ভারত-বাংলাদেশ আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক
আলী ফোরকান
কোন দেশের পররাষ্ট্রনীতি চিরস্থায়ী কোন ব্যবস্থা বলে বিবেচিত হওয়া উচিত নয়। দেশের স্বার্থে, বাস্তবতার নিরিখে পররাষ্ট্রনীতির পরিবর্তন হওয়া বাঞ্ছনীয়। একটা দেশের ভৌগোলিক অবস্থান, পারিপার্শ্বিক অবস্থা, নিজস্ব অর্থনীতি ও রাজনীতি, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিÑ সব কিছুই পররাষ্ট্রনীতির নির্ধারক। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, দক্ষিণ এশিয়ায় অবস্থানকারী বাংলাদেশ যখন পূর্ব পাকিস্তান ছিল, তখন তার পররাষ্ট্রনীতি ছিল ভারতবিরোধী। অন্তত কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাদেশের জনগণের কাছে তাই প্রত্যাশা করত। আর স্বাধীন বাংলাদেশে সেই একই জনগোষ্ঠী বোধহয় ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। অন্তত সৎ প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক বজায় রাখা প্রয়োজন মনে করে। ধর্মরাষ্ট্র পাকিস্তানের স্থলে জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় বাংলাদেশের জনগণের যে গুণগত পরিবর্তন হওয়ার কথা তাতে করে সাম্প্রদায়িকতাজনিত কোন বিভেদ থাকা উচিত নয়। সম্প্র্রদায়গত বিভেদ বাংলাদেশের জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। স্বাধীনতাবিরোধী পাকিস্তানের আদর্শে বিশ্বাসীরা এখনও ভারতের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে থাকেন। ভারতবিরোধিতার রাজনীতি তো বাংলাদেশের জনগণ বুঝেশুনে ঠাণ্ডা মাথায় ১৯৭১ সালে পরিবর্জন করেছে। আর করেছে বলেই ধর্মরাষ্ট্রের স্থলে জাতিরাষ্ট্রের উদ্ভব। রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃথক হলেও ভাষা, সংস্কৃৃতি, আচার, ঐতিহ্যগতভাবে আমরা ভারত নামক বিশাল রাষ্ট্রের উলে¬খযোগ্য জনগোষ্ঠীর বেশ কাছাকাছি ছিলাম, এখনও আছি। আমাদের সম্পর্ক কয়েক সহস্র বছর ধরে গড়ে উঠেছে। ভারতের বিভাজন বাংলাদেশের জনগণকে ভারতের বাংলা ভাষাভাষীদের থেকে বেশ কিছুটা দূরে ঠেলে দিলেও ভিন্ন সংস্কৃতির জনগোষ্ঠী পাকিস্তানিদের কাছে নিতে সক্ষম হয়নি। তাই দেখা যায়, বাংলাদেশের মানুষ যখন প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত তখন ভারতের জনগণ সহানুভূতি ও সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসে। সাম্প্রদায়িক শক্তি যেখানেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠুক, দুই বাংলার সচেতন বুদ্ধিজীবী সমাজ সেখানেই উদ্বিগ্ন ও প্রতিবাদমুখী। বাংলাদেশ ও ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকার জনগণ বাংলা ভাষাভাষী এবং একই সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হওয়ায় তাদের ভেতর রয়েছে এক অকৃত্রিম বন্ধন যা সহজে নষ্ট হওয়ার নয়। ১৯৭১ সালে ভারতীয় বাঙালিরা তা প্রমাণ করেছে। না খেয়ে, ঘরবাড়ি ছেড়ে দিয়ে প্রায় ১ কোটি মানুষকে তারা আশ্রয় দিয়েছে। দু’দেশের ভেতর যে রাখিবন্ধন তখন গড়ে ওঠে, এখনও অনেকে তার মর্যাদা দিয়ে থাকে। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসই এদেশের পররাষ্ট্রনীতির ওপর বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে আছে। বাংলাদেশের যখন কোন বন্ধু ছিল না, একাত্তরের সেই দুর্দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যখন বাংলাদেশে গণহত্যা শুরু করে এবং যার ফলে প্রায় দেড় কোটি বাঙালি ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য হয়, জনপ্রতিনিধিরাও যখন তাদের জীবন বাঁচাতে এবং প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলতে ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেন, তখন ভারতই প্রথম এগিয়ে আসে। তখন ভারতই ছিল সবচেয়ে বড় হিতাকাক্সক্ষী। বাংলাদেশ কখনও ভুলতে পারে না যে, তার স্বাধীনতার সংগ্রামে ভারতের হাজার হাজার সৈন্য নিহত হয়েছে ও প্রায় ৪ বছর যাবৎ ট্যাক্স দিতে হয়েছে ভারতের জনগণের বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের ব্যয় নির্বাহের জন্য বা মুক্তিযুদ্ধজনিত ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য। সেদিন ভারত ওভাবে সাহায্য-সহযোগিতা না করলে ও সোভিয়েত ইউনিয়নকে দিয়ে না করালে বাংলাদেশ স্বাধীন করা সহজ ছিল না। সুতরাং বাংলাদেশের জনগণ এবং সরকার ভারত সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ থাকাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান এমন যে, এদেশের অধিকাংশ নদ-নদীর উৎস হিমালয়। ভারতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদীর মাধ্যমে হিমালয়ের বরফগলা পানি বাংলাদেশে প্রবেশ করে। নদীমাতৃক বাংলাদেশকে যদি নিয়মিত পানি সরবরাহ পেতে হয় তাহলে ভারতের সঙ্গে সমঝোতা ও সহযোগিতা উভয়ের প্রয়োজন। ফারাক্কা নিয়ে সেই পাকিস্তান আমল থেকে যা ঘটেছে বা বর্তমানে যা ঘটছে তা সবারই জানা। কম হলেও ৫২ নদীর উৎস ভারতে। তাই ভারতের সঙ্গে সৎ প্রতিবেশীসুলভ আচরণ বজায় রাখতে না পারলে পানির হিস্যা পাওয়া সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক আইন বাংলাদেশের অনুক‚লে। কিন্তু আইনের চেয়ে বড় বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সৎ প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক। বাস্তব পরিস্থিতি হচ্ছে, ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশ ও ভারত পরস্পর নির্ভরশীল। সাংস্কৃতিক কারণে তাদের সামাজিক বন্ধন ইচ্ছা করলেও ছিন্ন করা যাবে না। আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে সুসম্পর্ক অপরিহার্য। রাজনৈতিক বাস্তবতায় সুসম্পর্ক জরুরি। যদি কোন কারণে আন্তঃবিরোধের সৃষ্টি হয়, তা ক‚টনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে মিটিয়ে নেয়া প্রয়োজন। প্রসঙ্গত সেই জš§লগ্ন থেকে ভারত ও পাকিস্তানের দ্ব›দ্ব। কাশ্মীর নিয়ে এমন এক বিরোধে তাদের জড়িয়ে দেয়া হয়েছে যার মীমাংসা কোন সময়ই সহজ ছিল না। পাকিস্তান বলছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ মুসলমান হওয়ায় পাকিস্তান সৃষ্টির তত্ত¡ অনুযায়ী কাশ্মীর ভারতের অংশ হওয়া উচিত নয়। আর ভারতের বক্তব্য হল, ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণ দেখিয়ে যদি দাবি করা হয়, কাশ্মীর পাকিস্তানের অংশ, তাহলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রনীতিকেই অগ্রাহ্য করা হয়। বর্তমানে ১৮ কোটি ভারতীয় মুসলমানের জন্য ভারতকেই আবার বিভক্ত করতে হবে। হিন্দু ও মুসলমানের জন্য পৃথক রাষ্ট্র করে রাজনৈতিকভাবে কী ফল অর্জিত হয়েছে তা তো গত ৬ দশক ভারত ও পাকিস্তান হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করেছে। ভারতীয় উপমহাদেশে এখন ২টির জায়গায় ৩টি রাষ্ট্র। এই তিন রাষ্ট্র্রের ভেতর সার্কভিত্তিক যে ধরনের সমঝোতা হওয়া উচিত ছিল তা ভারত ও পাকিস্তানের আন্তঃবিরোধের কারণে হতে পারেনি। এখন জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে তিন দেশ একমত হলেও প্রয়োজনীয় সহযোগিতার হাত কেউই সঠিকভাবে সম্প্রসারিত করতে পারছে না। তাই ’৪৭-এ ভারত ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি যে ধারায় প্রবহমান ছিল এখন তার আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন। এটা ভারত ও পাকিস্তান উভয়কেই স্বীকার করতে হবে। অনেক চেষ্টা করেও পারস্পরিক অবস্থা স্বাভাবিক হতে পারছে না। বাংলাদেশের কথা যদি ধরা হয় তাহলে ১৯৭১ সালে যাই হয়ে থাকুক সার্কের বাস্তবতায় উপমহাদেশের তৃতীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশকেও শুধু ভারত নয়, পাকিস্তানের সঙ্গেও সম্পর্ক স্বাভাবিক করা প্রয়োজন। তবে আগের মতো বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্কের ভিত্তি সাম্প্রদায়িক না হয়ে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধভিত্তিক হওয়া উচিত। পাকিস্তান যদি আইএসআই দ্বারা বাংলাদেশে তার রাজনীতির ক‚টকৌশল পরিচালিত করার চেষ্টা করে এবং সাম্প্রদায়িক শক্তিকে ইন্ধন জোগায়, ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের রাজনীতিতে পাকিস্তানি ধারায় আবার প্রবর্তন করতে চায়, অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশকে দুর্বল করতে চায়, অবৈধ অস্ত্র সরবরাহ করে মৌলবাদী শক্তিকে জঙ্গিবাদী হওয়ার ইন্ধন জোগায়, তাহলে সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে কী করে। এখনও পাকিস্তান যদি যুদ্ধাপরাধীদের যাতে বিচার না হয় তার চেষ্টা চালায়, তাহলে বাংলাদেশ তা সহজভাবে মেনে নেবে কী করে। যারা সার্ক গঠন করে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি ও অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে চেয়েছিলেন, তাদের চেষ্টা কি সফল হয়েছে? এত বছর উত্তীর্ণ হওয়ার পরও কি সার্ক তার লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছে? আর না পেরে থাকলে তার জন্য কারাই বা দায়ী? বেশ কিছুদিন আগে ভারতে সন্ত্রাসীরা বোম্বের একটা হোটেলে জঙ্গিবাদী তৎপরতা চালায়। এই যদি হয় বাস্তবতা, তাহলে বৃহত্তর সার্কের পার্টনার ভারত কী করে বন্ধু হিসেবে পাকিস্তানকে গ্রহণ করবে? বাংলাদেশের মাটিতে যদি জিহাদের নামে জঙ্গিবাদী তৎপরতা চালানো হয়, তাহলে বাংলাদেশও ভারতের ভেতর সুসম্পর্ক স্থাপিত হবে কী করে। বর্তমানে শেখ হাসিনার সরকার এর অবসান ঘটিয়ে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে আগ্রহী। যদিও বাংলাদেশ সৃষ্টির পরও ওই ধরনের তৎপরতা ক্ষেত্রবিশেষে একটি মহল চালিয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। অপরদিকে ভারতীয় সন্ত্রাসীরা যদি সীমান্তের ওপার থেকে বাংলাদেশে বিস্ফোরক, অস্ত্র সরবরাহ করে এবং ভারত সরকার যদি তা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, বিএসএফ যদি ফি বছর কয়েকশ’ বাংলাদেশীকে সীমান্তে গুলি করে মারে, ভারতীয় পণ্যে যদি বাংলাদেশের বাজার সয়লাব হয়ে যায়, বৈদেশিক মুদ্রা আমদানিকৃত পণ্য যদি ভারতে পাচার হয়ে যায়, তবে সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে কী করে।
বর্তমানে বাংলাদেশ-ভারত আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে দুই দেশের ভেতর ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্র সম্প্রসারিত করা। বাণিজ্যিক স্বার্থে কেউ কাউকে ছাড় দিতে পারে না। আসলে বাণিজ্যের মাধ্যমেও পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদার হতে পারে। এক সময় চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক ছিল না। তার ঐতিহাসিক কারণও ছিল। আর এখন বাংলাদেশ ও চীন সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারিত করায় এবং একটা শক্তিশালী অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে বাংলাদেশে প্রচুর বিনিয়োগ করায় দু’দেশের সম্পর্কের যে উন্নতি হয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। অথচ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার হওয়া উচিত ছিল কিন্তু তা হয়নি। ভারতের মতো একটা দ্রুত উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশ যে ধরনের সুযোগ বাংলাদেশকে দিলে বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যে ভারসাম্য তৈরি হতো, তা ভারত দিতে পারেনি। বরং ভারতীয় বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের অবাধ প্রবেশ ভারত প্রতিরোধ করেছে। বাংলাদেশে ভারতীয় বিনিয়োগও তেমন বেশি হয়ে ওঠেনি। ফলে রাজনৈতিক সম্পর্ক যা ছিল তাই আছে। নতুন অর্থনৈতিক ক্রিয়াকর্ম তার বিস্তার ঘটাতে পারেনি। ভারত ও বাংলাদেশের ভেতর যোগসূত্র বেশ কিছুটা শিথিল হওয়ায় সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে পারেনি। প্রাকৃতিক সম্পদের ভাগাভাগিতেও ভারত বাংলাদেশের প্রতি প্রয়োজনীয় উদারতা প্রদর্শন করতে পারেনি। অবশ্য শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাসীন হয়ে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক শুধু স্বাভাবিক করেনি বরং ক্ষেত্রবিশেষে সম্পর্কের দ্রুত উন্নতি হয়েছে। নতুন করে অনেক চুক্তি হয়েছে, বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে, বাংলাদেশী পণ্য ভারতে রফতানির সুযোগ সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। বেশ কয়েকটা সমঝোতা স্মারক সই করা হয়েছে, বিনিয়োগের প্রস্তাবগুলো বিশেষ করে যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ খাতে বিশেষভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর যৌথ সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর এবং তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অগ্রগতি হচ্ছে। ভারতের প্রতিশ্র“ত ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বহির্বিশ্বের কারও দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে বাংলাদেশ যদি স্বাধীনভাবে তার পররাষ্ট্রনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, তাহলে বাংলাদেশ ও ভারতের পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নত হতে বাধ্য। ভারতের নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশকে তাদের প্রয়োজন। যে ধরনের মাওবাদী তৎপরতা সে দেশে শুরু হয়েছে, তার ইন্ধন জোগানোর কোন ক্ষেত্র যদি বাংলাদেশে কোন কারণে প্রস্তুত হয়, তাহলে ভারত শক্তিতে যতই বড় হোক না কেন তার নিরাপত্তা সব সময়ই প্রশ্নের সম্মুখীন হবে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশও তার নিজের স্বার্থে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে আগ্রহী হবে বলে মনে হয়। তাছাড়া উপমহাদেশে ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতার যে বিষবাষ্প এখনও বহমান, তা নিরসন করতে সেক্যুলার গণতান্ত্রিক শক্তিকেই স্ব স্ব দেশের নেতৃত্ব দিতে হবে। সরকার ও সমাজ উভয়ই তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে। উভয় দেশের সাম্প্রদায়িক শক্তি যাতে অতীতের মতো মাথাচাড়া দিয়ে না উঠতে পারে, তার ব্যবস্থা করতে হবে। উভয় দেশের গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক শক্তি যদি সরকার ও সামাজিক শক্তি হিসেবে স্থিতিশীল হতে পারে, তাহলেই কেবল দু’দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ হবে। এখানেই ক‚টনৈতিক সার্থকতা। দু’দেশের প্রাজ্ঞ ও অভিজ্ঞ নেতৃত্বকে এ ব্যাপারে আরও সচেতন হতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ায় যে একটা শক্তিশালী আর্থ-সামাজিক সাংস্কৃতিক আন্তঃরাষ্ট্রীয় জোট সৃষ্টি করা সম্ভব, এটা প্রতিটি দেশের অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদদের অনুধাবন করা উচিত। প্রয়োজন সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ।
0 comments:
Post a Comment