাদ হয়ে এসেছে, তা হচ্ছে ইরাকে যুদ্ধোত্তর পুনর্গঠন। সরকার আশা করছে যে, যুদ্ধোত্তর ইরাকের পুনর্গঠন কাজ করতে অনেক শ্রমিক লাগবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে সেখানে অনেক শ্রমিক যেতে পারে।
দেশে দেশে যুক্তরাষ্ট্রের নিষ্ঠুর সামরিক আগ্রাসন: যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে বিশ্বের একমাত্র সন্ত্রাসী পরাশক্তি। এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে যে, বিগত ৫০ বছরে দেশটি ১১৩ টি দেশে হয়তো সামরিক অভ্যূত্থানে ইন্ধন যুগিয়েছে নয়তো সরাসরি সামরিক আগ্রাসন চালিয়েছে। বিশ্বে এমন কোন দেশ খুঁজে পাওয়া সত্যিই দুস্কর যে দেশে কোন না কোনভাবে মার্কিন হস্তক্ষেপ ঘটে নি। এ ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ সংযোজন হচ্ছে ইরাক। যুক্তরাষ্ট্র নিজের ভন্ডামি চাপা দেয়ার জন্য যত সাফাই-ই গেয়ে থাকুক না কেন, দেশে দেশে তার বিষাক্ত নখ বসানোর দাগ ইতিহাস থেকে কখনো মুছে যাবে না। আজ এখানে তার দস্যুতা ও বর্বরতার সামান্য চিত্র তুলে ধরা হল।
১৯৪০-১৯৫০ ঃ ফিলিপাইনে তেইশটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটি গড়া হয় ১৯৪০-এর দশকে। ১৯৫০ এর দশকে পঞ্চাশ হাজার ফিলিপিন সৈন্যকে প্রশিক্ষন দেওয়া হয়, বিশ কোটি ডলারের অস্ত্র সরবরাহ করা হয়।
১৯৪৫-১৯৫৩ ঃ কোরিয়া-১৯৫০ এর কোরিয়ার যুদ্ধ শুরুর আগে থেকেই আমেরিকার হস্তক্ষেপ শুরু হয়।
১৯৪৫ ঃ জাপান-হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পরমাণু বোমা বিষ্ফোরণ হয় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যানের নির্দেশে।
১৯৪৮-১৯৫৬ ঃ পূর্ব ইউরোপ-স্টিলন্টার ফ্যাক্টর-এর মাধ্যমে চেকোশ্লোভাকিয়ার ১,৬৯,০০০ কমিউনিষ্ট পার্টি সদস্যকে গ্রেফতার করানো হয়।
১৯৫০ এর দশক ঃ জার্মানিতে রাশিয়ার আগ্রাসনের অজুহাতে পশ্চিম জার্মানিতে গোপন সেনাবাহিনী গড়ে তোলা হয়।
১৯৫৩ ঃ ইরানের একমাত্র ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত তেল কোম্পানি অ্যাংলো-ইরানিয়ান অয়েল কোম্পানী জাতীয়করণ করায় প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ মোসাদ্দেককে সরিয়ে রেজা শাহ পাহলবীকে ক্ষমতায় বসানো হয়।
১৯৫৩-১৯৫৪ ঃ গুয়াতেমালা-আমেরিকা জ্যাকোবো আরবেনজ-এর নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে দিয়ে চক্রান্তকারী সামরিক দরকে ক্ষমতায় বসায়।
১৯৫৬-১৯৫৭ ঃ সিরিয়া-সিআইএ সিরিয়ার বিদেশীমন্ত্রীকে বিপুল অর্থ দিয়ে সিরিয়ার সরকার বদল ঘটায়।
১৯৫৭-১৯৫৮ ঃ মধ্যপ্রাচ্য ১৯৫৭ সালে ৯ মার্চ মার্কিন কংগ্রেসে প্রেসিডেন্ট আইজেন হাওয়ারের মধ্যপ্রাচ্যনীতি অনুমোদিত হয়। ইসরাইল বাহিনী মিশরে প্রবেশ করে সিনাই উপদ্বীপ এবং গাজা স্ট্রিপ দখল করে।
১৯৬৭-৫৮ ঃ আটটি ষড়যন্ত্রমূলক ঘটনায় সিরিয়া এবং মিশরের সরকারের পতন ঘটানো হয়। মিশরের রাজা ফারুককে নির্বাসনে পাঠানো হয়। লেবাননে মোতায়েন হয় প্রায় ১৪,০০০ আমেরিকা নৌ ও স্থলসেনা।
১৯৫৭-১৯৫৮ ঃ ইন্দোনেশিয়া-১৯৫৫ সাল থেকে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট সুকর্নকে হটাতে সিআইএ গোপন সামরিক কার্যকলাপ এবং প্রশিক্ষন শুরু করে। ১৯৫৭ এর নভেম্বর মাসে সামরিক বিদ্রোহ শুরু হয়। ১৯৫৭ এর জুন মাসের মধ্যে সুকর্নের বাহিনী সিআইএ সমর্থিত বিদ্রোহীদের দমন করে।
১৯৫০-১৯৭৩ ঃ ভিয়েতমান-আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রম্যান এর নীতি ও নির্দেশ অনুযায়ী ভিয়েতনাম যুদ্ধে মোট পঁচিশ থেকে তিরিশ লাখ ভিয়েতনামীকে হত্যা করা হয়।
১৯৫৫-১৯৭৩ ঃ কম্বোডিয়া-আমেরিকার প্রত্যক্ষ মদদে বিশ লাখ কম্বেডিয়ানকে হত্যা করা হয়।
১৯৫৯ ঃ হাইতি-হাইতির বিদ্রোহীদের দমন করতে সরকারি সেনাবাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে আক্রমণ স্থানে আমেরিকান সেনা।
১৯৬০-১৯৬৪ ঃ কঙ্গো-সিআইএ-র আর্থিক ও সামরিক সাহায্য নিয়ে জোসেফ মবুতুর বাহিনী প্রেসিডেন্ট প্যাট্রিস লুমুম্বাকে বন্দী করে জেলখানায় হত্য করে।
১৯৬১-১৯৬৪ ঃ ব্রাজিল-ব্রাজিলে সরকারি ক্ষমতা কুক্ষিগত করে আমেরিকার ঙচঝ এক লাখ রক্ষীকে প্রশিক্ষন দিয়ে খুনী জাতীয় বাহিনী গড়ে তোলা হয়।
১৯৫৯-১৯৮০ ঃ কিউবা এর জানুয়ারীতে কিউবার বিপ্লবের পর থেকে আমেরিকা রাসায়নিক ও জৈবিক অস্ত্র প্রয়োগের ফলে জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে কিউবায়। বহু মানুষ ও পশু মারা যায়, ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
১৯৬৪-১৯৭৩ ঃ চিলি-প্রেসিডেন্ট সালভাদর আলেন্দে বিনা ক্ষতিপূরণে আমেরিকান মালিকানাধীন চিলির মাইনিং কোম্পানি জাতীয়করণ করেন। সিআইএ জেনারেল আগাষ্টো পিনোশের মাধ্যমে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে সরকারের পতন ঘটায়। আলেন্দেকে হত্যা করা হয়।
১৯৭০-১৯৭১ ঃ কোষ্টারিকা-জোসে ফিগুয়ার্স এর সরকারকে আবার গদিচ্যুত করে সিআইএ।
১৯৭২-১৯৭৫ ঃ ইরাক-ইরানের শাহের মদদ নিয়ে আমেরিকা ১৯৭২এ ইরাকের উত্তরাঞ্চলের পাহাড়ী কুর্দি উপজাতিদের অস্ত্র সরবরাহ করে।
১৯৮১ ঃ নিকারাগুয়া-ধীরগতির সন্ত্রাস চালিয়ে এ পর্যন্ত আমেরিকা তের হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করছে।
১৯৮৯ ঃ পানামা-আমেরিকান আগ্রাসনে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।
১৯৮১-১৯৮৯ ঃ লিবিয়া-সিআইএ মুয়াম্মার গাদ্দাফীকে হত্যা করতে গিয়ে তার দু’বছরের শিশুকন্যাকে হত্যা করে। ধারাবাহিক সন্ত্রাসের ফলে ১৯৮৬ সালের এপ্রিল থেকে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে।
১৯৯১ থেকে ঃ ইরাক-আমেরিকা ও ব্রিটেনের যৌথ সন্ত্রাসে এ পর্যন্ত কয়েক লাভ মানুষ মারা গেছে।
১৯৬০ থেকে ঃ কলম্বিয়া-মাদক চোরাচালান বন্ধ করার অজুহাতে মার্কিন অন্ত্র, সেনা ও প্রশিক্ষণে কলম্বিয়ার সরকার সাতষট্টি হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করেছে।
১৯৯২ থেকে ঃ যুগোস্লাভিয়া-১৯৯২ থেকে বসনিয়াতে ১৯৯৯ সালের ২৪ মার্চ থেকে আকাশপথে আক্রমন চালিয়ে ৩,০০০-এর বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়।
১৯৪৮ থেকে ঃ প্যালেষ্টাইন মার্কিন-প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে ইসরাইলী সেনা কয়েক হাজার ফিলিস্তিনীকে হত্যা করছে।\r
১৯৯১ সাল ঃ এ বছরের ১৬ জানুয়ারী ইরাকে অপারেশন ডেজার্ট স্টর্ম পরিচালনা করা হয়। ৪৪ দিনব্যাপী এ সামরিক অভিযানে মার্কিন বাহিনী ইরাকের গোটা অবকাঠামো ধ্বংস করে দেয়। যুদ্ধের প্রথম দিনে দেড়শ বিমান একসঙ্গে বোমাবর্ষন করে এবং ৯৮টি ক্রুজ ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। এ যুদ্ধে ইরাকের পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটে। বোমার প্রতিক্রিয়ার ক্যান্সারসহ মারাত্মক রোগ-ব্যাধি দেখা দেয়। এক হিসাবে জানা গেছে যে, এ পর্যন্ত উপসাগরীয় যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় প্রায় ১৫ লাখ ইরাকী শিশু নিহত হয়েছে। এছাড়া ১০ লাখ ইরাকী প্রতিবেশী দেশগুলোকে শরনার্থী হিসেবে আশ্রয় নেয়।
১৯৯৩ সাল ঃ হাইতিতে যুক্তরাষ্ট্র অপারেশন রেষ্টোর হোপ পরিচালনা করে। মার্কিন অভিযানে এ দুর্ভিক্ষপীড়িত দেশটির হাজার হাজার ভুখানাঙ্গা মানুষ নিহত হয়। জেনারেল ফারাহ আইদিদের বীরোচিত প্রতিরোধের মুখে মার্কিন বাহিনী পিঠটান দিতে বাধ্য হয়।
১৯৯৮ সাল ঃ এ বছরের ২০ আগষ্ট যুক্তরাষ্ট্র একই সময়ে আফগানিস্তান ও সুদানে ক্ষেপনাস্ত্র হামলা চালায়, এ হামলায় আফগানিস্তানে প্রচুর নিরীহ মানুষ নিহত হয়। এছাড়া, সুদানের আল-শিফা নামে একটি ওষুধ প্রকল্পও ধ্বংস হয়।
১৯৯৮ সাল ঃ এ বছরের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র আবার ইরাকে হামলা চালায়। অপারেশন ডেজার্ট ফক্স চদ্মনামে পরিচালিত এ অভিযানে ইরাকে বিমান ও ক্ষেপনাস্ত্র হামলা চালানো হয়। এ হামলায় রাজধানী বাগদাদসহ সারা দেশের অসংখ্য বেসামরিক আবাসিক এলাকা, মসজিদ, মক্তব ও গির্জা ধ্বংস হয়। এর পরবর্তীতে আফগানিস্তান ও বর্তমান ইরাকসহ দেশে দেশে তাদের অপকর্ম আজ বিশ্ববাসীর সামনে উদ্ভাসিত।
২০০১ সাল ঃ ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্ল্ড ট্রেন সেন্টারে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা হয়। যুক্তরাষ্ট্র এ হামলার জন্য একতরফাভাবে কোন প্রমাণ ছাড়াই ওসামা বিন লাদেন ও তার সংগঠন আল-কায়দাকে দায়ী করে। ওসামা সৌদি নাগরিক হরেও আফগানিস্তানে তালেবার প্রশাসনের আশ্রয়ে থাকেন। ওসামাকে ধরার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ তালেবান সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করে।
২০০১ সালের ৭ অক্টোবর ইঙ্গ মার্কিন যৌথভাবে আফগানিস্তানে বিমান হামলা শুরু করে। একতরফা এবং অমানবিক এ হামলা একযোগে চলে। ১৩ নভেম্বর কাবুলের পতন ঘটে। তালেবান প্রশাসন ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়। পরবর্তীতে মার্কিন আজ্ঞাবহ হামিদ কারজাই শাসনভার গ্রহণ করে।
(তথ্য সূত্র: ইন্টারনেট ও বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক) (লেখাটি ইরাকে আমেরিকায় সামরিক আগ্রাসনের শেষের দিকে দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত)                                   
                                        
   ‡jLK: M‡elK I mv‡eK Aa¨¶
  36 MMb evey †ivo,Lyjbv-9100
  †gvevBj: 01711579267
 email.fourkanali@yahoo.com.

0 comments:

Post a Comment